আই পি এস এবং ইউ পি এস নিয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য

আই পি এস এবং ইউ পি এস এখন অনেক জনপ্রিয়। লোডশেডিং থেকে মুক্তি পেতে আই পি এস একটি সহজ মাধ্যম। ইউ পি এস অনেকেই ব্যবহার করে থাকেন কম্পিউটারে ব্যাকআপ হিসেবে।

বর্তমানে আমাদের অনেকের বাসায় আই পি এস ইউ পি এস ব্যবহার করে থাকি। আমাদের দেশে যে পরিমানে লোডশিডিং হয়ে থাকে তাতে করে আই পি এস এবং ইউ পি এস এর এক্সট্রা যত্ন নেওয়া উচিত। কিছু সাধারণ নিয়ম কানুন মেনে চললে এটা আমাদেরকে ভালো সার্ভিস দিতে পারবে।

অথবা আমরা যারা নতুন আই পি এস বা ইউ পি এস কিনতে চাচ্ছি তাদের জন্য বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জেনে রাখা উচিত। আজ আমরা সেই বিষয়গুলো আপনাদের সামনে তুলে ধরবো।

  1. আই পি এস কি?
  2. ইউ পি এস কি?
  3. আই পি এস কেনার পূর্বে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।
  4. ইউ পি এস কেনার পূর্বে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।
  5. আই পি এস যেভাবে ব্যবহার করা উচিত।
  6. ইউ পি এস যেভাবে ব্যবহার করা উচিত।
  7. আই পি এস এবং ইউ পি এসের মধ্যে প্রার্থক্য।

আই পি এস কি?

আই পি এস এর  পূর্ন নাম হলো ইনস্ট্যান্ট পাওয়ার সাপ্লাই(Instant Power supply)। আই পি এস এমন একটি ইলেকট্রনিক্স যন্ত্র যার মাধ্যমে ব্যাটারীতে সঞ্চিত ডিসি শক্তিকে এসি প্রবাহে রূপান্তরিত করে। যেমনঃ বাতি, পাখা ইত্যাদি।

IPS=Instant Power Supply. ( তাৎক্ষনিক বিদ্যুৎ সরবরাহ )। IPS সাধারনত বেশি লোডের জন্য ব্যবহার করা হয়। IPS এর সুইচিং টাইম ১ সেকেন্ড বা তার চেয়ে বেশি । যার ফলে ব্যবহারকারীর কম্পিউটার বা ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস রিসেট বা পুনারায় আরম্ভ হয়।
এই কারনে কম্পিউটার বা ইলেকট্রনিক্স ডিভাইসের সাথে IPS সংযুক্ত করা হয় না । ইলেকট্রিক্যাল বেশি লোডের জন্য IPS ব্যবহার করা হয় । লোডের উপর নির্ভর করে IPS সংযুক্ত করা হয়।

যখন বিদ্যুৎ সাপ্লাই থাকে তখন চার্জারের মাধ্যমে ব্যাটারি চার্জ করে বিদ্যুৎ শক্তি সঞ্চয় কর হয় আর যখন বিদ্যুৎ সাপ্লাই বন্ধ হয়ে যায় (লোডশেডিং) তখন উপযুক্ত যন্ত্রের মাধ্যমে ব্যাটারি থেকে সঞ্চিত শক্তিকে প্রয়োজনীয় রুপে পরিবর্তন করে বৈদ্যুতিক লোড চালানো হয়। এই যন্ত্র মূলত আই পি এস।

ইউ পি এস কি?

ইউ পি এস এর পূর্ণ নাম হলো Uninterruptible Power Supply or Source। এটা এমন একটি ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস যা অল্প সময়ের জন্য বিদ্যুৎ সঞ্চয় করে রাখতে পারে এবং যে কোন মুহূর্তে  কম্পিউটার ও অন্যান্য যন্ত্রপাতিতে বিদ্যুৎ সরবরাহ প্রদান করতে পারে।

ইহা আই পি এস এর মত ব্যাটারিতে বিদ্যুৎ শক্তি সঞ্চয় করে রাখতে পারে এবং ডিসি শক্তিকে এসি প্রবাহে রূপান্তরিত করে থাকে।

UPS= Uninterruptible Power Supply. ( নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ ) । UPS সাধারনত কম্পিউটার বা ইলেকট্রনিক্স ডিভাইসে ব্যবহৃত হয়। UPS সাধারনত সুইচিং টাইম 0.১ সেকেন্ড এর মধ্যে ব্যাকআপ পাওয়ার দিতে সক্ষম ।
যার ফলে ব্যবহারকারীর কম্পিউটার বা ইলেকট্রনিক্স ডিভাইসেকে রিসেট বা পুনারায় আরম্ভ করা হবে না । কম্পিউটার বা ইলেকট্রনিক্স ডিভাইসে UPS অল্প সময়ের জন্য ব্যাকআপ পা্ওয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
হঠাৎ Power Drop এবং Power Up কম্পিউটার বা ইলেকট্রনিক্স ডিভাইসের জন্য ক্ষতিকারক। তাই নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য UPS ব্যবহার করা হয়।

আই পি এস কেনার পূর্বে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য

শুধুমাত্র আই পি এস ইউ পি এস এর ক্ষেত্রে নয়, যে কোন ইলেকট্রনিক্স প্রোডাক্ট ক্রয় করার পূর্বে আমাদের সেই প্রোডাক্ট সম্বন্ধে ভালো জানা উচিত।

সেই প্রোডাক্টটি আমি কি কাজে ক্রয় করতে যাচ্ছি এবং প্রোডাক্টির সহনক্ষমতা, কার্যক্ষমতা কতটুকু আছে তা আমাদের ভালোভাবে জেনে এরপরে কেনা উচিত। আজ আমি আপনাদের সাথে কিছু বিষয় শেয়ার করতে যাচ্ছি যেগুলো আই পি এস বা ইউ পি এস কেনার ক্ষেত্রে কিঞ্চিৎ পরিমান হলেও সাহায্য করবে বলে আশা করছি।

আই পি এস ইউ পি এস

  • আই পি এস এর সঠিক ওয়াট কত তা জেনে রাখবেন কারন এই ওয়াটের ওপর নির্ভর করে আই পি এস আপনাকে কম বেশি পাওয়ার দিয়ে থাকবে।
  • আই পি এস এর সর্বনিম্ম ইনপুট ভোল্টেজ জেনে রাখতে হবে।এই সর্বনিম্ম ইনপুট ভোল্টেজে হতে মূলত আই পি এস কোন প্রকার সমস্যা ছাড়া চার্জ গ্রহন করতে পারবে।(আদর্শ ভোল্টেজ মূলত ১৪০ ভোল্ট)
  • আই পি এস কত এম্পিয়ার ব্যাটারি চার্জ করতে পারবে (আদর্শ এম্পিয়ার ১২)
  • চার্জ কি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত, রিলে নাকি এস ছি আর (SCR)। এস ছি আর (SCR) মূলত ভালো কারন এতে সঠিক ভোল্টেজে চার্জ হয় এবং ব্যাটারি অনেক দিন ভালো টিকে
  • আই পি এস অভারলোড প্রটেক্টেড কিনা যাচাই করা।
  • আই পি এস এ ওভার চার্জিং কাটিং ভোল্টেজ কত? আদর্শ ভোল্টেজ ১২.৮ এর কাছাকাছি।

ইউ পি এস কেনার পূর্বে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য

ইউ পি এসের ক্ষেত্রে অনেকটা আই পি এস এর মত কিছু বিষয় বিবেচনা করে কেন উচিত। তবে ইউ পি এস যেন ভালো মানের হয় সেটা খেয়াল রাখবেন কারন আমরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে ইউ পি এস ব্যবহার করি কম্পিউটারকে সাপোর্ট দেবার জন্য। সেক্ষেত্রে ভালো মানের ইউ পি এস কেনা বাঞ্চনিয়।

আই পি এস যেভাবে ব্যবহার করা উচিত

আই পি এস এ মূলত ব্যাকাপ সমস্যা বেশি হয়ে থাকে। আই পি এস এর একটু কেয়ার নেওয়া উচিত। তাহলে চলুন দেখি কি কি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে।

  • বাসার মেইন ভোল্টেজ পরীক্ষা করে দেখা যাতে সঠিক পরিমান ভোল্টেজ এর মাধ্যমে আই পি এস চার্জ হচ্ছে কিনা দেখা।
  • ব্যাটারির সাথে আই পি এসের সংযোগ পরীক্ষা করা।
  • ব্যাটারি এবং তারের সংযোগ স্থলে কার্বন জমার প্রবণতা অনেক বেশি। তাই মাঝে মাঝে খুলে পরিষ্কার করা উচিত।
  • ব্যাটারির চার্জ ভোল্টেজ ঠিক না থাকলে পানি শুকিয়ে যায় তাই ব্যাটারিতে পর্যাপ্ত পানি আছে কিনা তা পরীক্ষা করা।

ইউ পি এস যেভাবে ব্যবহার করা উচিত

ইউ পি এস একটু ভালো ব্র্যান্ডের কেনা উচিত। আমরা অনেকেই ইউ পি এস ব্যবহার করে থাকি কম্পিউটারে পাওয়ার সাপোর্ট দেবার জন্য।

আই পি এস ইউ পি এস

  • ইউ পি এস এর মেইন পাওয়ার কখনো বন্ধ না করাই ভালো।
  • বিদ্যুৎ চলে গেলেও ইউ পি এস বন্ধ করবেন না।
  • ইউ পি এস প্রতি এক মাস পর পর পুরোপুরি ডিসচার্জ করবেন এবং পুরোপুরি ফুল চার্জ করবেন।
  • সি আর টি(ক্যাথোড রে টিউব) মনিটরের ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ চলে গেলেও বন্ধ থাকা মনিটর কখনো চালু করবেন না। চালু করলে এতে করে ব্যাটারির উপর চাপ পরে এবং ব্যাটারির আয়ু কমে যায়।
  • ইউ পি এসে কখনো ডিজাইন লোডের চেয়ে অতিরিক্ত লোড দিবেন না।
  • মাঝে মাঝে ইউ পি এসের ব্যাটারি কানেক্টর গুলো পরিষ্কার করে নিবেন যদি সম্ভব হয়।

ইউ পি এসে মূলত বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ব্যাটারি নষ্ট হয়। তাই ব্যাটারির দিকে একটু বেশি মনযোগ দেওয়া উচিত। ইউ পি এসের পুরাতন ব্যাটারি বদলে নতুন ব্যাটারি লাগালেই দেখবেন একদম আগের মত সার্ভিস দিচ্ছে।

আই পি এস ইউ পি এস এর মধ্যে প্রার্থক্য

আই পি এস এবং ইউ পি এস এর মধ্যে প্রার্থক্য বিষয়ে আমাদের অনেকের মাঝে প্রশ্ন থাকে। বিশেষ করে অনেকেই প্রশ্ন করে থাকেন যে ইউ পি এস দিয়ে কি ফ্যান, লাইট ইত্যাদি চালানো যাবে কি। আজকে আপনাদের সাথে কিছু ধারনা শেয়ার করবো।

  • আই পি এসের পাওয়ার সাধারণত ১৬ কেভিএ এবং এটি ৩ ফেজ হয় যেখানে ইউ পি এস পাওয়ার হয় ২ কেভিএ
  • আই পি এস এ মেইন থেকে ব্যাটারি বা ব্যাটারি থেকে মেইনে পাওয়ার যেতে সময় লাগে প্রায় ৫০০ মিলি সেকেন্ড যেখানে ইউ পি এসের ক্ষেত্রে সময় লাগে মাত্র ৩ থেকে ৮ মিলি সেকেন্ড। এটা খুবই অল্প সময়ের জন্য।
  • আই পি এস এ মেইন ভোল্টেজের সমান ভোল্টেজ পাওয়া যায় কিন্তু ইউ পি এস এর ক্ষেত্রে অটোমেটেড ভোল্টেজ রেগুলেশন হয় এবং এটা সাধারণত ২২০ ভোল্ট এ সেট করা থাকে।
  • আই পি এস এ সরাসরি ইনভার্টার মেইনে সাপ্লাই পাওয়ার যায়। এই মেইন সাপ্লাই একই সময়ে আউটপটে ও যেয়ে থাকে অর্থাৎ একই সময়ে মেইন সাপ্লাই ব্যাটারি চার্জ করে থাকে এবং আউটপুটে পাওয়ার দেয়। আইপিএসে একটি সেন্সর এবং রিলে মেকানিজম থাকে যেটা সবসময় চেক করে থাকে যে মেইন সাপ্লাই থেকে পাওয়ার আসছে কিনা। যখনই মেইন পাওয়ার অফ হয়ে যায় তখনই এটি ট্রিগার করে ব্যাটারি থেকে চার্জ নেওয়া শুরু করে থাকে। ইউ পি এসের ক্ষেত্রে, ইউপিএস এ প্রথমে মেইন থেকে সরাসরি ইউপিএসে কারেন্ট সাপ্লাই হয়। এসি কারেন্ট এসি থেকে ডিসিতে কনভার্ট হয় এবং ব্যাটারি চার্জ শুরু করে। চার্জিত ব্যাটারি থেকে পাওয়ার যায় সাইন ওয়েবের ইনভার্টারে যেখানে ডিসি কনভার্ট হয়ে এসি পাওয়া যায়। এই এসি থেকে আমরা মূলত পিসিতে পাওয়ার পেয়ে থাকি। আউটপুট পাওয়ার সম্পন্ন ডিসি থেকে আসে বলে এর সময়ের পার্থক্য কখনো পরিবর্তন হয় না। তাই এর ফ্রিকুয়েন্সি সবসময় অপিরিবর্তিত থাকে।
  • মেইন সাপ্লাই কারেন্ট মূলত একশতভাগ সাইন ওয়েব হয়ে থাকে। আই পি এস এর আউটপুট দেখতে অনেকটা স্টেপ ওয়েবের মত। পিওর সাইন ওয়েব পাওয়া যায়না বলেই আইপিএসের ইন্ডাক্টিভ লোডের ক্ষতি হয়ে থাকে। এই কারনে আমরা অনেক সময় শুনে থাকি আই পি এসের ঘন ঘন রেগুলেটর নষ্ট হয়।
  • আই পি এস এর মেকানিজম ইউ পি এস এর চেয়ে অনেক কম ব্যয় বহুল এবং জটিল।

আই পি এস ইউ পি এস নিয়ে আজ এই পর্যন্ত বন্ধুরা। আই পি এস ইউ পি এস নিয়ে কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করতে পারেন। আই পি এস ইউ পি এস বিষয়ে ভবিষ্যতে আরো লেখার চেষ্টা করা হবে। ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন এই প্রত্যাশাই আজ বিদায়।

আই পি এস ও ইউ পি এস টপিক ইংরেজিতে পড়ুনঃ What is IPS and UPS system and their function