সার্কিট টারমিনোলজি সমাধান করার জন্য দুটি পদ্ধতি সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয়, একটি হচ্ছে নোডাল এনালাইসিস এবং অপরটি হচ্ছে মেশ এনালাইসিস। আমরা ইতিমধ্যে নোডাল এনালাইসিস নিয়ে আলোচনা করেছি। আজ আমরা মেশ এনালাইসিস নিয়ে আলোচনা করবো।
“নোডাল এনালাইসিস সম্বন্ধে পড়ুন “
আমাদের আজকের আলোচনায় যা যা থাকছেঃ
- মেশ কি?
- মেশ এনালাইসিস কি?
- মেশ এনালাইসিস প্রয়োগ করার ধাপ সমূহ।
- সার্কিটের সাহায্যে মেশ এনালাইসিস ব্যাখ্যা।
মেশ কি?
মেশ হচ্ছে সে সমস্ত লুপ যার মধ্যে অন্য কোন লুপ থাকেনা।
উপরের চিত্রে মোট ৩ টি লুপ কিন্তু ২ টি মেশ ।
নোড, জাংশন, ব্রাঞ্চ, লুপ ও মেশ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে নিচের লিংকে ক্লিক করুন-
“নোড, জাংশন, ব্রাঞ্চ, লুপ ও মেশ সম্বন্ধে বিস্তারিত আলোচনা“
মেশ এনালাইসিস কি?
কোন সার্কিটের মধ্যে যখন একের অধিক ভোল্টেজ সোর্স থাকে তখন সে সার্কিটের প্রত্যেকটি উপাদানের মধ্য দিয়ে কি পরিমাণ কারেন্ট প্রবাহিত হচ্ছে তা নির্ণয় করার জন্য যে পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয় তা হচ্ছে মেশ এনালাইসিস।
মেশ এনালাইসিস প্রয়োগ করার ধাপ সমূহঃ
মেশ এনালাইসিস প্রয়োগ করার জন্য আমাদেরকে কয়েকটি ধাপ অনুসরণ করতে হয়। ধাপ সমূহ হচ্ছেঃ
ধাপ ১: সার্কিট হতে মেশ সংখ্যা বের করতে হবে।
ধাপ ২: প্রতিটি মেশে মেশ কারেন্টকে ঘড়ির কাটার দিকে অথবা ঘড়ির কাটার বিপরীত দিকে I1, I2, I3 ইত্যাদি দ্বারা চিহ্নিত করতে হবে।
ধাপ ৩: মেশ কারেন্ট অনুসারে প্রতিটি রেজিস্টরের পোলারিটি বা দিক নির্ধারন করে দিতে হবে।
[মনে রাখতে হবে, রেজিস্টরের নির্দিষ্ট কোন দিক নেই। শুধুমাত্র কারেন্ট প্রয়োগ করলেই রেজিস্টরের পোলারিটি বা দিক তৈরি হয়। যে দিক দিয়ে রেজিস্টরে কারেন্ট প্রবেশ করে সে দিকটিকে পজিটিভ এবং যেদিক দিয়ে বের হয় সে দিকটিকে নেগেটিভ হিসেবে ধরা হয়।]
ধাপ ৪: প্রতি মেশে কার্শফের ভোল্টেজ সূত্র (KVL) প্রয়োগ করতে হবে।
ধাপ ৫: প্রাপ্ত সমীকরণ সমূহকে সমাধান করতে হবে।
সার্কিটের সাহায্যে মেশ এনালাইসিস ব্যাখ্যাঃ
আমরা নিচের সার্কিট হতে মেশ এনালাইসিসের ধাপ সমুহের আলোকে ব্যখ্যা করবো।
নিচের সার্কিটটি লক্ষ্য করুনঃ
প্রথমে আমরা সার্কিট হতে মেশ সংখ্যা বের করবো। সার্কিটে দেখতে পাচ্ছি, মোট ২ টি মেশ রয়েছে। আমরা এই মেশ দুটিকে ঘড়ির কাটার দিকে I1 ও I2 হিসেবে চিহ্নিত করলাম।
এবার I1 ও I2 লুপ অনুসারে রেজিস্টর সমূহের দিক নির্দিষ্ট করার পর নিম্নোক্ত সার্কিট পেলাম।
এখানে, প্রথম মেশে I1 পরিমাণ কারেন্ট যখন ঘড়ির কাটার দিকে ঘুরে তখন R1 রেজিস্টরের বাম প্রান্ত পজিটিভ এবং ডান প্রান্ত নেগেটিভ। একইভাবে যখন I1পরিমাণ কারেন্ট যখন R3 রেজিস্টরে আসে তখন উপর থেকে নিচের দিকে কারেন্ট ফ্লো হয় এবং রেজিস্টরের উপরের প্রান্ত পজিটিভ নিচের প্রান্ত নেগেটিভ ধরা হয়। একইভাবে R2 রেজিস্টরের ক্ষেত্রেও প্রথম প্রান্ত পজিটিভ হবে এবং দ্বিতীয় প্রান্ত নেগেটিভ হবে। এবার প্রথম মেশে আর কোন রেজিস্টর নাই অর্থাৎ প্রথম মেশের কাজ শেষ।
এবার আমরা দ্বিতীয় মেশকে দেখি-
এখানে, I2 পরিমাণ কারেন্ট রয়েছে। যেহেতু প্রথম মেশ ঘড়ির কাটার দিকে ছিলো সেহেতু এই মেশও ঘড়ির কাটার দিকে হবে। ঘড়ির কাটার দিক অনুসারে ধরে প্রথম মেশে R3 এর কারেন্ট ডিরেকশন নিচ থেকে উপরের দিকে পেয়েছিলাম কিন্তু দ্বিতীয় মেশ অনুসারে R3 এর কারেন্ট ডিরেকশন হবে নিচ হতে উপরের দিকে এবং এর নিচের প্রান্ত হবে পজিটিভ ও উপরের প্রান্ত হবে নেগেটিভ; যা প্রথম মেশের বিপরীত। একইভাবে দ্বিতীয় মেশের R4 ও R5 এর প্রথম প্রান্ত হবে পজিটিভ ও দ্বিতীয় প্রান্ত হবে নেগেটিভ।
এখানে একটি বিষয় লক্ষ্য রাখতে হবে, যখন আমরা সার্কিটে মেশ কারেন্ট প্রয়োগ করবো তখন আমরা শুধুমাত্র রেজিস্টর সমূহের পোলারিটি বা দিক নির্ধারণ করে নিবো। কখনোই ভোল্টেজ সোর্সের দিক নির্ধারণ করব না। কারণ ভোল্টেজ সোর্স নিজেই একটি পোলার এলিমেন্ট এবং এই পোলার এলিমেন্টে সব সময় একটি পজিটিভ ও একটি নেগেটিভ টার্মিনাল নির্দিষ্ট করা থাকে। কাজেই এসব উপাদান সমূহকে কখনোই কারেন্টের ডিরেকশন অনুযায়ী পোলারিটি বা দিক নির্ধারণ করার প্রয়োজন হয় না।
এবার আমরা পরের ধাপে আসি,
প্রতিটি মেশের মধ্যে কার্শফের ভোল্টেজ সূত্র বা KVL এপ্লাই করতে হবে।
যদি আমরা প্রথম মেশে KVL এপ্লাই করি তাহলে আমরা প্রথম দেখতে পাবো নেগেটিভ (-) চিহ্ন যুক্ত V1 পরিমাণ ভোল্টেজ সোর্স। এরপর যখন লুপ অনুসারে উপরের দিকে যাবো দেখতে পাবো একটি পজিটিভ (+) চিহ্নযুক্ত R1 রেজিস্টর। এখানে, R1 এর ভিতর দিয়ে যে পরিমাণ ভোল্টেজ ড্রপ হবে ওহমের সূত্রানুসারে তা R1I1 নিলাম।
এরপর লুপ অনুসারে নিচের দিকে অগ্রসর হলে একটি পজিটিভ (+) চিহ্ন পাবো এবং R3 রেজিস্টরের মধ্যে যে পরিমাণ ভোল্টেজ ড্রপ হচ্ছে তা পাবো। কিন্তু এখানে R3 হচ্ছে প্রথম ও দ্বিতীয় মেশের কমন উপাদান কারণ এদের মধ্য দিয়ে একই সাথে I1 ও I2 পরিমাণ কারেন্ট পরস্পর বিপরীত দিকে ফ্লো হচ্ছে। কিন্তু প্রথম মেশের ক্ষেত্রে এর ডিরেকশন হয়েছে নিচের দিকে এবং দ্বিতীয় মেশের ক্ষেত্রে এর ডিরেকশন হয়েছে উপরের দিকে। তাই আমরা ইচ্ছে করলেই এখানে পূর্বের মতো R3I1 লিখতে পারবো না। এক্ষেত্রে আমাদেরকে একটি কৌশল অবলম্বন করতে হবে। কৌশলটি হচ্ছে, আমরা যে মেশ বা লুপ নিয়ে কাজ করবো সে লুপের কারেন্ট হতে অপর মেশের কারেন্ট বিয়োগ করব। যেহেতু এখানে প্রথম মেশ নিয়ে কাজ করছি সেহেতু I1 থেকে I2 বিয়োগ করব। তাহলে R3 রেজিস্টরের মধ্যে দিয়ে ভোল্টেজ ড্রপ হবে, R3 (I1-I2)।
লুপ অনুসারে প্রথম মেশের সর্বশেষ R2 এর ভোল্টেজ ড্রপ পাবো R2I1
অতএব KVL এর সূত্রানুসারে উক্ত সমীকরণটি হচ্ছে,
-V1 + R1I1 + R3 (I1 – I2) + R2I1 = 0
Or, I1R1 + (I1 – I2) R3 + R2I1 = V1.
আবার একইভাবে দ্বিতীয় মেশে KVL এপ্লাই করার পর আমরা দ্বিতীয় সমীকরণটি পাই,
R3 (I2 -I1) + R4I2 + R3I2 + V2 = 0
এখন এই দুইটি সমীকরণকে সমাধান করলে আমরা সার্কিট হতে I1 ও I2 এর মান বের করতে পারবো।
মনে রাখতে হবে, একটি সার্কিটে যত সংখ্যক মেশ থাকবে ঠিক ততো সংখ্যক সমীকরণ হবে। যেহেতু উপরের সার্কিটে মেশ ছিলো ২ টি সেহেতু আমরা সমীকরণও পেয়েছি ২ টি।
মেশ এনালাইসিসকে আরেকটু ভালোভাবে বুঝতে নিচের ভিডিও গুলো দেখে নিনঃ
মেশ কারেন্ট এনালাইসিসঃ
মেশ কারেন্ট এনালাইসিস ম্যাথঃ
References:
Objective of Electrical Technology By V.K Mehta