ইলেকট্রিক্যাল পাওয়ার ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম

ইলেক্ট্রিক্যাল এবং ইলেক্ট্রনিক্স ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য ইলেক্ট্রিক্যাল পাওয়ার সিস্টেম অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। আমরা অনেকে বিশেষ করে ইলেক্ট্রিক্যাল এবং ইলেক্ট্রনিক্স ছাত্র-ছাত্রীরা পাওয়ার ট্রান্সমিশন নিয়ে জানতে অনেক কৌতুহল থাকি।

আজ আমরা পাওয়ার ট্রান্সমিশন এবং ডিস্ট্রিবিউশন সম্বন্ধে সহজ ভাষায় আলোচনা করবো। আজকের আলোচনার বিষয় গুলোঃ

  1. ইলেক্ট্রিক্যাল পাওয়ার ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন ভিত্তি।
  2. বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে পাওয়ার ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন।
  3. ট্রান্সমিশন লাইন ধরন।
  4. ওভারহেড ট্রান্সমিশন লাইন ও সুবিধা এবং অসুবিধা।
  5. আন্ডারগ্রাউন্ড ট্রান্সমিশন লাইন এবং সুবিধা ও অসুবিধা।

ইলেক্ট্রিক্যাল পাওয়ার ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন ভিত্তি:

ইলেক্ট্রিক্যাল পাওয়ার ট্রান্সমিশন এবং ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম প্রধানত তিনটি বিষয়ের উপর ভিত্তি করে থাকে।

  1. পাওয়ার জেনারেশন (বিদ্যুৎ উৎপাদন)
  2. পাওয়ার ট্রান্সমিশন (বিদ্যুৎ সঞ্চালন)
  3. পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন (বিদ্যুৎ বিতরন)

প্রথমে পাওয়ার জেনারেশন বা উৎপাদন করতে হয়। এরপরে তা দূর-দূরান্তে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। অবশেষে সেগুলোকে ব্যবহার উপযোগী করে তুলে কনজিউমার লেভেলে বিতরন করা হয়।

বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে পাওয়ার ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন:

নিচের চিত্রটিতে সহজভাবে সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া দেখানো হয়েছে-

  • আমাদের দেশে যেখানে পাওয়ার উৎপাদন করা হচ্ছে সেখান থেকে সচারচর ১১ কিলোভোল্ট পাওয়া যায় অর্থাৎ ১১ কিলোভোল্ট জেনারেশন ভোল্টেজ।
  • এই ১১ কিলোভোল্টকে পুরু দেশে দুর-দুরান্তে প্রেরন করার ব্যবস্থা করতে হয়।
  • এই ১১ কিলোভোল্ট বিদ্যুৎ কে পাঠানোর আগে স্টেপ আপ করে নেওয়া হয়। এখানে বিশেষ কয়েকটি কারনে ১১ কিলোভোল্ট বিদ্যুৎ কে ১৩২ অথবা ২৩০ অথবা ৪০০ কিলোভোল্ট এ স্টেপ আপ করা হয় এবং তা দূর-দূরান্তে প্রেরন করা হয়।
  • এখন এই বিদ্যুৎকে বিভিন্ন জায়গায় সংযোগ দেবার প্রয়োজন হতেই পারে। সেই ক্ষেত্রে ১৩২/২৩০/৪০০ কিলোভোল্ট থেকে স্টেপ ডাউন করে ১১ কিলোভোল্ট এ কমিয়ে আনতে হয়।
  • এবার যদি কোন বড় মিল, ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রতিষ্ঠান হয়ে থাকে তাহলে সেই ১১ কিলোভোল্টকে সরাসরি সংযোগ করা হয়। এরপর সেটাকে কমিয়ে বা বাড়িয়ে ব্যবহার উপযোগী করে নেয়া হয়।
  • বাসা-বাড়ির ক্ষেত্রে সেই ১১ কিলোভোল্টকে আবার স্টেপ ডাউন করে ০.৪৪ কিলোভোল্ট বা ৪৪০ ভোল্টে নিয়ে আশা হয়। আর সেটা বাসা-বাড়ি বা ছোট জায়গায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
  • সেখান থেকে প্রয়োজন মত ২২০-২৪০ ভোল্টে ট্রান্সফর্ম করে ব্যবহার করা হয়।

আমরা ইতিমধ্যে ট্রান্সফরমার নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি যেখানে স্টেপ-আপ, স্টেপ-ডাউন, কিভাবে কাজ করে  বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

ট্রান্সমিশন লাইন ধরনঃ

ট্রান্সমিশন লাইন প্রধানত ২ ধরনের হয়ে থাকে।

  • ওভারহেড
  • আন্ডারগ্রাউন্ড

ওভারহেড ট্রান্সমিশন লাইন ও সুবিধা এবং অসুবিধাঃ

ওভারহেড ট্রান্সমিশন লাইন আমরা প্রায়ই দেখতে পাই। বিশেষ করে ভ্রমনে গেলে বা গ্রামের বাড়িতে দূরে তাকালেই দেখতে পাই অনেক বড় বড় টাওয়ার মাঠের মধ্য দিয়ে অবস্থিত এবং তার সাথে অনেক মোটা মোটা তার লাগানো থাকে। মূলত এটি হলো ওভারহেড ট্রান্সমিশন লাইন। এই ধরনের লাইনে বেশ কিছু সুবিধা এবং অসুবিধা আছে।

সুবিধাঃ
  • এভারেজে ৬৬ কিলোভোল্টের উপরে বিদ্যুৎ প্রেরন করা সম্ভব এবং নিরাপদ।
  • লাইনে  কোথাও ফল্ট দেখা দিলে তা নির্নয় করা সহজ।
  • এগুলো তৈরি এবং স্থাপন খরচ ও অনেক কম।
অসুবিধাঃ
  • এগুলো অনেক জায়গা নিয়ে বিস্তৃত হয়ে থাকে।
  • কোন ইন্সট্রুমেন্ট নষ্ট বা ক্ষতিগ্রস্ত হলে তা ঠিক করতে অনেক খরচ হয়ে থাকে।

আন্ডারগ্রাউন্ড ট্রান্সমিশন লাইন এবং সুবিধা ও অসুবিধাঃ

ট্রান্সমিশন

যে সব লাইন মাটির নিচে দিয়ে অতিক্রম করে থাকে তাকে আন্ডারগ্রাউন্ড ট্রান্সমিশন লাইন বলে। তবে বাংলাদেশে আপাতত ওভারহেড ট্রান্সমিশন লাইনকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এধরনের আন্ডারগ্রাউন্ড লাইনে বেশ কিছু সুবিধা এবং অসুবিধা রয়েছে।

সুবিধাঃ
  • পরিচ্ছন্ন ভাবে সাজানো যায় এবং অনেকটা নিরাপদ থাকে।
  • অনেক টেকসই হয় এবং অনেক দিন দীর্ঘস্থায়ি হয়।
অসুবিধাঃ
  • আন্ডারগ্রাউন্ড ট্রান্সমিশন লাইন খুব ই ব্যয়বহুল।
  • এটির ম্যাক্সিমাম লাইন ভোল্টেজ লিমিট ৬৬ কিলোভোল্ট। এর উপরে বিদ্যুৎ অতিক্রম করলেই বিপদজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।
  • এই লাইনের মধ্যে দিয়ে কোন সমস্যা দেখা দিলে তা নির্নয় করা খুব কঠিন হয়ে যায়।

ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন প্রশ্ন উত্তর পর্ব-২ পড়তে এখানে ক্লিক করুন

আজ এই পর্যন্ত বন্ধুরা। এই বিষয়ে কোন প্রশ্ন থাকলে আমাদের কে কমেন্ট করুন। আবার ফিরে আসবো খুব শিগ্রয় নতুন কিছু লেখা নিয়ে। ধন্যবাদ।

ইলেকট্রিক্যাল পাওয়ার ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন নিয়ে ইংরেজিতে পড়ুনঃ What is Underground Transmission Line