সূর্য থেকে আমরা আলো এবং তাপ পায়। আলো আমাদের দৃষ্টি প্রদান করে ও গাছপালা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে ফলে খাদ্যের যোগান হয়, তাপ আমাদের বেঁচে থাকতে সাহায্য করে। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো আলো এবং এই তাপকে কাজে লাগিয়ে আমরা তৈরি করতে পারি ইলেকট্রিসিটি।
সোলার সেল
সোলার সেল হলো ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস যা সরাসরি সূর্য শক্তিকে ইলেকট্রিক্যাল শক্তিতে রূপান্তরিত করে। সোলার সেলের আরেকটি নাম হচ্ছে ফটোভোল্টাইক (Photovoltaic) সেল বা পিভি (PV).
এখানে ফটো বলতে লাইট এবং ভোল্টাইক বলতে ইলেকট্রিসিটিকে বুঝানো হয়েছে। আর অনেকগুলো সেল দ্বারা একত্রে একটি প্যাকেজকে সোলার প্যানেল বলা হয়। প্রত্যেকটা সেল একে অপরের সাথে সংযুক্ত থাকে। এই সোলার সেলগুলো ব্যাটারির মত কাজ করে। ব্যাটারি কেমিক্যাল থেকে ইলেকট্রিসিটি উৎপাদন করে আর সোলার সেল আলো থেকে ইলেকট্রিসিটি উৎপাদন করে।
ফটোভোল্টাইক সেল সিলিকন নামক সেমিকন্ডাক্টর ম্যাটেরিয়াল দ্বারা তৈরি। যখন সূর্যের আলো এই সেলের উপরে পরে তখন আলো থেকে কিছু অংশ ফটোভোল্টাইক সেল শোষণ করে অর্থাৎ আলো থেকে এনার্জি শোষিত হয়ে সেমিকন্ডাক্টর ম্যাটেরিয়ালে প্রবাহিত হয়। এই এনার্জি ইলেকট্রনকে আলাদা করে দেয় এবং মুক্তভাবে চলতে সাহায্য করে।
আমরা জানি যে আলোর সবচাইতে ক্ষুদ্র কনিকাকে ফোটন বলে। এর মানে সূর্য আমাদের চারপাশে কোটি কোটি ফোটন বর্ষিত করছে। এখন এই ফোটনকে যদি ফটোভোল্টাইক সেলের উপর দেয়া হয় তবে প্রত্যেকটি সেল ইলেকট্রিসিটির কিছু ভোল্ট উৎপাদিত করবে। আর প্যানেলে অনেকগুলো সেলের ভোল্ট যখন একত্রিত হয় তখন অনেক ভোল্ট হয় যা দ্বারা যন্ত্রকে পাওয়ার প্রদান করা যাবে।
সোলার সিস্টেম
সূর্যের আলো থেকে বিদ্যুৎ শক্তি উৎপাদন করাই হলো সোলার সিস্টেম এর কাজ। এই পদ্ধতি সাধারণত দুই ধরনের হয়ে থাকে।
- অনগ্রীড সোলার সিস্টেম
- অফগ্রীড সোলার সিস্টেম
অনগ্রীড সিস্টেম
ব্যাটারি ছাড়া যতক্ষণ সূর্যের আলো আছে ততক্ষণ পুরো সিস্টেম চলার পদ্ধতির নাম অনগ্রিড।
অনগ্রীড সিস্টেমের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি
- সোলার প্যানেল
- অনগ্রিড ইনভার্টার ও
- এনার্জি মিটার
অফগ্রীড সিস্টেম
ব্যাটারির মাধ্যমে সৌরবিদ্যুৎ সংরক্ষণ করে রেখে রাতে কিংবা লোডশেডিংয়ের সময় ব্যবহার করার পদ্ধতির নাম অফগ্রিড।
অফগ্রীড সোলার সিস্টেম এর জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি
- সোলার প্যানেল
- একটি চার্জ কন্ট্রোলার
- একটি ইনভার্টার এবং
- ব্যাটারি ব্যাংক
সোলার প্যানেল
সোলার প্যানেল এমন একটি যন্ত্র যার সাহায্যে ইলেকট্রিসিটি উৎপন্ন হয়। এই উৎপাদিত ইলেকট্রিসিটি মূলত ডিসি হয়ে থাকে। বাজারে সাধারণত বিভিন্ন মানের সোলার প্যানেল পাওয়া যায়।
একটি চার্জ কন্ট্রোলার
এটা ব্যাটারির চার্জ কে কন্ট্রোল করে। ব্যাটারি ফুল চার্জ হয়ে গেলে চার্জ করা বন্ধ করে দেয় আবার চার্জ শেষ হয়ে গেলে ব্যাটারি থেকে লোডকে ডিস-কানেক্ট করে দেয়। এইভাবে ব্যাটারিকে সুরক্ষিত রাখে।
ইনভার্টার
আমরা জানি যে সূর্য থেকে সোলার প্যানেলের মাধ্যমে উৎপাদিত ইলেকট্রিসিটি সাধারণত ডিসি হয়ে থাকে। এই ডিসি বিদ্যুৎ চার্জ কন্ট্রোলারের মাধ্যমে ব্যাটারি ব্যাংকে জমা হতে থাকে। কিন্তু আমরা বাসাবাড়িতে সাধারণত এসি লোড ব্যবহার করি ফলে এই ডিসি কারেন্টকে এসিতে কনভার্ট করার প্রয়োজন পরে যা আমরা ইনভার্টারের সাহায্যে করতে পারি।
ব্যাটারি ব্যাংক
ব্যাটারি ব্যাংক হলো অনেকগুলো ব্যাটারির সমষ্টি। এই ব্যাটারিগুলোকে সিরিজে বা প্যারালালে সংযোগ করা যায়। ভোল্টেজ বাড়াতে চাইলে ব্যাটারিগুলোকে সিরিজে সংযোগ দিতে হয় এবং কারেন্ট বাড়াতে চাইলে ব্যাটারিগুলোকে প্যারালালে সংযোগ দিতে হয়।
একটি সোলার প্যানেলের স্পেসিফিকেশন
১। Maximum Power: এর মানে হচ্ছে এই সোলার প্যানেলটি সর্বোচ্চ ২০ ওয়াট বিদ্যুৎ দিতে পারবে।
২। Maximum Voltage: এর মানে হচ্ছে এটার সর্বোচ্চ ভোল্টেজ ১৭.৬ ভোল্ট।
৩। Open Circuit Voltage: সোলার প্যানেলে যখন কোন লোড দেওয়া হয় না তখন যে ভোল্টেজ পাওয়া যায় এটাকে Voc লেখা হয়ে থাকে।
৪। Maximum Current: এর মানে হচ্ছে এখান থেকে সর্বোচ্চ যে পরিমাণ কারেন্ট পাওয়া যাবে। এমন কোন লোড লাগানো উচিৎ না যেটার কারেন্ট Maximum Current এর চেয়ে বেশি হয়।
৫। Short Circuit Current: যখন সিস্টেমে কোন কারনে শর্ট হয় তখন ঐ মূহুর্তে যে কারেন্ট পাওয়া যাবে সেটাই মূলত শর্ট সার্কিট কারেন্ট।
৬। Maximum System Voltage: যখন সোলার প্যানেলকে সিরিজে সংযুক্ত করা হয় তখন এর ভোল্টেজ Maximum System Voltage এর চেয়ে যেন বেশি না হয়। এখানে সর্বোচ্চ ভোল্টেজ ৬০০। তার মানে (৬০০/১৭) = ৩৫ টা প্যানেল সিরিজে যুক্ত করা যাবে।
সোলার সিস্টেম নিয়ে ইংরেজিতে পড়ুনঃ How solar power system works