ডিপ্লোমা ধারী ছাত্র-ছাত্রীরা যখন উচ্চ শিক্ষার কথা চিন্তা করে থাকেন তখনি নাম আসে একটি প্রতিষ্ঠানের আর সেটা হলো ডুয়েট । ডুয়েট ডিপ্লোমা ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য একটি স্বপ্নের প্রতিষ্ঠান।

বাংলাদেশে ৪৯ টি সরকারি পলিটেকনিক ও ৩৮৭ টি বেসরকারি পলিটেকনিক রয়েছে যেখান থেকে হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রী পাশ করে বের হচ্ছে প্রতি বছর। কিন্তু তাদের উচ্চ শিক্ষার জন্য সরকারিভাবে শুধুমাত্র একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। আর তা হলো ডুয়েট।  এই লেখাটিতে যে যে বিষয় আলোচনা করা হবে।

  1. ডুয়েট আবেদনের যোগ্যতা

  2. ডুয়েটের সর্বমোট আসন সংখ্যা

  3. ডুয়েটের পরীক্ষা পদ্ধতি

  4. ডুয়েটের আবেদনের নিয়মাবলী

  5. ডুয়েটে চান্স পেতে চাইলে কিছু দিক-নির্দেশনা

ডুয়েট আবেদনের যোগ্যতা

  • আবেদনের জন্য প্রার্থীকে এস এস সি বা তার সমমানের পরীক্ষায় ৫০% অথবা ৫ স্কেলে GPA 3.00 ঐচ্ছিক বিষয় সহ পেতে হবে।
  • ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং/ আর্কেটেকচার এ ৬০% অথবা 4 এর স্কেলে CGPA নূনতম 3.00 পেতে হবে।
  • ২০১৩ সন এবং এর পরবর্তি সনের ডিপ্লোমা পড়াশুনা শেষ করেছেন, তার আবেদন করতে পারবেন।

কিছুটা পরিবর্তন হতে পারে তবে সবচেয়ে ভালো হয় ভর্তি সংক্রান্ত তথ্য ডুয়েটের ওয়েবসাইট থেকে দেখে নেওয়া।

Duet Website: http://www.duet.ac.bd

ডুয়েটের সর্বমোট আসন সংখ্যা

  • ইলেকট্রিক্যাল এবং ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ -১২০
  • কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ-৬০
  • সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ-১২০
  • মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ-১২০
  • ইন্ডাস্ট্রিয়াল এন্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ-৩০
  • টেক্সটাইল বিভাগ-৬০
  • আর্কিটেকচার বিভাগ-৩০

ডুয়েটের পরীক্ষা পদ্ধতি

নন-ডিপার্টমেন্টের জন্য যে যে বিষয়ের বইগুলো পড়তে হবেঃ

  • গনিত
  • পদার্থ
  • রসায়ন
  • ইংরেজি

এই চারটি বই সব ডিপার্টমেন্টের জন্য পড়তে হবে। এই চারটি বিষয়ে সর্বমোট ১৫০ নম্বর থাকবে এবং ডিপার্টমেন্টের জন্য সর্বমোট ১৫০ নম্বর থাকবে। এই দুটি বিষয় থেকে প্রায় ৭৫% থেকে ৮০% নম্বরের লিখিত পরীক্ষা হবে এবং বাকি ২০% থেকে ২৫% এম সি কিউ থাকবে।

ডুয়েটের আবেদনের নিয়মাবলী

ডুয়েটে আবেদনের নিয়মাবলী ও প্রার্থীর যোগ্যতা সম্বন্ধে বিস্তারিত ডুয়েটের প্রোসপেক্টাসে দেওয়া আছে। প্রোসপেক্টাস ডাউনলোড করে নিতে পারেন।

ডাউনলোড করুনঃ Duet_admission_prospectus.pdf

ডুয়েটে চান্স পেতে চাইলে কিছু দিক-নির্দেশনা

 

ডুয়েট

ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের স্বপ্নের জায়গা হলো ডুয়েট। প্রতিবছর সীমিত আসন সংখ্যার জন্য বিপুল সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রী প্রতিযোগিতা করে থাকে। ডুয়েট মোট আসন সংখ্যা ৬৩০ যার বিপরীতে (১০,০০০ জন) বা তার ও বেশি ছাত্র-ছাত্রী প্রতিযোগিতা করে থাকে।

পরীক্ষা সাফল্য লাভ করতে চাইলে আপনাকে অবশ্যই সঠিক দিক নির্দেশনা ও পরিকল্পনা মোতাবেক চলতে হবে। আপনাদের সাথে কিছু বিষয় শেয়ার করবো যাতে আপনারা ভালো একটি ধারণা নিতে পারেন।

এখন আমরা যে বিষয়গুলো শেয়ার করবো সেটা আমাদের একান্ত মতামত। আপনি চাইলে কিছুটা পরিবর্তন বা সংশোধন করে দিক নির্দেশনা গুলো অনুসরণ করতে পারেন।

  • প্রথমে আপনার লক্ষ্য স্থির করুন। কথায় আছে, “মাঝি ছাড়া নৌকা আর লক্ষ্য ছাড়া জীবন একই রকম “। আপনি জীবনে যা কিছুই করেন না কেন, আপনাকে একটা লক্ষ্য সেট করতে হবে এবং মন স্থির করে ধীরে ধীরে এগুতে হবে। সেখানে সাফল্য অনুপস্থিত যেখানে কোন লক্ষ্য নেই।
  • আপনি যদি পলিটেকনিকের প্রথম বা দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র/ছাত্রী হয়ে থাকেন তাহলে এটাই আপনার পারফেক্ট সময়। সময় নষ্ট করবেন না। আমি আবার বলছি সময় নষ্ট করবেন না।
  • ডিপ্লোমাতে অনেক ছাত্র-ছাত্রী সময় নষ্ট করে থাকেন। তারা যদি তাদের সময় গুলো কোন কিছু শেখার কাজে ব্যবহার করতো তাহলে ডিপ্লোমা পাসের পরে আর বেকার থাকতে হতো না কাওকে।
  • আপনি যদি ডিপ্লোমা দ্বিতীয়/তৃতীয়/চতুর্থ বর্ষের ছাত্র/ছাত্রী হয়ে থাকেন তাহলে  সাথে যেকোন একটি ডুয়েট ভর্তি গাইড রাখুন। এবার আপনার ডিপার্টমেন্টের যে বইটি আপনি পড়ছেন সেখান থেকে টপিক অনুযায়ী ভর্তি গাইড পড়া শুরু করেন। এতে করে আপনার ক্লাসের এবং এডমিশন গাইডের ডিপার্টমেন্টের টপিক গুলো ক্লিয়ার হবেন ও এখন থেকেই প্রস্তুতি শুরু হয়ে যাবে।
  • পলেটেকনিক বোর্ডের প্রশ্ন গুলো গতানুগুতিক হয়ে থাকে। অনেক ছাত্র-ছাত্রীদেরকে দেখা যায় যে তারা অনেক টপিক না পড়ে বা এড়িয়ে যায় এবং পরীক্ষায় অংশগ্রহন করে থাকে। কিন্তু ডুয়েটের ক্ষেত্রে বেপারটা সম্পূর্ণ আলাদা। আপনি যেহেতু ডুয়েট এ ভর্তি হবেন সেহেতু আপনাকে সবগুলো টপিক ভালভাবে জানতে হবে। এড়িয়ে যাওয়ার কোন অপশন নেই।
  • সমস্ত টপিকে ক্লিয়ার কনসেপ্ট রাখতে হবে। আর বেসিক ক্লেয়ার রাখতে হবে কেননা ডুয়েট এর এডমিশন টেস্ট ২ ঘন্টা তাই ম্যাথগুলো আপনাকে যথাসম্ভব শর্টকাট এ করার চেষ্টা করতে হবে।
  • বেশি বেশি MCQ পড়তে হবে কারন ৫৪-৬০ নম্বরের মত MCQ এসে থাকে।
  • যারা বর্তমানে ৭ম সেমিস্টারে ফাইনাল পরীক্ষা দিচ্ছেন বা দিবেন তারা পরীক্ষা শেষ করা মাত্র গাজীপুর চলে আসেন এবং ভালো একটা কোচিং সেন্টারে ভর্তি হন। গাজীপুর ডুয়েট এ আসা মাত্র আপনার মনের ভিতর স্বপ্ন বাঁধা বাঁধবে এবং সেখানকার পরিবেশ থেকে অনেক কিছু শিখবেন।
  • নিজের দূর্বলতা গুলো কাটিয়ে উঠার চেষ্টা করুন।
  • ভয় পাবেন না। ১০০% কনফিডেন্ট রাখেন নিজের উপর। আপনি পারবেন। কারন আপনার মত ছাত্ররাই ডুয়েট এ চান্স পেয়ে থাকে। প্রথমে হয়তো সবকিছু কঠিন মনে হতে পারে কিন্তু পড়তে পড়তে পরে সবকিছু সহজ হয়ে যাবে।
  • মুখস্থ বিদ্যা পরিহার করুন। যে জিনিশ বুঝার সেটাকে বুঝতে হবেই। কোন কিছু না বুঝে মুখস্থ করবেন না। কারন বই থেকে হুবহ প্রশ্ন নাও আসতে পারে।
  • কনফিডেন্স নিয়ে পরীক্ষার হলে যাবেন। ঠাণ্ডা মাথায় সব প্রশ্নের উত্তর দেবার চেষ্টা করুন।

ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীদের ক্যারিয়ার পরিকল্পনা টিপস পড়ুন

ডিপ্লোমাঃ ইলেকট্রিক্যাল বিষয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের চাকুরীর প্রস্তুতি (বই তালিকা) পড়ুন

“ বিশ্বাস জীবনকে গতিময়তা দান করে, আর অবিশ্বাস জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলে 
—মিল্টন।

“ মাত্র দুটি পন্থায় সফল হওয়া যায়! একটি হচ্ছে সঠিক লক্ষ্য নির্ধারণ করা, ঠিক যা তুমি করতে চাও। আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে, সেই লক্ষ্যে কাজ করে যাওয়া 
—মারিও কুওমো।

আজ এই পর্যন্ত। লেখাটি ভালো লাগলে শেয়ার করবেন সামাজিক মাধ্যমগুলোতে। আর যেকোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করতে পারেন।

ধন্যবাদ