কেমন আছেন সবাই? আশা করছি ভালো আছেন। জেনারেটর, মোটর, অল্টারনেটর, ট্রান্সফরমার নাম শুনে নাই এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। ইতিমধ্যে আমরা জেনারেটর নিয়ে একটি লেখা পাব্লিশ করেছি। অল্টারনেটর আর জেনারেটর হলো আপন ভাইয়ের মত। দুই ভাই হলেও তাদের ভিতর কিছু প্রার্থক্য আছে।
অল্টারনেটর/এসি জেনারেটর আর ডিসি জেনারেটর বেসিক প্রিন্সিপাল প্রায় একই। কিন্তু একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রার্থক্য আছে। এসি ও ডিসি জেনারেটর আর্মেচার ওয়িন্ডিং ও ম্যাগনেটিক ফিল্ড দ্বারা গঠিত। ডিসি জেনারেটর আর্মেচার ঘুরে আর ফিল্ড সিস্টেম থেমে থাকে কিন্তু অল্টারনেটরের ক্ষেত্রে উলটো।
যেহেতু আমরা ডিসি জেনারেটর নিয়ে আলোচনা করেছি তাই এসি জেনারেটরের গঠনপ্রণালী নিয়ে আলোচনা করবো না।
তাহলে দেখে নিন কি কি বিষয় আলোচনা করবো:
- অলটারনেটর কাকে বলে?
- অলটারনেটর নিয়ে কিছু কথা?
- অলটারনেটরের ভোল্টেজ রেগুলেশন কি ও সমীকরণ
- অলটারনেটরের কি কি লস হয়ে থাকে?
- অলটারনেটরের প্যারালাল অপারেশনের শর্তসমূহ কি কি?
- অলটারনেটরের ভোল্টেজ রেগুলেশন নির্ণয়ের পদ্ধতিগুলো কি কি?
- সিনক্রোনাইজিং কি ও এটা করার উদ্দেশ্য কি?
- সিনক্রোনাইজিং কারেন্ট ও সিনক্রোনাজিং পাওয়ার কাকে বলে?
- অলটারনেটরের হ্যান্টিং কি? এই হ্যান্টিং দূর করার উপায়গুলো কি কি?
- অলটারনেটরের আর্মেচার স্থির রেখে ফিল্ড ঘুরানোর সুবিধাগুলো কি কি?
- ফ্র্যাকশনাল পিচ ওয়িন্ডিং এর সুবিধা কি কি?
- অলটারনেটরের ও ডিসি জেনারেটরের মধ্যে প্রার্থক্য
- অলটারনেটরের রেটিং kW না লিখে KVA তে লেখা হয়ে থাকে কেন?
অল্টারনেটর কাকে বলে?
অল্টারনেটর-কে এসি জেনারেটর ও বলা হয়। এসি জেনারেটর আর ডিসি জেনারেটর দুই ভাই আগেই বলেছি 🙂 কিন্তু তাদের মধ্যে বেশ কিছু প্রার্থক্য আছে যা আমরা ১২ নম্বর প্রশ্নে আলোচনা করবো।
অল্টারনেটর- এমন একটি ডিভাইস যার মাধ্যমে যান্ত্রিক শক্তিকে বৈদ্যুতিক শক্তিতে রূপান্তরিত করা যায়।
অল্টারনেটরে আর্মেচার স্থির থাকে এবং ফিল্ডকে প্রাইম মুভারের সাহায্যে ঘুরালে ফিল্ডে উৎপন্ন ঘুরন্ত চুম্বকক্ষেত্র বা ফ্লাক্স আর্মেচার কন্ডাক্টরকে কর্তন করলে কন্ডাক্টরের মধ্যে এসি ই,এম,এফ আবিষ্ট হয় এবং তা স্লিপ রিং এর মাধ্যমে লোড কারেন্ট সরবরাহ করে।
অল্টারনেটর নিয়ে কিছু কথা?
অল্টারনেটর মূলত ফিল্ড, আর্মেচার ও এক্সাইটের নিয়ে কাজ করে। এক্সাইটার দ্বারা ফিল্ডে চুম্বক ক্ষেত্র তৈরি করা হয়। যখন ফিল্ডকে গুরানো হয় তখন চুম্বক ক্ষেত্র আর্মেচার কোরের উপর উপরিস্থ পরিবাহী সমূহকে কর্তন করে এবং ফ্যারাডারে ইলেকট্রো-ম্যাগনেটিক ইন্ডাকশন নীতির মাধ্যমের পরিবাহীতে এসি এ,এম,এফ উৎপন্ন করে।
অল্টারনেটরের ভোল্টেজ রেগুলেশন কি ও সমীকরণ
একটি অল্টারনেটরের নো লোড ভোল্টেজ ও ফুল লোড ভোল্টেজ প্রার্থক্যকে ফুল লোড ভোল্টেজ দ্বারা ভাগ করে এর শতকরা প্রকাশ করলে তাকে ভোল্টেজ রেগুলেশন বলে।
অর্থাৎ ভোল্টেজ রেগুলেশন = [(নো লোড ভোল্টেজ – ফুল লোড ভোল্টেজ)/ফুল লোড ভোল্টেজ] * 100
% Voltage Regulation = (VN.L – VF.L)/VF.L * 100
অল্টারনেটরের কি কি লস হয়ে থাকে?
অল্টারনেটরের লস-সমূহঃ-
- কোর লসঃ ইহা আবার দুই প্রকারঃ ১) এডি কারেন্ট লস। ২) হিস্টিরিসিস লস
- কপার লসঃ ইহা আবার দুই প্রকারঃ ১) আর্মেচার কপার লস। ২) ফিল্ড কপার লস
- স্ট্রে লোড লস
- এয়ার ফ্রিকশন লস/ ব্রাশের ঘর্ষণ জনিত লস
অল্টারনেটরের প্যারালাল অপারেশনের শর্তসমূহ কি কি?
- টার্মিনাল ভোল্টেজ সমান হতে হবে
- পোলারিটি এক হতে হবে
- ফেজ সিকুয়েন্স এক হতে হবে
- অল্টারনেটরের স্পীড এমন হতে হবে যেন সবগুলো ফ্রিকুয়েন্সি এক হয়।
অল্টারনেটরের ভোল্টেজ রেগুলেশন নির্ণয়ের পদ্ধতিগুলো কি কি?
- সিনক্রোনাস ইম্পিডেন্স পদ্ধতি
- শূন্য পাওয়ার ফ্যাক্টর বা পেটিয়ার পদ্ধতি
- এম্পিয়ার টার্ন পদ্ধতি
- পুরাতন AIEF পদ্ধতি
সিনক্রোনাইজিং কি ও এটা করার উদ্দেশ্য কি?
সিনক্রোনাইজিং
সার্কিটের লোড বৃদ্ধি পেলে একটি অল্টারনেটর দ্বারা বর্ধিত চাহিদা পূরন করা সম্ভব নয়। এমন অবস্থায় দুই বা ততোদিক অল্টারনেটরেকে নির্দিষ্ট শর্ত সাপেক্ষে প্যারালাল অপারেশনে উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি করে অতিরিক্ত লোডের চাহিদা পূরণ করার পদ্ধতিকে সিনক্রোনাইজিং বলে।
উদ্দেশ্য
- সর্বোচ্চ দক্ষতা পাওয়া
- সার্বক্ষণিক চালু রাখা
- মেরামত ও ওভার হোলিং করা
- ভবিষ্যতে বর্ধিত লোড বহন করা
সিনক্রোনাইজিং কারেন্ট ও সিনক্রোনাজিং পাওয়ার কাকে বলে?
সিনক্রোনাইজিং কারেন্ট
দুইটি অলটারনেটর প্যারালালে চলার সময় একটির গতিবেঘ কিছুটা কমে গেলে অন্যটির লোড কারেন্ট ছাড়াও কিছুটা অতিরিক্ত কারেন্ট উৎপন্ন হয়। সেই কারেন্ট বাস বারের ভিতর দিয়ে প্রথম মেশিনের আর্মেচারে প্রবেশ করে। এই কারেন্টকেই সিনক্রোনাইজিং কারেন্ট বলে।
সিনক্রোনাইজিং পাওয়ার
সিনক্রোনাইজিং কারেন্ট প্রবাহের ফলে দ্বিতীয় অল্টারনেটরের থেকে কিছুটা বৈদ্যুতিক শক্তি প্রথম অলটারনেটর গ্রহণ করে এবং তার গতিবেগ বাড়ে।
একই সাথে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ করার জন্য দ্বিতীয় মেশিনের গতিবেগ কিছুটা কমে যায় আর এইভাবে মেশিন দুইটি ঠিকমত প্যারালালে চলতে থাকে। দ্বিতীয় মেশিন থেকে যে বৈদ্যুতিক শক্তি প্রথম মেশিনে যায় তাকে সিনক্রোনাইজিং পাওয়ার বলে।
অল্টারনেটরের হ্যান্টিং কি? এই হ্যান্টিং দূর করার উপায়গুলো কি কি?
অলটারনেটরের হ্যান্টিং
দুটি অলটারনেটর যখন প্যারালালে চলবে তখন উহাদের প্রত্যেকটির টার্মিনাল ভোল্টেজ সমান থাকে। যদি কোন কারনে একটির ভোল্টেজ এক মুহূর্তের জন্য বন্ধ হয়ে যায়, তবে অন্য মেশিনের ভোল্টেজ তাৎক্ষনিক ভাবে বেড়ে যায় এবং কারেন্ট কম ভোল্টেজে যুক্ত মেশিনের ভিতর প্রবেশ করে ও অলটারনেটরে হ্যান্টিং সৃষ্টি হয়।
এছাড়া কোন কারনে অলটারনেটরের ফ্রিকুয়েন্সি অল্প পরিমাণে কমে যায় বা বৃদ্ধি পায় তখন হান্টিং সৃষ্টি হতে পারে।
হ্যান্টিং দূর করার উপায়
- ডেম্পার ওয়িন্ডিং ব্যবহার করে।
- হেভী ফ্লাই হুইল ব্যবহার করে।
- প্রাইম মুভারের গভর্নর হসপোট ব্যবহার করে।
অল্টারনেটরের আর্মেচার স্থির রেখে ফিল্ড ঘুরানোর সুবিধাগুলো কি কি?
- ফিল্ড ওয়িন্ডিং এর চেয়ে আর্মেচার ওয়িন্ডিং অনেক জটিল তাই আর্মেচার ওয়িন্ডিং কে ঘুরানোর চেয়ে স্থির রাখা সুবিধাজনক।
- আর্মেচার ওয়িন্ডিং এ বেশি সংখ্যক কন্ডাকটর থাকে ফলে ইহা বেশ বড় ও ভারী হয়। ইহাকে ঘুরাতে হলে বড় ধরনের প্রাইম মুভারের দরকার হয়। তাই স্টেটর বা আর্মেচারকে স্থির রাখা হয়।
- আর্মেচারকে উচ্চ ভোল্টেজে স্থির রেখে ইন্সুলেশন করা সুবিধাজনক।
- অতি উচ্চ ভোল্টেজ-কে ঘুরন্ত অবস্থায় স্লিপ রিং ও কার্বন ব্রাশের মাধ্যমে সংগ্রহ করা বেশ জটিল।
- আর্মেচারকে স্থির রাখিলে সেন্ট্রিফিউগাল ফোর্স হতে রক্ষা করা যায়।
- আর্মেচারকে স্থির রাখলে এতে বেশি সংখ্যক কন্ডাকটর বসানো যায়।
ফ্র্যাকশনাল পিচ ওয়িন্ডিং এর সুবিধা সমূহ কি কি?
- ফ্র্যাকশনাল পিচ দ্বারা সৃষ্ট ভোল্টেজ পূর্ণ সাইন ওয়েব হয়।
- ফ্র্যাকশনাল পিচ এর কারনে কয়েলের দূরত্ব কমে যায় ফলে কপারের পরিমাণ কম লাগে।
- কন্ডাক্টরের দূরত্ব কমে যায় বলে এর ইন্ডাকট্যান্সের পরিমাণ ও কম লাগে।
- এতে সৃষ্ট ভোল্টেজ ওয়েবের হারমনিকস ডিস্টরশন ও কম হয়।
- এতে এডি কারেন্ট লস ও হিসটিরিসিস লস ও কমে যায়।
অল্টারনেটর-ও ডিসি জেনারেটরের মধ্যে প্রার্থক্য
অলটারনেটর
- এতে এসি ভোল্টেজ উৎপন্ন হয় এবং স্লিপ রিং এর মাধ্যমে লোডে সরবরাহ করা হয়।
- এতে স্লিপ রিং থাকে।
- এতে ফিল্ড বা আর্মেচার উভয়ই স্থির বা ঘুরন্ত থাকতে হবে।
- আর্মেচার ওয়িন্ডিং খোলা থাকে।
- ফিল্ডে ডি,সি সাপ্লাই দিতে হয়।
- ফিল্ড কোর লেমিনেটেড সিট দ্বারা তৈরি।
ডি,সি জেনারেটর
- এতে প্রাথমিক অবস্থায় এসি ভোল্টেজ উৎপন্ন হয় কিন্তু পরে কম্যুটেটরের মাধ্যমে ডিসি তৈরি করে লোডে সরবারহ করা হয়।
- এতে কম্যুটেটর থাকে।
- এতে ফিল্ড স্থির এবং আর্মেচার ঘুরে
- আর্মেচার ওয়িন্ডিং বন্ধ থাকে।
- আলাদা ডি,সি সাপ্লাই প্রয়োজন নেই।
- ফিল্ড কোর ঢালাই লোহার তৈরি।
অল্টারনেটরের রেটিং kW না লিখে KVA তে লেখা হয়ে থাকে কেন?
অল্টারনেটরের রেটিং kW না লিখে KVA তে লেখা হয় কারন অলটারনেটরের কপার লস নির্ভর করে উহার কারেন্টের উপর এবং কোর লস নির্ভর করে উহার ভোল্টেজের উপর।
অর্থাৎ মোট লস নির্ভর করে কারেন্ট এবং ভোল্টেজের উপর (VA) এর উপর কিন্তু উহাদের ফেজ এঙ্গেলের উপর নয়।
কিলোওয়াট রেটিং এর সাথে পাওয়ার ফ্যাক্টর জড়িত থাকে কিন্তু প্রস্ততকারী কোম্পানীর জানা থাকে না উহাতে কোন ধরনের পাওয়ার ফ্যাক্টর ব্যবহিত হবে। পাওয়ার ফ্যাক্টর পরিবর্তনের সাথে মোট লসের কোন সম্পর্ক নেই। এজন্য মূলত অলটারনেটরের রেটিং kW না লিখে KVA তে লেখা হয়।
ইংরেজিতে এই লেখাটি পড়তে ভিজিট করুনঃ Understanding and basic difference of AC Generator