সাম্প্রতিক সময়ে ভূমিকম্প এক মহা আতংকের নাম। কিছুদিন আগেই ঘটে গেল ৬.১ মাত্রার ভূমিকম্প যা চট্টগ্রামকে বেশ সজোরেই কাঁপিয়ে গেল। এ ঘটনার পর অনেকেরই মনে ভূমিকম্প নিয়ে ভয় বাসা বেঁধেছে। গুগল সার্চ ইঞ্জিনে এই টপিকটি বেশ ভালভাবেই জায়গা করে নিয়েছে বেশ কয়দিন। বিভিন্ন ব্লগসাইটগুলোও ভূমিকম্প সংক্রান্ত অনেক তথ্য শেয়ার করছে। চলুন আজ আমরাও ভূমিকম্প নিয়ে আড্ডা জমিয়ে তুলি।
ভূমিকম্প কি?
ভূমিকম্প শব্দটি থেকেই আন্দাজ করা যায় তার অর্থ। ভূমিকম্প মানে হল ভূমির কম্পন। ভূমিকম্পের পেছনে বেশ কিছু কারণ
- প্রথমত পৃথিবীপৃষ্ঠের অংশবিশেষের হঠাৎ অবস্থান পরিবর্তন বা আন্দোলন।
- দ্বিতীয়ত পৃথিবীর অভ্যন্তরে যখন একটি শিলা অন্য একটি শিলার উপরে উঠে আসে তখন ভূমি কম্পন হয়।
মনে করুন, আপনি আপনার শয়নকক্ষে বেশ আয়েশ করে ঘুমাচ্ছেন। হঠাৎ যদি ঘরের কোনো জিনিস দুলতে শুরু করে—যেমন, দেয়ালঘড়ি, টাঙানো ছবি বা খাটসহ অন্য যেকোন আসবাব—বুঝতে হবে ভূমিকম্প হচ্ছে। মোটকথা, পৃথিবীর কেঁপে ওঠাই ভূমিকম্প।
ভূমিকম্পের ধরন
সারা পৃথিবীতে বছরে গড়ে ছয় হাজার ভূমিকম্প হয়। সাধারণত তিন ধরনের ভূমিকম্প হয়ে থাকে—
- প্রচণ্ড
- মাঝারি
- মৃদু
আবার উৎসের গভীরতা অনুসারে ভূমিকম্পকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়—
- অগভীর
- মধ্যবর্তী
- গভীর ভূমিকম্প।
অগভীর ভূমিকম্প
ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল যদি ভূ-পৃষ্ঠের ৭০ কিলোমিটারের মধ্যে থাকে তাহলে তাকে অগভীর ভূমিকম্প বলে।
মধ্যবর্তী ভূমিকম্প
আর ৭০ থেকে ৩০০ কিলোমিটারের মধ্যে হলে তাকে মধ্যবর্তী ভূমিকম্প বলে।
গভীর ভূমিকম্প
৩০০ কিলোমিটারের নিচে হলে তাকে গভীর ভূমিকম্প হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
ভূমিকম্প সংঘটিত হবার কারণ
মনে করুন, আপনি অনেকগুলো ইট একটার উপর একটা করে সাজালেন। এখন আপনি যদি মাঝখান থেকে কোন ইট সরিয়ে নেন তাহলে যে ইটটি স্থানচ্যুত হল তার উপরের ইটগুলো প্রবলভাবে সরে যাবে এবং আলোড়ন সৃষ্টি হবে।
পৃথিবীর অভ্যন্তরে থাকা গ্যাস যখন ভূ-পৃষ্ঠের ফাটল বা আগ্নেয়গিরির মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসে তখন সেই গ্যাসের অবস্থানটি ফাঁকা হয়ে পড়ে আর পৃথিবীর উপরের তলের চাপ ওই ফাঁকা স্থানে দেবে গিয়ে ভারসাম্য বজায় রাখে। তখনই ভূ-পৃষ্ঠে প্রবল কম্পনের অনুভব হয় যা ভূমিকম্প নামে পরিচিত।
সাধারণত তিনটি প্রধান কারণে ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয়ে থাকে—
- ভূ-পৃষ্ঠের হঠাৎ পরিবর্তন জনিত কারণে
- আগ্নেয়গিরি সংঘটিত হওয়ার কারণে
- শিলাচ্যুতি জনিত কারণে।
ভূমিকম্পের মাত্রা ও স্থায়ীত্ব
ভূমিকম্প সাধারণত কয়েক সেকেণ্ড থেকে ১/২ মিনিট স্থায়ী হয়। তবে কিছু কিছু ভূমিকম্প ৮-১০ মিনিটও স্থায়ী হয়।
ভূমিকম্পের মাত্রা নির্ণয়ের জন্য যে যন্ত্র ব্যবহৃত হয় তার নাম সীসমোগ্রাফ। আর সীসমোগ্রাফে ভূমিকম্পের মাত্রা রিখটার স্কেলে পরিমাপ করা হয়ে থাকে। রিখটার স্কেলে এককের সীমা ১ থেকে ১০ পর্যন্ত। এই স্কেলে মাত্রা ৫ এর বেশি হওয়া মানেই ভয়াবহ দুর্যোগের আশঙ্কা।
রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পের মাত্রা নিম্নে তুলে ধরা হলঃ
৫ – ৫.৯৯ মাঝারি
৬ – ৬.৯৯ তীব্র
৭ – ৭.৯৯ ভয়াবহ
৮-এর উপর অত্যন্ত ভয়াবহ।
ভূমিকম্পের সময় করণীয় কি?
- ভূমিকম্পের সময় ফাঁকা ও উন্মুক্ত স্থানে আশ্রয় নিন।
- উঁচু ভবনে থাকলে এবং বের হতে না পারলে জানালা বা দেয়ালের পাশে অবস্থান না নিয়ে শক্ত কোনো বীম, টেবিলের নিচে অবস্থান নিন।
- ধৈর্য ধরে পরিস্থিতি মোকাবেলা করুন।
- বহুতল ভবনে একই জায়গায় অনেক মানুষ একসঙ্গে না থেকে ভাগ হয়ে আশ্রয় নিন।
- আপনার মুঠোফোনে ফায়ার সাভির্স এবং দরকারি মোবাইল নম্বরগুলো আগাম সতর্কতা হিসেবে আগেই রেখে দিন। বিপদের সময় আপনার কাজে লাগবে।
- দ্রুত নামার জন্য ভবন থেকে লাফিয়ে পড়বেন না।
- ভূমিকম্পের সময় সম্ভব হলে মাথার ওপর শক্তকরে বালিশ অথবা অন্য কোনো শক্ত বস্তু [কাঠবোর্ড, নরম কাপড় চোপড়ের কুণ্ডলি] ধরে রাখুন।
- গ্যাস এবং বৈদ্যুতিক সংযোগ থেকে দূরে অবস্থান নিন।
- উচু ভবন থেকে দ্রুত নামার জন্য লিফট ব্যবহার করবেন না।
- ভূমিকম্পের সময় গাড়িতে থাকলে গাড়ি খোলা জায়গায় থামিয়ে গাড়িতেই থাকুন।
একবার ভূমিকম্পের পরপরই আরেকটা ছোট ভূমিকম্প হয় যাকে ‘আফটার শক’ বলে।
আরো কিছু আর্টিকেল
এয়ার কন্ডিশনের বিভিন্ন সমস্যা, বিস্ফোরনের কারণ ও প্রতিরোধ
বজ্রপাতের রহস্য এবং বজ্রপাত এসি নাকি ডিসি সিগন্যাল?
বর্ষাকালে বৈদ্যুতিক দূর্ঘটনার কারণ এবং করণীয়