3D হলোগ্রাম টেকনিক এবং ডাইনির ছায়া

মনে করুন, আপনি আপনার বন্ধুর বাসায় বেড়াতে গেলেন। রাতের খাবার শেষে আপনি এবং আপনার বন্ধু ঘুমাতে গেলেন। মধ্যরাতে লক্ষ্য করলেন একটি ডাইনির ছায়া আপনার সামনে আবির্ভাব হল। আপনি খুব ভয় পেয়ে গেলেন। কিছুক্ষণ পর ছায়াটি উধাও। আপনি ত অবাক। আসলে হচ্ছেটা কি? একটু পর লক্ষ্য করলেন আপনার বন্ধু আপনার সামনেই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হাসছে। আসলে এসব কারসাজির পেছনে আপনার বন্ধুরই হাত ছিল। 3D হলোগ্রাম টেকনিক ব্যবহার করে আপনাকে ভয় লাগিয়ে দিয়েছে। এবার নিশ্চয়ই সবার কৌতূহল হচ্ছে আসলে এই টেকনিকের পেছনের রহস্যটা কি? চলুন বিস্তারিতভাবে এই টেকনিক সম্পর্কে জেনে আসি।

3D হলোগ্রাম টেকনিক কি?

3D হলোগ্রাম টেকনিক হল এক ধরনের বিশেষ পদ্ধতি যেখানে আলোর ব্যাতিচার এবং বিচ্ছুরণ ধর্ম ব্যবহার করে আলোক বিভ্রান্তি তৈরি করা হয়।

হলোগ্রাম কি?

এই টেকনিক এ তৈরি ভার্চুয়াল আলোকচিত্রকেই বলা হয় হলোগ্রাম। হলোগ্রাম তৈরির বিজ্ঞান এবং অনুশীলনকে হলোগ্রাফি বলে। এটি মূলত লেজার এর মাধ্যমে গঠিত একটি আলোকচিত্র রেকর্ডিং। এছাড়াও এটি আলোকক্ষেত্রের একটি এনকোডিং যা আলোর ব্যতিচার ধর্মের দরুণ সৃষ্টি হয়।

আবিষ্কারক

হলোগ্রাফিক পদ্ধতি আবিষ্কার ও বিকাশের জন্য ব্রিটিশ পদার্থবিদ ডেনিস গ্যাবার পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরষ্কার পেয়েছিলেন।

হলোগ্রামের ধরন

  • ট্রান্সমিশন
  • রেইনবো ট্রান্সমিশন
  • স্পেকুলার
  • গ্যাবার

ট্রান্সমিশন হলোগ্রাম

ট্রান্সমিশন হলোগ্রাম হলো এক বিশেষ ধরনের হলোগ্রাম যেখানে অনেকগুলো আয়না ব্যবহার করে লেজার বীমকে একটি নির্দিষ্ট দিকে ট্রান্সমিশনের মাধ্যমে হাই রেজুলাশনের প্রজেকশন তৈরি করা হয়।

রেইনবো ট্রান্সমিশন হলোগ্রাম

রেইনবো ট্রান্সমিশন হলোগ্রাম যেখানে অনেকগুলো আয়না ব্যবহার করে সাদা আলোকে একটি নির্দিষ্ট দিকে ট্রান্সমিশনের মাধ্যমে হাই রেজুলাশনের প্রজেকশন তৈরি করা হয়।

স্পেকুলার হলোগ্রাম

দ্বি-মাত্রিক পৃষ্ঠের গতি নিয়ন্ত্রণ করে ত্রি-মাত্রিক চিত্র তৈরির কৌশল হল স্পেকুলার হলোগ্রাম।

এটি আলোর রশ্মির বান্ডিলগুলিকে প্রতিফলিত করে কাজ করে।

গ্যাবার হলোগ্রা

গ্যাবার হলোগ্রাম হল যেখানে বিচ্ছিন্নভাবে আলোকতরঙ্গগুলি পুনর্গঠন করে হাই রেজুলেশনের প্রজেকশন তৈরি করা হয়।

এই প্রযুক্তি কিভাবে কাজ করে?

হলোগ্রাফি এমন একটি কৌশল যা একটি মূল আলোক উৎসের অনুপস্থিতিতে আলোক বিচ্ছুরণ প্রক্রিয়ায় অবিকল অপর একটি আলোকক্ষেত্র তৈরি করতে পারে।

এই ঘটনাটিকে শব্দ রেকর্ডিংয়ের অনুরূপ হিসাবে বিবেচনা করা যেতে পারে যেখানে বাদ্যযন্ত্র বা ভোকাল কর্ডের মতো স্পন্দিত পদার্থ দ্বারা তৈরি শব্দ ক্ষেত্রটি এমনভাবে এনকোড করা হয় যা মূল স্পন্দিত পদার্থের উপস্থিতি ব্যতীত পুনরায় চালনা করা যেতে পারে। এই প্রক্রিয়ায় দুইটি লেজার বীম এর উপরিপাতনের ফলে আলোক ব্যতিচার সৃষ্টি হয়। এই ব্যতিচারের প্যাটার্ন হলোগ্রাফ রেকর্ডিং মিডিয়ামে মজুত থাকে। অতঃপর এই রেকর্ডকৃত আলোক প্যাটার্নটি বিচ্ছুরণ প্রক্রিয়ায় ভার্চুয়াল ইমেজ তৈরি করতে পারে।

3D হলোগ্রাম; হলোগ্রাম তৈরির প্রক্রিয়া
হলোগ্রাম তৈরির প্রক্রিয়া

ব্যাতিচার কি?

একই আলোক উৎস থেকে দুটো তরঙ্গের উপরিপাতনের ফলে কোন বিন্দুর আলোক তীব্রতা বৃদ্ধি পায় আবার কোন বিন্দুর আলোর তীব্রতা হ্রাস পায়।

ফলে এক ধরনের আলোক প্যাটার্ন তৈরি হয়। এই আলোকীয় ঘটনাকে বলা হয় ব্যতিচার।

3D হলোগ্রাম; ব্যতিচার
ব্যতিচার

ফটোগ্রাফির সাথে তুলনা

ফটোগ্রাফে সাধারণত সূর্যালোক বা ইলেক্ট্রিক্যাল লাইট সোর্স ব্যবহার করা হয়। অন্যদিকে হলোগ্রাম তৈরির জন্য লেজার বীম ব্যবহার করা হয়।

ফটোগ্রাফ তৈরির জন্য লেন্স প্রয়োজন হয় অন্যদিকে হলোগ্রাফিতে লেজার বীম বিচ্ছুরিত হয়ে সরাসরি রেকর্ডিং মিডিয়ামে পতিত হয়।

এক্ষেত্রে কোন লেন্সের প্রয়োজন হয়না।

ফটোগ্রাফকে জুম করে বড় আকারে দেখা সম্ভব কিন্তু হলোগ্রামকে জুম করা সম্ভব নয়। এটি একটি নির্দিষ্ট আকারেই উদ্ভাসিত হয়।

যখন কোন ফটোগ্রাফের অর্ধেক অংশ কেটে দেয়া হয় তখন তার অর্ধেক অংশই প্রদর্শিত হয় কিন্তু হলোগ্রামের অর্ধেক অংশ কাটা হলেও তার সম্পূর্ণ অংশই প্রদর্শিত হয়।

কারণ ফটোগ্রাফে একটি বিন্দু থেকে আলোর বিচ্ছুরণ ঘটে কিন্তু হলোগ্রামে বিভিন্ন বিন্দু থেকে আলো বিচ্ছুরিত হয়।

আরো কিছু মজার পোস্ট

গল্পে গল্পে ইল মাছের বৈদ্যুতিক রহস্য উদঘাটন

নিউক্লিয়ার চেইন বিক্রিয়া | Nuclear Chain Reaction