এই লেখাতে আমরা এসি সার্কিট সম্বন্ধে সাধারণ কিছু বিষয় আলোচনা করবো। এসি সার্কিট সম্বন্ধে ইলেকট্রিক্যাল ছাত্র-ছাত্রীদের বেসিক অবশ্যই ভালো রাখতে হবে।
আপনি যখন ইলেকট্রিক্যালের এপ্লিকেশন বেস পড়াশুনা করবেন তখন এসি সার্কিট এর বেসিক ভালো লাগবে, তা না হলে পরবর্তি টপিক গুলো বুঝতে সমস্যা হতে পারে। যদিও আমারা অনেকেই এসি সার্কিটের এই বিষয়গুলোর সাথে পরিচিত আছি। এসি সার্কিট এর যে বিষয়গুলো আলোচনা করা হবে-
- সাইকেল, এমপ্লিচুড, ফ্রিকুয়েন্সি, ফেজ, ফেজ এঙ্গেল, অল্টারনেশন, পিরিয়ড বলতে কি বুঝায়?
- তাৎক্ষনিক মান, গড়মান এবং সর্বোচ্চ মান কাকে বলে?
- আর, এম, এস (R.M.S) মান বলতে কি বুঝায়?
- ফর্ম ফ্যাক্টর কাকে বলে?
- পিক ফ্যাক্টর কাকে বলে?
- পাওয়ার ফ্যাক্টর বলতে কি বুঝায় ও কত প্রকার বিস্তারিত?
- একটিভ পাওয়ার ও রিএক্টিভ পাওয়ার কাকে বলে?
- কিউ ফ্যাক্টর(Q-factor) কাকে বলে?
- রেজোন্যান্ট সার্কিট, রেজোন্যান্ট ফ্রিকুয়েন্সি কাকে বলে?
- ভোল্ট-এম্পিয়ার কাকে বলে?
- পলিফেজ কাকে বলে, পলিফেজ ও সিঙ্গেল ফেজ এর প্রার্থক্য কি?
- স্টার কানেকশন ও ডেল্টা কানেকশন কাকে বলে?
- স্টার (Y) ও ডেল্টা সিস্টেমের সুবিধা।
সাইকেল, এমপ্লিচুড, ফ্রিকুয়েন্সি, ফেজ, ফেজ এঙ্গেল, অল্টারনেশন, পিরিয়ড বলতে কি বুঝায়?
সাইকেল
কোন পরিবর্তনশীল তড়িৎ (অল্টারনেটিং কারেন্ট) এক দিকে প্রবাহিত হয়ে শূন্য হতে সর্বোচ্চ এবং সর্বোচ্চ অবস্থান হতে আবার শূন্য অবস্থানে ফিরে আসে অনুরূপভাবে যদি বিপরীত দিকে প্রবাহিত হয়ে শূন্য হতে সর্বোচ্চ এবং সর্বোচ্চ হতে আবার শূন্য অবস্থানে ফিরে আসে তখন তড়িৎ প্রবাহের তরঙ্গ (wave) সৃষ্টি হয় যাকে সাইকেল বলে।
এমপ্লিচুড
কোন পরিবর্তনশীল রাশির ধনাত্মক বা ঋণাত্মক অর্ধসাইকেলের সর্বোচ্চ মানকে এমপ্লিচুড বলে।
ফ্রিকুয়েন্সি
কোন পরিবর্তনশীল রাশি প্রতি সেকেন্ডে যতগুলি সাইকেল সম্পন্ন করে তাকে ফ্রিকুয়েন্সি বলে। ফ্রিকুয়েন্সিকে f দ্বারা প্রকাশ করা হয়ে থাকে।
এর একক সাইকেল/সেকেন্ড বা হার্জ(Hz)। ফ্রিকুয়েন্সি নির্ণয় করার সূত্র f=1/T
ফেজ
পরিবর্তনশীল রাশির কোন নির্দিষ্ট সময়ে তার কৌনিক অবস্থানকে ফেজ বলে।
ফেজ এঙ্গেল
কোন বৈদ্যুতিক সার্কিটে ভোল্টেজ এবং কারেন্টের মধ্যবর্তী কোণকে ফেজ এঙ্গেল বলা হয়। এই কোণকে মূলত ডিগ্রী বা রেডিয়ানে পরিমাপ করা হয়।
যদি ভোল্টেজের তুলনায় কারেন্ট পিছনে থাকে তাহলে ফেজ এঙ্গেল ল্যাগিং এবং যদি ভোল্টেজ অপেক্ষা কারেন্ট এগিয়ে থাকে তাহলে ফেজ এঙ্গেল লিডিং হয়।
অল্টারনেশন
পরিবর্তনশীল রাশির অর্ধ সাইকেল বা তরঙ্গের অর্ধাংশকে অল্টারনেশন বলে।
পিরিয়ড
একটি পূর্ণ সাইকেল সম্পন্ন হতে যে সময়ের প্রয়োজন হয় তাকে পিরিয়ড বলে। একে T দ্বারা প্রকাশ করা হয়।পিরিয়ড নির্ণয় করার ক্ষেত্রে সূত্র T=1/f
তাৎক্ষনিক মান, গড়মান এবং সর্বোচ্চ মান কাকে বলে?
তাৎক্ষনিক মান
একটি পরিবর্তন রাশির যে কোন মুহুর্তের মানকে তাৎক্ষনিক মান বলে।
গড়মান
কোন পরিবর্তনশীল রাশির অর্ধ সাইকেলের তাৎক্ষনিক মান সমূহের গড়কে গড়মান বলে। গড়মান নির্ণয়ের সূত্রঃ ০.৬৩৬*সর্বোচ্চ মান।
সর্বোচ্চ মান
পরিবর্তনশীল রাশি ০ ডিগ্রী হতে প্রতি মূহুর্তে বৃদ্ধি পেয়ে ৯০ ডিগ্রীতে অবস্থানের সময় সর্বোচ্চ মানে পৌছায়। এই ৯০ ডিগ্রী তে অবস্থিত মানকেই সর্বোচ্চ মান বলা হয়।
আর, এম, এস (R.M.S) মান বলতে কি বুঝায়?
একটি সার্কিটের মধ্য দিয়ে নির্দিষ্ট সময়ে কোন নির্দিষ্ট পরিমাণ ডিসি প্রবাহিত হলে যে পরিমাণ তাপ উৎপন্ন হয় সেই পরিমাণ তাপ উৎপন্ন করতে ঐ সার্কিটের মধ্য দিয়ে ঐ সমান সময়ে যে পরিমাণ এসি প্রবাহিত করা প্রয়োজন হয় তাকে ঐ এসি কারেন্টের আর, এম, এস মান বলে।
R.M.S মান বের করার সূত্র= √(Im^2/2)= Im/√2=0.707Im
ফর্ম ফ্যাক্টর কাকে বলে?
কোন সাইন ওয়েবের কার্যকরী মান বা আর, এম, এস ভ্যালু এবং গড় মান এর অনুপাতকে ফর্ম ফ্যাক্টর বলে। সহজভাবে বলতে গেলে আর,এম,এস ভ্যালু এবং গড় মানের অনুপাতকে ফর্ম ফ্যাক্টর বলে। একে মূলত Kf দ্বারা প্রকাশ করা হয়।
ফর্ম ফ্যাক্টর Kf=(R.M.S value/Average value)
=(0.707*সর্বোচ্চ মান)/(0.636*সর্বোচ্চ মান)
=1.11
সর্বোচ্চ মান=৯০ ডিগ্রী
পিক ফ্যাক্টর কাকে বলে?
সাইন ওয়েবের সর্বোচ্চ মান এবং আর এম এস ভ্যালুর অনুপাতকে পিক ফ্যাক্টর বলা হয়। একে Ka দ্বারা প্রকাশ করা হয়।
পিক ফ্যাক্টর, Ka= (সর্বোচ্চ মান/আর,এম,এস ভ্যালু)
=(সর্বোচ্চ মান)/(0.707*সর্বোচ্চ মান)
=1.414
সর্বোচ্চ মান=৯০ ডিগ্রী
পাওয়ার ফ্যাক্টর বলতে কি বুঝায় ও কত প্রকার বিস্তারিত?
একটিভ পাওয়ার ও রিএকটিভ পাওয়ার কাকে বলে?
একটিভ পাওয়ার
কোন সার্কিটে প্রকৃত যে পাওয়ার ব্যয় হয় তাকে একটিভ পাওয়ার বলে। একে Pactive দ্বারা প্রকাশ করা হয়। এর একক ওয়াট বা কিলোওয়াট,
Pactive= VICosθ
রিএকটিভ পাওয়ার
কোন সার্কিটের ভোল্টেজ ও কারেন্টের খাড়া বা উলম্ব উপাদান ISinθ এর গুণফলকে রিএকটিভ পাওয়ার বলে। একে Pr দ্বারা প্রকাশ করা হয়। এর একক VAR বা KVAR।
Pr= VISinθ
কিউ ফ্যাক্টর(Q-factor) কাকে বলে?
Q এর অর্থ হলো কোয়ালিটি, Q ফ্যাক্টর মানে কোয়ালিটি ফ্যাক্টর। আমরা জানি সিরিজ রেজোন্যান্সের সময় ইন্ডাকট্যান্স বা ক্যাপাসিট্যান্সের আড়াআড়িতে পটেনশিয়াল প্রার্থক্য সাপ্লাই ভোল্টেজের চেয়ে বহুগুণ বৃদ্ধি পায়।
রেজোন্যান্সের কারনে সৃষ্ট ভোল্টেজ বিবর্ধনকে সিরিজ রেজোন্যান্ট সার্কিটের কিউ ফ্যাক্টর Q-factor বলে। সিরিজ রেজোন্যান্ট সার্কিটে Q-factor কে L অথবা C দ্বারা প্রকাশ করা হয়।
আমরা জানি,
fr=1/2π√(LC) । এখানে fr=Resonant frequency, L=Inductance, C=Capacitance
so, 2πfr=1/√(LC)
so, ωr = 1/√(LC) । এখানে ωr=2πfr
Q-factor= √(L/C) *1/R
রেজোন্যান্সের কাছাকাছি সময়ে এইধরনের সার্কিটে ভোল্টেজ এমপ্লিফাই হয় যেকারনে সিরিজ রেজোন্যান্সকে ভোল্টেজ রেজোন্যান্স ও বলা হয়।
রেজোন্যান্ট সার্কিট, রেজোন্যান্ট ফ্রিকুয়েন্সি কাকে বলে?
রেজোন্যান্ট সার্কিট
এসি সিরিজ সার্কিটে যখন ইন্ডাক্টিভ রিয়্যাকট্যান্স এবং ক্যাপাসিটিভ রিয়্যাকট্যান্স সমান হয় তখন ঐ সার্কিটকে রেজোন্যান্ট সার্কিট বলে। অর্থাৎ XL= Xc
রেজোন্যান্ট অবস্থায় সার্কিটের মোট ইম্পিডেন্স, Z2=R2+(XL -XC )2
তাহলে, Z2= R2 কারন XL= Xc
এভাবে লেখা যায়, Z=R
পাওয়ার ফ্যাক্টর, p.f=Cosθ=R/Z=R/R=1
তাহলে θ=Cos-11 বা θ=0
অর্থাৎ রেজোন্যান্টের সময় কারেন্ট, এবং ভোল্টেজের মধ্যকার ফেজ কোন শূন্য এবং একক পাওয়ার ফ্যাক্টর হয়।
ভোল্ট-এম্পিয়ার কাকে বলে?
একটিভ পাওয়ার এবং রি-একটিভ পাওয়ার এর ভেক্টোরিক্যাল যোগফলকে ভোল্ট এম্পিয়ার বলা হয়। এর একক VA.
চিত্র থেকে পীথাগোরাসের সূত্র অনুযায়ী পাই,
VA=√[(VISinθ)2+(VICosθ)2]
=VI√[(Sin2θ+Cos2θ)]
=VI
পলিফেজ কাকে বলে, পলিফেজ ও সিঙ্গেল ফেজ এর প্রার্থক্য কি?
পলিফেজ
দুই বা ততোদিক ফেজ দ্বারা গঠিত লাইনকে পলিফেজ বলা হয়। পলিফেজ সাধারণত মিল-কারখানায় ব্যবহার করা হয়। পলিফেজ ৩ ফেজ, ৬ ফেজ, ১২ ফেজ ইত্যাদি হয়ে থাকে।
পলিফেজ ও সিঙ্গেল ফেজের মধ্যে প্রার্থক্য
- পলিফেজ যন্ত্র সমূহের দক্ষতা বেশি
- পলি ফেজ মোটর নিজে নিজে স্টার্ট নিতে পারে যেখানে সিঙ্গেল ফেজ মোটর নিজে নিজে স্টার্ট নিতে পারে না।
- পলিফেজ মোটরে তার কম প্রয়োজন হয়, লস কম হয়।
- পলিফেজ থেকে ১ ফেজ সহজেই সাপ্লাই দেওয়া যায় কিন্তু ১ ফেজ হতে সহজে পলিফেজ সাপ্লাই দেওয়া যায় না।
- পলিফেজ সিস্টেমে দুই ধরনের ভোল্টেজ পাওয়া যায়। এই সিস্টেম থেকে ১ ফেজ ও ৩ ফেজ লোডে সাপ্লাই দেওয়া যায়।
স্টার কানেকশন ও ডেল্টা কানেকশন কাকে বলে?
স্টার কানেকশন
সহজ ভাবে বলতে, যদি তিনটি কয়েল বা ওয়িন্ডিং ১২০ ডিগ্রী দূরে দূরে অবস্থান করে প্রতিটি প্রান্ত একটি সাধারণ বিন্দুতে যুক্ত হয় তবে তাকে স্টার বা Y-connection বলে।
ডেল্টা কানেকশন
যখন ১২০ ডিগ্রী ব্যবধানে অবস্থিত তিনটি কয়েল এমনভাবে সংযোগ করা হয় যে প্রথমটির শেষ প্রান্ত দ্বিতীয়টির প্রথম প্রান্ত, দ্বিতীয়টির শেষ প্রান্ত তৃতীয়টির প্রথম প্রান্ত এবং তৃতীয়টির শেষ প্রান্ত প্রথমটির প্রথম প্রান্ত সংযোগ করা হয় তাহলে উক্ত সংযোগকে ডেল্টা Δ কানেকশন বলে। একে মেশ কানেকশন ও বলা হয়ে থাকে।
স্টার (Y) ও ডেল্টা সিস্টেমের সুবিধা
স্টার সুবিধা সমূহ
- একই লাইন ভোল্টেজ তৈরি করতে ডেল্টা এর তুলনায় স্টার এ কম পরিমাণ তার প্রয়োজন হয়।
- সম-পরিমাণ লাইন ভোল্টেজের জন্য স্টার সংযোগে অল্টারনেটরে কম ইন্সুলেশন লাগে।
- এই সংযোগে Natural point কে আর্থে যায়। ফলে ফল্ট এর সময় সিস্টেম কে রক্ষা করে।
- তিন ফেজ মোটরসমূহ তিনটি লাইনের আড়াআড়িতে সংযোগ করা যায়।
ডেল্টা সিস্টেমের সুবিধা
- ডেল্টা সংযোগে রোটারী কনভার্টার জন্যই সুবিধাজনক
- থ্রী ফেজ ইন্ডাকশন মোটরের জন্য ভালো সংযোগ।
- প্রেরণ প্রান্তে ট্রান্সফরমারের সেকেন্ডারীতে ডেল্টা সংযোগ করা সুবিধাজনক।
এসি সার্কিট বিষয়ে আজ এই পর্যন্ত। আমরা আপনার কথা শুনতে চাই। এসি সার্কিট বিষয়ে আপনাদের কোন প্রশ্ন থাকলে তা কমেন্টে জানাতে পারেন।
AC Circuit বিস্তারিত পড়ুনঃ What is AC circuit and it’s different parts