ভোল্টেজ ল্যাবের পক্ষ থেকে সবাইকে আবারও স্বাগতম। এবার আপনাদের সাথে কিছু গুরুত্বপূর্ন বিষয় শেয়ার করবো। মেশিন কথাটির সাথে আমরা সবাই পরিচিত। কিন্তু অনেকেই জানি না মেশিনের বৈজ্ঞানিক অর্থ কি? এছাড়া আমরা দিনের বেশিরভাগ সময় ট্রান্সফরমার, মোটর, generator নিয়ে কাটিয়ে দেই যা কিনা প্রকৃতপক্ষে মেশিন।
এর আগে আমরা মোটর, ট্রান্সফরমার, বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। এখন আমি আপনাদের সাথে generator সম্বন্ধে বিস্তারিত সহজ ভাষায় আলোচনা করবো। যে যে বিষয়গুলো আলোচনা করা হবেঃ
- মেশিন বা যন্ত্র কাকে বলে?
- ইলেকট্রিক্যাল মেশিন কাকে বলে?
- জেনারেটর কাকে বলে?
- ডিসি জেনারেটরের প্রকারভেদ।
- ইন্ডাকশন বা ইন্ডিউসড কারেন্ট কাকে বলে?
- ডিসি জেনারেটরের গঠন প্রণালি সম্বন্ধে সংক্ষিপ্ত আলোচনা।
- ফ্লেমিং এর ডান হাতি নিয়ম।
- ডিসি জেনারেটরের কার্যপ্রণালী।
- এসি জেনারেটরের ও ডিসি জেনারেটরের মধ্যে পার্থক্য।
- ডিসি জেনারেটরের উৎপাদিত ই এম এফ কি কি বিষয়ের উপর নির্ভর করে থাকে?
- ডিসি জেনারেটরের ইফিসিয়েন্সি কি ও কত প্রকার।
- ডিসি জেনারেটরের পাওয়ার স্টেজ।
মেশিন বা যন্ত্র কাকে বলে?
কোন একটি নির্দিষ্ট কাজ করার জন্য বিভিন্ন যন্ত্রাংশের সমন্বয়ে যে যান্ত্রিক বস্তু তৈরি করা হয় তাকে মেশিন বা যন্ত্র বলে। অর্থাৎ একটি মেশিন বেশ কিছু যন্ত্রাংশ থাকবে। মেশিন ইলেকট্রিক্যাল কিংবা মেকানিক্যাল ও হতে পারে।
ইলেকট্রিক্যাল মেশিন কাকে বলে?
ইলেকট্রিক্যাল মেশিন বলতে এমন একটি যান্ত্রিক পদ্ধতিকে বুঝায় যা কিনা ইলেকট্রিক্যাল পাওয়ারকে মেকানিক্যাল এনার্জি তে অথবা মেকানিক্যাল পাওয়ার কে ইলেকট্রিক্যাল এনার্জিতে রূপান্তরিত করে।
Generator কাকে বলে?
জেনারেটর মূলত খুবই কমন একটা মেশিন যা কম-বেশি আমরা সবাই চিনি। Generator একটি ইংরেজি শব্দ যার বাংলা অর্থ হচ্ছে উৎপন্ন করা বা জেনারেট করা। জেনারেটর মুলত পাওয়ার বা শক্তি উৎপন্ন করে থাকে।
Generator চালু করলে নির্দিষ্ট পরিমানে ইলেকট্রিক্যাল এনার্জি উৎপন্ন হবে। Generator মূলত মেকানিক্যাল পাওয়ারকে ইলেকট্রিক্যাল পাওয়ারে রূপান্তরিত করে থাকে। জেনারেটর এক প্রকার মেশিন।
ডিসি জেনারেটরের প্রকারভেদ
এক্সাইটেশনের উপর ভিত্তি করে জেনারেটর ২ প্রকার
- সেপারটলি এক্সাইটেড জেনারেটর (Separately excited Generator): এই ধরনের জেনারেটরে মূলত ম্যাগনেটিক ফিল্ড শক্তিপ্রাপ্ত হয় বা এনার্জিজড হয় বাহ্যিক সোর্স ডিসি কারেন্ট থেকে।
- সেল্ফ এক্সাইটেড জেনারেটর (Self Excited Generator): জেনারেটরের মাধ্যমে যে কারেন্ট উৎপন্ন হয় সেই কারেন্ট দ্বারা ম্যাগনেটিক ফিল্ড এনার্জিজড বা শক্তিপ্রাপ্ত হয়ে থাকে। এর বাহ্যিক কোন সোর্সের প্রয়োজন পরে না।
সেল্ফ এক্সাইটেড জেনারেটর (Self Excited Generator)
সেল্ফ এক্সাইটেড জেনারেটর (Self Excited Generator) আবার তিন প্রকার।
- শান্ট জেনারেটর
- সিরিজ জেনারেটর
- কম্পাউন্ড জেনারেটর
কম্পাউন্ড জেনারেটর
কম্পাউন্ড জেনারেটর আবার দুই প্রকার
- শর্ট শান্ট কম্পাউন্ড জেনারেটর
- লং শান্ট কম্পাউন্ড জেনারেটর
ইন্ডাকশন বা ইন্ডিউসড কারেন্ট কাকে বলে?
ইন্ডাকশন(Induction) শব্দটি এসেছে ইন্ডিউস(Induce) থেকে। এর অর্থ কোন কিছু জমা রাখা। এর মানে এখানে পাওয়ার বা শক্তি জমা রাখা হচ্ছে।
যদি কোন তড়িৎ চৌম্বকের চারপাশে একটি নির্দিষ্ট জায়গা বা অঞ্চলের মধ্যে একটি কন্ডাক্টর বা কোন পরিবাহী অবস্থান পরিবর্তন করা হয় বা নাড়াচাড়া করা হয় তখন ঐ কন্ডাক্টরের দুই প্রান্তে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হবে।
একেই বলা হয় তড়িৎ চৌম্বকীয় আবেশ বা ইলেক্ট্রোম্যাগ্নেটিক ইন্ডাকশন।আমরা যে বিদ্যুৎ আউটপুটে পাবো তাকে ইনডিউসড কারেন্ট বলে।
ডিসি জেনারেটরের গঠন প্রণালি সম্বন্ধে সংক্ষিপ্ত আলোচনা
ইয়োক বা ফ্রেমঃ
মেশিনের বাইরের আবরণী কে ইয়োক বা ফ্রেম বলা হয়। ছোট জেনারেটরের জন্য এই ইয়োকে কাস্ট আয়রন ব্যবহার করা হয় আর বড় জেনারেটরের ক্ষেত্রে স্টিল ব্যবহিত হয়।
স্ট্যার্টার ম্যাগনেট/ফিল্ড ম্যাগ্নেটঃ
এর মধ্যে পোল শো ও পোল কোর থাকে। পোল শো ম্যাগনেটিক ফিল্ড কে তার অভ্যন্তরীণ জায়গার মধ্যে চার পাশে ছড়িয়ে দিয়ে থাকে।
ফিল্ড ওয়াইন্ডিং ও পোল কয়েলঃ
এটি তামার তার দ্বারা তৈরি যা প্রতিটি পোলে সুন্দরভাবে সাজানো থাকে।
আর্মেচার কোরঃ
জেনারেটরের ভিতরে যে অংশটুকু ঘুরতে সক্ষম তাকেই আর্মেচার বলে। এটি দেখতে সিলিন্ডারের মত দেখায় যাতে তামার কন্ডাক্টর প্যাচানো থাকে।
আর্মেচার ওয়াইন্ডিংঃ
এই অংশ হলো আর্মেচার স্লটের বাকি অংশ যেটুকু প্যাচানো থাকে।
আর্মেচারঃ
এটি একটি জেনারেটরের একটি ঘুরন্ত অংশ যার সাথে বের হওয়া শ্যাফট লাগানো থাকে।
কম্যুটেটরঃ
এটি দেখতে গোলাকার বিয়ারিং এর মত যার মাধ্যমে কারেন্ট এসে এখানে জমা হয়ে থাকে পরবর্তী ধাপে যাবার জন্য।
ব্রাশঃ
এটি দেখতে অনেকটা চতুষ্কোণাকার আকৃতি। ব্রাশ কন্টাক্ট এর জন্য ব্যবহার করা হয় যা আউটপুটে সাপ্লাই দিয়ে থাকে। এটি কার্বন গ্রাফাইট দিয়ে তৈরি হয়ে থাকে।
স্লিপ রিংঃ
এটি কম্যুটেটরের সাথে যুক্ত থাকে।
ব্রাশ ড্রপঃ
এতে সামান্য ভোল্টেজ ড্রপ হয়ে থাকে যা জেনারেটরের অভ্যন্তরীন রেজিস্ট্যান্স এর জন্য। এটি সাধারণত ১-২ ভোল্টের বেশি হয় না।
Generator ডিজাইনভেদে বিভিন্ন অংশের নাম ভিন্নভিন্ন হতে পারে কিংবা অতিরিক্ত অংশ যুক্ত হতে পারে।
ফ্লেমিং এর ডান হাতি নিয়ম
বিদ্যুৎ চুম্বকীয় আবেশের মাধ্যমে ডিসি Generator ভোল্টেজ উৎপন্ন হয়ে থাকে। লেঞ্জেসের সূত্রানুসারে ভোল্টেজের দিক এমন হয় যে তা দ্বারা সৃষ্ট কারেন্ট ফ্লাক্সের পরিবর্তনকে বাঁধাদেয়। লেনজের সূত্রানুসারে জেনারেটরের উৎপন্ন ভোল্টেজের দিক নির্ণয় করা বেশ কঠিন। তাই ভোল্টেজের দিক নির্ণয়ের জন্য আমরা ডান হাতি নিয়ম ব্যবহার করতে পারি।
ডান হাতের বৃদ্ধাঙুলী, তর্জনি ও মধ্যমা পরস্পরের সাথে সমকোণে প্রসারিত করলে যদি তর্জনি চুম্বক বলরেখা দিক এবং বৃদ্ধাঙুলী পরিবাহী তারের ঘূর্ণনের দিক নির্দেশ করে, তাহলে মধ্যমা উৎপাদিত ভোল্টেজের দিক নির্দেশ করবে৷
ডিসি জেনারেটরের কার্যপ্রণালী
আমরা জানি, যখন কোন পরিবাহী চুম্বক ফ্লাক্সকে কর্তন করে তখন ফ্যারাডের ইলেক্ট্রোম্যাগ্নেটিক ইন্ডাকশন সূত্র অনুযায়ী ঐ পরিবাহীতে ই,এম,এফ উৎপন্ন হয়।
আমরা একপাক বিশিষ্ট একটি সিঙ্গেল লোপ নিয়ে আলোচনা করবো যা ইউনিফর্ম ক্লক ওয়াইস ডিরেকশনে নির্দিষ্ট ঘতিতে ঘুরছে। যখন ঘুরতে থাকবে তখন প্রতিনিয়ত এর দুইপ্রান্ত ফ্লাক্সকে কাট করবে যার ফলে দুই প্রান্তে ই, এম, এফ সৃষ্টি করবে।
এই দুপ্রান্তের ই,এম,এফ যোগ হয়ে সার্কিটে মোট ই,এম,এফ সৃষ্টি হবে এবং লোডের দুপ্রান্তে বিভব পার্থক্য বা ভোল্টেজ সৃষ্টি হবে। আর ম্যাগনেটিক ফ্লাক্স সব সময় চুম্বকের উত্তর মেরু থেকে দক্ষিণ মেরুতে যায়। এখন বিভিন্ন অবস্থানে Generator কিভাবে কাজ করবে তা নিচে দেওয়া হলো।
অবস্থান A: লুপ যখন A তে অবস্থান করে তখন কোন ই,এম, এফ তৈরি হয় না অর্থাৎ ই,এম,এফ=০। এর কারন A অবস্থানে লুপ কোন ফ্লাক্স কাটে না। লুপের দুপ্রান্ত ফ্লাক্সের সাথে সমান্তরাল অবস্থান করে।
অবস্থান B: লুপ যখন B তে অবস্থান করে তখন লুপের দুপ্রান্ত ৯০ ডিগ্রী ঘুরে। যখন উত্তর মেরু ও দক্ষিণ মেরু বরাবর আসে তখন সর্বোচ্চ ফ্লাক্স কর্তন করে থাকে ও সর্বোচ্চ এ,এম,এফ সৃষ্টি হয়।
অবস্থান C: এই অবস্থানে দুপ্রান্ত ফ্লাক্স এর অর্ধেক থেকে বিপরীতে আরও ৯০ ডিগ্রী অর্থাৎ মোট ১৮০ ডিগ্রী সামনের দিকে অগ্রসর হয় এবং ই,এম,এফ আবার ০ হয়।অবস্থান D: এই অবস্থানে লুপের দুপ্রান্ত দি বিপরীত মেরুর দিকে অর্থাৎ যে প্রান্তে আগে S পোল ছিলো সেটি এখন N পোলের দিকে এবং যে প্রান্ত N পোল ছিলো সেটি এখন S পোলের দিকে থাকবে। ফলে বিপরীত ই,এম,এফ সৃষ্টি হবে অর্থাৎ নেগেটিভ দিকে সর্বোচ্চ ই,এম,এফ সৃষ্টি হবে।
অবস্থান A: এই অবস্থানে লুপ আবার সেই প্রথম অবস্থায় ফিরে আসবে। এই প্রক্রিয়াটি পুনরায় ঘটবে এবং চলতে থাকবে।
এসি Generator ও ডিসি Generator মধ্যে পার্থক্য
আমরা জানি যে, যেকোন জেনারেটরের আর্মেচার ওয়াইন্ডিং-এ প্রথমত পরিবর্তনশীল ভোল্টেজ বা এসি উৎপন্ন হয়। ডিসি জেনারেটরের ক্ষেত্রে এই এসিকে কম্যুটেটরের মাধ্যমে ডিসিতে রূপান্তরিত করা হয় এবং তা লোডে সরবারহ করা হয়। ডিসি ও এসি জেনারেটরের মূল পার্থক্য হলো একটি কম্যুটেটর।
ডিসি জেনারেটরের উৎপাদিত ই এম এফ কি কি বিষয়ের উপর নির্ভর করে থাকে?
ডিসি জেনারেটরের উৎপাদিত ই,এম,এফ গুলো যেসকল বিষয়ের উপর নির্ভর করে থাকে তা হলো
- ম্যাগনেটিক ফিল্ডের উপর
- কন্ডাক্টরের উপর
- তাদের ভিতর সম্পর্কিত গতির উপর
ডিসি জেনারেটরের ইফিসিয়েন্সি কি ও কত প্রকার
জেনারেটরে উৎপাদিত পাওয়ার/আউটপুট পাওয়ার এবং ইনপুট পাওয়ার/গৃহীত পাওয়ার এর অনুপাতকে কর্মদক্ষতা বা ইফিসিয়েন্সি বলা হয়।
ইফিসিয়েন্সি প্রকারভেদঃ
- মেকানিক্যাল ইফিসিয়েন্সিঃ ηm= আর্মেচার উৎপাদিত মোট বৈদ্যুতিক শক্তি/প্রাইম মুভারের সরবরাহকৃত যান্ত্রিক শক্তি=(EI/HP)
- ইলেকট্রিক্যাল ইফিসিয়েন্সিঃ ηe= উৎপাদিত মোট বৈদ্যুতিক শক্তি/আর্মেচার উৎপাদিত বৈদ্যুতিক শক্তি = (VI/EIa)
- কমার্শিয়াল ইফিসিয়েন্সিঃ ηc= উৎপাদিত মোট বৈদ্যুতিক শক্তি/গৃহীত যান্ত্রিক শক্তি = (VI/HP)
ডিসি জেনারেটরের পাওয়ার স্টেজ
আর হ্যা, এমন পোস্ট আপনার এন্ড্রয়েড ডিভাইসে প্রতিনিয়ত পেতে ভোল্টেজ ল্যাবের এন্ড্রয়েড এপস ডাউনলোড করে নিন।
বন্ধু, ভালো লাগলে শেয়ার করবেন আর কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করুন। আজ এই পর্যন্ত।:)
এই লেখাটি পিডিএফ ডাউনলোড করুনঃ জেনারেটর_voltage_lab.pdf