ইলেকট্রন এবং হোল | Electron & Hole

ধরুন আপনি আপনার বাসা থেকে ভার্সিটিতে যাতায়াতের জন্য বাস ব্যবহার করেন। একদিন সকালে ক্লাসে যাওয়ার সময় বাসে উঠলেন কিন্তু বাসে শুধুমাত্র ১টি সিটই খালি আছে এবং তা সবার পেছনের সারিতে। তাই বাধ্য হয়ে আপনি গিয়ে সেখানেই বসে পড়লেন। কিছুদূর যাওয়ার পর আপনার সামনের সারির একজন উঠে গেল। ফলে তার সিটটি ফাকা হয়ে গেল এবং আপনি আপনার সিট থেকে উঠে সেখানে চলে গেলেন। নেক্সট স্টপেজে আপনার বর্তমান সিটের সামনের সারির একজন নেমে গেলো, আবার আপনি উঠে সেখানে গিয়ে বসলেন। এভাবে কিছুক্ষণ পর পর আপনার সামনের একটি করে সিট খালি হতে থাকলো এবং আপনিও এক সারি করে সামনে অগ্রসর হতে থাকলেন। তারপর ভার্সিটি তে পৌছে দেখা গেলো আপনি একদম সামনের সারির সিটে বসে আছেন।

কি ভাবছেন, ভোল্টেজ ল্যাব আবার গল্প লেখা শুরু করলো কবে থেকে তাইতো? কিন্তু আমদের প্রাত্যাহিক জীবনের এই গল্পটির সাথে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে আছে ইলেকট্রন এবং হোলের কাহিনী।

ইলেকট্রন এবং হোল হল এক ধরণের চার্জ ক্যারিয়ার যাদের জন্য এক্সট্রিন্সিক বা ভেজাল মিশ্রিত সেমিকন্ডাক্টরে আধান প্রবাহিত হয়। হোল হল মূলত ইলেকট্রনের শূণ্যতা বা ইলেকট্রনের অনুপস্থিতি এবং বাস্তবে হোলের কোন অস্তিত্ব নেই, এটি শুধুমাত্র একটি ধারণা। উপরের গল্প অনুসারে আপনি নিজেকে একটি ইলেকট্রন হিসেবে বিবেচনা করতে পারেন।

আপনি যখনই একটি সিট ছেড়ে সামনে অগ্রসর হয়েছেন, তখনই আগের সিটটি খালি হয়ে গিয়েছিল এবং ইলেকট্রনিক্সের ভাষায় একে বলা হয় হোল। বাস্তবিক ইলেকট্রন গুলোও ঠিক একই আচরণ করে, তারা যখনই একটি পরমাণু থেকে অন্য পরমাণুতে গমন করে তখনই সেখানে একটি হোলের সৃষ্টি হয়। তারপর অন্য একটি ইলেকট্রন সেই হোলে আগমন করে এবং এক সময় সেও ছেড়ে চলে যায়। মূলত ইলেকট্রন স্থায়ী ভাবে কোন পরমাণুতে অবস্থান করে না। ইলেকট্রন গতিশীল তাই হোলও গতিশীল। ইলেকট্রন এবং হোল সবসময় পরস্পরের বিপরীত দিকে চলে।

ইলেকট্রন ঋণাত্বক আধানযুক্ত তাই হোলকে ধনাত্বক আধানযুক্ত হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ইলেকট্রন এবং হোল মূলত সেমিকন্ডাক্টরে বিদ্যুৎ পরিবাহী হিসেবে কাজ করে। হোল যেদিকে প্রবাহিত হয়, কারেন্ট ঠিক একই দিকে প্রবাহিত হয়। আর ইলেকট্রন তার বিপরীত দিকে। পি টাইপ সেমিকন্ডাক্টরে তড়িৎ প্রবাহ ঘটে প্রধানত ধনাত্মক আধান বা হোলের দরুন। তাই এখানে হোল হল গরিষ্ঠ আধান বাহক এবং ধনাত্মক আধান বা ইলেকট্রন হলো লঘিষ্ঠ আধান বাহক। অপরদিকে এন টাইপ সেমিকন্ডাক্টরে গরিষ্ঠ বাহক হলো ইলেকট্রন এবং লঘিষ্ঠ বাহক হলো হোল।