আমাদের সমাজে সায়েন্স নিয়ে পড়ার একটা বিরাট প্রবণতা রয়েছে। এর একমাত্র কারন হলো ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন এবং ডাক্তার ও ইঞ্জিনিয়ার দুটিকে অনেক সম্মানজনক ডিগ্রী ও বলা হয়ে থাকে।
অনেকেই মনে করেন ভালো ক্যারিয়ার আর সফলতা মানেই হলো ডাক্তার নয়তো ইঞ্জিনিয়ার হতে হবে। এমনটাই পরিবার আর সমাজ থেকে শিখানো হয় ফলে আমরা বেশিরভাগ সময় এই দুটি আমাদের ফিউচার প্লান হিসেবে রাখি। সত্যিকার অর্থে আপনার সফলতা যেকোন জায়গা থেকে আসতে পারে। অনেকেই ইঞ্জিনিয়ারিং পড়াশুনা করে ব্যবসা করছে আবার অনেকেই ডাক্তারি পড়াশুনা করে ফ্রিল্যান্সিং করে সফল হচ্ছেন।
একটি কমন প্রশ্ন, নামের আগে ইঞ্জিনিয়ার বা ডাক্তার কারা ব্যবহার করতে পারবেন? অনেকেই দেখা যায় গ্র্যাজুয়েশন কমপ্লেট করেই নামের আগে ইঞ্জিনিয়ার ব্যবহার করে থাকেন, আসলে এটা কতটুকু যুক্তিসংগত! এই লেখাটিতে এটাই মূলত আমরা আপনাদের জানানোর চেষ্টা করবো।
নামের আগে ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার কারা ব্যবহার করতে পারবেন?
অনেকেই মনে করেন যে ইঞ্জিনিয়ারিং কোন পাবলিক বা ভালো কোন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্যাজুয়েশন কমপ্লেট করলেই নামের আগে ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রী ব্যবহার করতে পারবেন। এক কথায় এটি একদম ভুল ধারনা। যেসকল বিশ্ববিদ্যালয় IEB – Institute of Engineerig Bangladesh এর বাংলাদেশের যেকোনো পাবলিক ইউনিভার্সিটি এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় , কিছু দেশি এমন কি বিদেশী প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি থেকে এসব কোর্স করেও নামের আগে আপনি ইঞ্জিনিয়ার পদবী ব্যবহার করতে পারবেন না।
বাংলাদেশে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে একমাত্র শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং কয়েকটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় এই সুবিধা রয়েছে।
জেনে নিন কারা ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেই নামের আগে ইঞ্জিনিয়ার ডিগ্রী ব্যবহার করতে পারবেন।
১/ নামের আগে ইঞ্জিনিয়ার টাইটেল ব্যবহার করার পূর্ব শর্ত হলো আইইবি (IEB accredited) ডিগ্রী অর্জন করতে হবে।
স্বীকৃত সরকারি বা বেসরকারি আইইবি অন্তর্ভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রী এবং ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন ,বাংলাদেশ (আইইবি) মেম্বার হতে হবে।
২/ এ এমআই সেকশন এ এবং বি পাশ থাকতে হবে। এছাড়াও আইইবি-এর এসোসিয়েট মেম্বার হিসেবে নিবন্ধিত হতে হবে।
৩/ কিছু ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার স্বীকৃত কোন পলিটেকনিক বা কারিগরি প্রতিষ্ঠান থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে ডিপ্লোমা থাকলে ,
এবং ইনস্টিউশন অফ ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ থেকে নিবন্ধিত হলে ইঞ্জিনিয়ারিং পদবী ব্যবহার করতে পারবে।
দুই মাস বা ছয় মাস অথবা দুই বছরের কোর্স করেই নিজেকে ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে পরিচয় দিতে পারবে না। এটা যেমন অন্যায় ও দণ্ডনীয় অপরাধ পাশাপাশি এটা মানুষের সাথে ধকা দেওয়া ও ইঞ্জিনিয়ার পদবীর অবমাননা করা।
ইঞ্জিনিয়ারিং পদবী ব্যবহারের যেমন কিছু নির্ধারিত নিয়ম রয়েছে, তেমনই ডাক্তার পদবী ব্যবহারেরও কিছু নিয়ম আছে।
১/ ২০ডিসেম্বার ২০১০-এর প্রকাশিত গ্রজেট অনুযায়ী বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিল অ্যাক্ট এর ধারা ২২ ও ২৯ এর আওতায় গইইঝ/ ইউঝ বাদে অন্য কোন চিকিৎসকদের নামের আগে ডাক্তার পদবী ব্যবহার করা যাবে না।
২/ বিএমডিসির রেজিস্ট্রেশনভুক্ত এমবিবিএস অথবা বিডিএস ব্যতীত কেউ তাদের নামের সাথে ডাক্তার ডিগ্রী ব্যবহার করতে পারবে না। এবং এটা শাস্তি যোগ্য অপরাধ।
৩/ পল্লী চিকিৎসক ও মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্টরা তাদের নামের সাথে ডাক্তার পদবী ব্যবহার করতে পারবেন না। বিএমডিসির সংশোধিত এই আইন অমান্য করে কেউ নিজের নামের আগে ডাক্তার শব্দ ব্যবহার করলে তার বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থার রয়েছে।
৪/।বিএমডিসির ২১ ধারা হচ্ছে, নিবন্ধন ব্যতীত অ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসা নিষিদ্ধ। এ আইন ব্যতীত কেউ নিজেকে মেডিকেল চিকিৎসক বা ডেন্টাল চিকিৎসক হিসেবে পরিচয় দিতে পারবে না। কোন ব্যক্তি যদি এই আইন অমান্য করে তবে ৩ বছরের কারাদণ্ড ১ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড হবে।
৫/ বিএমডিসির ২৯ ধারা হল, ভুয়া পদবী ব্যবহার নিষিদ্ধ। এ আইনের অধীনে নিবন্ধিত কোন মেডিকেল চিকিৎসক বা ডেন্টাল চিকিৎসক এমন কোন নাম, পদবী, বিবরণ প্রতীক ব্যবহার করবেন না যাতে অতিরিক্ত পেশাগত যোগ্যতা প্রকাশ পায়। কারন ,কেউ এমন কিছু করে আইন লঙ্ঘন করলে তাকেও শাস্তির আওয়তায় আনা হবে।
সবশেষে বলা যায়, ডাক্তার ও ইঞ্জিনিয়ার ডিগ্রী যেমন খুব সম্মানজনক ও গুরুত্বপূর্ণ তেমনই এই পদবী অর্জন করাও এতটা সহজ নয়। আপনার কাঙ্ক্ষিত ক্যরিয়ার পেতে হলে নির্ধারিত কিছু নিয়ম মানতে হবে তবেই আপনার নামের আগে যুক্ত হবে ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার ডিগ্রী। নিজের জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণের পাশাপাশি আপনি এই বিষয় গুলো মাথায় রাখলে আশাকরি কোন সমস্যায় পরতে হবে না।