কেমন হবে যদি সমগ্র পৃথিবী বিদ্যুৎ শূন্য হয়ে পড়ে? | Blackout in whole world

রবিন দশম শ্রেণীর বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র। বিজ্ঞান নিয়ে তার চিন্তা-ভাবনার শেষ নেই। সে প্রতিটি বিষয় শুধু বই পড়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখেনা, সেই সাথে জিনিসটি নিয়ে গভীরভাবে ভাবে এবং রিসার্চ করে। কাল তার পরীক্ষা। তাই রাত জেগে পড়াশোনা করছে। বাড়িতে বিদ্যুৎ নেই। বাইরে মুষুলধারায় বৃষ্টি। জানালের পাশে মোমবাতি জালিয়ে সে পড়াশোনা করছে।

পদার্থবিজ্ঞানের তড়িৎচৌম্বক অধ্যায়ে ডায়নামোর সাহায্যে বিদ্যুৎ তৈরি টপিকটি পড়ছিল। পড়তে পড়তে আর বৃষ্টির নেশা ধরানো রিমঝিম শব্দে কখন যে চোখের পাতা লেগে গেল সে টেরও পেলনা। টেবিলেই ঘুমিয়ে পড়ল রবিন। ঘুমের মধ্যেই দেখল একটি দুঃস্বপ্ন। সে দেখতে পেল এক বিদ্যুৎবিহীন পৃথিবী।

কেমন হবে যদি সমগ্র পৃথিবী যদি বিদ্যুৎ শূন্য হয়ে পড়ে?

রবিন দেখল পুরো পৃথিবী বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে। পৃথিবীর সমস্ত পাওয়ার প্লান্ট দেওলিয়া হয়ে পড়েছে। জাতীয় গ্রীডগুলোতে স্থবিতরতা কাজ করছে। কারণ যেখানে উৎপাদনই নাই সেখানে সাপ্লাই, ডিস্ট্রিবিউশনের প্রশ্ন আসেনা। সব আইপিপিতে চলছে হাহাকার। পুরো পৃথিবী এক হুমকি এবং চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। জেনারেটর, সোলার, ইলেকট্রনিক্স লাইটের ব্যবসা মুখ ধুবড়ে পড়েছে। এখন শেষ ভরসা যেন মোমবাতি। মোমবাতিতে আলোকিত যেন পুরো বিশ্ব।

এদিকে মোম ব্যবসায়ীদের বিজনেস রমরমা। একেই বলে মনে হয় কারো পৌষ মাস, কারো সর্বনাশ। পুরো আন্তর্জাতিক অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়েছে। সারা পৃথিবীর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। যেন এক বিচ্ছিন্ন দীপ। ব্যবসা-শিল্প প্রতিষ্ঠানে ঝুলছে তালা। কোটি কোটি লোক বেকার হয়ে পড়েছে। এ যেন আদিম যুগের পুনরায় আবির্ভাব।

বিদ্যুৎ শূণ্য পৃথিবী
বিদ্যুৎ শূণ্য পৃথিবী

সূর্যের আলোর উপর নির্ভর হয়ে পড়েছে জনজীবন। বিশাল বিশাল দালানকোঠা, হাসপাতাল যেন আজ বিদ্যুৎ ছাড়া অকেজো। বিদ্যুতের অভাবে মুখ ধুবড়ে পড়েছে চিকিৎসা ব্যবস্থা। ফকির, কবিরাজের বেড়েছে প্রতাপত্তি। হার্বাল, আনাজি, বনাজির উপর নির্ভর করে চলছে মানুষ। রান্নার জন্য ব্যবহার করছে কাঠ কয়লা। তবে কর্ম হারিয়ে সবাই মন দিয়েছে কৃষিকাজে। সেই কৃষিকাজ যেখানে নেই কোন আধুনিকতা বা অটোমেশনের ছোঁয়া।

এর মধ্যেই বিশাল এক বজ্রপাতে ঘুম ভেংগে গেল রবিনের। চোখ খুলে দেখে ততক্ষণে বিদ্যুৎ চলে এসেছে। মাথার উপর চলছে ফ্যান আর আলো দিচ্ছে ৩০ ওয়াটের বাতিটি। সে যেন মনের মধ্যে স্বস্তি ফিরে পেল। যেন এক হাহাকার থেকে মুক্তি পেল। স্বপ্ন হলেও যেন এগুলো তার চোখের সামনের হচ্ছিল। আজ সে অনুধাবন করতে পারল যে, বিদ্যুৎ সভ্যতা বিনির্মাণে কত মূখ্য ভূমিকা পালন করছে। অথচ কয়েক মিনিটের জন্য বিদ্যুৎ না থাকলে আমরা কতই না রেগে যাই, অসন্তুষ্ট হই। কেউ কি ভেবেছে এই বিদ্যুৎ প্রকৌশলীদের কষ্টের কথা?

আমরা কত পেশাকেই কুর্নিশ জানাই কিন্তু এই পেশা আলোচনার মধ্যে নেই বললেই চলে। তাই সভ্যতা বিনির্মাণে যারা অগ্রণী ভূমিকা রেখে যাচ্ছে তাদের সকলের কর্ম, শ্রমের কদর করা আমাদের অবশ্যই কর্তব্য।

আরো কিছু মজার আর্টিকেল

ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে মজার গল্প | এক গল্পেই পুরো সিলেবাস

হাজার ভোল্টের বিদ্যুৎ যাদের শক করতে পারেনা | বিদ্যুৎ মানব এবং বাস্তবতা

বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে চলে আসার রহস্য