যে যন্ত্র বৈদ্যুতিক শক্তিকে যান্ত্রিক শক্তিতে রূপান্তর করে তাকে মোটর বলে। সব মোটরকে প্রধানত ২টি অংশে ভাগ করা যায়। যথাঃ ১। স্ট্যাটর এবং ২। রোটর।
যে মোটরের স্ট্যাটর এবং রোটরে ২ টি তার কুন্ডলী থাকে এবং স্ট্যাটর থেকে রোটরে ভোল্টেজ আবেশিত হয়, তাকে ইন্ডাকশন মোটর বলে। ইন্ডাকশন মোটরের স্ট্যাটর এবং রোটরের মধ্যে কোন সংযোগ থাকে না, বরং তারা আবেশন প্রক্রিয়ায় কাজ করে। ১৮৮৭ সালে মহান বিজ্ঞানী নিকোলা টেসলা সর্ব প্রথম ইন্ডাকশন মোটর আবিষ্কার করেন।
প্রকারভেদ
বৈদ্যুতিক সংযোগের উপর ভিত্তি করে ইন্ডাকশন মোটরকে ২ ভাগে ভাগ করা যায়। যথাঃ
১। থ্রি-ফেজ ইন্ডাকশন মোটর।
২। সিঙ্গেল ফেজ ইন্ডাকশন মোটর।
মোটরের গঠনের উপর ভিত্তি করে আবার ইন্ডাকশন মোটরকে ২ ভাগে ভাগ করা যায়। যথাঃ
১। Squirrel Cage ইন্ডাকশন মোটর।
২। Wound Rotor বা Slip Ring ইন্ডাকশন মোটর।
গঠন
ইন্ডাকশন মোটর নিম্নেলিখিত অংশ গুলো নিয়ে গঠিত। যথাঃ

স্ট্যাটর
স্ট্যাটর হল মোটরের স্থির অংশ। স্ট্যাটরে একটি তার কুন্ডলী থাকে যাকে স্ট্যাটর কয়েল বলা হয় এবং এই স্ট্যাটর কয়েলেই থ্রি ফেজ পাওয়ার সাপ্লাই দেওইয়া হয়। স্ট্যাটরকে আবার ৩ টি ভাগে ভাগ করা যায়। যথাঃ
১। স্ট্যাটর ফ্রেমঃ এটি স্ট্যাটরের সর্ব বহিঃস্থ অংশ। এর প্রধান কাজ হল স্ট্যাটর কোর এবং স্ট্যাটর কয়েলকে ধারণ কর। মোটরকে বাহ্যিক আঘাত থেকেও রক্ষা করে স্ট্যাটর ফ্রেম। তাই একে বেশ দৃঢ় হতে হয় এবং স্টিল দিয়ে তৈরি করা হয়।

২। স্ট্যাটর কোরঃ স্ট্যাটর কোরের প্রধান কাজ হল দিক পরিবর্তী ফ্লাক্স উৎপন্ন করা। স্ট্যাটর কোরে থ্রি ফেজ তার কুন্ডলী প্যাঁচানোর জন্য খাঁজ কাটা থাকে। এডি কারেন্ট লস দূর করার জন্য স্ট্যাটর কোরকে ল্যামিন্যাটিং করে দেওয়া হয়।

৩। স্ট্যাটর কয়েলঃ স্ট্যাটর কোরে যে খাঁজ কাটা থাকে তাতে থ্রি ফেজ তার কুন্ডলী প্যাঁচানো হয়, একে স্ট্যাটর কয়েল বলে। যখন এই কয়েল গুলোতে থ্রি ফেজ কানেকশন দেওয়া হয় সেখানে একটি ঘূর্ণায়মান চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি হয়।

রোটর
রোটর হল মোটরের ঘূর্ণনশীল অংশ। রোটরের সাথে শ্যাফটের মাধ্যমে মেকানিক্যাল লোড লাগানো থাকে। ইন্ডাকশন মোটরের রোটরকে আবার ২ ভাগে ভাগ করা যায়। যথাঃ
১। Squirrel Cage রোটরঃ Squirrel Cage ইন্ডাকশন মোটরের রোটর সিলিন্ডার আকৃতির এবং এর গায়ে খাঁজ কাটা থাকে। খাঁজ গুলোতে তার প্যাচানো হয়ে থাকে যাকে রোটর কয়েল বলে। এই খাঁজ গুলো সমান্তরাল নয় বরং একটু বাকানো। এই বাকানো খাঁজের ফলে স্ট্যাটর এবং রোটরের চৌম্বকীয় লকিং প্রতিরোধ করা যায়। এই খাঁজ গুলো এন্ড-রিং নামক এক ধরণের গোল চাকতির সাথে সংযুক্ত থাকে। Squirrel Cage রোটর অ্যালুমিনিয়াম কিংবা তামা দিয়ে তৈরি করা হয়।

২। Wound Rotor বা Slip Ring রোটরঃ এই ধরণের রোটরে, স্ট্যাটর এবং রোটরে সমান সংখ্যক পোল থাকে। কিন্তু রোটরে স্ট্যাটরের তুলনায় খাঁজ এবং তার কুন্ডলীর সংখ্যা কম থাকে। এই ধরণের রোটরে রোটর কয়েলের সাথে থ্রি ফেজ পাওয়ারের সরাসরি কোন সংযোগ থাকে না। বরং একটি স্লিপ রিং দিয়ে থ্রি ফেজ কানেকশনকে রোটর শ্যাফটের সাথে সংযুক্ত করে দেওয়া হয়।

কুলিং ফ্যান
ইন্ডাকশন মোটর যখন একাধারে অনেক সময় ধরে চলতে থাকে তখন অনেক তাপ উৎপন্ন হয়। এই তাপকে প্রশমিত করার জন্য রোটর শ্যাফটের সাথে একটি পাখা সংযুক্ত করে দেওয়া হয়।
এয়ার গ্যাপ
মোটর ভেদে স্ট্যাটর থেকে রোটরের মধ্যে ০.৪ মি.মি. থেকে ৪ মি.মি. দূরত্ব রাখা হয়। একে এয়ার গ্যাপ বলে।
বিয়ারিং
রোটর এবং রোটর শ্যাফটের সংযুক্তির জন্য বল বিয়ারিং ব্যবহার করা হয়।
টার্মিনাল বক্স
মোটরের যেখানে থ্রি ফেজ কানেকশন দেওয়া হয় তাকে টার্মিনাল বক্স বলে।
ইন্ডাকশন মোটর সম্পর্কে অন্যান্য লেখা সমূহঃ
ইন্ডাকশন মোটরঃ প্রকারভেদ এবং গঠন
থ্রী ফেইজ ইন্ডাকশন মোটরের কার্যপদ্ধতি
ইন্ডাকশন মোটরের ইকুইভ্যালেন্ট সার্কিট