হাউজ ওয়্যারিং বা বাসা বাড়ির বিদ্যুৎ ওয়্যারিং নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা

এই লেখাটিতে হাউজ ওয়্যারিং, ইলেকট্রিক হাউজ ওয়্যারিং ওয়ারিং শিক্ষা, ইলেকট্রিক্যাল হাউজ ওয়্যারিং কাজ ইত্যাদি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। আমরা চাইলে হাউস ওয়্যারিংয়ের কাজ করে আয় বৃদ্ধি করতে পারি। ইতিমধ্যে গ্রামের কিছু কিছু মানুষের কাছে হাউস ওয়্যারিং এর কাজ বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এই কাজ করে তারা বেশ ভালো আয়ও করছেন৷ প্রতিটা বাসা-বাড়িতে এই হাউজ ওয়্যারিং এর প্রয়োজন পরে।

যেসকল বিষয়গুলো এই লেখাটিতে আলোচনা করা হবে:

  1. হাউস ওয়ারিং কি?
  2. হাউস ওয়্যারিং কাজ করার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় জিনিশপত্র
  3. হাউস ওয়্যারিং যেভাবে করতে হয় 
  4. হাউস ওয়্যারিং সর্ম্পকিত বিষয়সমূহ
  5. হাউস ওয়ারিং ধাপসমূহ
  6. ওপেন ওয়্যারিং যেভাবে করতে হবে
  7. হাউস ওয়্যারিং এর সময় সাবধানতা

হাউজ ওয়্যারিং কি

এখন প্রায় সব ঘরেই বিদ্যুতের ছোঁয়া লেগেছে। গ্রামের অনেক ঘরেই এখন সুইচ টিপলে বাতি জ্বলে, ফ্যান চলে ও ফ্রিজ চলে। কিন্তু সুইচ টিপে বিদ্যুত বাতি জ্বালানো সহজ কাজ হলেও ঘরে বিদ্যুতের ব্যবস্থা করার কাজটি এত সহজ নয়।

এর জন্য অনেক সময় একজন ইলেকট্রিক মিস্ত্রির দরকার হতে পারে। আমরা সাধারণত কোন ঘরের কোথায় ফ্যান চলবে, কোথায় বাল্ব জ্বলবে তা আগে ঠিক করে নেই। তারপর সে অনুযায়ী মিস্ত্রির সাহায্যে বিদ্যুতের তার টেনে নেই। বিদ্যুত থাকা অবস্থায় বিদ্যুতের তার ধরা বিপদজনক। তাই কাজটি খুব সাবধানে করতে হয়।

এক্ষেত্রে একজন মিস্ত্রি বিদ্যুতের তারকে জায়গামত বন্টন করে। এই কাজকে আমরা বলি ঘরে বৈদ্যুতিক তার লাগানো বা হাউজ ওয়্যারিং। আর হাউজ ওয়্যারিং বা নিয়মমত তারের সুন্দর বিতরণ ব্যবস্থা নানা ধরনের হতে পারে৷ যেমন-

আভ্যন্তরীণ বা ভিতরের ওয়্যারিং

ঘরের ভিতরে যে ওয়্যারিং করা হয় তাকে আভ্যন্তরীণ ওয়্যারিং বলে। এই ওয়্যারিং প্রধানত দুই ধরনের৷ যথা:

১। কনসিলড ওয়্যারিং এবং
২। ওপেন ওয়্যারিং

কনসিলড ওয়্যারিং

হাউজ ওয়্যারিং

কনসিলড ওয়্যারিং হলো দেয়ালের ভিতরে যে ওয়্যারিং করা হয়। এই ওয়্যারিং পাইপের ভিতর দিয়ে করা হয়৷ ঘর তৈরির সময় এই ব্যবস্থা করে নিতে হয়।

ওপেন ওয়্যারিং

হাউজ ওয়্যারিং

ওপেন বা সারফেস ওয়্যারিং হলো ঘরের দেয়ালের উপরে চ্যানেল বা পাইপের সাহায্যে যে ওয়্যারিং করা হয় তাকেই বলে।

বাহ্যিক বা বাইরের ওয়্যারিং

ঘরের বাইরে যে ওয়্যারিং করা হয় তাকে বাহ্যিক বা বাইরের ওয়্যারিং বলে। বিদ্যুতের মূল খুঁটি থেকে বাড়ির মিটার পর্যন্ত বিদ্যুত নেওয়ার জন্য এই ওয়্যারিং করা হয়।

হাউজ ওয়্যারিং কাজ করার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় জিনিশপত্র

হাউজ ওয়্যারিং করতে আমাদের দুই ধরনের জিনিসপত্র লাগবে।

স্থায়ী জিনিসপত্র

এ কাজে এরকম জিনিসগুলো হলো- প্লায়ার্স বা প্লাস, ড্রাইভার, এভো মিটার, ছুরি, কাঁচি, মেজারিং টেপ, স্টার স্ক্রু ড্রাইভার, হ্যাক-স, হ্যান্ড ড্রিল মেশিন, ইলেকট্রিক ড্রিল মেশিন, ইন্সুলেশন রিমোভার, হাতুড়ি, সাইড কাটিং পাস, ফ্লাট স্ক্রু ড্রাইভার, টেস্টার ও মেজারিং টেপ। এসব স্থায়ী জিনিসপত্র আমরা নিকটস্থ জেলা ও উপজেলা শহরের ইলেকট্রিক বা হার্ডওয়ারের দোকানে পাবো।

হাউজ ওয়্যারিং

নিয়মিত লাগে এমন জিনিসপত্র

হাউজ ওয়্যারিং এর কাজে আমাদের লাগবে পিভিসি বা প্লাস্টিক টেপ, হ্যাক-স ব্লেড বা লোহা কাটা ব্লেড, ওয়াল ড্রিল বিট (৬ মিলি মিটার), রঙিন চক, পেন্সিল ও সুতা। এদের মধ্যে প্রথম তিনটি জিনিস আমরা পাবো হার্ডওয়ারের দোকানে৷ আর চক, পেন্সিল ও সুতা যেকোনো স্টেশনারি দোকান থেকে কেনা যাবে।

অন্যান্য জিনিসপত্র

হাউজ ওয়্যারিং করার জন্য আরও কিছু জিনিসপত্র আমাদের লাগবে। যে বাড়িতে কাজ হবে তার মালিককে এসব জিনিস সংগ্রহ করতে হবে। নিচে এসব জিনিসের নাম দেওয়া হলো:

  • চীনা মাটির ফিউজ বা কাট আউট প্লাস্টিক
  • প্লাস্টিক ফিউজ বা কাট আউট
  • মেইন সুইচ
  • এনার্জি মিটার
  • পিয়ানো সুইচ
  • টুপিন সকেট
  • টাম্বলার সুইচ
  • সিলিং রোজ
  • সিলিং রোজ বসানোর বোর্ড স্ক্রু
  • রাওয়াল বা রয়েল প্লাগ
  • ব্যাটেন হোল্ডার
  • প্যানডেন্ট হোল্ডার
  • সুইচ বোর্ড
  • প্লাষ্টিক চ্যানেল
  • ফ্যান
  • বাল্ব
  • টিউব লাইট
  • টিউব ব্যালেস্ট
  • টিউব স্টার্টার
  • টিউব হোল্ডার
  • এক খেই বিশিষ্ট তার
  • বহু খেই বিশিষ্ট তার

হাউজ ওয়্যারিং যেভাবে করতে হয় 

হাউজ ওয়্যারিং এর কাজ শুরু করার আগে আমাদের বিদ্যুত ও ওয়্যারিং সম্পর্কে কিছু তথ্য জানতে হবে। নিচে এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হলো:

বিদ্যুত সর্ম্পকিত বিষয়সমূহ

বিদ্যুত

বিদ্যুত এক প্রকার শক্তি। এই শক্তি চোখে দেখা যায় না কিন্তু অনুভব করা যায়। এজন্য বিদ্যুত চলাচল করে এমন কোনো তারের উপর হাত দিলে আমাদের ধাক্কা খেতে হয়। অথবা বিদ্যুতের তার আমাদের টেনে ধরে রাখে। কোন তারে হাত দিলে আমরা যদি এমন অদৃশ্য শক্তি অনুভব করি, তাহলে বুঝতে হবে ঐ তারে বিদ্যুত আছে। এই অদৃশ্য শক্তিই হল বিদ্যুত শক্তি। এই শক্তি দুটি তারের মধ্য দিয়ে চলাচল করে। তার দুটি হল ফেজ এবং নিউট্রাল৷

ফেজ

বিদ্যুত আছে এমন দুটি তারের মধ্যে যে তারটির খোলা অংশে টেস্টার ধরলে টেস্টারের লাইট জ্বলে ওঠে, সেই তারটিকে ফেজ বলে। এই তারটির মধ্য দিয়ে বিদ্যুত চলাচল করে। বিদ্যুতের যে কোন কাজ করার সময় লাল তার দিয়ে ফেজ বোঝানো হয়।

নিউট্রাল

বিদ্যুত আছে এমন তারের যে তারটিতে টেস্টার ধরলে টেস্টারের লাইট জ্বলে না সেই তারকে নিউট্রাল বলে। বৈদ্যুতিক কাজ করার সময় কালো তার দিয়ে নিউট্রাল বোঝানো হয়।

আর্থিং 

আর্থিং অর্থ মাটির সাথে তারের সংযোগ করা। হাউজ ওয়্যারিং করার সময় অবশ্যই আর্থিং করতে হবে। এর ফলে বৈদ্যুতিক শক বা আঘাতের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। সেইসাথে বৈদ্যুতিক মেশিনপত্র পুড়ে যাওয়ার হাত থেকে বাঁচানো যায়। আর্থিং করার এই কাজটি বিদ্যুত অফিসের লোকজন করে দিয়ে যান। মেইন সুইচের যে জায়গায় এই চিহ্নটি থাকে সেখানে আর্থিং এর তার সংযোগ দিতে হয়।

ওয়্যারিং সর্ম্পকিত বিষয়সমূহ

এনার্জি মিটার

যে যন্ত্র বিদ্যুত খরচের হিসাব রাখে, তার নাম এনার্জি মিটার। এই মিটারের নিচ বরাবর চারটি পয়েন্ট থাকে। বাম দিক থেকে পয়েন্ট চারটি হল ১, ২, ৩, ৪ ৷ ১ নম্বর পয়েন্টে ফেজের তার লাগানো হয়। ২ নম্বর পয়েন্টে নিউট্রালের তার লাগানো হয়। বিদ্যুতের মেইন লাইন থেকে এই তার দুটি টেনে মিটারে লাগানো হয়। এই তার বিদ্যুত অফিসের লোকজন লাগিয়ে দিয়ে যান।

বিদ্যুৎ বিল যেভাবে হিসাব করা হয় পড়ুন

একইভাবে ৩ নম্বর পয়েন্টে নিউট্রালের তার এবং ৪ নম্বর পয়েন্টে ফেজের তার লাগানো হয়। পরবর্তীতে ৩ নম্বর ও ৪ নম্বর তার দুটি টেনে নিয়ে মেইন সুইচে লাগানো হয়।

মেইন সুইচ ও কাট আউট

যে সুইচ থেকে বাড়ির বিদ্যুত ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ হয় তাকে মেইন সুইচ বলে। মেইন সুইচেও চারটি পয়েন্ট থাকে। এই পয়েন্ট চারটি দুটি কাট আউটের। চারটি পয়েন্টের মধ্যে উপরে দুটি এবং নিচে দুটি পয়েন্ট থাকে। বাড়ি-ঘরে সাধারণত ৩০ এম্পিয়ারের মেইন সুইচ লাগে। মেইন সুইচ বন্ধ করলে বাড়ির কোথাও বিদ্যুত থাকে না।

লাইট জ্বালানো বা টিভি ফ্রিজ চালানোর জন্য বিদ্যুত দরকার হয়। এই বিদ্যুত কখনও খুব বেশি, কখনও খুব কম আবার কখনও বা স্বাভাবিক চলাচল করে। বিদ্যুত যখন খুব বেশি চলাচল করে তখন টিভি বা ফ্রিজ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। সেজন্য কাট আউট লাগানো হয়।

বিদ্যুত বেশি চলাচল করলে কাট আউটের ভিতরের তার কেটে যায়। তাতে টিভি, ফ্রিজ বা বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম বা যন্ত্রপাতি রক্ষা পায়। এই কাট আউট থাকে মেইন সুইচের ভিতরে। একটি মেইন সুইচে ২টি কাট আউট থাকে।প্রতিটি কাট আউটের উপরে একটি আর নিচে একটি পয়েন্ট থাকে।

আমরা আগেই জেনেছি মিটারের ৪টি পয়েন্ট থাকে। এই ৪টি পয়েন্টের মধ্য থেকে ৩ নম্বর (নিউট্রাল) ও ৪ নম্বর (ফেজ) পয়েন্টের তার ২টি মেইন সুইচের কাট আউটের নিচের ২টি পয়েন্টের সাথে লাগাতে হয়। এরপর কাট আউটের উপরের ২টি পয়েন্টে আবার একইভাবে ফেজ ও নিউট্রালের তার লাগাতে হয়।

তার ও তারের রঙ

হাউজ ওয়্যারিং-এর কাজ করার জন্য সাধারণত ৩/২২ ও ৭/২২ গেজের তার ব্যবহার করা হয়। বাজারে প্রধানত ৩ রঙের তার পাওয়া যায়। যেমন- লাল, কালো ও সবুজ৷ এদের মধ্যে লাল রঙের তারটি ফেজ হিসাবে, কালো রঙের তারটি নিউট্রাল হিসাবে আর সবুজ রঙের তারটি আর্থিং হিসাবে ব্যবহার করা হয়।

চ্যানেল

যে জিনিসটির ভিতর দিয়ে তার এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় নেওয়া হয় তাকে চ্যানেল বলে। প্লাস্টিকের তৈরি এই চ্যানেল চারকোণা আকারের হয় যার দুটি অংশ থাকে। এর মধ্যে একটি অংশ দেয়ালে লাগানো হয়।

হাউজ ওয়্যারিং

দেয়ালে লাগানো অংশটির উপর দিয়ে তার টানা হয়। তারপর আরেকটি চ্যানেল ঢাকনা হিসেবে নিচের চ্যানেলের উপর লাগানো হয়। বাজারে আধা ইঞ্চি, পৌনে এক ইঞ্চি, এক ইঞ্চি ও দেড় ইঞ্চি চওড়া চ্যানেল পাওয়া যায়। এগুলো লম্বায় ৬ ফুট হয়।

রাওয়াল বা রয়েল প্লাগ

হাউজ ওয়্যারিং

দেওয়ালে সব ধরনের স্ক্রু লাগানোর সময় রাওয়াল প্লাগ ব্যবহার করা হয়। দেয়ালের ছিদ্রে রাওয়াল প্লাগ ঢুকিয়ে এর মধ্যে স্ক্রু ঢুকানো হয়। দেয়ালে বিভিন্ন জিনিস আটকানোর জন্য স্ক্রুর সহযোগী হিসেবে রাওয়াল প্লাগ ব্যবহার করা হয়।

স্ক্রু

হাউজ ওয়্যারিং-এর সময় দেয়ালে চ্যানেল, সুইচবোর্ড ও হোল্ডার আটকানোর জন্য স্ক্রু ব্যবহার করা হয়। ওয়্যারিং-এর জন্য সাধারণত সোয়া এক ইঞ্চি মাপের স্ক্রু লাগে।

হাউস ওয়ারিং ধাপসমূহ

এখন আমরা জানবো হাউস বা বাড়ি ওয়্যারিং করার ধাপগুলো কি কি। একজন ওয়্যারিং মিস্ত্রি চারটি ধাপে হাউজ ওয়্যারিং-এর কাজ করেন। ধাপ চারটি হচ্ছে-

  1. মিটারের পয়েন্ট থেকে লাইন টেনে মেইন সুইচে নিয়ে আসা
  2. মেইন সুইচ থেকে লাইন টেনে জয়েন্ট বক্সে নিয়ে আসা
  3. জয়েন্ট বক্স থেকে লাইন টেনে ঘরের সুইচ বোর্ডে নিয়ে আসা, এবং
  4. সুইচ বোর্ড ও জয়েন্ট বক্স থেকে লাইন টেনে বিভিন্ন পয়েন্টে নিয়ে যাওয়া৷

সাধারণত ঘরের যেসব জায়গায় সকেট, বাল্ব, টিউব লাইট, ফ্যান ইত্যাদি থাকে সেসব জায়গাকে পয়েন্ট বলে। বাড়ি ওয়্যারিং এর জন্য মেইন লাইন থেকে বিদ্যুতের তার বাড়ির মিটারে আনতে হবে। এই কাজটি বিদ্যুত অফিসের লোকজন করেন।

হাউজ ওয়্যারিং-এর কাজ শেষ হলে তারা মেইন লাইন থেকে তার টেনে মিটারে সংযোগ দিয়ে যাবেন। এরপর সুইচ অন করলেই বিদ্যুত চলে আসবে৷ আসলে বাড়ির মালিকের চাহিদা ও পছন্দ মত ওয়্যারিং মিস্ত্রীর কাজ করতে হয়।

বাড়ির মালিক হাউজ ওয়্যারিং-এর সমস্ত জিনিসপত্র সরবরাহ করেন। যেমন- মেইন সুইচ, তার, সুইচ বোর্ড, সুইচ, সকেট, চ্যানেল ইত্যাদি। একজন ওয়্যারিং মিস্ত্রী এসব জিনিস ব্যবহার করে ঘর ওয়্যারিং করে দেন।

ওপেন ওয়্যারিং যেভাবে করতে হবে

আমরা এখন ওপেন ওয়্যারিং কিভাবে করতে হবে সে সম্পর্কে জানব৷ কারণ ঘর বা বাড়িতে চ্যানেল ওয়্যারিং করা নিরাপদ এবং সহজ।

একটি ঘর ওয়্যারিং করার জন্য প্রথমেই আমাদের জানতে হবে ঐ ঘরে কয়টি পয়েন্ট হবে। ঘরের যেসব জায়গায় লাইট, ফ্যান, টেলিভিশন ইত্যাদি সংযোগ দেওয়া হয় তাকে একেকটি পয়েন্ট বলে। একটি ঘরে সাধারণত পাঁচটি পয়েন্ট থাকে। তবে প্রয়োজন অনুযায়ী পয়েন্ট কম বা বেশি হতে পারে।

ঘরের কোথায় লাইট বা ফ্যান থাকবে আর কোথায় টিভির জন্য সকেট থাকবে তা আমাদের ঠিক করে নিতে হবে। আর এই পয়েন্ট অনুযায়ী জিনিসপত্রের হিসাব দেবেন মিস্ত্রি।

যেমন- কোন সাইজের কতটুকু তার লাগবে, চ্যানেল লাগবে, কয়টি সুইচ বোর্ড ও সুইচ লাগবে ইত্যাদি৷ এখানে বলে নেওয়া ভালো ১২ ফুট বাই ১৫ ফুট মাপের একটি ঘর ওয়্যারিং করার জন্য আনুমানিক ৪০ গজ তার লাগে৷ চ্যানেল লাগে ৭ টি৷ সুইচ লাগে ৩/৪টি। সকেট লাগে ২টি, হোল্ডার লাগে ২টি এবং সিলিং রোজ লাগে ২টি।

কাজ করার ধাপসমূহ

পয়েন্ট ও জয়েন্ট বক্সের জায়গা তৈরি করা

একটি ঘরে কয়টি পয়েন্ট এবং জয়েন্ট বক্স থাকবে তা প্রথমেই ঠিক করে নিব। ধরা যাক একটি ঘরে পাঁচটি পয়েন্ট এবং একটি জয়েন্ট বক্স থাকবে। এক্ষেত্রে যেভাবে ওয়্যারিং করতে হবে তা নিচে উল্লেখ করা হলঃ

  • দেয়ালের যেসব স্থান দিয়ে চ্যানেলের তার বিভিন্ন পয়েন্টে যাবে সেসব স্থান প্রথমেই রঙিন চক বা পেন্সিলের সাহায্যে দাগ দিয়ে নিতে হবে। তারপর ঐ দাগের উপর আটকানোর জন্য স্ক্রু পয়েন্ট পেন্সিল দিয়ে চিহ্ন দিতে হবে। দেয়ালে চ্যানেল আটকানোর জন্য সাধারণত এক ফুট পর পর স্ক্রু লাগানো হয়।
  • এরপর ঐ দাগের উপর মেজারিং টেপ অথবা গজ ফিতা দিয়ে মেপে দেখতে হবে এক পয়েন্ট থেকে আরেক পয়েন্ট পর্যন্ত মোট কত ইঞ্চি অথবা কত ফুট চ্যানেল লাগবে৷ চ্যানেলের নিচের অংশ হ্যাক -স ব্লেড দিয়ে মাপ কত কেটে নিতে হবে। এখন ড্রিল মেশিন, চ্যানেল রাওয়াল প্লাগ, স্ক্রু ড্রাইভার আর একটি টুল হাতের কাছে রাখতে হবে৷ কারণ হাউজ ওয়্যারিং করার সময় এ সব জিনিস লাগবে।
  • চ্যানেল ও জয়েন্ট বক্স সাধারণত ঘরের মেঝে থেকে দেয়ালের আট ফুট উপরে বসানো হয়৷ আর সুইচ বোর্ড লাগানো হয় ঘরের মেঝে থেকে সাড়ে চার ফুট উপরে।
দেয়ালের বিভিন্ন স্থানে চ্যানেল বসানো

ঘর ওয়্যারিং করার জন্য দেয়ালে আগে বসিয়ে নিতে হবে৷ তারপর এর ভিতরে দিয়ে বৈদ্যুতিক তারের সংযোগ দিতে হবে। এখন আমরা জানব দেয়ালে কিভাবে চ্যানেল বসাতে হয়:

  • প্রথমে হ্যান্ডড্রিল মেশিন নিতে হবে। মেশিনের মুখে ৬ মিলিমিটার মাপের ওয়াল বিট লাগাতে হবে৷ তারপর পেন্সিল বা চক দিয়ে চিহ্ন করা স্ক্রু পয়েন্টের উপর ড্রিল বিটের মুখ রাখতে হবে।
  • তারপর মেশিনের হ্যান্ডেল ডান দিকে ঘুরিয়ে দেয়াল দেড় ইঞ্চি পরিমাণ ছিদ্র করতে হবে। ঐ ছিদ্রের মধ্যে রাওয়াল প্লাগ ঢুকিয়ে দিতে হবে।
  • চ্যানেলের কভারটি খুলে নিতে হবে। এবার চ্যানেলের নিচের অংশটি দেয়ালে চিহ্নিত দাগের ঠিক নিচ বরাবর ধরতে হবে। তারপর পেন্সিল বা ড্রাইভারের মাথা দিয়ে চ্যানেলের উপর স্ক্রু পয়েন্ট বরাবর দাগ বা চিহ্ন দিতে হবে।
  • এবার চ্যানেলটি একটি কাঠের উপর রাখতে হবে। তারপর চ্যানেলের ঠিক মাঝ বরাবর চিহ্নিত পয়েন্ট ড্রিল মেশিন দিয়ে ছিদ্র করতে হবে। এরপর চ্যানেলটি দেয়ালের ছিদ্র বরাবর বসাতে হবে।
  • তারপর সোয়া এক ইঞ্চি মাপের স্ক্রু নিয়ে স্ক্রু গুলো চ্যানেলের ছিদ্র দিয়ে দেয়ালের ছিদ্র বরাবর ঢুকাতে হবে। তারপর স্ক্রু ড্রাইভার দিয়ে স্ক্রুগুলো চ্যানেলের উপর ভালোভাবে এঁটে দিতে হবে। দেয়ালের সব জায়গায় এই নিয়মে চ্যানেলের নিচের অংশটি বসাতে হবে।
  • ওয়্যারিং এর সময় কখনও কখনও চ্যানেলের ভিতর দিয়ে ২টি তার টানা হয়। দুটি তার টানলে সেখানে পৌনে এক ইঞ্চির চ্যানেল লাগবে৷ আবার কখনো চ্যানেলের ভিতর দিয়ে ৪ থেকে ৫টি তার টানা হয়। ৪/৫টি তার টানলে ১ ইঞ্চি চওড়া চ্যানেল লাগবে। আর ৪/৫ টির বেশি তার টানতে হলে সেখানে দেড় ইঞ্চির চ্যানেল লাগবে। এবার মেইন সুইচ থেকে চ্যানেল বসানোর কাজ শুরু করতে হবে।
জয়েন্ট বক্স লাগানো

এজন্য মেইন সুইচ থেকে চ্যানেলটি লাগিয়ে জয়েন্ট বক্স পর্যন্ত নিয়ে আসতে হবে। এবার চার ইঞ্চি বাই চার ইঞ্চি মাপের একটি জয়েন্ট বক্স নিতে হবে। জয়েন্ট বক্সের দুটি স্ক্রু পয়েন্ট থাকে৷ নিচের অংশটি দেয়ালের উপর বসিয়ে দুটি স্ক্রু পয়েন্ট দেয়ালে চিহিৃত করে নিতে হবে।

হাউজ ওয়্যারিং

তারপর ড্রিল মেশিন দিয়ে দেয়ালে চিহ্নিত জায়গায় ছিদ্র করে ফেলতে হবে। এবার ছিদ্রগুলোর মধ্যে রাওয়াল প্লাগ ঢুকিয়ে এর উপর জয়েন্ট বক্সটি বসাতে হবে। এরপর জয়েন্ট বক্সের ছিদ্র বরাবর ২টি স্ক্রু ঢুকিয়ে দিতে হবে৷ তারপর স্ক্রু ড্রাইভার দিয়ে স্ক্রু গুলো এঁটে দিতে হবে।

বাল্ব পয়েন্ট লাগানো

জয়েন্ট বক্সের অন্যদিকে আরেকটি চ্যানেল বসিয়ে দেয়ালে বাল্বের পয়েন্ট পর্যন্ত নিয়ে আসতে হবে। এই চ্যানেলের শেষ মাথায় ব্যাটেন হোল্ডার ধরতে হবে যার দুটি স্কু পয়েন্ট থাকে। হোল্ডারের স্কু পয়েন্ট দুটি দেয়ালে চিহ্নিত করে নিয়ে চিহিৃত জায়গায় ড্রিল মেশিন দিয়ে ড্রিল করতে হবে।

সকেট পয়েন্ট লাগানো

এবার জয়েন্ট বক্স থেকে সকেট পয়েন্ট পর্যন্ত প্রয়োজনীয় চ্যানেল আগের নিয়মে বসাতে হবে। এরপর সকেট পয়েন্টের সুইচ বোর্ডের নিচের অংশটি নিতে হবে। এবার জয়েন্ট বক্সের নিচের অংশের মত সুইচ বোর্ডের নিচের অংশ স্ক্রু দিয়ে দেয়ালে লাগাতে হবে। এই সকেট পয়েন্ট থেকে সব বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি চালানো যায়

টিউব লাইটের পয়েন্ট লাগানো

এজন্য প্রথমে হাফ ইঞ্চি চ্যানেল নিতে হবে৷ চ্যানেলটি জয়েন্ট বক্সের বাম দিক থেকে টিউব লাইটের পয়েন্ট পর্যন্ত বসিয়ে ফেলতে হবে। তারপর সিলিং রোজ বসানোর বক্সটি হাতে নিতে হবে। এবার দেয়ালে বসানোর চ্যানেলটির ঠিক নিচের মুখে সিলিং রোজের বক্সটি বসাতে হবে। তারপর সিলিং রোজ দেয়ালে বসানোর জন্য বক্সের স্ক্রু পয়েন্ট দেয়ালে চিহ্নিত করে নিতে হবে।

এবার দেয়াল ড্রিল করে ফেলার পর রড লাইট বা টিউব লাইটের ফ্রেমটি নিতে হবে। ফ্রেমটি সিলিং রোজের ৫ ইঞ্চি নিচে আড়াআড়িভাবে বসাতে হবে। এবার স্ক্রু ড্রাইভার দিয়ে ফ্রেমের ৩টি স্কু পয়েন্ট দেয়ালে চিহ্নিত করে নিতে হবে। তারপর দেয়াল ড্রিল করতে হবে।

ফ্যানের পয়েন্ট লাগানো

এজন্য আমাদের একটি হাফ ইঞ্চি চ্যানেল নিতে হবে৷ চ্যানেলটি জয়েন্ট বক্সের উপরের দিকে থেকে ফ্যানের পয়েন্ট পর্যন্ত বসিয়ে ফেলতে হবে। এবার সিলিং রোজের একটি বক্স নিয়ে আগের নিয়মে সিলিং রোজের বক্স বসানোর জন্য স্কু পয়েন্ট দেয়ালে চিহিৃত করে নিতে হবে৷ তারপর দেয়াল ড্রিল করে সিলিং রোজ বসাতে হবে।

সুইচ বোর্ড লাগানো

দেড় ইঞ্চি চওড়া চ্যানেল নিয়ে জয়েন্ট বক্সের নিচের ঠিক মাঝ বরাবর থেকে তা প্রধান সুইচ বোর্ড পর্যন্ত বসাতে হবে। অর্থাৎ যে সুইচ বোর্ডে ফ্যান, লাইট ইত্যাদির সুইচ এবং সকেট থাকবে সেই বোর্ড পর্যন্ত চ্যানেল বসাতে হবে। তারপর আগের নিয়মে সুইচ বোর্ডের নিচের অংশ দেয়ালে লাগাতে হবে।

তার ও ক্যাবল জোড়া লাগানো

একটি তারের সাথে এক বা একাধিক তারের সংযোগ দিয়ে হাউজ ওয়্যারিং করতে হয়। হাউজ ওয়্যারিং করার জন্য প্রধানত ৩/২২ ও ৭/২২ মাপের তার ব্যবহার হয়। এসব তারের উপর একটি আবরণ থাকে৷ আবরণের ভিতরে এক খেই এবং বহু খেই বিশিষ্ট ধাতব তার থাকে।

আবরণের মধ্যে তারের একেকটি মুখকে একেকটি খেই বলে। দুটি তারের খেইগুলোকে যখন জোড়া দেওয়া হয় তখন তাকে জয়েন্ট বলে। এই কাজের জন্য তিন ধরনের জয়েন্টের প্রয়োজন হয়।

যেমন:

  1. পিগ টেইল জয়েন্ট: এটি দুটি তারের খেইগুলোর পাশাপাশি জয়েন্ট৷ এজন্য আমরা খেইগুলো পাশাপাশি রেখে ডানদিকে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে তার জোড়া দেবো৷
  2. বেল হ্যাঙ্গার জয়েন্ট: দুটি তারের খেইগুলোর মুখোমুখি জয়েন্ট দেওয়াকে বেল হ্যাঙ্গার জয়েন্ট বলে৷ এজন্য আমরা তার দুটির খেইগুলো মুখোমুখি ধরে ভালোভাবে পেঁচিয়ে জয়েন্ট দিবো। এটা সব ধরনের ওয়্যারিং এ ব্যবহার করা হয়।
  3. মোড়ানো টেপ জয়েন্ট বা টি জয়েন্ট: বেল হ্যাঙ্গার জয়েন্টের উপর নতুন কোনো তারের যে জয়েন্ট দেওয়া হয় তাকেই মোড়ানো টেপ জয়েন্ট বলে।

বিভিন্ন জিনিসে বৈদ্যুতিক তারের সংযোগ

এজন্য আমাদের কিছু জিনিস লাগবে৷ যেমন- লাল ও কালো রঙের তার, সাইড কাটিং পায়ার্স ও ইন্সুলেশন রিমোভার৷ এখন এসব দিয়ে ধাপে ধাপে যে কাজগুলো করা যায় তা নিচে বলা হলো:

মিটার ও মেইন সুইচের নিচের পয়েন্টের সাথে সংযোগ

  • প্লায়ার্স দিয়ে তার দুটো থেকে ১ ফুট করে কেটে নিতে হবে৷ তারপর রিমোভার দিয়ে তার দুটির মুখের ইন্সু্লেশন কেটে নিতে হবে। এরপর মিটারের সাথে তার দুটি জোড়া লাগাতে হবে।
  • কালো তারের একটি মুখ মিটারের নিচের ৩ নং পয়েন্টে ঢুকিয়ে দিতে হবে। অপর মুখটি মেইন সুইচের বামপাশের কাট আউটের নিচের পয়েন্টে ঢুকিয়ে স্ক্রু দিতে হবে।
  • এরপর ৪ নং তারটির অপর মুখটি মেইন সুইচের ডানপাশের কাট আউটের নিচের পয়েন্টে ঢুকিয়ে স্ক্রু এঁটে দিতে হবে।

মেইন সুইচের কাট আউটের উপরের পয়েন্টের সাথে সংযোগ

হাতে থাকা লাল ও কালো তার দুটির এক মুখের ইন্সুলেশন ১ ইঞ্চির মত কেটে নিতে হবে৷ তারপর লাল তারটির মুখ ডান পাশের কাট আউটের উপরের পয়েন্টে ঢুকিয়ে স্ক্রু এঁটে দিতে হবে৷

চ্যানেলের ভিতর তার বসানো

এরপর দেয়ালে লাগানো চ্যানেলের উপর দিয়ে লাল ও কালো তার দুটি টেনে আনতে হবে। ঢাকনাটি চ্যানেলের নিচের অংশের উপর বসিয়ে চাপ দিলেই দুটি অংশ সুন্দরভাবে লেগে যাবে৷ তারগুলোও এলোমেলো হবে না বা ঝুলে যাবে না।

জয়েন্ট বক্সের সাথে সংযোগ

এখন মেইন সুইচের কাট আউটের উপরের মুখে লাগানো লাল ও কালো তার দুটি টেনে জয়েন্ট বক্স পর্যন্ত নিয়ে আসতে হবে। তারপর তার দুটি ৬ ইঞ্চির মত কেটে নিতে হবে৷ আর হাতে থাকা তার দুটির ইন্সুলেশনও ১ ইঞ্চির মত কেটে নিতে হবে৷ এবার লালের সাথে লাল ও কালোর সাথে কালো তারের মুখ বেল হ্যাঙ্গার জয়েন্ট দিয়ে আটকে দিতে হবে।

সকেট পয়েন্টের সাথে সংযোগ

  • এরপর তারদুটি চ্যানেলের মাঝখান দিয়ে টেনে সকেট পয়েন্টের কাছে নিতে হবে।
  • সাথে সাথে আগের নিয়মে চ্যানেলের উপরের অংশ চাপ দিয়ে চ্যানেলের সাথে লাগিয়ে দিতে হবে। সুইচ বোর্ডে তার ঢুকানোর জায়গা দিয়ে তারদুটির মুখ ঢুকাতে হবে। তারপর বোর্ডের মধ্যে ৪ ইঞ্চির মত তার বেশি রেখে বাকিটা কেটে নিতে হবে।
  • এরপর একটি টু-পিন সকেট ও সুইচ নিয়ে বোর্ডের উপর বসিয়ে দিতে হবে৷ বোর্ডটি উল্টিয়ে নিয়ে তারদুটির ইন্সুলেশন কেটে লাল তারটির মুখ সুইচের উপরের নাটবল্টুর মধ্যে ঢুকিয়ে দিতে হবে। তারপর নাটটি এঁটে দিতে হবে।
  • কালো তারটির মুখ সকেট পয়েন্টের নিচের নাটবল্টুর মধ্যে ঢুকিয়ে নাটটি এঁটে দিতে হবে। এবার দেড় ইঞ্চি বিশিষ্ট এক খেইয়ের একটি তার নিয়ে তার মুখদুটির ইন্সু্লেশন কেটে নিতে হবে। কাটা তারটির এক মুখ সুইচের নিচের নাটবল্টুর মধ্যে ঢুকিয়ে দিতে হবে। অপর মুখটি সকেটের উপরের নাটবল্টুর মধ্যে কোণাকুণিভাবে ঢুকিয়ে স্ক্রু দুটি এঁটে দিতে হবে। এবার সুইচ বোর্ডটি দেয়ালে লাগানো বোর্ডের সাথে লাগিয়ে দিতে হবে।

জয়েন্ট বক্সে সুইচ বোর্ডের তারের সাথে সংযোগ

হাতে থাকা লাল ও কালো তারের মুখের ইন্সু্লেশন একই নিয়মে কেটে নিতে হবে। এবার জয়েন্ট বক্সের নিচ বরাবর একটি টুল রেখে তাতে দাঁড়িয়ে প্রথমে বেল জায়েন্টের মুখে কাটা লাল ও কালো তার দুটির মুখ নিতে হবে। জায়েন্টের উপরের লাল তারের সাথে মুখের লাল তার ও কালো তারের সাথে কালো তারের মোড়ানো ট্যাপ জোড়া দিতে হবে।

সুইচ বোর্ডে জয়েন্ট বক্সের তার নেওয়া

এরপর চ্যানেলের মাঝখান থেকে ফেজ ও নিউট্রালের তারদুটি টেনে দরজার পাশের প্রধান সুইচবোর্ডে আনতে হবে। বোর্ডের মধ্যে আগেই ৫/৬ ইঞ্চির মত তার বেশি রেখে বাকিটা কেটে নিতে হবে।

সুইচ বোর্ডে সুইচ লাগানো

হাউজ ওয়্যারিং

বাল্ব, টিউব লাইট, ফ্যান ও সকেটের জন্য একটি করে ৪ টি সুইচ, ১ টি ফিউজ ও ১ টি টু-পিন সকেট নিতে হবে। এরপর এসব জিনিসগুলো সুইচ বোর্ডের উপর সমান করে বসাতে হবে৷ বোর্ড সুইচটি উপরে ও নিচে আটকিয়ে রাখার নাটগুলো বসিয়ে দিতে হবে।

সুইচে এক খেইবিশিষ্ট তার লাগানো

এবার বোর্ডটি উল্টিয়ে নাটগুলো ভালোভাবে লাগাতে হবে। সুইচের নিচের বল্টুর নাটটি স্ক্রু ড্রাইভার দিয়ে ঢিলা করে নিতে হবে। ইন্সু্লেশন ছাড়া চার ইঞ্চি বিশিষ্ট এক খেইয়ের একটি তার নিয়ে তা প্রতিটি সুইচের নিচের ছিদ্র দিয়ে সকেট পয়েন্টের আগ পর্যন্ত ঢুকিয়ে দিতে হবে। সুইচের নিচের নাটগুলো এঁটে দিতে হবে।

সকেটের নিচের ও সুইচের উপরের পয়েন্টে তারের সংযোগ

এখন প্লায়ার্স বা কাঁচি দিয়ে কালো তার থেকে দেড় ইঞ্চি তার কেটে নিতে হবে। কাটা তারের এক মুখ সকেটের নিচের নাটবল্টুর মধ্যে ঢুকিয়ে নাট এঁটে দিতে হবে। অপর মুখটি কোণাকুণিভাবে সকেটের পাশের সুইচের উপরের বল্টুর মধ্যে ঢুকিয়ে নাট এঁটে দিতে হবে।

সকেট ও ফিউজের উপরের পয়েন্টে তারের সংযোগ

জয়েন্ট বক্স থেকে আসা লাল তারটি ফিউজের উপরের পয়েন্টে ও কালো তারটির মুখ সকেটের উপরের পয়েন্টে ঢুকিয়ে দিতে হবে। এরপর ফিউজ ও সকেটের নাট ড্রাইভার দিয়ে এঁটে দিতে হবে।

সুইচে ফেজের তার সংযোগ

সুইচ বোর্ড থেকে বাল্ব, টিউব লাইট ও ফ্যানের পয়েন্ট পর্যন্ত ৩ টি লাল তার মেপে নিতে হবে৷ তার ৩ টির দুই মুখের ইন্সুলেশন আধা ইঞ্চি পরিমাণ কাটতে হবে৷ তারপর তাদের মুখ বোর্ডের ৩ টি সুইচের উপরের বোল্টে একটা একটা করে এঁটে দিতে হবে।

ফ্যানের রেগুলেটরে তারের সংযোগ

এজন্য ফ্যানের সুইচের তারটি সুইচ থেকে ৬ ইঞ্চি কেটে নিতে হবে। কাটা তারের দুই মুখের সাথে ৮ ইঞ্চির মত দুটি তারের বেল হ্যাঙ্গার জোড়া দিতে হবে।
তারপর ৮ ইঞ্চি তারদুটির অপর দুই মুখ ফ্যানের রেগুলেটরের পয়েন্টদুটিতে লাগিয়ে দিতে হবে। দেয়ালে লাগানো বোর্ডটির সাথে সুইচ বোর্ডটি সোজা করে লাগিয়ে দিতে হবে।

টিউব লাইটের পয়েন্টে তারের সংযোগ

এজন্য বোর্ডের বাম সুইচে লাগানো লাল তারটি চ্যানেলের মাঝ দিয়ে টেনে টিউব লাইটের পয়েন্ট পর্যন্ত নিতে হবে। তারপর জয়েন্ট বক্স থেকে পয়েন্ট পর্যন্ত কালো তার মেপে কেটে নিতে হবে। তারটির একটি মুখ বক্সের নিউট্রাল তারের মুখে নিয়ে দুটি তারকে পিগ টেইল জয়েন্ট দিতে হবে।

একইভাবে কালো তারটি নিয়েও এই কাজ করতে হবে৷ তারপর চ্যানেলের কভার লাগাতে হবে৷ সেইসাথে সিলিং রোজ বসানো বক্সটি স্ক্রু দিয়ে দেয়ালে লাগিয়ে দিতে হবে।

সিলিং রোজে তারের সংযোগ

রোজটির বাটিটি বাম দিকে ঘুরিয়ে খুলে ফেলতে হবে। তারপর রোজটি উল্টো করে হাতের উপর রাখতে হবে। টিউব পয়েন্টে রাখা লাল তারটি রোজের বাম পাশের পয়েন্টে ও কালো তারটি ডান পাশের পয়েন্টে ঢুকিয়ে নাট দুটি এঁটে দিতে হবে।

এবার দেয়ালে লাগানো রোজের বক্সের উপর রোজটি বসাতে হবে৷ তারপর রোজের দুই পাশের স্ক্রু লাগিয়ে দিতে হবে

বাল্ব পয়েন্টে তারের সংযোগ

মেইন সুইচ বোর্ডের দ্বিতীয় সুইচে লাগানো লাল তারটি একইভাবে বাল্ব পয়েন্ট পর্যন্ত নিয়ে আসতে হবে। তারপর জয়েন্ট বক্স থেকে টিউব পয়েন্ট পর্যন্ত কালো তার মেপে কেটে নিতে হবে।

তারটির এক মুখ জয়েন্ট বক্সের কালো তারের সাথে প্লায়ার্স দিয়ে পিগ টেইল জয়েন্টে দিতে হবে। আগের নিয়মে তা বাল্ব পয়েন্ট পর্যন্ত নিয়ে আসতে হবে। সেই সাথে চ্যানেলের কভারটিও লাগিয়ে ফেলতে হবে।

ব্যাটেন হোল্ডারে তারের সংযোগ

বাল্ব লাগানো হোল্ডারটির প্যাঁচওয়ালা মুখ হাতের উপর রাখতে হবে। তারপর তা উল্টিয়ে বাল্ব পয়েন্টে রাখা লাল তারটি হোল্ডারের বাম পাশের পয়েন্টে ঢুকিয়ে দিতে হবে।

কালো তারটি ডান পাশের পয়েন্টে ঢুকিয়ে নাট দুটি এঁটে দিন। এবার হোল্ডারটির প্যাঁচওয়ালা মুখ ডানদিকে ঘুরিয়ে লাগাতে হবে৷ স্ক্রু পয়েন্ট দেয়ালের ছিদ্র বরাবর রেখে স্ক্রু লাগিয়ে দিতে হবে।

ফ্যানের পয়েন্টে তারের সংযোগ

বোর্ডের তৃতীয় সুইচে লাগানো লাল তারটি বাল্ব পয়েন্টের মত একই নিয়মে ফ্যানের পয়েন্ট পর্যন্ত নিতে হবে। এবার জয়েন্ট বক্সের কালো তারটির সাথে আরেকটি কালো তার জোড়া দিতে হবে।

এই তারটি ফ্যানের পয়েন্ট পর্যন্ত নিয়ে আসতে হবে৷ তারপর চ্যানেলের দুটি অংশ একে অপরের সাথে লাগিয়ে দিতে হবে৷ সিলিং এর বক্সটি স্ক্রু দিয়ে দেয়ালে আটকে দিতে হবে।

আগের নিয়মে সিলিং রোজের দুই পয়েন্টে তার দুটি লাগাতে হবে৷ সেই সাথে সিলিং রোজটি আগের নিয়মে দেয়ালে আটকে দিতে হবে।

টিউব লাইটের তারের কাজ

  • টিউব লাইটের তার লাগানোর সব কাজ নিচ থেকে করে নিতে হবে। এজন্য প্রথমেই টিউব লাইটের ফ্রেম বা পাতের ডান পাশে ব্যালেস্ট লাগিয়ে ফেলতে হবে। ব্যালেস্টের ঠিক বাম পাশে ১টি টিউব হোল্ডারে লাগাতে হবে। তার আগে হোল্ডারের ঠিক উপরের নাটটি খুলে ফেলতে হবে।
  • নাটটি খুললে হোল্ডারের ভিতর থেকে স্প্রিং ও হোল্ডারের নাটবোল্ড বেরিয়ে আসবে।
  • হাতে থাকা লাল অথবা কালো তার থেকে ৪ ইঞ্চি তার কেটে নিতে হবে। তারটির দুই মুখের ইন্সুলেশন এক ইঞ্চি কেটে নিয়ে এক মুখ ঢুকিয়ে নিবো ব্যালেস্টের নিচের পয়েন্টে। ব্যালেস্টের স্ট্যার্টার হোল্ডারের কাজ শেষ হওয়ার পর ব্যালেস্টের উপরের পয়েন্টে তারের সংযোগ দিতে হবে।
  • এরপর তারের অপর মুখটি খোলা হোল্ডারের পিছনের ছিদ্র দিয়ে ঢুকিয়ে দিতে হবে। খোলা হোল্ডারের মধ্যে দুটি নাটবোল্ট আছে। এই নাটবোল্ট দুটির মধ্যে উপরের নাটবোল্টে তার ঢুকিয়ে নাট এঁটে দিতে হবে।
  • হাতে থাকা লাল তার থেকে সাড়ে ৪ ফুট তার মেপে তারটির ইন্সুলেশন কেটে নিতে হবে। তারটির এক মুখ একই নিয়মে খোলা হোল্ডারে ভিতরের অপর নাটবোল্টে ঢুকিয়ে নাট এঁটে দিতে হবে। এবার এই তারটির অন্য মুখটি হোল্ডারের পিছনের ছিদ্র দিয়ে বাইরে বের করে নিতে হবে।
  • এখন হোল্ডারটির মুখ ভিতরের দিকে চাপ দিয়ে হোল্ডারের উপরের নাট লাগিয়ে দিতে হবে। এরপর হোল্ডারটি টিউব লাইটের ফ্রেমের সাথে স্ক্রু দিয়ে লাগিয়ে ফেলতে হবে।
  • হোল্ডারের ছিদ্র দিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসা তারটি ফ্রেমের অপর মুখে, স্টার্টার পয়েন্টে নিয়ে যেতে হবে। এবার তারের এই মুখটি স্টার্টার হোল্ডারের ভিতরে বাম পাশের নাটবোল্টে লাগিয়ে এঁটে দিতে হবে।
  • হাতে থাকা অবশিষ্ট তার থেকে ৩ ফুট তার কেটে তারটির দুই মুখের ইন্সুলেশন কেটে নিবো। এবার তারটির এক মুখ স্টার্টার হোল্ডারের ভিতরের ডান পাশ থাক নাটবোল্টে লাগাতে হবে। তারপর হোল্ডারটি ফ্রেমে বসিয়ে নাট এঁটে দিতে হবে।
  • এবার ব্যালেস্টের উপরের পয়েন্টে তারের সংযোগ দিতে হবে। সেজন্য স্টার্টার হোল্ডারের ডানপাশের পয়েন্টে লাগানো তারটির অপর মুখ ব্যালেস্টের উপরের পয়েন্টে লাগিয়ে নাট এঁটে দিতে হবে। এভাবেই টিউব লাইটের তার লাগানোর কাজ শেষ হবে।
  • এবার তারের কাজ শেষ করে রাখা টিউব লাইটের ফ্রেমটি নিয়ে স্ক্রু পয়েন্ট বরাবর দেয়ালে ছিদ্র করতে হবে। দেয়ালের ছিদ্রের মধ্যে রাওয়াল প্লাগ ঢুকানোর পর ফ্রেমটি স্ক্রু দিয়ে দেয়ালের সাথে এঁটে দিতে হবে। সিলিং রোজের বাটিটি বামদিকে ঘুরিয়ে খুলে ফেলতে হবে।
  • টিউব লাইটের ফ্রেমের উপর ঝুলে থাকা লাল ও কালো তার দুটি সিলিং রোজের বাটির ছিদ্র দিয়ে ঢুকাতে হবে। এবার বাটিটির ছিদ্র দিয়ে ঢুকানো লাল তারটি সিলিং রোজের বামপাশের পয়েন্টে এবং কালো তারটি ডানপাশের পয়েন্টে ঢুকিয়ে দিতে হবে। এরপর নাট দুটি এঁটে সিলিং রোজের বাটিটি ডানদিকে ঘুরিয়ে পেঁচ লাগিয়ে দিতে হবে।
  • প্রথমেই ফ্যানের ৩টি পাখা বা ব্লেড ফ্যানের বডির সাথে স্ক্রু দিয়ে লাগাতে হবে৷ তারপর ফ্যানটি ছাদের সাথে লাগানো বাঁকা রডটিতে নাটবোল্ট দিয়ে আটকিয়ে দিতে হবে। এবার ফ্যান থেকে বের হওয়া তার দুটির সাথে সিলিং রোজের তার দুটির পিগ টেইল জয়েন্ট দিতে হবে। এরপর ঐ জয়েন্ট দুটি আলাদা আলাদাভাবে পিভিসি টেপ দিয়ে মুড়ে দিতে হবে।

 

  • ঘরের ভিতরের সব সুইচগুলো অফ করে মেইন সুইচের পাশে লাগাতে হবে। মেইন সুইচটি উপরের দিকে চাপ দিয়ে অন করতে হবে। এরপর সুইচ বোর্ডের যেকোন একটি সুইচও অন করতে হবে৷ যদি লাইট না জ্বলে বা ফ্যান না ঘোরে তাহলে বুঝতে হবে বৈদ্যুতিক সংযোগ ঠিকমত পাচ্ছে না। এক্ষেত্রে ঐ লাইনটি আবার ভালভাবে পরীক্ষা করতে হবে।
  • লাইন পরীক্ষার পর জয়েন্ট বক্সের ভিতরে কালো ও লাল তারের জয়েন্টটি টেপ দিয়ে মুড়ে দিতে হবে। এবার জয়েন্ট বক্সের ঢাকনা লাগিয়ে দিতে হবে। এভাবেই আমাদের কাজ শেষ হয়ে যাবে৷

হাউজ ওয়্যারিং এর সময় সাবধানতা

হাউজ ওয়্যারিং করার সময় আমাদের নানা বিষয়ে সাবধান থাকতে হবে। তাই ওয়্যারিং এর প্রতিটি ধাপের কাজ সতর্কতার সাথে করতে হবে। এক্ষেত্রে নিচের বিষয়গুলোতে সাবধানতা অবলম্বন করা জরুরি-

  • দুটি তারের মধ্যে কোনটি ফেজ, আর কোনটি নিউট্রাল তা টেস্টার দিয়ে পরীক্ষা করে দেখুন৷ দুটি তারের মধ্যে যেটি ফেজ সেটিতে টেস্টার ছোঁয়ালেই টেস্টারের লাইট জ্বলে উঠবে।
  • ওয়্যারিং এর কাজ শুরু করার আগে পায়ে রাবারের জুতা পরে নিতে হবে। এতে সহজে বিদ্যুতস্পৃষ্ট হওয়ার ভয় থাকবে না।
  • বৈদ্যুতিক তার ব্যবহারের আগে ঐ তারের ইন্সু্লেশন বা কভারে কোন লিক আছে কিনা এভো মিটার দিয়ে দেখে নিন। তারের লিক বা ছেড়া অংশটুকু বাদ দিতে হবে।
  • চ্যানেলের উপর হ্যাক-স দিয়ে জোরে চাপ না দিয়ে আস্তে চাপ দিয়ে কাটতে হবে। কারণ জোরে চাপ দিয়ে কাটলে চ্যানেল ফেটে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
  • বিদ্যুত্ আছে এমন ঘরে নতুন করে ওয়্যারিং এর সময় প্রথমে মেইন সুইচ বন্ধ করতে হবে। এরপর কাট আউট খুলে কাজ শুরু করতে হবে৷ এতে কোন তারে বিদ্যুত থাকবে না।
  • হাউজ ওয়্যারিং এর কাজ শেষ হওয়ার পর মেইন সুইচ অন করতে হবে।
  • মোটা অথবা চিকন তারের ইন্সুরেশন কাটার সময় ইন্সুলেশন রিমুভারের উপরের নাট প্রয়োজনমত ঢিলা অথবা টাইট দিতে হবে। নয়তো চিকন অথবা মোটা তার ঠিকমত কাটবে না।
  • ওয়্যারিং করার পর কোথাও শর্ট সার্কিট আছে কিনা তা দেখে নিতে হবে৷ অর্থাত্ ফেজের তারের সাথে নিউট্রাল তারের সংযোগ দেয়া আছে কিনা দেখতে হবে। তারপর সংযোগ দিতে হবে। ফেজের তার ও নিউট্রালের তার এক হয়ে গেলে শর্ট সার্কিট হয়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।

PDF Download: হাউস_ওয়ারিং_বই.pdf

courtesy: nhd gov

বিঃদ্রঃ উপরের আলোচনায় বেশ কিছু সংজ্ঞা, প্রশ্ন-উত্তর দেয়া হয়েছে যা মূলত পুরোপুরি টেকনিক্যাল টার্ম নয়। এখানে সহজে বুঝানোর জন্য চেষ্টা করা হয়েছে। উপরে আলোচনা থেকে যেমনঃ কারেন্ট, ফেজ, নিউট্রাল, আর্থিং ইত্যাদি টেকনিক্যাল সংজ্ঞা এই ওয়েব সাইটেই সার্চ করেই পাবেন।