মরুভূমিতে সোলার প্যানেল স্থাপন এবং সীমাবদ্ধতা

0
1477

মরুভূমি শব্দটা শুনলেই চোখের সামনে ভেসে উঠে ধূ-ধূ বালুময় প্রান্তর। উটের দল সারি বেঁধে হাটছে। চারপাশে খেজুরবন মৃদু বাতাসে দুলছে। আর্টিকেলটি পড়তে পড়তে হয়তো আপনারা কল্পনার জগতে সাহারা মরুভূমিতে বিচরণ করছেন। এবার একটু বাস্তবে আসুন এবং গভীরভাবে ভাবুন এই সুবিশাল সাহারা মরুভূমিতে যদি সোলার প্যানেল স্থাপন করা যায় তাহলে কতই না ভাল হত? নিজস্ব চাহিদা মেটানোর পরেও বাইরের দেশগুলোতে বিদ্যুৎ আমদানি করা যেত।

কিন্তু কল্পনা আর বাস্তবতার মধ্যে অনেক ফারাক থাকে। একইভাবে মরুভূমিতে সোলার প্যানেল স্থাপনের বেলাতেও কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। আজ এই আর্টিকেলের মাধ্যমে সেই বাস্তবতার দিকটি আলোকপাত করতে যাচ্ছি। চলুন শুরু করা যাক।

মরুভূমিতে পতিত সৌরশক্তি নিয়ে অবাক করার মত তথ্য

আপনি জেনে অবাক হবেন যে, সারা বিশ্বের মানুষ প্রতি বছরে যে পরিমাণ সৌরশক্তি পায় পৃথিবীর সমস্ত মরুভূমি মাত্র ৬ ঘন্টায় তার তুলনায় বেশি পরিমাণ সৌরশক্তি পায়। এ তথ্য শুনে হয়ত অনেকেই চমকে যেতে পারেন। সাহারা মরুভূমির সম্পূর্ণ অংশে সোলার বসাতে হবেনা, যদি এই পরিমাণ সৌরশক্তিকে কাজে লাগিয়ে সাহারা মরুভূমির মাত্র ১.২ শতাংশ জায়গায় সোলার প্যানেল বসানো যায় তাহলে পুরো বিশ্বের বিদ্যুতের চাহিদা মেটানো যাবে। উল্লেখ্য যে, শুধুমাত্র সূর্য থেকেই প্রতি মুহূর্তে পৃথিবীতে আসে প্রায় ১,৭৩,০০০ টেরাওয়াট সৌরশক্তি যা আমাদের বর্তমান প্রয়োজনের প্রায় ১০,০০০ গুণ বলা যায়।

সাহারা মরুভূমিতে সোলার স্থাপন

সময় যত যাচ্ছে পৃথিবীতে জনসংখ্যাও বাড়ছে। ফলশ্রুতিতে জায়গায় অভাবে পাওয়ার প্লান্ট স্থাপন করা মুশকিল হবে। ফলে সর্বসাধারণের চাহিদা মেটানো সম্ভব হবেনা। তখন প্রত্যন্ত অঞ্চলে পাওয়ার সাবস্টেশনগুলো স্থাপন করার কথা চিন্তা করতে হবে। তার মানে এমন একটা অঞ্চলে সোলার প্যানেল স্থাপন করতে হবে যেখানে দিনের বেশিরভাগ সময় রোদ থাকে এবং বৃষ্টি একদম হয়না বললে চলে। আর এটাই আদর্শ অবস্থা সৌরশক্তি থেকে বিদ্যুত উৎপাদনের। আর এসব প্রত্যন্ত এলাকা হিসেবে সাহারা/পামীর/গবী/নামিব ইত্যাদি মরুভূমির কথা উল্লেখ করা যায়।

এখন অনেকের প্রশ্ন হতে পারে, তাহলে কেন এই কাজটি এতদিন করা হল না। নাকি আন্তর্জাতিক মানের বিজ্ঞানীদের মাথায় এই পরিকল্পনাটি এখনো আসেনি?

যেহেতু আমার মত ক্ষুদ্র লেখকের মাথায় যেটা আসে, সেহেতু আন্তর্জাতিক মানের বিজ্ঞানীদের মাথায় অবশ্যই এসেছে। কিন্তু কেন এখনো বাস্তবায়ন হল না সেই নিয়ে এখন আলোচনায় যাচ্ছি। একটি বিশেষ তথ্য হল, আপনি যদি সমগ্র পৃথিবীর বিদ্যুৎ চাহিদাকে সৌরশক্তির সাহায্যে মেটাতে চান, তাহলে আপনাকে ৩৫০ ওয়াটের মোট ৫১.৪২ বিলিয়ন সোলার প্যানেল স্থাপন করতে হবে। এই কাজের জন্য জায়গার দরকার হবে ১,১২,২২৫ বর্গকিলোমিটার যা সাহারা মরুভূমির মোট অঞ্চলের মাত্র ১.২%।

সাহারা মরুভূমিতে সোলার স্থাপনের সীমাবদ্ধতা

এবার আসা যাক, কেন এই বিশাল প্রকল্পটি এখনো হাতে নেয়া হচ্ছেনা? এর নেপথ্যে লুকায়িত মূল্যবান কারণগুলো আমি লিস্টাকারে উল্লেখ করছিঃ

  • এই প্রকল্পে ৮০০-৩০০০ কিলোমিটার দূরত্বের ট্রান্সমিশন লাইন স্থাপন করতে হবে, যা স্বাভাবিকভাবেই খরচ বহুগুণে বাড়িয়ে দিবে।
  • যদি এই প্রজেক্ট বাস্তবায়িত হতে পারে, তাহলে বাকি যেসব প্লান্ট আছে সেগুলো বন্ধ হয়ে যাবে এবং বেকারত্ব বেড়ে যাবে।
  • ব্যাটারিতে সঞ্চিত রাখার জন্যেও খরচ বহুগুণে বেড়ে যাবে।
  • যে পরিমাণ বিনিয়োগ দরকার তা করতে গেলে অনেক ঝুঁকি নিতে হবে, যেহেতু শুরুতেই ইনভেস্ট করতে হবে। ফলে পরে যদি কোন কারণে প্রজেক্ট বাধাগ্রস্থ হয় তখন টাকা উঠানোর সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। কারণ আফ্রিকার সামর্থ্য নেই এই লস পূরণ করার।
  • সবচেয়ে মূল্যবান কারণ হল সাহারা একক মালিকাধীন না। এক্ষেত্রে জিওপলিটিক্যাল সমস্যা দেখা দিতে পারে। আর এই অঞ্চলের রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনা খুবই নড়বড়ে।
  • বিশাল আকারের আন্তঃদেশীয় ট্রান্সমিশন টাওয়ার স্থাপন করতে হবে যা জিওপলিটিক্সের আওতাভুক্ত এবং বেশ ব্যয়সাপেক্ষ।

উপরোক্ত কারণেই মূলত এত ফলপ্রসু একটি প্রজেক্ট হাতে নেয়া সম্ভব হচ্ছেনা। আজ এই পর্যন্তই। আগামীতে আরো আর্টিকেল নিয়ে আপনাদের সাথে আড্ডা হবে।

আরো কিছু মজার আর্টিকেল

পার্কার সোলার প্রোব কি? সূর্যের নিকট থেকে তোলা ছবি কেমন?

ওয়্যারলেস পাওয়ার ট্রান্সমিশন নিয়ে আলোচনা

সাবমেরিন কিভাবে গভীর সমুদ্রের নীচে চলাচল করে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here