সহজ ভাষায় পাওয়ার ফ্যাক্টর নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা ও প্রশ্ন-উত্তর

আশা করি বন্ধুরা সবাই অনেক ভালো আছেন। আজকে আমরা পাওয়ার ফ্যাক্টর কি ও এটি সম্বন্ধে বিস্তারিত জানবো। পাওয়ার ফ্যাক্টর বিষয়টি আমরা পাঠ্য পুস্তকে অনেক পড়েছি তবে চলুন আজ সহজ ভাষায় পাওয়ার ফ্যাক্টর সম্বন্ধে জেনে নেওয়া যাক। আজকের লেখাতে যে যে বিষয়গুলো থাকবেঃ

  1. পাওয়ার ফ্যাক্টর কি বা কাকে বলে বিস্তারিত?
  2. পাওয়ার ফ্যাক্টরের প্রকারভেদ। 
  3. পাওয়ার ফ্যাক্টর ১ অথবা ০.৬ মানে কি বুঝায়? 
  4. ল্যাগিং, লিডিং এবং ইউনিটি পাওয়ার ফ্যাক্টর কি?
  5. পাওয়ার ফ্যাক্টর কারেকশন কি?
  6. পাওয়ার ফ্যাক্টরের মান কম হলে সিস্টেমে কি কি অসুবিধা হয়?
  7. অর্থনৈতিক পাওয়ার ফ্যাক্টর কি এবং এর সূত্রটি।
  8. এসি সিরিজ সার্কিটে রেজোন্যান্স অবস্থায় পাওয়ার ফ্যাক্টরের মান কত?

পাওয়ার ফ্যাক্টর কি বা কাকে বলে?

পাওয়ার ফ্যাক্টর হলো সাধারণত ভোল্টেজ ও কারেন্টের মধ্যবর্তী কোসাইন কোণ। অন্যভাবে বলতে গেলে একটিভ পাওয়ার এবং এপারেন্ট পাওয়ারের অনুপাতকে পাওয়ার ফ্যাক্টর বলে। পাওয়ার ফ্যাক্টর কে সাধারণত cosθ দ্বারা প্রকাশ করা হয়। ইহার কোন একক নেই এবং ইহাকে শতকরা হিসেবে প্রকাশ করা হয়।

পাওয়ার ফ্যাক্টর কি

বিস্তারিত: পাওয়ার ফ্যাক্টর নির্দেশ করে থাকে যে শতকরা কতভাগ বিদ্যুৎ আমরা প্রয়োজনীয় কাজে ব্যবহার করতে পারি। পাওয়ার ফ্যাক্টরের মান (০-১) পর্যন্ত হয়ে থাকে।

আমরা জানি যে cosθ দ্বারা পাওয়ার ফ্যাক্টরকে প্রকাশ করা হয় কিন্তু θ দ্বারা কারেন্ট এবং ভোল্টেজের মধ্যবর্তী কোণকে বুঝায়।

সুতারাং এভাবে সংজ্ঞায়িত করা যেতে পারে “কারেন্ট এবং ভোল্টেজের মধ্যবর্তী কোণের কোসাইন মানকে পাওয়ার ফ্যাক্টর বলে“।

পাওয়ার ফ্যাক্টরের সঠিক হিসাব জানা না থাকলে একে আদর্শ মান ৮০% ধরে অর্থাৎ ০.৮ ল্যাগিং ধরে হিসাব করা হয়। একটিভ পাওয়ার কিলোওয়াটে পরিমাপ করা হয়ে থাকে এবং এপারেন্ট পাওয়ার ভোল্ট-এম্পিয়ারে(KVA) পরিমাপ করা হয়ে থাকে।

  • একটিভ পাওয়ার (kW)=VIcosθ
  • এপারেন্ট পাওয়ার (kVA)=VI
  • পাওয়ার ফ্যাক্টর, cosθ=kW/kVA

পাওয়ার ফ্যাক্টরের প্রকারভেদ

পাওয়ার ফ্যাক্টর সাধারণত তিন প্রকার হয়ে থাকে

  • ল্যাগিং পাওয়ার ফ্যাক্টর।
  • লিডিং পাওয়ার ফ্যাক্টর।
  • ইউনিটি পাওয়ার ফ্যাক্টর।

পাওয়ার ফ্যাক্টর ১ অথবা ০.৬ মানে কি বুঝায়? 

পাওয়ার ফ্যাক্টরের মান ১ মাণে আমরা বুঝি যে ১০০ kVA সাপ্লাই দিলে ১০০ kW একটিভ পাওয়ার পাওয়া যাবে। আর পাওয়ার ফ্যাক্টরের (cosθ) মান ০.৬ মানে হল আমরা ১০০ kVA সাপ্লাই দিলে ৬০ kW একটিভ পাওয়ার পাব।

ল্যাগিং, লিডিং এবং ইউনিটি পাওয়ার ফ্যাক্টর কি?

ল্যাগিং পাওয়ার ফ্যাক্টর: ল্যাগিং পাওয়ার ফ্যাক্টর হলো যখন কারেন্ট ভোল্টেজের থেকে পিছিয়ে থাকে বা এসি সার্কিটে ক্যাপাসিটিভ লোডের চেয়ে ইন্ডাক্টিভ লোড বেশী হলে তাকে ল্যাগিং পাওয়ার ফ্যাক্টর বলে। যেমন ৮০ ডিগ্রী ল্যাগিং পাওয়ার ফ্যাক্টর বলতে বুঝায় কারেন্ট ভোল্টেজের সাপেক্ষে ৮০ ডিগ্রী পিছিয়ে আছে।

পাওয়ার ফ্যাক্টর কি

লিডিং পাওয়ার ফ্যাক্টর: এসি সার্কিটে ইন্ডাক্টিভ লোডের চেয়ে ক্যাপাসিটিভ লোড বেশি হলে অর্থাৎ কারেন্ট ভোল্টেজের চেয়ে এগিয়ে থাকলে তাকে লিডিং পাওয়ার ফ্যাক্টর বলে। যেমন ৮০ ডিগ্রী লিডিং পাওয়ার ফ্যাক্টর হলো কারেন্ট ভোল্টেজে চেয়ে ৮০ ডিগ্রী এগিয়ে থাকবে।

ইউনিটি পাওয়ার ফ্যাক্টর: সার্কিটে কারেন্ট এবং ভোল্টেজ যখন একই সাথে অবস্থান করে অর্থাৎ সার্কিটে ইন্ডাক্টিভ এবং ক্যাপাসিটিভ লোড যখন সমান হয় তখন তাকে ইউনিটি পাওয়ার ফ্যাক্টর বলে।

পাওয়ার ফ্যাক্টর কি
ফেজর ডায়াগ্রাম

পাওয়ার ফ্যাক্টর কারেকশন কি?

একটি সিস্টেমে রি-একটিভ পাওয়ারের পরিমান কমিয়ে একটিভ পাওয়ারের পরিমান বাড়ানোকে পাওয়ার ফ্যাক্টর কারেকশন বলে থাকে। ক্যাপাসিটর ব্যাংক অথবা সিনক্রোনাস মোটর ব্যবহার করে পাওয়ার ফ্যাক্টর কারেকশন এবং উন্নতি করা হয়। বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রিতে ক্যাপাসিটর ব্যাংক ব্যবহার করে পাওয়ার ফ্যাক্টর কারেকশন করা হয়।

পাওয়ার ফ্যাক্টর কি

পাওয়ার ফ্যাক্টরের মান কম হলে সিস্টেমে কি কি অসুবিধা হয়?

পাওয়ার ফ্যাক্টরের মান কম হলে সিস্টেমে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হয়ে থাকেঃ

  • লাইন লস বৃদ্ধি হয়ে থাকে।
  • তারের ক্যাবলের আয়তন অনেক বেশি প্রয়োজন হয়।
  • পাওয়ার সিস্টেমের দক্ষতা কমে যায়।
  • প্রাথমিক খরচ বেড়ে যায় এতে করে পার ইউনিট কস্ট বেশি হয়

অর্থনৈতিক পাওয়ার ফ্যাক্টর কি এবং এর সূত্রটি

পাওয়ার ফ্যাক্টর যে মানে উন্নতি করলে বাৎসরিক সর্বোচ্চ সাশ্রয় হয় উক্ত পাওয়ার ফ্যাক্টর কে অর্থনৈতিক পাওয়ার ফ্যাক্টর বলে।

সুত্র:পাওয়ার ফ্যাক্টর কি

এসি সিরিজ সার্কিটে রেজোন্যান্স অবস্থায় পাওয়ার ফ্যাক্টরের মান কত?

এসি সিরিজ সার্কিটে রেজোন্যান্স অবস্থায় পাওয়ার ফ্যাক্টরের মান ১ বা ইউনিটি হয়ে থাকে। এসি সিরিজ সার্কিটে রেজোন্যান্স অবস্থায় ইন্ডাক্টিভ রিয়্যাক্ট্যান্স এবং ক্যাপাসিটিভ রিয়্যাক্ট্যান্স সমান থাকে XL = XC. এমন অবস্থায় মোট ইম্পিডেন্স Z = R+ J(XL-XC) = R হয়। পাওয়ার ফ্যাক্টর, Cosθ= R/Z = R/R = 1 হয়। আবার θ = Cos1 1 = 00 হয়। এ থেকে বুঝা যায় রেজোন্যান্স অবস্থায় কারেন্ট এবং ভোল্টেজের মাঝে ফেজ কোণ শুন্য হয়।

Download PDF: সহজ ভাষায় পাওয়ার ফ্যাক্টর নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা ও প্রশ্ন-উত্তর.pdf