প্রিয় বন্ধুরা, আশা করছি সকলে ভালো আছেন। আমাদের অনেকের শিক্ষাগত জীবনে ভালো ফলাফল থাকা সত্ত্বেও দেখা যায় ভাইবা বোর্ডে নিজের যোগ্যতা উপস্থাপন করতে পারি না। আবার অনেকেই রেজাল্ট খারাপ থাকা সত্ত্বেও যদি ভাইবা পরীক্ষা দেবার চান্স পায় তাহলে ভাইবা বোর্ডে ভালো করার ফলে চাকুরী হয়ে যায়।
এই লেখাতে আমি চেষ্টা করবো কিছু ভাইবা টিপস দিতে যে কিভাবে ভাইবাতে খুব ভালো করতে পারবেন এবং ভাইবা টিপস, কিছু কমন সম্ভাব্য প্রশ্ন সম্বন্ধে আলোচনা হবে।
ভাইবা বোর্ডে প্রবেশ করার পূর্বে কিছু পূর্ব প্রস্তুতি এবং দিক নির্দেশনা(ভাইবা টিপস)
শুরুতেই বলে রাখি, লেখাটি সকল মানুষদের জন্য প্রযোজ্য, আশা করছি যারা চাকুরী ভাইবাতে নিজেকে প্রস্তুত করতে চাই তারা এই লেখাটির মাধ্যমে অনেক উপকৃত হবেন।
একটি প্রতিষ্ঠান অবশ্যই চাইবে দক্ষ লোক নিয়োগ করতে। তারা বিভিন্নভাবে যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে আপনাকে তাদের প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ দেবে। একজন চাকুরীপ্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা, স্মার্টনেস, বাচনভঙ্গি, উপস্থাপন কৌশল ইত্যাদি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
অনেক সময় আমরা ভাইবা কক্ষে প্রবেশ করার সাথে সাথে নিজের অজান্তেই নিজেদের অযোগ্য করে তুলি। ফলে নিয়োগদাতারা সৌজন্যমূলক প্রশ্নকরেই বিদায় করে দেন। এ পরিস্থিতি এড়াতে এখন কিছু কৌশল শেয়ার করবো।
ভাইবা টিপসঃ
- আপনার সিভি/বায়োডাটা বা জীবনবৃত্তান্ত তৈরির সময় অবশ্যই আপনাকে কৌশল অবলম্বন করতে হবে। আপনি যে পদের জন্য আবেদন করেছেন সেই পদটি সম্পর্কে বায়োডাটাতে ফোকাস করতে হবে। জীবনবৃত্তান্ত সাথে প্রয়োজনে একটি ফরোয়ার্ডিং লেটারও দিতে হবে।
নোটঃ অনেকসময় জীবনবৃত্তান্ত চাকুরীপ্রার্থী নিজেকে যোগ্য প্রমাণ করার জন্য ভুল তথ্য পেশ করে থাকেন যা মোটেও উচিত নয় কারন পরবর্তীতে বিষয়টি জানা জানি হলে লজ্জাকর অবস্থায় পড়তে হতে পারে এমনকি চাকুরী চলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে।
জীবনবৃত্তান্ত ও ফরোয়ার্ডিং লেটারে কখনোই বানান ভুল হওয়া যাবে না। প্রয়োজনে কয়েকবার পরীক্ষা করুন।
- প্রয়োজনীয় কাগজপত্র (শিক্ষাগত যোগ্যতা, মার্কশিট, বিভিন্ন শর্ট কোর্স সার্টিফিকেট, অভিজ্ঞতা সার্টিফিকেট, ছবি) ইত্যাদি সঙ্গে করে রাখবেন। ভাইবা বোর্ডে যেকোন সময় এগুলো প্রয়োজন হতে পারে এছাড়া কলম তো রাখতেই হবে। এসব রাখার জন্য ভালো মানের একটি ব্যাগ, ব্রিফকেস সঙ্গে রাখতে পারেন যা আপনার গ্রুমিং এর বিষয়টি অনেক ফর্মাল রাখবে।
নোটঃ তবে ব্যাগ বা ব্রিফকেস কিংবা বায়োডাটার ব্যাগ টেবিলের উপর না রেখে পাশে কোথাও রাখা উচিত
- নিজের ভিতর ক্লান্তিভাব পরিহার করুন। নির্দিষ্ট সময়ের আগ মুহূর্তে না এসে বরং আগেই উপস্থিত থাকুন এবং আধাঘন্টা আগে উপস্থিত হয়ে নিজেকে প্রানবন্ত করে তুলুন।
নোটঃ ভাইবার আগে রাতে কোনভাবেই রাত জাগা ঠিক নয়। রাত জাগলে নিজের ভিতর ক্লান্তিভাব চলে আসবে এবং অনেক ক্ষেত্রে আপনি জানা বিষয়গুলো এলেমেলো করে ফেলতে পারেন।
- নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ভাইবা বোর্ডে এসে হাজির হওয়া উচিত। ভাইবা বোর্ডে কোন ক্রমেই দেরি করে উপস্থিত হবেন না। সবসময় চেষ্টা করবেন ফর্মাল শার্ট এবং প্যান্ট পড়তে। এর সাথে ফর্মাল শো থাকতে হবে।
নোটঃ ভাইবা বোর্ডে সময়মত না আসতে পারাটাই আপনার অযোগ্যতা প্রমাণের জন্য যথেষ্ট।
- সালাম দিয়ে অনুমতি নিয়ে প্রবেশ করবেন। কথা বলার সময় যেন হাত পা না নড়ে সে বিষয়ে খেয়াল রাখবেন। যখন যে ইন্টারভিউয়ার আপনাকে প্রশ্ন করবে তখন তার দিকে তাকিয়ে উত্তর দেবার চেষ্টা করবেন।
নোটঃ অনেকেই ভাইবা বোর্ডে প্রধানের দিকে তাকিয়ে প্রশ্নের উত্তর দিয়ে থাকেন, এটা একদম ঠিক নয়। খেয়াল রাখবেন যে ইন্টারভিউয়ার আপনাকে প্রশ্ন করেছে তার দিকে তাকিয়ে প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে।
- ভাইবা দেওয়ার সময় আঞ্চলিকতা পরিহার করুণ আর লক্ষ্য রাখবেন কোনভাবেই যেন আঞ্চলিকতা প্রকাশ না পাই। ইন্টারভিউয়ার যদি আপনাকে বাংলাতে প্রশ্ন করেন তাহলে তার উত্তর বাংলাতে দিতে হবে আর যদি ইংরেজি প্রশ্ন করে থাকেন তাহলে ইংরেজিতে উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবেন।
নোটঃ বাংলা বা ইংরেজি যায় হোক না কেন, উচ্চারণ সঠিক রাখতে চেষ্টা করবেন। উচ্চারণের বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।
- ভাইবা দেওয়ার পূর্বে অবশ্যই প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে ভালো ধারনা রাখতে হবে। সম্ভব হলে ভাইবা বোর্ডে কারা কারা উপস্থিত থাকবেন সে সম্পর্কে অবগত হওয়া। প্রয়োজনে পরীক্ষার কেন্দ্র সম্বন্ধে ধারনা রাখা যেতে পারে। এক্ষেত্রে বাড়তি সুবিধা পাওয়া যাবে।
নোটঃ প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে ভালো ধারনা থাকলে অনেক ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের কার্যপদ্ধতি অনুসারে নিজের দক্ষ, এবং কনফিডেন্সকে উপস্থাপন করা যেতে পারে যা আপনার জন্য প্লাস পয়েন্ট হবে।
- সংক্ষেপে হাসিমুখে উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবেন, অপ্রাসঙ্গিক বিষয় পরিহার করুণ, গোমড়া মুখে বসে না থাকার চেষ্টা করুণ। সকল প্রশ্ন হাসিমুখে দেওয়ার চেষ্টা করুণ। অকারনে হাঁসা যাবে না, কোন প্রশ্নের উত্তর না জানা থাকলে বিনীতভাবে বলতে হবে সরি স্যার বা জানা নেই স্যার।
- অনেক সময় ইন্টারভিউয়ার ইচ্ছা করে অপ্রাসঙ্গিক বিষয় প্রশ্ন করে পরীক্ষার্থিকে বিব্রান্ত করার চেষ্টা করেন বা মানসিকতা যাচাই করেন, এসময় কোন ক্রমেই মাথা গরম না করে শান্তভাবে সেসকল প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবেন।
- বিনীতভাবে নিজেকে উপাস্থপ করুণ, হেলান দিয়ে চেয়ার না বসাই ভালো। এছাড়া অনেক সময় স্মার্ট দেখাতে গিয়ে অভারস্মার্ট দেখানোর চেষ্টা করবেন না। এতে ব্যাপারটি নাটকীয় ভঙ্গি হবে যা আপনার সুন্দর, সাবলীল বীণয় কে নষ্ট করে দিবে। উত্তর দেওয়ার সময় যোগ্যতা বহিঃপ্রকাশ দেখানো যেতে পারে।
- কোনভাবেই মিথ্যার আশ্রয় নেওয়া যাবে না। মিথ্যা তথ্য আপনার জন্য ভবিষ্যতে বিপদ ডেকে আনতে পারে।
ভাইবা টিপস সম্বন্ধে আমরা জানলাম। এবার আমরা জানবো ভাইবা বোর্ডে কিছু কমন প্রশ্ন সম্বন্ধে।
ভাইবা বোর্ডে কিছু কমন প্রশ্ন
ভাইবা বোর্ডে কিছু কমন প্রশ্ন হয়ে থাকে তা নিচে দেওয়া হলো, অনুগ্রহ করে প্রশ্নগুলো নিজের মত করে সুন্দরভাবে গুছিয়ে নেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে।
- নিজের সম্পর্কে ৫ মিনিট বলুন(বাংলা/ইংরেজিতে)
- আপনার নামের কোন অর্থ আছে কি? থাকলে বলুন।
- আপনার নিজের সম্পর্কে সমালোচনা করুণ।
- আপনার জেলার নাম কি? জেলা সম্পর্কে ১ মিনিট বলুন।
- আপনার জেলার বিখ্যাত কিছু মানুষের নাম বলুন এবং তারা কিকারনে বিখ্যাত তা আলোচনা করুণ।
- আপনার জেলার বিখ্যাত মুক্তিযোদ্ধার নাম বলুন।
- আপনার বয়স, জন্ম তারিখ কত?
- আজ বাংলা ও হিজরি কত তারিখ?
- আপনি কি কোন দৈনিকপত্রিকা পড়েন? পড়লে সম্পাদকের নাম কি?
- বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে যা জানেন তা বলেন?
- আপনার পরিবার সম্পর্কে বলুন।
- আমরা আপনাকে কেন চাকুরিটা দিব?
- বিয়ে করেছেন? কেন করেছেন/করেননি? বিবাহ সম্পর্কে আপনার চিন্তাভাবনা কি?
- আরো পড়াশুনা করার ইচ্ছা আছে কি? কেন নেই ইচ্ছা?
- এর আগে কোথায় জব করেছেন? সেখানে কি ধরনের কাজ করেছেন?সে জবটি কেন ছেড়ে দিতে হলো?
- বর্তমানে যেখানে কাজ করছেন সেখানকার পরিবেশ ও আপনার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে কিছু বলুন? সেখান থেকে চলে যেতে চাচ্ছেন কেন?
- আপনার সিভি দেখেছি। সেখানে উল্লেখ আছে অনেগুলো জব করে ছেড়ে দিয়েছেন! জবের মাঝখানে এত গ্যাপ কেন?
- আপনার যোগ্যতা অনুযায়ী জবের স্যালারি কত প্রত্যাশা করেন?
- ……… এর থেকে কম স্যালারি দেয়া হলে এখানে যোগদান করবেন?
- আপনি কোন ইউনাভার্সিটি / কলেজ থেকে পাশ করেছেন? সাব্জেক্ট, থিসিস কি?
- আপনার কোন পাব্লিকেশন আছে? কেন কোন পাব্লিকেশনে অংশগ্রহন করেন নি?
- কপম্পিউটারে আপনার কি কি স্কিল রয়েছে? কি কি পারেন এবং কেন শিখেছেন?
- আপনাকে প্রয়োজনে যেকোন জায়গায় কাজ করতে হতে পারে, আপনি কি তাতে রাজি?
- এক্সেলের ওয়ার্ক শিটের কাজ কেমন পারেন?
- তাহলে এক্সেলের একটি ওয়ার্কশীট তৈরি করে তার এভারেজ, মিনিমাম, ম্যাক্সিমাম, ভ্যালু বের করে দেখান? নতুন সারি/কলাম ডুকাতে কি কি করবেন?
- বাংলা ও ইংরেজি টাইপ পারেন? বাংলা ও ইংরেজি টাইপিং স্পীড কত?
- আপনি কি ফেসবুক ব্যবহার করেন? কেন করেন?
- আমাদের এই প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে কি জানেন?
- অবশর সময়ে কি করেন?
- আপনার দূর্বলতা কোন বিষয়ে?
- আপনার প্রিয় শখ কি?
- এই পোস্টের জন্য আপনাকে কেন আমাদের নিয়োগ দেওয়া উচিত?
ভাইবা টিপস ও ভাইবা কমন কিছু প্রশ্ন ছাড়া ও অনেক প্রশ্ন রয়েছে। আপনারা যারা ভাইবাতে নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন তারা চাইলে আমাদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। ভাইবা টিপস বা যেকোন কিছু আমাদের সাথে শেয়ার করতে পারেন, প্রয়োজনে আমরা আপনার দেওয়া ভাইবা টিপস ভোল্টেজ ল্যাব ব্লগে প্রকাশিত করবো।