“আপেক্ষিকতা” এই শব্দটি আমরা সবাই শুনে থাকব। কথায় আছে, যেটা আমরা দেখি সেটা নাও থাকতে পারে, যেটা দেখিনি হয়ত সেটাই আছে। এই ভাবতাত্ত্বিক বাণীর আড়ালেই লুকিয়ে আছে এই প্রশ্নটির উত্তর।
আপেক্ষিকতা বলতে কি বোঝায়?
মনে করুন, আপনি গ্রামের বাড়ি যাবেন। আর ট্রেনযোগে গ্রামের বাড়ি যেতে কারই না ভাল লাগে। এখন আপনি ট্রেনে উঠে বসলেন। জানালার বাইরে দিয়ে দেখলেন স্টেশন প্লাটফর্মে একজন মানুষ দাঁড়িয়ে আছে। ট্রেন চলতে শুরু করল।
ট্রেন যখন চলতে শুরু করল তখন আপনার মনে হবে স্টেশন প্লাটফর্মে দাঁড়ানো মানুষটি গতিশীল। আবার আপনার কাছে আপনাকে মনে হবে স্থির। আসলে কিন্তু বাস্তবে ঐ লোকটি তার স্থানেই দাঁড়িয়ে আছে। সে গতিশীল নয়। আবার আপনিও স্থির নয়। আপনি গতিশীল।
আবার ট্রেন যখন সবুজ ধানক্ষেত বা গাছাপালার পাশ দিয়ে যেতে শুরু করবে তখন মাঠ বা সবুজ গাছপালা গুলোকে মনে হবে ট্রেনের বিপরীত দিকে চলছে। বাস্তবে কিন্তু মাঠ কিংবা গাছগুলোও স্থির।
অর্থাৎ যেটা বাস্তবে নয় কিন্তু আমাদের মনে হয় সেই অনুভূতিই মূলত আপেক্ষিকতা। যার সুন্দর ব্যাখ্যা করেছেন স্যার আইনস্টাইন।
আইন্সটাইন ও আপেক্ষিকতা
আইনস্টাইনকে নিয়ে অনেক গল্প প্রচলিত আছে। ওগুলো আসলে সত্য, নাকি সবই শুধু কৌতুক, তা বলা মুশকিল। এ রকম একটা গল্প শুনুন।
একবার দুই তরুণ-তরুণী আইনস্টাইনের কাছে আপেক্ষিকতার তত্ত্ব বুঝতে গেলেন। তিনি বললেন, তেমন জটিল কিছু নয়। মনে করো, প্রেমিকার জন্য তুমি পার্কে অপেক্ষা করছ। আসছে না। তখন প্রতিটি মিনিট মনে হবে যেন ১ ঘণ্টা। আর প্রেমিকা আসার পর তোমরা গল্প জুড়ে দিলে। তখন প্রতিটি ঘণ্টা মনে হচ্ছে মাত্র ১ মিনিট!
আরেকবার আইনস্টাইন তখন কাগজ–কলম নিয়ে বসেছেন। আপেক্ষিকতার সাধারণ সূত্র লিখছেন। গভীর চিন্তামগ্ন। এমন সময় তাঁর গৃহকর্মী এসে জিজ্ঞেস করলেন, ডিম কিনেছি ১৫টা। প্রতি হালি চার টাকা হলে, চার হালির একটা কম, ১৫টি ডিমের দাম কত দেব? আইনস্টাইন বললেন, দাঁড়াও, হিসাব করে বলছি। এরপর তিনি খাতা–কলম নিয়ে হিসাব করতে শুরু করলেন। যদি ৪টার দাম x হয় আর ১৫টির দাম y, তাহলে y = …? ঘণ্টাখানেক পর তিনি গৃহকর্মীকে বললেন, খুব জটিল হিসাব, বীজগণিত ব্যবহার করে দেখলাম, ১৫টি ডিমের দাম সাড়ে চৌদ্দ থেকে সাড়ে পনেরো টাকার মাঝামাঝি।
তার মানে, 14.5< y >15.5 টাকা। গৃহকর্মী তো অবাক। বললেন, ওই দাম তো আমি তখনই বের করে ডিমওয়ালাকে দিয়ে দিয়েছি! হিসাব তো খুব সহজ। ৪টার দাম চার টাকা, একটার দাম ১ টাকা, তাই ১৫টার দাম ১৫ টাকা! আইনস্টাইন বললেন, ও, ঠিক তাই তো! এর জন্য জটিল হিসাবের দরকারই ছিল না।
অবশ্য আপেক্ষিকতার সূত্র কিন্তু তুলনামূলক কোনো ব্যাপার নয়। সেটা অনেক জটিল বিষয়।
পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘুরলেও তা স্থির লাগে কেন?
এবার আসা যাক মূল প্রশ্নে। পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘুরার পরেও কেন স্থির? এ প্রশ্নের উত্তর বুঝার জন্যই মূলত আমি আপেক্ষিকতার বিষয়টি ক্লিয়ার করেছি। এখন ব্যাপারটা বুঝতে সহজ হবে।
পৃথিবী যে বেগ নিয়ে সূর্যের চারদিকে ঘুরছে সে তুলনায় আমাদের বেগ খুবই নগণ্য। তাই আপেক্ষিকভাবে পৃথিবীর সাপেক্ষে আমাদের বেগ শূণ্য। সেজন্য ঘুরন্ত পৃথিবীকে স্থির বলে মনে হয়।
সর্বশেষ একটি সুন্দর উদাহরণের মাধ্যমে ব্যাপারটি আরো ক্লিয়ার করা যাক। যদি একটি ঘুরন্ত ফুটবলের উপর একটি পিপড়াকে ছেড়ে দেয়া হয় তাহলে পিপড়া নিশ্চয়ই বলের বেগ আন্দাজ করতে পারবেনা। তার কাছে বলটিকে স্থির বলেই মনে হবে।
আজকের এই আর্টিকেলটি আশা করি ভাল লেগেছে। ইলেকট্রিক্যাল, ইলেকট্রনিক্স আর্টিকেলের একঘেয়েমি দূর করতে এরকম বিজ্ঞানভিত্তিক আর্টিকেল সত্যিই কার্যকর। ধন্যবাদ।
আরো কিছু আর্টিকেল
দূর থেকে চলন্ত জাহাজকে স্থির মনে হয় কেন?