দূর থেকে চলন্ত জাহাজকে স্থির মনে হয় কেন?

সারা দেশ জুড়ে চলছে লকডাউন। ঘরে বসে থাকতে থাকতে মন রীতিমত অস্থির হয়ে উঠেছে। মন চায় সমুদ্রের পাড়ে গিয়ে কিছুক্ষণ মুক্ত বাতাসে প্রাণটা জুড়িয়ে নিই। কিন্তু তা কেবল কল্পনাতেই সম্ভব। কল্পলোকে হলেও কিছুক্ষণের জন্য চলুন বেরিয়ে আসি সমুদ্রের বেলাভূমি থেকে। সমুদ্র মানেই এক অপরুপ সৌন্দর্যের ভান্ডার। ঢেউগুলো যখন তীরে এসে আছড়ে পড়ে তখন সেই দৃশ্য দেখতে যে কি অপূর্ব লাগে তা বলে বোঝানো খুবই কঠিন। সুদূর থেকে জাহাজগুলো যেন হাতছানি দিয়ে ডাকে।

সমুদ্র দেখেনি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়াই মুশকিল। আপনারা সমুদ্র ভ্রমণের সময় নিশ্চয়ই লক্ষ্য করে থাকবেন, দূর থেকে জাহাজগুলোকে স্থির মনে হয়। যেন এক জায়গায় স্থির হয়ে আছে। কিন্তু আসলেই কি জাহাজটি স্থির? উত্তরে বলব জাহাজটি স্থির নয়। এটি চলমান অবস্থায় থাকে। কিন্তু জাহাজটিকে স্থির মনে হবার কারণ কি? এ প্রশ্ন নিয়েই আজকের আলোচনার আসর জমবে। চলুন শুরু করা যাক।

দূর থেকে চলন্ত জাহাজকে স্থির মনে হয় কেন?

কোন জাহাজ যখন সমবেগ নিয়ে অগ্রসর হতে থাকে তখন দূর থেকে আপেক্ষিকভাবে জাহাজটিকে স্থির মনে হয়, যাকে বলা হয় ব্লাইন্ড স্পীড। মূলত জাহাজের ব্লাইন্ড স্পীডের কারণেই জাহাজটিকে আপাতদৃষ্টিতে স্থির মনে হয়। বাস্তবে জাহাজটি একটি নির্দিষ্ট বেগে গন্তব্যে অগ্রসর হয়ে চলছে। শুধুমাত্র আপনার চোখকেই নয়, এই ব্লাইন্ড স্পীডের দরুণ কোন জাহাজ রাডারের চোখকেও পর্যন্ত ফাঁকি দিতে পারে। তখন রাডারের সাহায্যে কোন টার্গেটেড জাহাজ সনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়ে।

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে আপেক্ষিকতার প্রভাব

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে আপেক্ষিকতা একটি বিশাল জায়গা দখল করে রয়েছে। আমরা অনেক কিছুই আপেক্ষিকভাবে কল্পনা করি কিন্তু সেটা আদৌ বাস্তবে ঘটেনি। এসব চিন্তার উপর ভিত্তি করেই স্যার আইনস্টাইন দিয়েছিলেন আপেক্ষিক তত্ত্ব বা থিওরি অফ রিলেটিভিটি। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে আরো কিছু ঘটনা আছে যা আপেক্ষিকতা দিয়ে ব্যাখা করা যায়। যেমনঃ

  • ক্লাসে যখন কোন বোরিং স্যার লেকচার দিতে থাকেন তখন এক মিনিট সময়কেও এক ঘন্টার মত মনে হয়, কিন্তু যখন কোন স্যার রসিকতা নিয়ে টপিকটি বুঝিয়ে দেন তখন ১ ঘন্টা সময়কেও এক মিনিটের মত মনে হয়।
  • যখন আপনি কর্মদিবস যাপন করবেন তখন মনে হবে যেন সময় যেতেই চাইছেনা। কিন্তু যখন ছুটির দিন কাটাবেন তখন মনে হবে দেখতে দেখতেই চলে গেল।

এখানে আসলে ব্যাপারটি কি ঘটছে? ঘড়ির কাঁটা কিন্তু স্বাভাবিক নিয়মেই চলছে। আসলে কোন কাজটি আপনি কেমন উপভোগ করছেন সেটাই মূখ্য বিষয়।

আপেক্ষিকতার আরো দুইটি মজার উদাহরণ দেয়া যাক। যেমনঃ

  • ট্রেনে করে অনেকেরই নিশ্চয়ই বাড়ি যাওয়া হয়েছে। ট্রেন যখন চলতে শুরু করে তখন আপনার সামনের সিটে বসে থাকা লোকটিকে স্থির লাগে। কিন্তু ট্রেনের বাইরের প্লাটফর্মে যে ব্যাক্তি দাঁড়িয়ে আছে তার কাছে তিনি গতিশীল।
  • আবার ট্রেনটি অনেক গাছপালার মধ্য দিয়ে অতিক্রম করে যায়। তখন মনে হতে পারে যে গাছপালাও আমাদের সাথে সাথে পথ পাড়ি দিচ্ছে।

সবই আসলে আপেক্ষিকতার খেলা। আপেক্ষিকতা নিয়ে আর্টিকেলটি নিশ্চয়ই আপনাদের অনেক ভাল লেগেছে। এরকম আরো মজাদার আর্টিকেল নিয়ে উপস্থিত হব ইনশাল্লাহ।

আরো কিছু আর্টিকেল

3D হলোগ্রাম টেকনিক এবং ডাইনির ছায়া

নাসা কিভাবে মঙ্গলগ্রহের ছবি পৃথিবীতে নিয়ে আসে?

মহাকাশে মৃত্যু হলে লাশের কি হবে? | মহাকাশ রহস্য