আমার এক পরিচিত বড়ভাই এক নামকরা ভার্সিটি থেকে ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক্সে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে। ভাই সবসময়ই একটু আলাদা রকমের মানুষ ছিলেন। আমরা যখন উনার সাথে কথা বলতাম তখন খেয়াল করতাম উনার কথা বলার উপস্থাপনা বেশ সাবলীল। নিজেকে অন্যরকমভাবে উপস্থাপন করার অন্যরকম ক্ষমতা আছে এই মানুষটির।
বছর দুয়েক আগেই ভাই পিজিসিবির সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন। আমি এবং আমার কিছু বন্ধু উনার সাথে দেখা করতে গেলাম ভাইবা বোর্ডের অভিজ্ঞতা নিয়ে আলাপ করতে। তখন উনার কাছে যা শুনলাম তা শুনে আমি রীতিমত অবাক। টেকনিক্যাল মাত্র ১টি প্রশ্নের উত্তর দেয়ার পরেও জব টা উনার হয়েছে। অথচ উনার এক ফ্রেন্ড ১০০% উত্তর দেয়ার পরেও তার জবটা হয়নি। এ কথা শুনার পর আমরা ত রীতিমত অবাকবনে গেলাম। এ ব্যাপারে জানার আগ্রহ যেন আরো বহুগুণে বেড়ে গেল।
কোন প্রশ্নের উত্তর না দিয়েও যেভাবে জব হল পিজিসিবিতেঃ
- উনার ভাষ্যমতে ভাইবা বোর্ডে নিজেকে উপস্থাপন করার ব্যাপারটা খুব উল্লেখযোগ্য। অল্প জেনেও নিজেকে অধিকতরভাবে হাইলাইট করতে পারাটাও একটা গুণ।
- সারারাত পরিশ্রম করে গাধার মত দুই তিনটা প্রশ্নের উত্তর দেয়ার মধ্যে কোন বাহাদুরি নেই।
- আপনি দেশের নামকরা একটি সায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিত্ব করতে যাচ্ছেন। কেবল টেকনিক্যাল ব্যাসিক থাকলেই যে আপনার জব হবে ব্যাপারটা ভাবা বোকামি।
- নিজের প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি বজায় রাখা, বাইরের দেশে উপস্থাপন করা, কর্মস্থলে যেকোন কঠিন মুহূর্ত বুদ্ধি ও ধৈর্য্যের সাথে মোকাবেলা করতেও বিশেষ যোগ্যতা থাকা প্রয়োজন।
- একটি সায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের সহকারী প্রকৌশলী খুব গুরুত্বপূর্ণ পোস্ট। একটি সাবস্টেশনের ইনচার্জ হিসেবে আপনাকে দায়িত্ব পালন করতে হবে। তাই আপনাকে আপনার কাজের প্রতি হতে হবে যথেষ্ট ফোকাসড, সহকর্মীদের সাথে হতে হবে বন্ধুবৎসল।
- তার পাশাপাশি গেট আপ ভাইবা বোর্ডের জন্য একটি জরুরি ফ্যাক্টর। আপনাকে গেট আপ আপনার রুচির পরিচয় বহন করে।
- তাছাড়া টেবিল ম্যানার ও বড় ফ্যাক্টর।
- আর ভাইবা বোর্ডে উপস্থিত বুদ্ধিমত্তা পরীক্ষা করার জন্য কিছু প্রশ্ন করা হয়। সেগুলোর জবাব দিয়ে ভাইবা বোর্ডকে সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করতে হবে।
ভাই মূলত কারিগরি একটি প্রশ্নের জবাব দিতে পারলেও ভাইবা বোর্ড সদস্যগণ তার মধ্যে বাকিগুণগুলো খুজে পেয়েছিলেন। কারণ জানাতে কম বেশি হতেই পারে কিন্তু একজন ম্যাচিউরড পার্সোনালিটি একটি প্রতিষ্ঠানের জন্য বিশাল এসেট। সে তার বুদ্ধিমত্তা দিয়ে যেকোন পরিস্থিতিতে যেকোন প্রকার কাজের সাথে সহজেই খাপ খাইয়ে নিতে পারে।
আজকের এই আর্টিকেলটি অনেককেই অবাক করে দিতে পারে। অবাক করে দিলে অন্তত আমি অবাক হবোনা। কারণ আমাদের দেশে এখনো ৯৮% জব ক্যান্ডিডেট মনে করে বিষয়ভিত্তিক প্রশ্ন ১০০% পারলেই জব নিশ্চিত। বিষয়ভিত্তিক প্রশ্ন ১০০% পারলেই জব নিশ্চিত এই ধারণাটাও ১০০% ভূল। এজন্যই রেজাল্ট দিলে দেখা যায়, খুব ভাল করেও অনেকের জব হয়না আবার মোটামুটি পারফরমেন্স করেও জব পেয়ে ফুলেল শুভেচ্ছায় আচ্ছাদিত হয়।
তাই পড়াশোনার পাশাপাশি আমাদের নিজের ব্যক্তিত্বকে সুগঠিত করা। নিজেকে সাবলীলভাবে উপস্থাপনা করা, সুন্দর বাচনভংগিতে কথা বলা, মার্জিত ব্যবহার এক ধরনের শিল্প যা একজন মানুষকে এগিয়ে যেতে অনেকাংশে সাহায্য করে।
আরো কিছু আর্টিকেল
ভাইবা প্রশ্ন ও উত্তর | ভাইবা বোর্ডে কমন ৮টি প্রশ্ন ও উত্তর
চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতি যেভাবে নিবেনঃ ৯ টি সহজ টিপস
DPDC সরকারি নাকি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান? | এই জবের সুযোগ-সুবিধা