সাবমেরিন কিভাবে গভীর সমুদ্রের নীচে চলাচল করে?

সাবমেরিন নামক সমুদ্রযানটির কথা আমরা অনেকেই শুনেছি। কিছুদিন ধরে অনলাইনের বিভিন্ন সাইট, গ্রুপ, পেজে সাবমেরিন এখন বেশ ভাইরাল টপিক। এর নেপথ্যে রয়েছে এক বেদনাবিধুর ঘটনা যা কিছুদিন আগেই ইন্দোনেশিয়ায় ঘটে গেল। ৫৩ জন নাবিক সাবমেরিন নিয়ে সমুদ্রের গভীরে করল তাদের অন্তিমযাত্রা। এজন্য সবার মনেই এখন সাবমেরিন টপিকটি নিয়ে বেশ কৌতূহল কাজ করছে। তাই আজ এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমি খুব সংক্ষেপে সাবমেরিন টপিকটি আপনাদের ক্লিয়ার করার চেষ্টা করব। শুরুতে সাবমেরিনের সংজ্ঞাটা জেনে নেয়া যাক।

সাবমেরিন কি?

”সাবমেরিন” শব্দটির অর্থ হল সমুদ্রের নীচে। নাম শুনেই বলা যায়, সাবমেরিন এমন একটি ডুবোজাহাজ যা অতল সমুদ্রের নীচে গিয়ে বিভিন্ন তথ্যাদি সংগ্রহ করে আনতে পারে। ১৬২০ খ্রিস্টাব্দে কর্নেলিয়াস জ্যাকবসজুন ড্রেবেল নামক একজন ডাচ বিজ্ঞানী কর্তৃক প্রথম নৌযানবাহন হিসেবে সাবমেরিন আবিষ্কৃত হয়। সাবমেরিন নিয়ে ইতিহাস রচনা করে আর্টিকেলটিকে বোরিং করতে চাইনা। তাই আমি সরাসরি সাবমেরিন কিভাবে এবং কোন নীতিতে কাজ করে সেদিকে আলোকপাত করতে চাই।

সাবমেরিন কিভাবে কাজ করে?

আপনার মনে কখনো এই প্রশ্নটি উঁকি দিয়েছে যে, “সাবমেরিন কিভাবে কাজ করে?”। আপনি যদি বিজ্ঞানের ছাত্র হয়ে থাকেন তাহলে এই প্রশ্ন আপনার মনে অবশ্যই জাগার কথা। এখন চলে যাব মূল আলোচনায়। সাবমেরিন কিভাবে চলে এবং কিভাবে পানিতে ভাসে ও আবার পানির নিচে চলে যায় এই ব্যাপারটি অনেকের কাছে এখনো রহস্য।

বিষয়টি আহামরি কঠিন কিছু না সাবমেরিন মূলত কাজ করে প্রাচীন গ্রীক বিজ্ঞানী আর্কিমিডিসের “ব্যালাস্ট ট্যাংক থিওরি” এর উপর ভিত্তি করে। এই থিওরির উপর ভিওি করেই ১৬২০ সালে কর্ণেলিয়াস জ্যাকবসজুন ড্রেবেল সাবমেরিন আবিস্কার করেন।

“ব্যালাস্ট ট্যাংক থিওরি” কি?

ব্যালাস্ট ট্যাঙ্ক থিওরি হল কোন অদ্রবণীয় বস্তুকে পানিতে ডোবালে তা নিজের আয়তনের সমপরিমান পানি অপসারিত করবে। সহজভাবে বললে, অপসারিত পানির ভরের থেকে পানিতে ডোবানো জিনিসটি যদি হালকা হয় তবে তা ভেসে থাকতে পারে।

ব্যাপারটিকে আরো সিম্পলভাবে বোঝানোর ট্রাই করছি যাতে আপনাদের সহজেই বোধগম্য হতে পারে। একটি ফাঁকা বা শূণ্য প্লাস্টিকের বোতলে যদি বাতাস ভরা হয় তখন কিন্ত বোলতটি পানিতে ভেসে থাকবে। ঠিক যদি আবার বোতলটিতে নতুন করে পানি ভর্তি করে দেওয়া হয় তবে সকল বাতাস বের হয়ে যাবে বোতলটি ভারী হয়ে গিয়ে পানিতে ডুবে যাবে। আবার যদি অর্ধেক বাতাস বোতলে রাখা হয় তবে বোতলটি অর্ধেক নিমজ্জিত অবস্থায় ভেসে থাকবে।

একই ফর্মূলা অনুসরণ করে সাবমেরিন পরিচালিত হয়। একই সূত্র অনুকরণ করে সাবমেরিনে কিছু ব্যালাস্ট ট্যাংকার থাকে যার ভিতরে বিশেষ যন্ত্রের সাহায্যে পানি ও বাতাস ডুকানো হয়। যখন সাবমেরিন ডুবানোর দরকার পরে তখন এইসব ব্যালাস্ট ট্যাংকারে পানি পূর্ণ করে দেওয়া হয়। যার ফলে সাবমেরিনটি ভারী হয়ে পানিতে ডুবে যায়। আবার যখন ভাসানোর দরকার পরে তখন ব্যালাস্ট ট্যাংকারের পানি বের করে যন্ত্রের সাহায্যে দ্রুত বাতাস পূর্ণ হতে থাকে। ফলে সাবমেরিন পানির উপরে ভেসে উঠে।

এখন প্রশ্ন হতে পারে, পানি বা বাতাস ঢুকানোর কারণে সাবমেরিনের ভেতর কি চাপের কোন পরিবর্তন হতে পারে?

উত্তর অবশ্যই না। পানি বা বাতাস ঢুকানোর কারণে এতে করে সাবমেরিনের ভেতরে চাপের কোন পরিবর্তন হয়না। কারণ হল এতে উন্নত মানের ষ্টীল, টাইটেনিয়ামের মতন ধাতু ব্যবহার করা হয়। এসব ধাতুর কারণে শুধু সাবমেরিনের ভেতরে নয় বরং এর বাইরেরও পানি প্রচণ্ড চাপ সহ্য করার মতন ক্ষমতা থাকে। সাবমেরিনের ভিতরে অক্সিজেন সরবরাহ করার জন্য যন্ত্রের সাহায্য নিয়ে অক্সিজেন তৈরি করা হয়।

পানির কত গভীর পর্যন্ত সাবমেরিন যেতে পারে?

অনেকের মনের একটি সাধারণ প্রশ্ন যে, পানির কত গভীর পর্যন্ত সাবমেরিন যেতে পারে? আসলে সাবমেরিনের একটা নিদিষ্ট রেঞ্জ থাকে। সেই রেঞ্জের নিচে গেলে সাবমেরিনটি দূর্ঘটনায় পতিত হবে। বর্তমানের আধুনিক সাবমেরিনগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি চাপ নিতে সক্ষম মার্কিন পারমাণবিক সাবমেরিন ও রাশিয়ান সাবমেরিনগুলো। মার্কিন সাবমেরিন গুলি ৪৫০০ ফুটের নীচে যেতে পারে না। যদি যায় তবে পানির বিশাল চাপে সাবমেরিনকে ভর্তা বানিয়ে ফেলবে।সাবমেরিন কতদিন পানির নীচে থাকবে তা নির্ভর করে মূলত কতদিনের জ্বালানি আছে ও নাবিকদের খাদ্য কি পরিমাণ রিজার্ভ আছে তার উপর। যদি ডিজেল সাবমেরিন হয় তবে ডিজেল নেয়ার জন্য কিছুদিন পরেই উপরে আসতে হয়। আর যদি পারমাণবিক সাবমেরিন হয় তবে একবার জ্বালানি নিয়ে এটি একটানা ২৫ বছর বা আরও বেশী সময় পানির নিচে থাকতে পারবে কিন্ত নাবিকদের খাদ্যের জন্য তাকে উপরে আসতেই হবে। কারণ পারমাণবিক সাবমেরিন নিজে ২৫ বছর বা আরও বেশীদিন পানির নিচে থাকতে পারবে কিন্ত ভিতরের মানুষের জন্য ৬ মাস পরে উপরে আসতেই হবে। সাবমেরিনে ৬ মাসের বেশি খাবার মজুদ রাখা যায় না।

সাবমেরিনের ব্যবহারিক ক্ষেত্র

  • বিমানবাহী জাহাজ বহরকে রক্ষা করা, অবরোধ দূরীকরণ, প্রচলিত স্থল আক্রমণ ও বিশেষ বাহিনীকে গুপ্তভাবে রক্ষণাবেক্ষণ।
  • প্রতিপক্ষের জাহাজ কিংবা সাবমেরিন আক্রমণ ঠেকাতে এর ভূমিকা ব্যাপক।
  • সাবমেরিনকে অনুসন্ধান ও উদ্ধার তৎপরতার কাজে, সাগরতলে অবস্থিত ক্যাবল মেরামতেও সম্পৃক্ত করা হয়।
  • সমুদ্র বিজ্ঞান, উদ্ধার তৎপরতা, অনুসন্ধান কার্যক্রম, পরিদর্শন এবং রক্ষণাবেক্ষন।
  • পর্যটকদের আকৃষ্ট করার লক্ষ্যে সাগরতলে নিমজ্জিত প্রত্নতত্ত্ব পরিদর্শনেও ডুবোজাহাজ ব্যবহৃত হয়।

আরো কিছু আর্টিকেল

নিউক্লিয়ার চেইন বিক্রিয়া | Nuclear Chain Reaction

3D হলোগ্রাম টেকনিক এবং ডাইনির ছায়া

সাবমেরিন পাওয়ার ক্যাবলের সাহায্যে কিভাবে দ্বীপাঞ্চলে বিদ্যুৎ সঞ্চালিত হয়?