দিনদিন বাড়ছে অসংখ্য কর্মক্ষেত্র। কিন্তু অন্যদিকে প্রতিদিনই বাড়ছে বেকারের সংখ্যা! এর কারন হলো কর্মক্ষেত্র আর বেকার পরস্পরের প্রত্যাশার ও যোগ্যতা সম্মিলন ঘটাতে পারছেনা। তাই দিন দিন এই সমস্যা বেড়েই চলেছে। তরুণদের কথা বাদই দিলাম, অভিজ্ঞরাও চাকরি ছাড়ার পর আবার নতুন চাকরি পায় না।
আসলে আমরা সবসময়ই ভাল কিছুর জন্য বড় বড় বিষয়ে প্রস্তুতি নিই, কিন্তু অনেক খুঁটিনাটি বিষয় অবহেলা করি। অথচ আমরা কখনো হিসাব করে দেখি না এইসব ছোট ছোট বিষয়ের কারণে অনেক বড় অর্জন আমাদের হাতছাড়া হয়ে যায়।
তেমনি চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রেও সকল যোগ্যতা এবং অভিজ্ঞতা থাকা সত্বেও ছোট ছোট কিছু ভুলের কারণে কাঙ্ক্ষিত চাকরির জন্য আমাদের অনেক কষ্ট করতে হয়। আজকে এমনই কিছু ছোট ছোট বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো।
জব ডেসক্রিপশন ভালভাবে না পড়া
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মানুষ চাকরির জন্য প্রস্তাবিত যোগ্যতার দু-একটি নিজের মধ্যে থাকলেই উক্ত চাকরিতে আবেদন করে বসেন। অযথা এই কাজটি আর করবেন না। যেকোনো চাকরিতে আবেদনের পূর্বে অন্ততপক্ষে তার প্রস্তাবিত বেশিরভাগ যোগ্যতা আপনার মধ্যে আছে কিনা এটা নিশ্চিত হয়ে নিন।
এবং যেকোনো চাকরির বিজ্ঞাপন দেখলেই সেখানে আবেদন করবেন না। কারন প্রতিটি চাকরিতে নিয়োগের ব্যাপারে চাকরিদাতার কিছু সুনির্দিষ্ট মতামত থাকে। ভিন্ন ভিন্ন কোম্পানির ভিন্ন ভিন্ন নিয়ম-নীতি থাকে। তাই আবেদন করার পূর্বেই বিবরণী ভালোভাবে পড়ুন।
আপনার যোগ্যতা আবেদনযোগ্য হলে কোম্পানির চাওয়া সকল কাগজপত্র আবেদনপত্রের সাথে যুক্ত করুন। মনে রাখবেন, আপনার মত হাজার হাজার আবেদনকারী রয়েছে উক্ত চাকরির জন্য। সুতরাং নিয়োগকর্তা প্রথমেই অপূর্ণ আবেদনপএগুলো বাদ দিয়ে দিবেন এটাই স্বাভাবিক। সুতরাং কোনো চাকরিতে আবেদনের পূর্বে তাদের চাওয়া সকল কাগজপত্র আবেদনপত্রের সাথে সংযুক্ত করুন।
স্থান পরিবর্তন
আপনি যদি নিজের আবাসস্থল চাকরির জন্য পরিবর্তন করে নতুন কোনো শহরে গিয়ে থাকেন, তবে অবশ্যই সেটা সৎভাবে নিজের বায়োডাটায় উল্লেখ করুন। কারন চাকরি পাওয়ার আশায় হঠাৎ করে অন্য কোনো পরিবেশে গিয়ে স্বভাবতই নতুন পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়াতে কিছুটা সময় লেগে যায়। তাই বিষয়টি আপনার বায়োডাটায় সংযুক্ত করলে সহজেই নিয়োগকর্তার দৃষ্টি আকর্ষন করবে। এতে নিয়োগকর্তা বিশেষ দৃষ্টিভঙ্গি দেখবে।
সঠিকভাবে সাক্ষাৎকার দেওয়া
চাকরির ইন্টারভিউ শুধুমাত্র প্রশ্নকর্তার প্রশ্ন আর আপনার উত্তরের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। বরং আপনার শারীরিক ভাষা, কথা বলার ধরন, হাঁটা, বসা, হাসি, দৃষ্টি, উত্তর দেওয়ার কৌশল সবকিছুর উপর নির্ভর করে। আপনার মধ্যে মানসিক দুর্বলতা কাজ করলে সেই দুর্বলতা খুব দ্রুত আপনার সার্বিক দক্ষতা কমিয়ে দিবে। আপনাকে দ্বিধাগ্রস্ত করে তোলবে। তাই আত্মবিশ্বাসের সাথে সকল চাকরির সাক্ষাৎকার মোকাবেলা করতে হবে।
উচ্চাকাঙ্ক্ষা
কেউ জীবনের শুরুতেই চূড়ান্ত সাফল্যে পৌঁছাতে পারে না। আর এই সত্য আপনাকে মেনে নিতে হবে। সবারই নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে উচ্চাকাঙ্খা থাকে। কিন্তু এই উচ্চাকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য নির্দিষ্ট সময় প্রয়োজন। বেশিরভাগ মানুষ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভালো ফলাফলের কারনে তারা মনে করেন সর্বোচ্চ সম্মানির চাকরি পাওয়ার জন্য তারা এখনই যোগ্য। জীবনের শুরুতেই তারা সেরাটা পেতে চায়। আপনি যদি এমন উচ্চাকাঙ্ক্ষী হয়ে থাকেন তবে নিশ্চিতভাবেই চাকরি পেতে আপনাকে বেগ পেতেই হবে। কোম্পানিতে নির্দিষ্ট কাজের জন্য নির্দিষ্ট স্যালারি স্কেল নির্ধারণ করা থাকে। সুতরাং আপনি যদি তাদের নির্দিষ্ট স্কেলের চেয়ে বেশি স্যালারি দাবিদার হয়ে থাকেন তবে নিশ্চিতভাবেই আপনি চাকরিটা পাবেন না। কাজেই আপনি শুরুতেই নিজের পারিশ্রমিক কম রাখুন। আপনি যদি সত্যিই যোগ্যতাসম্পন্ন হয়ে থাকেন, তবে খুব দ্রুত আপনার পদোন্নতি হবে এবং সম্মানীয়ও বাড়বে।
বেশি কথা বলা
সব যোগ্যতা থাকার পরও শুধুমাত্র অতিরিক্ত বহির্মূখীতার কারনে অনেকেই চাকরি পায় না। কারন এই বহির্মুখীতা বা বাচালতা করার ক্ষেত্র চাকরির ইন্টারভিউ নয়। চাকরির সাক্ষাৎকারে এই বাচালতা নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। কখনোই এমন স্বভাব চাকরির সাক্ষাৎকারে প্রকাশ করবেন না। সব সময় সুনির্দিষ্ট পয়েন্টে স্বল্প কথা বলুন। যেকোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে নিয়োগকর্তা বিরক্ত না হয় এমনভাবে দ্রুত উত্তর শেষ করুন। সব সমশ অল্প কথায় বেশি প্রকাশ করার চেষ্টা করুন। মনে রাখবেন, চাকরির সাক্ষাৎকারে নিয়োগকর্তা কখনোই নিরর্থক কথা শুনতে পছন্দ করবেন না।
বেশি বাছাই করা
অনেক সংখ্যক মানুষ আছে যারা খুব বেশি বাছ-বিচার এবং খুঁতখুঁতে স্বভাবের কারণে কখনোই কাঙ্ক্ষিত চাকরি পায় না। মনে রাখবেন, অন্যের প্রতিষ্ঠানে চাকরি ক্ষেত্রে বাবা-মায়ের কাছে আবদার করার মতো ইচ্ছা সুযোগ-সুবিধা চাইবেন না। চাকরি আপনার পারিবারিক বিষয় নয়। আপনি যদি সবসময় নিজের জন্য আরামদায়ক পরিবেশ নির্বাচন করেন, তাহলে নিয়োগকর্তা আপনাকে চাকরির জন্য নির্বাচন করবে না। সুতরাং আপনাকে নিয়োগকর্তার কাছে প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনে সকল প্রকার চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করার মানসিকতা প্রকাশ করতে হবে। তাহলে চাকরিদাতা আপনাকে কিছুটা হলেও ভরসা করতে পারবেন।
পরিশেষে বলা যায়, আপনাকে সার্বিকভাবে নিয়োগকর্তাকে বুঝিয়ে দিতে হবে আপনি এ কাজের ব্যাপারে আগ্রহী এবং কাজটি আপনি করতে চাচ্ছেন। এবং এর মাধ্যমে আপনি বহুদূর যেতে চান। একটা কথা মনে রাখতে হবে, আপনাকে বিভিন্নভাবে ক্রমাগত বিভিন্ন চাকরির জন্য চেষ্টা করতে হবে। তাতে আপনার চাকরি পাওয়ার সম্ভাব্যতা অধিকাংশে বৃদ্ধি পাবে। একবার ইন্টারভিউ দেওয়ার পর থেমে গেলে চলবে না। নিজের প্রয়োজনেই প্রতিষ্ঠানের কাছে খোঁজখবর নিন। এতে করে নিয়োগকর্তার কাছে কাজের প্রতি আপনার আগ্রহ প্রকাশ পাবে।