সমুদ্রের গভীরতা মাপার যন্ত্রের নাম কী? | এই যন্ত্র কীভাবে কাজ করে?

বেশকিছুদিন আগেই চট্টগ্রামের পতেঙ্গার নেভাল ক্যাম্পে বেড়াতে গিয়েছিলাম। এক সিনিয়র ভাইয়ের নেভিতে জব করার সুবাদে সেখানে প্রবেশাধিকার পেয়েছিলাম। সেখানকার পরিবেশ খুবই নান্দনিক যা বলার ভাষা রাখেনা। দুপুরের জম্পেশ খাওয়া-দাওয়ার পর বড় ভাই বলল জাহাজ দিয়ে সমুদ্র ঘুরে দেখাবে। আমার মন রীতিমত আনন্দে নেচে উঠল। এই প্রথম জাহাজ দিয়ে সমুদ্র ঘুরে দেখব। যেই কথা সেই কাজ। জাহাজে করে আমরা সমুদ্র ঘুরে দেখছিলাম। দিনটি ছিল মেঘলা। সমুদ্র কিছুটা উত্তাল। এমন পরিবেশে নিজে না থাকলে আনন্দটা উপভোগ করাটা বেশ কষ্টসাধ্য।

সমুদ্রের ঢেউ দেখতে দেখতে হুট করে মাথায় একটি প্রশ্ন চেপে বসল যে, এই সমুদ্রের গভীরতা কিভাবে পরিমাপ করা হল? কোন যন্ত্রের সাহায্যে সমুদ্রের গভীরতা পরিমাপ করা হল? ভাইকে প্রশ্নটি জিজ্ঞাসা করার পর ভাই খুব সুন্দরভাবে পুরো বিষয়টি বুঝিয়ে বললেন। চলুন চায়ের আড্ডার সাথে সাথে এই প্রশ্নের উত্তরটি আপনাদের সাথে শেয়ার করব।

সমুদ্রের গভীরতা পরিমাপক যন্ত্রের নাম কি?

সমুদ্রের গভীরতা পরিমাপক যন্ত্রের নাম ফ্যাদোমিটার। ফ্যাদোমিটারের সাহায্যে খুব সহজেই সমুদ্রের গভীরতা পরিমাপ করা যায়। চলুন এই প্রক্রিয়াটি খুব সংক্ষেপে এবং সহজ উপায়ে জেনে নেয়া যাক।

সমুদ্রের গভীরতা নির্ণয়ের পদ্ধতি

এই যন্ত্রের সাহায্যে শব্দের প্রতিধ্বনিকে কাজে লাগিয়ে সমুদ্রের গভীরতা নির্ণয় করা যায়। শব্দ এক মাধ্যম থেকে তৈরি হবার পর অন্য মাধ্যমে প্রতিফলিত হয়ে যখন একই শব্দের পুনরাবৃত্তি হতে থাকে, তাকে শব্দের প্রতিধ্বনি বলে।

সমুদ্রের গভীরতা পরিমাপ
সমুদ্রের গভীরতা পরিমাপ

ধরুন, একটি জাহাজ “A” বিন্দুতে অবস্থানকালে ফ্যাদোমিটারের সাহায্যে একটি আলট্রাসনিক শব্দতরঙ্গ জলে প্রেরণ করা হল। “t” সময় পরে ওই জাহাজটি যখন “B” বিন্দুতে পৌঁছলো তখন ওই শব্দের প্রতিধ্বনি গ্রহণ করলো। এই “t” সময়েই শব্দটি প্রথমে “A” বিন্দু থেকে “C” বিন্দুতে তারপর প্রতিফলিত হয়ে “C” বিন্দু থেকে “A” বিন্দুতে পৌঁছবে।

এখন “C” বিন্দু থেকে “AB” সরলরেখার উপরে একটা লম্ব অঙ্কন করলাম যা “O” বিন্দুতে ছেদ করলো। ফলে দুটি সমকোণী ত্রিভুজ “AOC” এবং “BOC” উৎপন্ন হয়েছে। এই দুটি ত্রিভুজ পরস্পর সর্বসম।

কিভাবে?

  • <AOC=<BOC =90°
  • <ACO=< BCO
  • প্রতিফলনের ধর্ম অনুসারে আপাতন কোণ এবং প্রতিফলন কোণ পরস্পর সমান
  • “OC” সাধারণ বাহু। “OC” হলো সমুদ্রের গভীরতা।

এখন, সর্বসম হওয়ার কারণে AO=BO=1/2*AB বা AC=BC ।

ধরলাম, জাহাজের বেগ p, এবং জলে শব্দের বেগ q ।

AB= জাহাজ দ্বারা অতিক্রান্ত দূরত্ব = pt।

জলে শব্দের অতিক্রান্ত পথ = AC + BC = qt।

এখন OB= AB/2 = pt/2।

BC = qt/2।

“BOC” একটি সমকোণী ত্রিভুজ। পিথাগোরাসের সূত্র থেকে পাই,

(OC)2 = (BC)2 – (OB)2

Or, (OC)2 = (qt/2)2 – (pt/2)2 = (t^2/4)*(q2– p2).

Or, OC = (t/2)*sqrt(q2– p2)

t, p, q মান বসিয়ে দিলেই “OC” এর মান বের করা যাবে।

q= জলে শব্দের বেগ = 1531 m/s

আর এভাবেই সহজেই সমুদ্রের গভীরতা নির্ণয় করা সম্ভব। আজকের এই সহজ এবং মজাদার আর্টিকেলটি কেমন লেগেছে কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন। যেন আগামীতে এরকম আরো আনন্দদায়ক আর্টিকেল আপনাদের উপহার দিতে পারি।

আরো কিছু মজাদার আর্টিকেল

জাহাজ এবং উড়োজাহাজে কিভাবে আর্থিং করা হয়?

কোন এলাকার বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কিভাবে পরিমাপ করা হয়?

QR code কি? QR code কেন ব্যবহার করা হয়? | মজার উদাহরণের সাহায্যে ব্যাখ্যা