আপনি জানেন কি ইঞ্জিনিয়ার শব্দটি একটি ল্যাটিন শব্দ থেকে এসেছে যার অর্থ হচ্ছে “বুদ্ধিসম্পূর্ণতা”। ইঞ্জিনিয়ারিং ক্ষেত্রটি আশ্চর্যজনক ভাবে বিস্তৃত। এই ক্ষেত্রটি হচ্ছে সাগরের মতো। ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের সাধারণ বা প্রধান কিছু বিভাগ / শাখার সাথে আমরা পরিচিত। তবে এই শাখাগুলোর ডালপালা বিস্তার লাভ করে বিশাল আকারে রূপ নিয়েছে।
তাই আপনি কোন ধরনের ইঞ্জিনিয়ারিং বেছে নিবেন, সেটা সিদ্ধান্ত নেয়া আপনার জন্য অনেক কঠিন হতে পারে। একারনে আপনাকে অনেক যত্নশীল হয়ে এই সিদ্ধান্তটি নিতে হবে।
ইঞ্জিনিয়ারিং এর কিছু কমন শাখা গুলো হচ্ছেঃ
১ কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং
২ মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং
৩ টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং
৪ সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং
৫ ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং
কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং
১৯৭২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের কেস ওয়েস্টার্ন রিজার্ভ বিশ্ববিদ্যালয় প্রথম কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি চালু করে। কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং কার্যাবলীর মধ্যে রয়েছে সাধারণ ও বিশেষ কম্পিউটারের জন্য সফটওয়ার তৈরি করা, এমবেডেড মাইক্রোকন্ট্রোলারের জন্য ফার্মওয়ার লিখা, বিভিন্ন ভিএলএসআই চিপ ডিজাইন, বিভিন্ন এনালগ সেন্সর ডিজাইন, বিভিন্ন সার্কিট বোর্ড ডিজাইন এবং অপারেটিং সিস্টেম ডিজাইন ইত্যাদি।
এর প্রধান কোর্স হচ্ছে প্রোগ্রামিং। কম্পিউটার সায়েন্স বললে অবধারিত ভাবে প্রথমেই চলে আসে প্রোগ্রামিং। প্রোগ্রামিং হলো কম্পিউটারকে কথা শুনানোর উপায়। কম্পিউটার যেহেতু মানুষের ভাষা বুঝেনা তাকে বোঝাতে হয় বিশেষ ভাষায় যাকে বলে প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ।
তবে, এই কোর্সটি এতটা সহজ নয়। আপনাকে এই কোর্সটি যত্নবান হয়ে করতে হবে, তবেই আপনি এই ক্ষেত্রে নিজের উন্নতি করতে পারবেন।
কাজের ক্ষেত্র
- সফটওয়্যার ডেভেলপার
- ডাটাবেজ পরিচালক
- কম্পিউটার হার্ডওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার
- কম্পিউটার সিস্টেম বিশ্লেষক
- কম্পিউটার নেটওয়ার্ক নির্মাতা
- ওয়েব ডেভেলপার
- তথ্য নিরাপত্তা বিশ্লেষক
- কম্পিউটার সিস্টেম ও ইনফরমেশন ম্যানেজার
- কম্পিউটার প্রোগ্রামার
মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং
১৮৮০ সালে যুক্তরাষ্ট্রে আমেরিকান সোসাইটি অব মেকানিক্যাল ইন্জিনিয়ারিং (ASE) প্রতিষ্ঠিত হয়। যে যন্ত্রকৌশল বা প্রযুক্তিবিদ্যায় কেমিক্যালের ব্যবহার করা হয় সেটাই হচ্ছে কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং।
মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়াররা মূলত বৃহৎ বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের টারবাইন, অল্টারনেটর ও জেনারেটরের নকশা, সংযোজন, বাস্তবায়ন ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকেন। এছাড়া তারা বিমানের ইঞ্জিন, কমবাশন ইঞ্জিন, এয়ারকন্ডিশনিং মেশিন ও রেফ্রিজারেটর উৎপাদন কারখানার মান নিয়ন্ত্রণ ও কমিশনিংয়ের কাজ করেন।
সরকারি খাতে সহকারী প্রকৌশলী থেকে শুরু করে প্রধান প্রকৌশলী কিংবা বেসরকারি খাতে হেড অফ অপারেশন বা চিফ অপারেটিং অফিসার হিসাবে নিয়োগ পাওয়া মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য ক্যারিয়ার লক্ষ্য হতে পারে। এছাড়া বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা, ব্যাংক আর সিভিল সার্ভিসেও মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে। তাই এই ক্ষেত্রে খুব চিন্তাশীল হয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
কাজের ক্ষেত্র
- পাওয়ার প্ল্যান্ট, সিমেন্ট ইন্ডাস্ট্রি, সার কারখানা, অটোমোবাইলস, গ্যাসফিল্ড, জাহাজ নির্মাণ শিল্পে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং চাহিদা রয়েছে।
- পেট্রোলিয়াম জাত পণ্য যেমন- লুব অয়েল, পেট্রোল, ডিজেল, যে কোনো ইন্ডাস্ট্রির ইউটিলিটি ও মেইনটেনেন্স বিভাগে, রেলওয়ে, বিমান, নবায়নযোগ্য শক্তি, জেনারেটর/ক্যাপটিভ পাওয়ার প্ল্যান্টে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং অপরিহার্য।
টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং
বাংলাদেশে চাকরির বাজারে বর্তমানে যে কয়টি বিষয়ের গ্রাজুয়েটদের সবচেয়ে বেশি চাহিদা রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং। টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য বাংলাদেশে রয়েছে চাকরির বড় বাজার।
সরকারের বিভিন্ন টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রিতে কাজের সুযোগের পাশাপাশি বেসরকারি পর্যায়ে স্থাপিত দেশী-বিদেশী টেক্সটাইল মিল, বিভিন্ন বায়িং অফিস, বুটিক হাউস, ফ্যাশন হাউস, গার্মেন্ট শিল্পে ও টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রিতে বিভিন্ন পজিশনে কাজের সুযোগ রয়েছে। আর যারা বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশ কে একটি ব্র্যান্ড হিসেবে পরিচিত করেছেন তারা এই দেশের ই টেক্সটইল ইঞ্জিনিয়াররা।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বাংলাদেশ কে টেক্সটাইল সেক্টরের পরবর্তি চীন হিসেবে ঘোষনা করেছে। তাই এই ক্ষেত্রটি আমাদের দেশে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি শাখা।
কাজের ক্ষেত্রঃ
- টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারদের বাংলাদেশে সরকারি-বেসরকারি দুজায়গাতেই রয়েছে চাকরির সুব্যবস্থা।
- সরকারী বিভিন্ন টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ তো আছেই সাথে বেসরকারি পর্যায়ে স্থাপিত টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রিতে রয়েছে অবারিত সুযোগ।
- গার্মেন্টস শিল্পেও টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারদের চাহিদা রয়েছে।
- বিভিন্ন বায়িং অফিসে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়াররা কাজ করে চলেছে। টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারদের কাজের মূল জায়গা হিসেবে বিভিন্ন টেক্সটাইল শিল্প প্রতিষ্ঠানকেই বিবেচিত করা হয়
সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং
সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং একটি ব্যাপক ক্ষেত্র। মানুষের সভ্যতা এবং বিলাসবহুল জীবন প্রদানের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় অবদান সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের। বিমানবন্দর, সেতু, সুড়ংগ, পানি সরবরাহ এবং নিস্কাশন ব্যবস্থা, বাধ, পোতাশ্রয়, রেলপথ, ফেরিঘাট, বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা, ভবন এমনকি হতে পারে নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট।
সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং এর কিছু বিশেষত্ব রয়েছে। সিভিল ইঞ্জিনিয়ারগণ বভিন্ন সেক্টরে কাজ করে থাকেন যেমন কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ার, যানবাহন বিভাগের, বিদ্যুৎ এবং সেচ, ভূ প্রকৌশল, পরিবেশ, এবং গণপূর্ত ইঞ্জিনিয়ার ইত্যাদি।
কাজের ক্ষেত্র
- সিভিল ইঞ্জিনিয়ারদেরকে সরকারী বেসরকারী সেক্টরের বিভিন্ন বিভাগে নিয়োগ দেওয়া হয়। বিশেষ করে, নিত্য নতুন রাস্তাঘাট, বিমানবন্দর, সেতু, সুড়ঙ্গ, পানি সরবরাব, নিস্কাশন ব্যবস্থা, বাধ, পোতাশ্রয়, রেলপথ, ফেরিঘাট, বিদ্যুৎ সরবরাব ব্যবস্থা।
- পরিবেশ ব্যবস্থাপনা, বিল্ডিং, সড়ক এবং ব্রিজ তৈরির নকশা ও সেই অনুযায়ী কাঠামো তৈরি করা, নির্মাণ ও ব্যবস্থাপনা বিভাগ গুলোরও অনেক চাহিদা রয়েছে।
- সিভিল ইঞ্জিনিয়ারগন যে কোনো পন্যের গুনগত মান যাচাই, ল্যাবরেটরির কাজ , এছাড়াও সেনাবাহিনী বা প্রতিরক্ষা বাহিনীতে প্রচুর নিয়োগ দেওয়া হয়।
ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং
বর্তমান সময়ের বিদ্যুৎ শক্তির উপর সবকিছু নির্ভরশীল। ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়াররা বিদ্যুৎ উৎপাদন সরঞ্জাম, বৈদ্যুতিক মোটর, রাডার এবং ন্যাভিগেশন সিস্টেম, যোগাযোগ ব্যবস্থা, অটোমোবাইল, জাহাজ ও বিমানের বৈদ্যুতিক সিস্টেম প্রভৃতি বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম উৎপাদনের সাথে জড়িত থাকেন।
পাওয়ার প্ল্যান্ট, শিল্প কারখানার যন্ত্রপাতি, বৈদ্যুতিক মোটর, অটোমোবাইল, এয়ারক্র্যাফ, স্পেস ক্র্যাফের ইগনিশন সিস্টেম এবং সব ধরণের ইঞ্জিনের ডিজাইন, উৎপাদন এবং পরিচালনা করে। এরা বৈদ্যুতিক শক্তি ব্যবহারের উন্নত পদ্ধতি গবেষণা ও ডিজাইন করে। সাধারনত ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং হচ্ছে বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রপাতির সাথে তড়িৎচুম্বকীয়তত্ত্বের প্রয়োগ।
কাজের ক্ষেত্র:
- সরকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যেমন প্রকৌশল অধিদপ্তর, বিদ্যুৎ বিভাগ, সশস্ত্র বাহিনী, রেলওয়ে হাসপাতাল ইত্যাদিতে ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য চাকুরীর সুযোগ রয়েছে।
- বিভিন্ন বেসরকারী প্রতিষ্ঠান যেমন, বিদ্যুৎ সঞ্চালন ও বিতরণ সংস্থা, টেলিযোগাযোগ ও অপটিক্যাল ফাইবার শিল্প, ন্যাভিগেশনাল সরঞ্জাম উৎপাদন শিল্প, এরোস্পেস শিল্প, অটোমোবাইল শিল্প, নিমার্ণ ও স্থাপত্য সংস্থা ইত্যাদিতে চাকুরীর সুযোগ রয়েছে।
পরিশেষে বলা যায়, মূলত ইঞ্জিনিয়ারিং হচ্ছে একটি কাজ কত কম সময়ে, কত সহজে, কম খরচে কতটা নিখুতভাবে সম্পন্ন করা যায় সেই প্রক্রিয়া। যে কারনে মানুষের নিত্য জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ইঞ্জিনিয়ারিং এর প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব অপরিসীম।
উন্নত দেশগুলো এত সাফল্য অর্জন করেছে তার পেছেনে মূল কারন তারা সবাই জীবনের ছোট-বড় সকল ক্ষেত্রে ইঞ্জিনিয়ারিং জ্ঞান প্রয়োগ করে।
যে কোন কাজ কম সময়ে, সহজে, কম খরচে নিখুতভাবে সম্পন্ন করতে পারে, তারা অপরের অর্জন শুধু ভোগ না করে প্রতিনিয়ত নতুন কিছু করার জন্য নিজেরা চেষ্টা করে। তাই আপনি কোন ধরনের ইঞ্জিনিয়ারিং বেছে নেবেন, আপনার পছন্দের ফিল্ডটি কোনটি সেই বিষয়ে অনেক চিন্তাভাবনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।