মোবাইল ব্যাংকিং সিস্টেম নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা

মনে করুন, আপনার ব্যাংকভর্তি ব্যালেন্স আছে। এখন কিছু টাকার হুট করে প্রয়োজন হল। এখন, যদি এমন কোন প্রতিকূল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় যার দরুণ আপনি ব্যাংকে যেতে পারছেন না কিংবা এটিএম বুথও ব্যবহার করতে পারছেন না তখন কি করবেন? এদিকে আপনার ক্লায়েন্ট বা পার্টনার অস্থির হয়ে বসে আছে টাকা পাবার জন্য। এই মুহূর্তে একমাত্র ভরসার মাধ্যম হল মোবাইল ব্যাংকিং সিস্টেম।

মোবাইল ব্যাংকিং সিস্টেম কি?

ব্যাংক একাউন্ট যে সবার থাকতে হবে এমন কোন কথা নেই। আপনি যাকে টাকা পাঠাবেন সে দারিদ্র ব্যক্তি হতে পারে। এক্ষেত্রে তার ব্যাংক একাউন্ড নাও থাকতে পারে অথবা আপনিও ব্যাংক একাউন্ট হোল্ডার নাও হতে পারেন। এই সমস্যা সমাধানে এগিয়ে এসেছে মোবাইল ব্যাংকিং সিস্টেম। মোবাইল ব্যাংকিং এমন একটি ডিজিটাল ব্যাংকিং সিস্টেম যার মাধ্যমে স্বল্প খরচে ব্যাংক একাউন্ট সুবিধাবঞ্চিত মানুষের কাছে আর্থিক সাহায্য পৌঁছানো সম্ভব।

মোবাইল ব্যাংকিং এর ইতিহাস

প্রথম দিকের মোবাইল ব্যাংকিং পরিষেবাগুলো এস এম এস ব্যবহার করেছিল, যা এস এম এস ব্যাংকিং নামে পরিচিত ছিল। ১৯৯৯ সালে স্মার্ট ফোন চালু হওয়ার সাথে সাথে WAP (Wireless Application Protocol) এর সহায়তা নিয়ে ইউরোপীয় ব্যাংকগুলো সর্বপ্রথম তাদের গ্রাহকদেরকে এই প্ল্যাটফর্মে মোবাইল ব্যাংকিং সুবিধা প্রদান করতে শুরু করে।

বাংলাদেশের মোবাইল ব্যাংকিং সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ

বাংলাদেশে বর্তমানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদিত ১৫টি প্রতিষ্ঠান এবং বাংলাদেশ ডাক বিভাগ এর সেবা নগদ সহ মোট ১৬ টি প্রতিষ্ঠান মোবাইল ব্যাংকিং সেবা দিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে অধিকাংশই দেশের মানুষের কাছে পরিচিত নয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে এদেশে এম এফ এস এর মাধ্যমে দৈনিক লেনদেন হয় প্রায় ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রায় ৭০ শতাংশ লেনদেন হয় বিকাশের মাধ্যমে, এরপরই আছে রকেটের নাম। রকেটে লেনদেন হয় প্রায় ২২ শতাংশ। বাকি ৮ শতাংশ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে লেনদেন হচ্ছে। বাংলাদেশের মোবাইল ব্যাংকিং সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে কয়েকটির নাম নিচে উল্লেখ করা হলঃ

  • বিকাশ
  • রকেট
  • নগদ
  • উপায়
  • এম ক্যাশ
  • ওকে ক্যাশ
  • সিউর ক্যাশ
  • টি ক্যাশ

মোবাইল ব্যাংকিং এর সুবিধা

  • খুব সহজেই একাউন্ট ওপেন করা যায়।
  • ইন্টারনেট ছাড়াও ডায়াল কোডের মাধ্যমে মোবাইল ব্যাংকিং সুবিধা নেয়া যায়।
  • গ্রাহক চাইলে যেকোনো মুহূর্তে যত খুশিবার একাউন্টে লগ ইন করতে পারবে।
  • ব্যাংকে না উপস্থিত থেকেই ইউটিলিটি বিল পরিশোধ। যেমন– বিদ্যুৎ, গ্যাস, ফোন, পানি, ইন্টারনেট ইত্যাদি পরিশোধ করা যায়।
  • ব্যাংক একাউন্ট থেকে টাকা সহজেই মোবাইল ব্যাংকিং একাউন্টে নিয়ে আসা যায় আবার পাঠানোও যায়। যদিওবা এক্ষেত্রে ইন্টারনেট সংযোগ দরকার হয়। তাই একে iBanking system ও বলা যায়।
  • যে কোন সময় নিজের ও অন্যের মোবাইল ফোন রিচার্জ করা যায়।
  • অনলাইন শপিং এ পেমেন্ট করার সুবিধা পাওয়া যায়।
  • অনলাইন টিকেট (ট্রেনের টিকিট, ফ্লাইট টিকেট) বুকিং করা যায়।
  • বৈদেশিক রেমিট্যান্স গ্রহণ করা যায়।
  • যে কোন সময় একাউন্টের ব্যালেন্সও লেনদেন এর স্টেটম্যান্ট দেখার সুবিধা পাওয়া যায়।

মোবাইল ব্যাংকিং এর অসুবিধা

  • মোবাইল ব্যাংকিং সিস্টেমে অতিরিক্ত সুবিধাদি পেতে এক ধরনের এপ্লিকেশন ব্যবহার করা হয়। এক্ষেত্রে একটি এন্ড্রোয়েড মোবাইল ফোন দরকার পড়ে যা সবার পক্ষে কেনা সম্ভব না।
  • হ্যান্ডসেটটি চুরি হয়ে গেলে টাকার নিরাপত্তা থাকেনা।
  • ক্যাশ আউট চার্জ তুলনামূলক বেশি অথচ এ টি এম থেকে বিনা চার্জেই টাকা তোলা সম্ভব।
  • যারা কর ফাঁকি দেয় তারা এই সিস্টেমের অপব্যবহার করতে পারেন।
  • অনেকসময় পিন নাম্বার হ্যাক হয়ে যাওয়ার প্রবণতা থাকে।

তবে কিছু অসুবিধা থাকলেও আমার মতে মোবাইল ব্যাংকিং এ বর্তমানে সুবিধাই অনেক বেশি।

আরো কিছু আর্টিকেল পড়ুন

ব্যাংক এ টি এম মেশিন (ATM) কিভাবে কাজ করে?

বিট কয়েন কি? বিট কয়েন কিভাবে কাজ করে?

1G, 2G, 3G, 4G বলতে কি বুঝায়? এদের মধ্যে পার্থক্য কি?