আমরা গত পর্বে সার্কিট ব্রেকারের গঠনপ্রণালী, কার্যপ্রনালী, প্রকারভেদ ও বেশ কিছু প্রশ্ন দেখেছি। তার ই ধারাবাহিকতায় আজ আমরা Circuit Breaker পর্ব-২ তে কিছু গুরুত্বপুর্ন প্রশ্ন দেখবো। তাহলে দেখা যাক কি কি বিষয় থাকেব-
আমাদের পূর্বের লেখা Circuit Breaker পর্ব-১ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
- সার্কিট ব্রেকার ওয়্যারিং ডায়াগ্রাম।
- সার্কিট ব্রেকার কত মানের ব্যবহার করা উচিত?
- সার্কিট ব্রেকার লাগানোর নিয়ম।
- সার্কিট ব্রেকার ব্যবহারের সুবিধা।
- সার্কিট ব্রেকার ট্রিপ করে কখন?
- সার্জ ভোল্টেজ কাকে বলে?
সার্কিট ব্রেকারের ওয়্যারিং ডায়াগ্রামঃ
সাধারণত সার্কিট ব্রেকার লাগানো হয় তা নির্ভর করে সার্কিট ব্রেকারে কি ধরনের লোড ব্যবহার করা হচ্ছে, লোডের সম্ভাব্য সর্বোচ্চ পরিমান কারেন্ট রেটিং অনুযায়ী।
উপরের চিত্রটি হতে দেখা যাচ্ছে একটি সম্পূর্ণ বাড়ির জন্য সার্কিট ব্রেকার হতে প্রতিটি ঘরের লোড ও পাওয়ার অনুযায়ী বিভিন্ন মানের সার্কিট ব্রেকার ব্যবহার করা হয়েছে। প্রতিটি ঘরে আলাদা আলাদা সার্কিট ব্রেকার ব্যবহার করার ফলে ত্রুটি নির্নয় করতে সুবিধা হয়। এছাড়া হাই পাওয়ার লোডের ক্ষেত্রে আলাদা আলাদা সার্কিট ব্রেকার ব্যবহার করা উচিত। যেমনঃ মাইক্রোওভেন, এসি, ফ্রিজ, আয়রন ইত্যাদি।
Circuit Breaker কত মানের ব্যবহার করা উচিত?
Circuit breaker কত মানের ব্যবহার করা উচিত তা নির্ভর বিভিন্ন লোডের ক্ষেত্রে। যেমনঃ
- রেজিস্টিভ লোডের ক্ষেত্রে: হিটার, আয়রন, ফিলামেন্ট লাইট ইত্যাদি রেজিস্টিভ লোডের ক্ষেত্রে মোট গৃহীত এম্পিয়ারের তিন গুন ব্যবহার করা ভালো।
- ইন্ডাক্টিভ লোডের ক্ষেত্রে: ইন্ডাক্টিভ লোড হচ্ছে সেই ধরনের লোড যেগুলোতে কয়েল থাকে। যেমনঃ সিলিং ফ্যান, ইলেক্ট্রিক মোটর, টেবিল ফ্যান, এয়ার কন্ডিশন, ট্রান্সফরমার চালিত যন্ত্রপাতি ইত্যাদি ইন্ডাক্টিভ লোডের ক্ষেত্রে লোডের মোট গৃহীত এম্পিয়ারের ৬ গুণ ব্যবহার করা উচিত ।কারন ইন্ডাক্টিভ লোড গুলো সুইচ অন করার সময় ৩ থেকে ৬ গুণ পরিমান কারেন্ট টানে এবং আস্তে আস্তে তার কারেন্ট টানার পরিমাণ সাধারনত স্বাভাবিক হয়ে আসে।
- ক্যাপাসিটিভ লোডের ক্ষেত্রে: আমরা জানি ক্যাপাসিটিভ লোডগুলো শুরুর দিকে বা প্রাথমিক অবস্থায় অনেক বেশি পরিমান কারেন্ট টানে এবং তা খুব অল্প সময়ের জন্য যা ইন্ডাক্টিভ লোডের মত দীর্ঘ নয়। একে ইনরাশ কারেন্ট বলে। এই ক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে লোডের মোট কারেন্টের ছয় গুণ পরিমান ব্যবহার করাই শ্রেয়। ফলে ইনরাশ কারেন্ট এ Circuit breaker ট্রিপ করার সম্ভাবনা কম থাকে।
সার্কিট ব্রেকার লাগানোর নিয়মঃ
আমরা বাসা-বাড়ি, ইন্ডাস্ট্রি, শিক্ষা প্রতিস্থান বা বিভিন্ন স্থানে Circuit breaker ব্যবহার করে থাকি। কিন্তু সার্কিট ব্রেকার লাগানোর জন্য বেশ কিছু নিয়ম আছে যা অনুসরন করতে হয়।
- প্রথমত, আমরা যে লোডের সাথে Circuit breaker ব্যবহার করবো সেটি কত এম্পিয়ার কারেন্ট নিয়ে থাকে তা হিসেব করে বের করতে হবে। এই জন্য আমরা I=W/V সূত্র ব্যবহার করতে পারি। সাধারণত যন্ত্রের গায়ে ওয়াট উল্লেখ করা থাকে। সেখান থেকে আমরা ওয়াট নিয়ে এবং সরবরাহ ভোল্টেজ এর মাধ্যমে কারেন্ট এর মান বের করতে পারি।
- সার্কিট ব্রেকারে কি টাইপের লোড লাগানো হয়েছে তা নির্নয় করতে হবে। বাসা-বাড়িতে ভিন্ন ভিন্ন ধরনের লোড ব্যবহার করা হয়, সেক্ষেত্রে নিরাপত্তার জন্য সর্বোচ্চ মান ধরে হিসাব করতে হবে।
- ইন্ডাক্টিভ লোডের ক্ষেত্রে এম্পিয়ার মানের চেয়ে ৩ থেকে ৬ গুণ বেশি রেটিং সম্পন্ন Circuit breaker। ক্যাপাসিটিভ লোডের ক্ষেত্রে সার্কিট ব্রেকারের মান হবে লোডের এম্পিয়ার মানের ৬ গুণ। রেজিস্টিভ লোডের ক্ষেত্রে লোড যত এম্পিয়ার নিবে তার চেয়ে ২০ শতাংশ বেশি ধরতে হবে। অর্থাৎ লোড যদি ১ এম্পিয়ার টানে তাহলে Circuit breaker টি ১.২ এম্পিয়ার হলেই চলবে।
- উচ্চ এম্পিয়ার প্রতিটি লোডের ক্ষেত্রে আলাদা আলাদা সার্কিট ব্যবহার করাই শ্রেয়। উচ্চ এম্পিয়ার লোড গুলো হলোঃ হাই পাওয়ার মোটর, পানির পাম্প, এয়ার কন্ডিশন, ইলেক্ট্রিক হিটার ইত্যাদি।
- যদি সার্কিট ব্রেকার লোডের সাথে হিসাবকৃত মান বাজারে না পাওয়া যায় তাহলে কাছাকাছি মানের ব্যবহার করা যেতে পারে। যেমন লোডের কারেন্ট ১০ এম্পিয়ার কিন্তু বাজারে তা পাওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু ১৫ এম্পিয়ার ব্রেকার পাওয়া যাচ্ছে। কাজেই এটা ব্যবহার করতে পারেন।
Circuit breaker ব্যবহার এর সুবিধাঃ
- Circuit breaker ফিউজের তুলনায় খুব দ্রুত কাজ করে।
- ফিউজের তুলনায় বেশি সেন্সিটিভ হয় এবং সার্কিট ব্রেকার একের অধিক বার ব্যবহার করা যায়।
- সার্কিট ব্রেকার দীর্ঘ দিন টেকসই হয় ফিউজের তুলনায়।
- অনেক সার্কিট ব্রেকার গুলোতে টেস্ট বাটন থাকে যার মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া যায় সার্কিট ব্রেকার ঠিকমত কাজ করছে কিনা।
Circuit breaker ট্রিপ করে কখন?
মিনিয়াচার সার্কিট ব্রেকার সাধারণত তিন ধরনের ট্রিপ হয়ে থাকে।
- Type B-সার্কিট ব্রেকারঃ ৩ থেকে ৫ গুণ বেশি কারেন্ট প্রবাহিত হলে এই ধরনের সার্কিট গুলো ট্রিপ করে।
- Type C-সার্কিট ব্রেকারঃ ৫ থেকে ১০ গুণ বেশি কারেন্টে ট্রিপ করে থাকে
- Type D-সার্কিট ব্রেকারঃ ১০ থেকে ২০ গুণ হলে ট্রিপ করে থাকে।
কোন সার্কিট ব্রেকার কখন ট্রিপ করবে তা তা ম্যানুয়েল বা ডাটাশিটে উল্লেখ করা থাকে।
সার্জ ভোল্টেজ কাকে বলে?
এসি সার্কিটে অর্ধসাইকেল বা তার কম সময়ের জন্য মাত্রাতিরিক্ত ভোল্টেজের উপস্থিতি কে সার্জ ভোল্টেজ বলে।
নির্দিষ্ট মাত্রার চেয়ে অতিরিক্ত লোড সংযোগ বা শর্ট সার্কিট ইত্যাদি কারনে সার্কিট ব্রেকার সাধারণত ট্রিপ করে থাকে। তাই কোন Circuit breaker ট্রিপ করলে সেটাকে সাথে সাথে অন না করে ফল্ট খুজে ফেলা উচিত।
সার্কিট ব্রেকার টপিক টি ইংরেজি তে পড়ুনঃ Definition of Circuit Breaker, Types, Working Principle
আমাদের পূর্বের লেখা সার্কিট ব্রেকার পর্ব-১ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
আজকের মত এখানেই বিদায়। সবাই ভালো থাকবেন। আর কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করবেন ধন্যবাদ।