মাসখানেক আগে এক বন্ধুকে নিয়ে সী-বীচ ঘুরতে গিয়েছিলাম। সমুদ্রের ঢেউ আর মুক্ত বাতাসে প্রাণ জুড়িয়ে যাচ্ছিল। দেখতে দেখতে সন্ধ্যা ঘনিয়ে এল। সন্ধ্যা হতেই জাহাজের লাইটগুলো জ্বলে উঠল। বিশাল সাগরের বুকে আলোর মেলা। আহ! সে কি মনোরম দৃশ্য। দেখেই যেন প্রাণ জুড়িয়ে যাচ্ছিল। আমার বন্ধুর মাথায় তখন একটি প্রশ্ন এল যে, “জাহাজে পাওয়ার সাপ্লাই কিভাবে দেয়া হয়?, এখানে ত আর কোন বিদ্যুৎ কোম্পানির লাইন নেয়া সম্ভব নয়” আজকের আর্টিকেলে মূলত তার এই প্রশ্নের উত্তরের ব্যাখ্যাই দিব। চলুন শুরু করা যাক।
জাহাজে কিভাবে পাওয়ার সাপ্লাই দেয়া হয়?
জাহাজের পাওয়ার সিস্টেমকে চারভাগে ভাগ করা হয়। যথাঃ
- পাওয়ার জেনারেশন
- মেইন সুইচইয়ার্ড
- ডিস্ট্রিবিউশন প্যানেল
- ইমার্জেন্সি বা অক্সিলারি প্যানেল
পাওয়ার জেনারেশন
জাহাজে মূলত একটি ডিজেল বা বাষ্পচালিত জেনারেটর থাকে। এই জেনারেটরের প্রাইম মুভার ৩.৩, ৬.৬ কিংবা ১১ কিলোভোল্ট ভোল্টেজ জেনারেট করতে পারে।
মেইন সুইচইয়ার্ড
অতঃপর জেনারেটেড ভোল্টেজকে একটি স্টেপ ডাউন ট্রান্সফরমারের মাধ্যমে কমিয়ে আনা হয়। অনেকে ভাবতে পারেন, সাধারণত জেনারেটর থেকে প্রাপ্ত ভোল্টেজকে স্টেপ আপ করা হয় কিন্তু এখানে স্টেপ ডাউন করার কারণ কি?
যখন জেনারেটেড পাওয়ার জাতীয়ভাবে ব্যবহার করা হবে তখন তা স্টেপ আপ করে জাতীয় গ্রীডে বিশাল আকৃতির ট্রান্সমিশন টাওয়ারের মাধ্যমে দূর দূরান্তে সঞ্চালন করা হয়। কিন্তু যখন কোন অল্প পরিসরে ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য ব্যবহার হবে তখন তাকে স্টেপ আপ করার কোন মানে হয়না। তাকে স্টেপ ডাউন করে ৪৪০ ভোল্ট এবং পরবর্তীতে পুনরায় স্টেপ ডাউন করে ২২০ ভোল্ট করে নেয়া হয়। জেনারেটর থেকে প্রাপ্ত ১১ কিলোভোল্টকে ৪৪০ ভোল্ট করা হয় এবং বাসবার ব্যবহার করে তাকে মেইন সুইচইয়ার্ডে পাঠানো হয়। উল্লেখ্য যে, জাহাজে কনসীলড ওয়্যারিং ব্যবহৃত হয়না।
ডিস্ট্রিবিউশন প্যানেল
অতঃপর এই মেইন সুইচইয়ার্ড থেকে প্রয়োজন অনুসারে সিংগেল ফেজ এবং থ্রি-ফেজ লাইন বিভিন্ন কেবিনে যায়। সাধারণত লাইটিং, ফ্যান, রেডিও ইকুইপমেন্টের জন্য ২২০ ভোল্ট ব্যবহার করা হয়। আর বড় বড় থ্রি-ফেজ মোটরের জন্য ৪৪০ ভোল্টের লাইন ব্যবহার করা হয়। আর সাপ্লাই ফ্রিকুয়েন্সি সাধারণত ৬০ হার্জ হয়ে থাকে। এখন অনেকে বলতে পারেন যে, কেন ৫০ হার্জ নয়? সাধারণত জাহাজে খুব অল্পমানের টর্কবিশিষ্ট হাই স্পীডের মোটর ব্যবহার করা হয়। সেইজন্য ফ্রিকুয়েন্সি ৬০ হার্জ ব্যবহার করা হয়।
ব্যাক আপ বা অক্সিলারি প্যানেল
এছাড়াও জাহাজে জরুরি প্রয়োজনে একটি ব্যাক আপ বা অক্সিলারি প্যানেল থাকে। যেখানে একটি ব্যাক আপ অল্টারনেটর থাকে। মেইন অল্টারনেটর ফেইল করলে অটোমেটিকভাবে ব্যাক আপ অল্টারনেটর চালু হয়ে যাবে এবং অক্সিলারি সুইচগিয়ার থেকে পাওয়ার সাপ্লাই যাবে।
এছাড়াও জাহাজে সেইফটি ডিভাইস হিসেবে রিলে, সেন্সর, সার্কিট ব্রেকার ইত্যাদি ত রয়েছেই। এভাবেই মূলত একটি মেরিন পাওয়ার সিস্টেম ডিজাইন করা হয়।
আজকের আর্টিকেলটি নিশ্চয়ই অনেক ইউনিক লেগেছে। এরকম ইউনিক আর্টিকেল পেতে ভোল্টেজ ল্যাবের সাথেই থাকুন। ধন্যবাদ।
জাহাজ নিয়ে আরো কিছু আর্টিকেল
জাহাজ এবং উড়োজাহাজে কিভাবে আর্থিং করা হয়?
দূর থেকে চলন্ত জাহাজকে স্থির মনে হয় কেন?
সমুদ্রের গভীরতা মাপার যন্ত্রের নাম কী? | এই যন্ত্র কীভাবে কাজ করে?