আমরা জানি যে প্রকৃতির বিভিন্ন এনার্জিকে কনভার্ট করে ইলেকট্রিক্যাল এনার্জি উৎপাদন করা যায়। এই লেখাটিতে ইলেকট্রিক্যাল এনার্জি প্রাথমিক উৎসগুলো নিয়ে আলোচনা করা হবে।
ইলেকট্রিক্যাল এনার্জি প্রাথমিক সোর্সগুলোঃ
- সূর্য
- বাতাস
- পানি
- জ্বালানি
- পারমাণবিক শক্তি
উপরের ৫ টি ইলেকট্রিক্যাল এনার্জি সোর্সের মধ্যে প্রথম ২ টি সোর্স বহুল ব্যবহার হয় না। উপরের দুটির বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা আছে যেকারনে বহুল ব্যবহার হয় না। বর্তমান সময়ে Hydroelectric Power Plant, Steam Power Plant, Nuclear Power Plant ব্যাপক হারে ব্যবহার হচ্ছে।
সৌর বা Solar Power Plant
শক্তির মৌলিক উৎসের মধ্যে সৌর শক্তি একটি যার তাপ এবং আলো রয়েছে। আমরা সাধারণত তাপ ও আলোকে কাজে লাগিয়ে ইলেকট্রিসিটি উৎপন্ন করতে পারি।
তাপকে কাজে লাগিয়েঃ
অবতল দর্পন ব্যবহার করে সূর্য রশ্মিকে একটি নির্দিষ্ট জায়গাতে ফোকাস করা হয়। এই সূর্য রশ্মির তাপমাত্রাকে কাজে লাগিয়ে বয়লারের পানির তাপ বৃদ্ধি করা হয়। বয়লারের ভিতর বাষ্প তৈরি হয় এবং তা টারবাইনকে ঘুরতে সাহায্য করে। টারবাইন অল্টারনেটরকে ঘুরায় যার মাধ্যমে ইলেক্ট্রিসিটি উৎপন্ন হয়।
এই পদ্ধতির বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা আছেঃ
- অল্প পরিমানে ইলেকট্রিক্যাল এনার্জি জেনারেট করতে বিশাল জায়গার প্রয়োজন হয়।
- মেঘলা দিনে কিংবা রাতে ইহা ব্যবহার করা যায় না।
- সূর্যের আলোর তাপমাত্রা কখনো কনস্ট্যান্ট হয় না, এটা দিনে পরিবর্তন হয় ফলে তাপমাত্রাও পরিবর্তন হয়।
- এই পদ্ধতি economical নয় অর্থাৎ এটি একটি অলাভজনক প্রজেক্ট।
এরপরেও এই ধরনের প্ল্যান্ট পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে রয়েছে যেখানে শক্তিশালী তাপমাত্রার রেডিয়েশন ঘটে। পৃথিবীর যেসকল স্থানে খনিজ জ্বালানির অভাব সে সকল স্থানে এই ধরনের এনার্জি ব্যবহার করা হয়।
আলোকে কাজে লাগিয়েঃ
সরারসরি সূর্যের আলোকে ব্যবহার করে ফটোভল্টিক সেলের মাধ্যমে ইলেক্ট্রিসিটি উৎপাদন করা সম্ভব। এখানে ভোল্টাইক সেলের পৃষ্ঠে সূর্যের আলো সরাসরি পরে। ফটোভোল্টিক সেল সাধারণত সেমিকন্ডাক্টর পি-এন জাংশন সেল। সূর্যের আলোর কারনে সেলের জাংশনে পটেনশিয়াল ডিফারেন্স বা ভোল্টেজ পাওয়া যায়।
এই পটেনশিয়াল ডিফারেন্স বা ভোল্টেজ সার্কিটের সাথে সংযুক্ত সোলার পাওয়ার সিস্টেমে ইলেক্ট্রিসিটি উৎপন্ন করে। বর্তমানে বাংলাদেশে সোলার সিস্টেম অনেক জনপ্রিয়।
বাতাস
বাতাসের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে ইলেক্ট্রিসিটি জেনারেট করা যায়। পর্যাপ্ত পরিমান বাতাস যেখানে রয়েছে সেই সকল স্থানে এই ধরনের পাওয়ার প্ল্যান্ট নির্মান করা হয়। Wind mill সাধারণত ছোট জেনারেটরকে পরিচালনা করে। বাতাসের শক্তির সাহায্যে Wind mill কে চালানো হয় এবং এই Wind mill জেনারেটরকে ঘুরায়।
আমরা জানি যে বাতাসের স্পীড বা শক্তি সবসময় এক থাকেনা। একারনে এইধরনের প্ল্যান্ট থেকে সরাসরি লোড যুক্ত করা হয় না। এক্ষেত্রে ব্যাটারি যুক্ত করে উক্ত উৎপাদিত ইলেক্ট্রিসিটি ব্যাটারিতে চার্জ করে রাখা হয়। ইনভার্টারের সাহায্যে ব্যাটারির ডিসি ভোল্টেজকে এসি ভোল্টেজে কনভার্ট করে লোডে প্রেরণ করা হয়।
পয়েন্টঃ
- কোন প্রকার জ্বালানি ব্যবহার নেই বলে এতে রানিং খরচ অনেক কম।
- বাতাসের প্রবাহ একই রকম থাকে না বিধায় এই ধরনের পাওয়ার প্ল্যান্টের আউটপুট একেক সময় একেক রকম।
- পাওয়ার উৎপাদন ক্ষমতা খুবই কম।
পানি
যখন পানিকে উপযুক্ত স্থানে সংরক্ষন করে রাখা হয় অর্থাৎ উর্ধমুখী থেকে নিম্নবর্তী দিকে তখন নিম্নবর্তী স্থানে পটেনশিয়াল এনার্জি বা বিভবশক্তি অনুভব করে। এই পানিকে যে ইকুয়েপমেন্টের সাহায্যে ধরে রাখা হয় তাকে ড্যাম বলে। অর্থাৎ ড্যাম একটি বেড়া যা পানি প্রবাহকে বাঁধা প্রদান করে থাকে।
যখন ড্যামকে খুলে দেওয়া হয় তখন একটি পটেনশিয়াল এনার্জি উৎপাদন হয়। এই পানি প্রবাহের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে Water Turbine কে ঘুরানো হয়। এই Water Turbine অল্টারনেটরকে ঘুরায় যার মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়ে থাকে। এই পদ্ধতি সারা বিশ্বে জনপ্রিয়।
জ্বালানি
এখন পর্যন্ত জ্বালানি কে ইলেকট্রিক্যাল এনার্জি প্রধান উৎস হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। আমরা সাধারণত তিন ধরনের জ্বালানি ব্যবহার করতে পারি।
- Solid Fuel – কয়লা
- Liquid Fuel – ডিজেল
- Gaseous Fuel – প্রাকৃতিক গ্যাস
যেকোন ধরনের জ্বালানি হোক না কেন এর মৌলিক কার্যপদ্ধতি একই। বয়লারের মধ্যে জ্বালানিকে পোড়ানোর ফলে তাপ ও বাষ্প উৎপন্ন হয়। এই বাষ্প মূলত উপযোগী প্রাইম মুভারের সাহায্যে মেকানিক্যাল এনার্জিতে কনভার্ট হয়ে থাকে। এই প্রাইম মুভার অল্টারনেটরকে পরিচালনা করে যার সাহায্যে মেকানিক্যাল এনার্জি থেকে ইলেকট্রিক্যাল এনার্জিতে রূপান্তরিত হয়।
পারমানবিক শক্তি
Nuclear Power plant হলো এমন এক ধরনের তাপীয় পাওয়ার প্ল্যান্ট যার তাপ সোর্স হলো নিউক্লিয়ার রিএক্টর। নিউক্লিয়ার রিএকশন এর সাহায্যে তাপ উৎপন্ন হয় এবং এই তাপ শক্তির সাহায্যে বাস্প উৎপন্ন করা হয়। এই বাস্প Steam Turbine কে ঘুরায় এবং Steam Turbine এর সাথে জেনারেটর যুক্ত থাকে ফলে ইলেকট্রিসিটি উৎপাদন হয়।
১ কেজি পারমানবিক জ্বালানি পুরালে যতটুকু তাপ উৎপন্ন হয়ে থাকে ঠিক ৪৫০০ টন কয়লা পুরালে একই পরিমান তাপ উৎপন্ন হয়ে থাকে। অর্থাৎ ১ কেজি ইউরিনিয়াম = ৪৫০০ টন কয়লা।
এই উৎপাদিত তাপকে কাজে লাগিয়ে প্রয়োজনীয় যন্ত্রের সাহায্যে বাস্পকে বৃদ্ধি করা হয়। এই বাস্প বা Steam সাধারনত Steam Turbine কে Run করে। Steam Turbine আবার অল্টারনেটরকে ঘুরায়, এই অল্টারনেটরের সাহায্যে বিদ্যুৎ উপন্ন হয়ে থাকে।
এই পারমানবিক পাওয়ার প্ল্যান্ট ব্যবহারের ক্ষেত্রে বেশ কিছু জটিলতা আছে।
- নিউক্লিয়ার প্ল্যান্টের নির্মান খরচ, রক্ষণাবেক্ষণ খরচ, এবং রানিং খরচ অন্যান্য তাপীয় পাওয়ার প্ল্যান্টের চেয়ে অনেক বেশি।
- এই ধরনের প্ল্যান্টের বর্জ্য অনেক বেশি হয়।
ইলেকট্রিক্যাল এনার্জি সম্বন্ধে বিস্তারিত পড়ুন ইংরেজিতেঃ What is the sources of Electrical Energy