পোল এবং টাওয়ার কিন্তু এক জিনিস নয়। আমরা অনেকেই এই দুটোকে একভেবে ভূল করি। এমনকি আমি ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর এমন অনেক ছাত্রকে দেখেছি পোল এবং টাওয়ারের পার্থক্য বুঝেনা। অথচ পোল এবং টাওয়ার এই দুই ভাইয়ের মধ্যে অনেক পার্থক্য আছে। আজ সুন্দরভাবে আপনাদের সাথে শেয়ার করব। চলুন চা খেতে খেতে আলোচনা করা যাক।
পোল (Poles):
- পোল সাধারণত কাঠের/ইস্পাতের এবং কংক্রিটের হয়ে থাকে।
- পোল ওজনে হাল্কা এবং দামেও সস্তা।
- সাধারণত নিম্ন ভোল্টেজ থেকে 11kV পর্যন্ত পরিবহনের জন্য ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
- এর স্প্যান দৈর্ঘ্য কম হয়ে থাকে।
- অল্প দূরত্ব পরিবহন ব্যবস্থায় ও ডিস্ট্রিবিউশনের কাজে পোল ব্যবহার করা হয়।
- পোল অপেক্ষাকৃত কম স্থায়ী
- এর যান্ত্রিক বোঝা বহন ক্ষমতা তুলনামূলকভাবে কম।
- রক্ষণাবেক্ষণ খরচ এবং বৈদ্যুতিক বিপদ কম।
টাওয়ার (Tower):
- টাওয়ার সাধারণত ইস্পাতের চ্যানেল এবং এংগেল দিয়ে তৈরি।
- টাওয়ার অধিক ভারী এবং নির্মাণ খরচ পোলের তুলনায় অনেকগুণ বেশি।
- সাধারণত উচ্চভোল্টেজ পরিবহনের জন্য টাওয়ার ব্যবহার করা হয়।
- এর স্প্যান দৈর্ঘ্য অনেক বেশি হয়ে থাকে।
- দীর্ঘ পথে ভোল্টেজ পরিবহনের জন্য টাওয়ার ব্যবহার করা হয়।
- এর যান্ত্রিক বহন ক্ষমতা অনেক বেশি।
- রক্ষণাবেক্ষণ খরচ এবং বৈদ্যুতিক বিপদ বেশি।
পোল এবং টাওয়ারের উচ্চতা নির্ধারণের জন্য বিবেচ্যসমূহ
জমি থেকে পোল বা টাওয়ারের উচ্চতা প্রধানত ছয়টি বিষয়ের উপর নির্ভর করে। যথাঃ
লাইন ভোল্টেজ
থ্রি ফেজ সিস্টেমে ফেজ টু ফেজ ভোল্টেজকে মূলত লাইন ভোল্টেজ বলা হয়। সাধারণত পোল বা টাওয়ার নির্মাণকালে বিবেচ্য ফ্যাক্টরগুলোর মধ্যে লাইন ভোল্টেজ অন্যতম।
তারের আয়তন, ওজন
পাওয়ার, ভোল্টেজ এবং কারেন্টের সম্পর্ক থেকে আমরা জানি,
তার মানে দাড়াল, আমার ট্রান্সমিশন ভোল্ট যত বেশি হবে, আমার পরিবাহী তারের সাইজ তত বেশি ছোট হবে এবং তা অর্থনৈতিকভাবে অনেক সাশ্রয়ী হবে। তাছাড়া সিস্টেম লসও অনেক কম হবে এবং ভোল্টেজ রেগুলেশন হবে অনেক উন্নত। তবে ভোল্টেজ বাড়ানোর সাথে সাথে ইন্সুলেটর সাইজ, টাওয়ারের উচ্চতাও বেড়ে যায়। তাই ওই ব্যাপারগুলোও লক্ষ্য রাখা জরুরি।
ভূমি থেকে সর্বনিম্ন তারের ব্যবধান
পোল বা টাওয়ার স্থাপনের সময় ভূমি থেকে পোল/টাওয়ারের সর্বনিম্ন তারের একটি নূন্যতম ব্যবধান থাকা জরুরি। সাধারণত এই ব্যবধান ১৫-২০ ফুট হয়ে থাকে।
উচ্চতম এবং নিম্নতম তারের ব্যবধান
এছাড়াও পোলের দুটো পরিবাহীর মাঝে একটি নির্দিষ্ট ব্যবধান থাকা জরুরি। অন্যথায় করোনা, হামিং ইফেক্ট এসব সংঘটিত হবার প্রবণতা বেড়ে যায়।
তারের স্যাগ
“Sag” শব্দের অর্থ হল ঝুলে থাকা। এখন কে ঝুলে থাকবে? ট্রান্সমিশন লাইনের টাওয়ার এর তারগুলা লক্ষ্য করলে দেখবেন কিছুটা ঝুলে থাকে। সরলরেখায় থাকেনা। এখন দুটো টাওয়ারের যে দুটো বিন্দু দিয়ে তারটি গমন করেছে সেই দুটো বিন্দু দিয়ে মনে মনে একটি সরলরেখা আঁকুন। এখন এই সরলরেখা থেকে তারটি যেই পরিমাণ ঝুলে আছে তাকে বলা হয় ঐ তারের Sag।
এখন, কিছু প্রশ্ন মাথায় আসে। Sag কম বেশি হলে কি সমস্যা?
টাওয়ারের Cross-arm to Cross-arm Sag বা তারের ঝুলন একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় হওয়া ভাল। যদি Sag বেশি হয় তাহলে একটা তারের সাথে অন্যান্য তারের distance কম-বেশি হবে। আর আমরা জানি, দুটো তারের স্পেসিং ঠিক ঠাক না হলে Air polarized হয়ে স্পার্কিং এর মাধ্যমে করোনা লস সংঘটিত হতে পারে।
কিভাবে আমি Sag কে একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় রাখব?
Vibration damper ব্যবহার করে। ট্রান্সমিশন লাইনের তার গুলোর দিকে তাকালে লক্ষ্য করবেন ক্লিপার এর মত কিছু একটা দিয়ে তারকে আটকে রাখা হয়। উদ্দেশ্য হল বাতাসে Sag যাতে বৃদ্ধি না পায়।
টাওয়ারের শীর্ষবিন্দু থেকে উচ্চতম ক্রসআর্মের ব্যবধান
টাওয়ারের শীর্ষবিন্দু থেকে উচ্চতম ক্রসআর্মের একটি নূন্যতম ব্যবধান থাকা জরুরি যা ১৫-২০ সেন্টিমিটারের বেশি হওয়া অনুচিত।
ইন্সুলেটর সাইজ
সাধারণত ট্রান্সমিশন/ডিস্ট্রিবিউশন ভোল্টেজের উপর ইন্সুলেটরের সাইজ নির্ভর করে। ট্রান্সমিশন ভোল্ট যত বেশি হবে ইন্সুলেটর সাইজ তত বড় হবে। পোলের জন্য সাধারণত পিন টাইপ, শ্যাকল টাইপ ইন্সুলেটর ব্যবহার করা হয় আর টাওয়ারের জন্য স্ট্রেইন/সাসপেনশন টাইপ ইন্সুলেটর ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
আরো কিছু পোস্ট