আর্থিং শব্দটি আমাদের ইলেকট্রিক্যাল ফিল্ডে খুবই সুপরিচিত শব্দ। আমরা সকলেই জানি, যখন কোন ডিভাইস শর্ট সার্কিট ফল্টের শিকার হয় তখন তার লোড কারেন্ট মূল রেটিং কারেন্টের তুলনায় বহুগুণে বৃদ্ধি পায়। ঠিক ওই মুহুর্তে আর্থিং অতিরিক্ত প্রবাহকে লুফে নিয়ে মূল ডিভাইসটিকে শর্ট সার্কিটের দরুণ দূর্ঘটনা থেকে রক্ষা করে। একটি বিষয় হয়তো আপনাদের মাথায় এসেছে কিংবা ইদানিং বিভিন্ন গ্রুপে অনেকেই জানতে চাচ্ছেন যে, এই আর্থিং কি বিদ্যুৎ বিলের উপর প্রভাব বিস্তার করতে পারে কি? আমি যদি কোন ডিভাইসের জন্য বা আমার এনার্জি মিটারের জন্য আর্থিং ব্যবহার না করি তাহলে কি আমার বিদ্যুৎ বিল বেশি আসবে? বা ব্যবহার করলে করলে কি বিদ্যুৎ বিল কম আসবে? আজ এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে এই কৌতূহল নিরসন করার চেষ্টা করব ইনশাল্লাহ।
মূল আলোচনা শুরু করার আগে প্রথমে আমি আর্থিং ব্যাপারটা আরেকটু ক্লিয়ার করে রাখতে চাই যেন বুঝতে সুবিধা হয় আপনাদের।
আর্থিং মূলত কি?
মনকে নিয়ে যান কোন ব্যস্ত শহরে যেখানে রাস্তায় প্রতি মুহূর্তেই জ্যাম লেগে থাকেই। অনেক গাড়ি নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌছাবার জন্য একটা রাস্তায় ভিড় জমিয়েছে। এখন আপনিও ঐ জ্যামের মধ্যে বসে বেশ বিরক্ত হচ্ছেন। এখন আপনার খুব তাড়া। গার্লফ্রেন্ড পার্কে বসে অপেক্ষা করছে। নির্দিষ্ট টাইমে না পৌছাতে পারলে বিপদ। তাই আপনি অন্য একটা শর্টকাট রাস্তা ধরলেন যেন তাড়াতাড়ি পার্কে প্রিয়জনের কাছে পৌঁছাতে পারেন। আপনার মত অনেকেই ঐ শর্টকাট ধরল যেন তাদের গন্তব্যে পৌছাতে পারেন। একটা ব্যাপার লক্ষ্য করেছেন কি? এই শর্টকাট ধরার কারণে জ্যামপূর্ণ রাস্তাটার জ্যাম কিছুটা হলেও কমে গেছে বা রাস্তা ট্রাফিক মুক্ত হল।
আর্থিংটাও হল ঠিক এই শর্টকাট রাস্তার মত। আমরা জানি, থ্রি-পিন প্লাগ গুলোতে ফেজ, নিউট্রাল এবং আর্থিং তার থাকে। এখন আপনার থ্রি-পিন প্লাগ সংশ্লিষ্ট ক্যাবলটির ওয়্যারগুলোকে ঐ রাস্তা হিসেবে ধরুন। আর পরিবাহীর ইলেকট্রনগুলোকে গাড়ি হিসেবে চিন্তা করুন। যখন সিস্টেমে ফল্ট দেখা দেয় তখন মূল কারেন্ট রেটিং এর তুলনায় অনেকগুণে বেড়ে যায়। অন্যভাবে বললে পরিবাহীতে ইলেকট্রনের বাড়তি চাপ থাকে যেমনটি রাস্তায় বাড়তি গাড়ির কারণে জ্যাম সৃষ্টি হয়েছিল। তারপর এই বাড়তি কারেন্ট শর্টকাট পথ খুজতে শুরু করে যেমনটি আপনি পার্কে যাওয়ার জন্য শর্টকাট পথ ধরেছিলেন। আর সেটাই স্বাভাবিক। আর আর্থিং ওয়্যারের রোধ বাকি দুটি তারের তুলনায় অনেক নগণ্য। তাই অতিরিক্ত প্রবাহ বা লিকেজ কারেন্ট সেই পথে গিয়ে ডিভাইসকে রক্ষা করে।
আর্থিং এর ব্যাপারটি আশা করি এখন আপনাদের কাছে পানির মতই পরিষ্কার। এবার চলুন বিদ্যুৎ বিল কিভাবে নির্ধারিত হয় সেটা আলোচনায় আসা যাক।
বিদ্যুৎ বিল কিভাবে হিসাব করা হয়?
বিদ্যুৎ হিসাব করার সময় মূলত ভোল্টেজ কারেন্ট যুগলের পুত্র পাওয়ারকেই প্রাধান্য দেয়া হয়। তার মানে হল আমরা নির্দিষ্ট সময়ে কতটুকু পাওয়ার বা ক্ষমতা ব্যবহার করেছি তার উপর ভিত্তি করে। আপনারা খেয়াল করলে হয়তো দেখবেন মিটারের উপরে KWh বা কিলোওয়াট-ঘন্টা লেখা থাকে। আর এই কিলোওয়াট-ঘন্টা দিয়েই আমাদের সম্পূর্ণ বিদ্যুৎ বিল হিসাব করা হয়।
কিলোওয়াট-ঘন্টা
বিদুৎ ক্ষমতা পরিমাপের একটি সাধারন একক ওয়াট। বৈদ্যুতিক বাতিতে একক সময়ে কি পরিমাণ বিদ্যুৎ শক্তি অন্য শক্তিতে রুপান্তরিত হয় তা বোঝার জন্য ২৫, ৪০, ৬০, ১০০ প্রভৃতি ওয়াট লেখা থাকে।
আর এই ওয়াট হল, ভোল্টেজ আর কারেন্টের সন্তান মানে তাদের গুনফল। ওয়াট একটি ছোট একক, তাই বড় বড় যন্ত্রপাতি ইঞ্জিন ইত্যাদির ক্ষেত্রে কিলোওয়াট এককটি ব্যবহার করা হয়। এক কিলোওয়াট ক্ষমতার ডিভাইস এক ঘন্টা ধরে চললে যে পরিমান শক্তি খরচ হয়, তাকে এক কিলোওয়াট-ঘন্টা বলে। বিলিংয়ের হিসাবটাও হয় কিলোওয়াট-ঘন্টায়।
যদি ৮০ ওয়াটের বৈদ্যুতিক পাখা ১০ ঘন্টা চললে খরচ হবে ৮০ ওয়াট × ১০ ঘন্টা = ৮০০ ওয়াট-ঘন্টা বা ০.৮ কিলোওয়াট-ঘন্টা। আর ৬০ ওয়াট লেখা একটা লাইট ২৪ ঘন্টা জ্বললে খরচ হবে ৬০ ওয়াট × ২৪ ঘন্টা = ১৪৪০ ওয়াট-ঘন্টা বা ১.৪৪ কিলোওয়াট-ঘন্টা। তাহলে যদি প্রতি ইউনিটের দাম হয় ৫ টাকা তাহলে পাখাটি ১০ ঘন্টা চালাতে খরচ হবে ০.৮ × ৫ = ৪ টাকা। আর লাইট টি ২৪ ঘণ্টা চালাতে খরচ হবে ১.৪৪ × ৫ = ৭.২০ টাকা।
উপরোক্ত আলোচনা থেকে প্রতীয়মান হচ্ছে যে, আর্থিং এর সাথে বিদ্যুৎ বিলের কোন সম্পর্ক নেই। দুটো বিষয় সম্পূর্ণ আলাদা। আর্থিং হল আমার ডিভাইসের জন্য প্রটেকশন আর বিদ্যুৎ বিল হিসেব করার ভিত্তি হল নির্দিষ্ট সময়ে আমার লোডসমূহের কনজিউমড পাওয়ার। একটির হিসেব এম্পিয়ারে অপরটির হিসেব হয় কিলোওয়াট-ঘন্টায়। তাই এ ব্যাপারে সংশয় রাখার আর কোন অবকাশ নেই।
বিলিং টপিক নিয়ে আরো কিছু পোস্ট
ভোল্টেজ মামা বিদ্যুৎ বিলকে কিভাবে প্রভাবিত করে?
ভূতুড়ে বিল এবং কিভাবে সচেতনা অবলম্বন করবেন?