নবীনদের কাছে আতংকের আরেক নাম হচ্ছে ভাইবা। কিভাবে দক্ষ প্রকৌশলীদের প্রশ্নবাণকে মোকাবেলা করবে এ নিয়ে যেন সংশয়ের অন্ত নেই। কিন্তু একটু কৌশলী এবং কিছু বেসিক ধারণা থাকলেই ভাইবা জিনিসটি আপনার জন্য হয়ে উঠবে খুব রোমাঞ্চকর একটি অনুভূতি। আজকে কিভাবে সেই রোমাঞ্চকর অনুভূতি লাভ করবেন সেই নিয়ে চটপট কিছু টিপস নিয়েই হাজির হয়েছি আপনাদের সামনে।
ভাইবার জন্য সর্বপ্রথম দরকার একটি সুন্দর গেট আপ। প্রথম দর্শনেই যেন আপনাকে দেখে বোর্ড মেম্বারদের একটি ইম্প্রেশন কাজ করে সেদিকে নজর রাখতে হবে। কারণ কথায় আছে, “First impression is last impression ” আপনি যতই জানেন না কেন আপনার গেট আপ যদি ভাল না থাকে এটা মানসিকভাবে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া তৈরি করবে। তাই ফর্মাল ড্রেসে সুন্দর গেট আপ নিয়েই উপস্থিত হতে হবে।
মানসিক দৃঢ়তা এবং ভদ্রতা
ভাইবা বোর্ডে যাবার আগে নার্ভাসনেস থাকাটা খুব ন্যাচারাল ব্যাপার। কিন্তু আপনার মনকে রিলাক্স দিতে হবে। ভাববেন এখানে যারা এসেছে আপনি তাদের চেয়েও সেরা এবং লড়াই এর যোগ্য পাত্র। আত্নবিশ্বাসী হলে এবং মাইন্ডকে স্ট্রং রাখতে পারলে ভয়, সংশয় কিছুটা কাজ করলে চেপে বসতে পারবেনা।
অত:পর ভাইবা বোর্ডে প্রবেশের পূর্বে অনুমতি নেয়াটা আপনার ভদ্রতা এবং রয়েল ম্যানারের পরিচায়ক।
আর অনুমতি নিয়ে বসলে সেটি আরো উত্তম। আর আপনার সামনে প্রশ্নকর্তা যারা থাকবেন তাদেরকে কোনভাবেই নতুন ভাববেন না। মাইন্ডকে এমনভাবে সেট আপ করবেন যেন তারা আপনার পরিচিত লোক এবং আপনার প্রতি পজিটিভ মানসিকতা বহন করছে।
নিজের পরিচয়
প্রশ্নকর্তা শুরুতেই যদি আপনার পরিচয় জানতে চায় তাহলে আপনার জীবন নিয়ে ইতিহাস রচনা করার প্রয়োজন নেই কিংবা চৌদ্দগুষ্টির পরিচয় দিতে হবেনা। যতটা সম্ভব সংক্ষেপে ফেয়ারলি নাম, স্থায়ী ঠিকানা, গ্র্যাজুয়েশনের বিষয়বস্তু এবং যে প্রতিষ্ঠান থেকে পাস করেছেন তা নিয়ে আলোকপাত করতে হবে। উদাহরণস্বরুপ-
যদি ইংরেজিতে আস্ক করা হয়, “Introduce yourself “
উত্তরে বলবেন, “I am Mr X. Come from Dinajpur. I’ve completed my B.Sc engineering degree from “Y” university. I want to dedicate myself in electrical engineering sector for the welfare of nation “
এতটুকুতেই আপনার প্রতি অনেকটা ইম্প্রেশন চলে আসবে। এই প্রশ্নটা দিয়ে আসলে যাচাই করা হয় আপনি কতটা বাচাল বা অল্পভাষী? অনেকে আছে অনর্গল নিজের আদ্যপন্ত বলতে থাকে। এ ব্যাপারটি কিন্তু ভাইবা বোর্ডে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া তৈরি করে।
ভাইবা বোর্ড এ থাকা অবস্থায় শারীরিক অঙ্গভঙ্গি না করা
আর কথা বলার সময় মোটেও অঙ্গভঙ্গি করা যাবেনা। অনেকেই আছেন কথা বলার সময় হাত নাড়ান বা হাত টেবিলের উপর রাখেন। আর কথা বলতে হবে সাবলীলভাবে। আপনার বডি ল্যাংগুয়েজ এবং মানসিক পরিস্থিতি দেখার জন্যও কিন্তু একজন বসে থাকে এবং তাকিয়ে থাকবে আপনার দিকে। তাই এ বিষয়গুলোতে খুবই সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
ভাইবা বোর্ড এ বিষয়ভিত্তিক প্রশ্নোত্তর মোকাবেলার ধরন
আপনাকে হয়তো কিছু ডিপার্টমেন্টাল টপিক নিয়ে জিজ্ঞাসা করা হতে পারে। যদি কোন প্রশ্ন না জানেন তাহলে বিনা সংকোচে সরাসরি বলে দিবেন “সরি স্যার, উত্তর জানা নেই” ঝাপসা ধারণা থাকলেও রেসপন্সের প্রয়োজন নেই। কারণ ধারণা ঝাপসা থাকলে বা কনসেপ্ট ক্লিয়ার না থাকলে প্রশ্নটি যখন প্যাঁচানো হবে তখন আর পেরে উঠবেন না।
আর কোনভাবেই কনফিডেন্টলি আন্দাজে উত্তর দেয়া যাবেনা। আপনি যদি ৫ টা প্রশ্নের মধ্যে ৩টির উত্তর ও যদি সাবলীলভাবে দিতে পারেন তাহলে এটা প্লাস পয়েন্ট। আমতা আমতা করে ১০০% রেসপন্স করার চেয়ে ৩ টি উত্তর সাবলীলভাবে দেয়াই শ্রেয়। আর প্রশ্নকর্তারা ইচ্ছে করে আপনার মানসিকতা, ধৈর্য, কনফিডেন্ট পরীক্ষা করার জন্য আপনাকে নার্ভাস করতে পারে বা ধমকের সুরে কথা বলতে পারে কিংবা প্রশ্নে ঘুরপাক তৈরি করতে পারে। এতে মোটেও বিচলিত হওয়া যাবেনা। নিজের মত থেকে সরে আসা যাবেনা।
অত:পর ভাইবা বোর্ডে আপনার উপস্থিত বুদ্ধি ও সিদ্ধান্তের ক্ষমতা পরীক্ষার জন্য কিছু উদ্ভট প্রশ্ন করা হয়। যেমন-
আপনার চাকরির মূল উদ্দেশ্য কি?
ইলেকট্রিসিটি রিলেটেড কাজ আমার passion. তাছাড়া পার্থিব জীবনে টাকা আবশ্যক। আর সেই সাথে কোম্পানি এবং মানবকল্যাণে নিজকে নিয়োজিত করাই আমার ব্রত।
অনেক যোগ্য প্রার্থী দাঁড়িয়ে আছে কিংবা ভাইবা বোর্ড এটেন্ড করে গেছে। আপনাকে আমরা কেন নিব?
জি, অবশ্যই আমার তুলনায় আরো যোগ্য প্রার্থী থাকতে পারে কিন্তু আমি আমার সর্বাত্নক চেষ্টা করেছি। আমি চাকরিটি পাবার ব্যাপারে আশাবাদী। বাকিটা মহান সৃষ্টিকর্তার কৃপা এবং আপনাদের মর্জির উপর নির্ভর করছে।
তারপর আপনি ত অনেক কিছুই জানেন। এত কিছু জানলে ত সমস্যা। আরো ভাল কোথাও সুইচ করবেন। তাইনা??
এই প্রশ্নে মোটেও বিচলিত হবেন না। সোজাসুজি উত্তর দিবেন। বলবেন আমি এই ফিল্ডে একজন স্ট্রাগলার। দিন দিন অভিনব কিছু জানার চেষ্টায় আছি। আরো জানতে চাই। তবে বেটার কিছু পেলে সবাই ত ট্রাই করতে চাইবে। এক্ষেত্রে আমিও ব্যতিক্রম নয়।
আরেকটা প্রশ্ন যেটার উত্তর দিতে অনেকেই সংকোচ বোধ করে। সেটি হল —
স্যালারি কত ধরলে খুশি হবেন?
এক্ষেত্রে মোটেও সংকোচ করা যাবেনা। কারণ জীবিকা নির্বাহ আপনাকেই করতে হবে। হ্যা, তবে এক্ষেত্রে কোম্পানির মানের কথাও আপনাকে ভাবতে হবে। কোন উঠতি কোম্পানি হলে আপনি চাইলেও আপনাকে বেশি স্যালারি দিবেনা। যদি কোম্পানি সুপরিচিত, উন্নত হয় তাহলে আপনি ফ্রেশার হলেও নূন্যতম ডিমান্ড থাকবে ২৫,০০০/-। যেন কিছুটা কম ধরলেও সেটা প্রাথমিকভাবে ১৫-২০ হাজারের ভেতর থাকে। আর অভিজ্ঞ হলে সেতো আর বলা লাগবেনা। আপনার মূল্যায়ন আপনিই ভাল করে করতে জানবেন।
উল্লেখ্য যে, ভাইবার শুরুতে এবং শেষে সালাম দেয়াটা আপনার ভদ্রতার অন্যতম পরিচায়ক। আগামী পর্বে ভাইবার কিছু জরুরি প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা করব। আশা করি পর্বটি সবার ভাল লেগেছে।
ভাইবা সংক্রান্ত আরো কিছু পোস্ট
ভার্চুয়াল ভাইবা বোর্ড এবং চারটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন
মৌখিক পরীক্ষার প্রস্তুতি, ভাইবাতে সম্ভাব্য কিছু সাধারণ প্রশ্ন যা আপনার জেনে রাখা উচিত