নাসা কিভাবে মঙ্গলগ্রহের ছবি পৃথিবীতে নিয়ে আসে?

বহুকাল আগের কথা। বিজ্ঞান-প্রযুক্তি তখন এত উন্নত ছিলনা। মহাকাশযাত্রা ছিল মানুষের কাছে স্বপ্নের মত। রাতের বেলায় শিশুরা যখন ঘুমাতে চাইত না তখন মায়েরা তাদের চাঁদের বুড়ির গল্প শুনাত। শিশুরা লক্ষ কিলোমিটার দূরের চাঁদ দেখে আর বুড়ির গল্প শুনেই ঘুমিয়ে পড়ত।

ঐ সময়ের কল্পনাগুলো আজ বাস্তবতায় রুপায়িত। আজ মহাসাগরের ন্যায় মানুষ এখন মহাকাশও পাড়ি দিচ্ছে। মহাকাশযান দিয়ে পাড়ি জমাচ্ছে এক গ্রহ থেকে অন্য গ্রহে। কে জানে এমন একটা সময় আসবে যখন মানুষ হয়ত কোন নভোযান ছাড়াই মহাকাশে পাড়ি জমাবে এবং মঙ্গলগ্রহে পিকনিক করবে। আর তখন আমরা হয়ত সময়ের অতল গহ্বরে হারিয়ে যাব।

নাসা কিভাবে মঙ্গলগ্রহের ছবি পৃথিবীতে নিয়ে আসে?

নাসা মঙ্গলগ্রহে রোবট পাঠাল বেশ কয়েক বছর হল। তারা মঙ্গলের বিভিন্ন তথ্যাদি যেমন- জলবায়ু, আপেক্ষিক আর্দ্রতা, মাটির ধরন প্রভৃতি স্থির বা ভিডিও চিত্রের মাধ্যমে লাভ করে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে এত দূর থেকে এসব ছবি নাসার সদর দপ্তরে পৌছায় কিভাবে?

আমরা অনেকেই উপগ্রহ নিয়ে শুনে থাকব। পৃথিবী যেমন সূর্যের চারিদিকে ঘুরে, একইভাবে উপগ্রহও পৃথিবীর চারদিকে ঘুরে পৃথিবীকে পর্যবেক্ষণ করে। প্রাকৃতিক উপগ্রহ চাঁদের পাশাপাশি মানুষ এখন কৃত্রিম উপগ্রহও বানিয়ে ফেলতে সক্ষম হয়েছে। যার নাম দিয়েছি আমরা স্যাটেলাইট।

এই স্যাটেলাইটের সাহায্যেই মূলত কয়েক আলোকবর্ষ দূরের গ্রহের ছবি আমরা আমাদের গ্রহে পেতে পারি। আর এই প্রক্রিয়ার নাম স্যাটেলাইট ইমেজ প্রসেসিং সিস্টেম। স্যাটেলাইট নিয়ে বরাবরই আমাদের অনেক কৌতূহল। আমাদের ব্লগে স্যাটেলাইট সংক্রান্ত আর্টিকেল পড়ে আরো জেনে নিতে পারেন। আজ স্যাটেলাইট ইমেজ প্রসেসিং সিস্টেমটা খুব সংক্ষেপে আলোচনা করব।

স্যাটেলাইট ইমেজ প্রসেসিং সিস্টেম

  • নাসা মঙ্গলগ্রহে যে রোবট পাঠিয়েছে সেটি মূলত মাল্টিসেন্সর এবং 360° ক্যামেরা সম্বলিত। মংগলগ্রহের ভূমির চারদিক স্ক্যান করে সেই ডাটা রোবটটি ক্যামেরায় ধারণ করে।
  • রোবটটিতে মাল্টিরেজিস্টার বেইজড মেমোরি স্টোরেজ ইলিমেন্ট বিদ্যমান। সেই স্টোরেজ ইলিমেন্টে এই ভিডিও সিগন্যাল বা পিকচার ফর্মেট বাইনারি ডাটা স্ট্রিম হিসেবে সংরক্ষিত থাকে।
  • তাছাড়া রোবটটিতে মডুলেটর, ব্যান্ড পাস ফিল্টার, ফেজ শিফটার প্রভৃতি কমিউনিকেশন ডিভাইস বিদ্যমান।
  • এই পিকচার বা ভিডিও স্ট্রিমকে মডুলেশন করে ডাটা স্ট্রিমকে পাওয়ারফুল ট্রান্সমিটিং এন্টেনার সাহায্যে মহাকাশে প্রেরণ করা হয়।
  • নাসা রোবটটির কমিউনিকেশন সিস্টেমের সাথে তাদের স্যাটেলাইটের লিংকড আপ করে রাখে।
  • স্যাটেলাইটের রিসিভিং এন্টেনা সেই মডুলেটেড ভিডিও বা পিকচার সিগন্যালকে রিসিভ করে তার ট্রান্সমিটিং এন্টেনার সাহায্যে নাসার গ্রাউন্ড স্টেশনে পাঠায়।

এভাবেই মূলত নাসা মঙ্গলগ্রহ থেকে ছবি বা ভিডিও চিত্র পৃথিবীতে সহজেই নিয়ে আসতে পারে। মহাকাশ সংক্রান্ত আরো মজার মজার আর্টিকেল পেতে ভোল্টেজ ল্যাবের সাথেই থাকুন।

আরো কিছু আর্টিকেল

মহাকাশে মৃত্যু হলে লাশের কি হবে? | মহাকাশ রহস্য

চাঁদে নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট নির্মাণ | কিভাবে সম্ভব?

পার্কার সোলার প্রোব কি? সূর্যের নিকট থেকে তোলা ছবি কেমন?