ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্র-ছাত্রী ও উত্তীর্ণ ভাইদের ভোল্টেজ ল্যাবের পক্ষ থেকে স্বাগতম। আশা করছি আল্লাহ অশেষ রহমতে সকলে ভালো আছেন। ইতিমধ্যে ভোল্টেজ ল্যাবের বিভিন্ন পোস্টের কমেন্ট সেকশনে একটি প্রশ্ন করেছেন অনেকেই, এছাড়া এই প্রশ্নটি আমাদেরকে মেইলও করেছেন।
প্রশ্নটি হলো “ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়াদের সনদের মান কিসের সমমান?” হ্যা, এই লেখাটিতে বিষয়টি আপনাদের সামনে বিস্তারিত তুলে ধরার চেষ্টা করছি।
প্রথমে জেনে নেই ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং কি?
ইঞ্জিনিয়ার বলতে বুঝায় মানুষের জীবনকে সহজ করার জন্য বৈজ্ঞানিক এবং প্রযুক্তিগত জ্ঞানের প্রয়োগ। ডিপ্লোমা হলো একটি ডিগ্রী যেখানে ব্যবহারিক ও তাত্ত্বিক বিষয় সমান গুরুত্বদিয়ে পড়াশুনা করানো হয়।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং ৪ বছর মেয়াদি কোর্স। এস এস সি পরীক্ষা দেবার পর ছাত্র-ছাত্রী ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে ভর্তি হবার যোগ্যতা লাভ করে থাকেন।
কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের আওতায় পরিচালিত ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে বিভিন্ন জেলা শহরে অবস্থিত সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ছাড়াও বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, ইনস্টিটিউট অব গ্লাস অ্যান্ড সিরামিক, গ্রাফিক আর্টস ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ সার্ভে ইনস্টিটিউটে শিক্ষার্থী ভর্তি করানো হয়।
এবার প্রশ্ন হলো ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়াদের সনদের মান কিসের সমমান???
ছবি রেফারেন্সঃ “Wikipedia”
এস,এস,সি পরেই ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং প্রোগ্রামে ভর্তি হতে হয় যা কিনা বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে ৪ বছর মেয়াদি কোর্স। ভারতে মূলত এটা ৩ বছর মেয়াদি কোর্স।
HSC হলো একটি সার্টিফিকেট কোর্স পাশ যা কিনা একটি শিক্ষাগত যোগ্যতা। কিন্তু ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং হলো একটি ডিগ্রী। সার্টিফিকেট কোর্স পাশ যেমনঃ PSC, JSC, SSC, HSC – এগুলো আপনি ভিজিটিং কার্ড বা প্যাডে লিখে উপস্থাপন করতে পারবেন না। কিন্তু আপনি ডিগ্রী করে যেমনঃ Diploma, BSc, MSc, Honours – ইত্যাদি করে ভিজিটিং কার্ড বা প্যাডে লিখে উপস্থাপন করতে পারবেন।
এবার আসি আসল কথায়, ১ মাস, ৩ মাস, ৬ মাস মেয়াদী কিছু ডিপ্লোমা সার্টিফিকেট কোর্স রয়েছে যেটা ডিপ্লোমা ডিগ্রী নয়। ডিপ্লোমা কেবল তখনি ডিপ্লোমা ডিগ্রির মর্যাদা পাবে, যখন সেই ডিপ্লোমা কোর্স কারিকুলামের স্থিতিকাল ন্যূনতম ১ বছর মেয়াদী।
ফেলোশীপ ডিগ্রি কে মাস্টার্স সমমান ধরা হয় আবার ১ মাস, ৩ মাস, ৬ মাস মেয়াদী কিছু ফেলোশীপ ট্রেনিং সার্টিফিকেট কোর্স আছে যেটাকে মাস্টার্স সমমান তো দূরের কথা ডিগ্রি বলেই গন্য করা হয় না। আশাকরি সার্টিফিকেট কোর্স আর ডিগ্রির পার্থক্য টা এবার বুঝতে পেরেছেন।
HSC সাথে Diploma তুলনা???
HSC সাথে Diploma তুলনা করা বোকামি ছাড়া আর কিছুই নয়। নিচের ছবিটি লক্ষ্য করুন।
উপরের ছবিটিতে Higher Secondary Education / HSC গ্রেড ১২ যা শেষ করতে বয়স প্রায় ১৭ + বেশি লাগে। Diploma in Engineering এর ক্ষেত্রে গ্রেড ১৪ যা শেষ করতে বয়স প্রায় ১৯+ বেশি লাগে।
আবার যেখানে SSC শুধুমাত্র একটি সার্টিফিকেট এবং ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং একটি ডিগ্রী, তাহলে কেন HSC সাথে তুলনা করা হয়??? অনেকেই বলে থাকেন ডিপ্লোমা আর এইচ,এস,সির চাকুরীর সমমান সমান, কি করে??? আচ্ছা এটিই এখন আলোচনা করাবো।
এবার আসি চাকুরীর বাজারে Diploma ও HSC
বেশিরভাগ ডিপ্লোমা ডিগ্রীধারীরা চাকুরীর ক্ষেত্রে শুরুতে সরাসরি ১০ম গ্রেডে যোগদান করেন ও বেতন পান। অনেকে জেনারেল এডুকেশন থেকে স্নাতক, স্নাতকোত্তর করেও চাকরিতে ১০ ম গ্রেডের নিচে যোগদান করেন। প্রায় সকল ডিপ্লোমা ডিগ্রিধারীরা চাকরিতে এন্ট্রি পদে ২য় শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তা।
HSC করে এসে ১০ম গ্রেডে চাকুরীতে যোগদান করতে পারবেন তা কল্পনাও করা যায় না। আবার হয়তো অনেকেই বলতে পারেন ডিপ্লোমা ডিগ্রী পাশ করে অনেকেই বেকার বসে আছেন, মজার ব্যাপার হলো মাস্টার্স বা বি,এস,সি ডিগ্রী পাশ করেও তো অনেক বেকার রয়েছে।
বেকার কেউ প্রতিষ্ঠানের দোষে হয় না, নিজের কর্ম দোষে হয়। কোন কিছু বলার আগে অবশ্যই বিচার বিশ্লেষণ করে বলা উচিৎ। HSC এর সাথে Diploma তুলনা করার কোন যৌক্তিকতাই নেই। ডিপ্লোমা ডিগ্রী বরং ডিপ্লোমা ডিগ্রীর সমান।
ডিপ্লোমা করে বি,এস,সি তে ভর্তি হওয়া কি ঠিক???
SSC পরেঃ HSC ২ বছর + BSc ৪ বছর = ৬ বছর Graduation Complete
SSC পরেঃ Diploma ৪ বছর + BSc ৪/৩ বছর = ৮ / ৭ বছর Graduation Complete
আবার ডিপ্লোমাদের জন্য সরকারি একটি মাত্র ভার্সিটি ডুয়েট। তাহলে সবকিছু বিবেচনা করে আপনার কি মনে হয়????
হ্যা, আপনার মনেও হয়তো এই প্রশ্নটি ঘুরছে যে ডিপ্লোমা করে বি,এস,সি করা শুধুমাত্র সময় নষ্ট ছাড়া আর কিছুই না।
যদি সময়ের কথাই ভাবেন তাহলে যেনে শুনে কেন HSC তে ভর্তি হলেন না??? সত্যিকার অর্থে ডিপ্লোমা করে অনেকের লক্ষ্য থাকে চাকুরী। হ্যা, আপনি ডিপ্লোমা করার পর অনেক বড় একটি সুযোগ পাচ্ছেন যা কিনা এইচ,এস,সি ছাত্র-ছাত্রীরা পাবে না।
বিভিন্ন প্রাইভেট ভার্সিটি আছে যেখানে ডিপ্লোমা পাশকৃত ছাত্র-ছাত্রী জবের পাশাপাশি বিকালের শিফটে পড়াশুনার সুযোগ পাবেন যা কিনা এইচ,এস,সি তে হলে পাবে না। এক্ষেত্রে ডিপ্লোমা চাকুরীর অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারবে যা বি,এস,সি শেষ করার পর খুব ভালো কাজে দিবে।
ডিপ্লোমা ছাত্র-ছাত্রীরা যেসকল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারবেন তা পড়ুন
ডিপ্লোমা করে বিএসসি করলে এখানে আপনি দুটি ডিগ্রী পাচ্ছেন যা চাকুরীর ক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে
- ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রী
- বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রী
যদি উচ্চ ডিগ্রীর চিন্তা থাকে তাহলে HSC করাই ভাল। কারন HSC পর অনেক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় আছে যেখানে পরীক্ষা দিয়ে চান্স পাবার সুযোগ থাকে। সবকিছুর সুবিধা ও অসুবিধা আছে যা আমাদের মেনে নিতেই হবে। সবকিছু একসাথে কখনো পাওয়া সম্ভব না।
এছাড়া ডিপ্লোমা পড়াশুনার সুবিধা ও অসুবিধা বিস্তারিত জানতে পড়ুন এখানে
ডিপ্লোমা শেষ করার পর যেসকল পেপারস ক্যাম্পাস থেকে সংগ্রহ করতে হবে পড়ুন