এন টাইপ সেমিকন্ডাক্টর | n Type Semiconductor

এন টাইপ সেমিকন্ডাক্টর – সেমিকন্ডাক্টর প্রধানত দুই ভাগে বিভক্ত Intrinsic এবং Extrinsic এর মধ্য Intrinsic সেমিকন্ডাক্টর কক্ষ তাপমাএার ওপরে তড়িৎ প্রবাহিত করে। সেক্ষেত্রে সমস্যা হল এর তড়িৎ প্রবাহিত করার মান খুব কম। বিজ্ঞানীরা কিছু পরীক্ষার পর পর্যবেক্ষণ করলেন, খুব সামান্য পরিমাণ অপদ্রব্য মিশ্রিত করলে এর তড়িৎ প্রবাহ বেড়ে যায়।

অপদ্রব্য মিশ্রিত করার এই পদ্ধতি ডোপিং নামে পরিচিত এবং ডোপিং করার পর এটি Extrinsic Semiconductor নামে পরিচিতি পায়। Extrinsic Semiconductor আবার দুই প্রকার এন-টাইপ এবং পি-টাইপ। এখন মূলত এন-টাইপ নিয়ে আলোচনা করা হবে।

এন-টাইপ সেমিকন্ডাক্টর
silicon crystal lattice

সিলিকনের পারমাণবিক মডেল লক্ষ্য করলে দেখতে পাই, শেষ কক্ষপথে চারটি ইলেকট্রন রয়েছে। আগের ব্লগে জেনেছি শেষ কক্ষপথের ইলেকট্রন গুলোকে ভ্যা-লেন্স ইলেকট্রন বলে। যদি সিলিকনের একটি ক্রিস্টাল এর দিকে লক্ষ্য করা হয় তাহলে দেখা যাবে ইলেকট্রন গুলো পরস্পরের সাথে সমযোজী বন্ধনে আবদ্ধ। এন-টাইপ সেমিকন্ডাক্টর প্রস্তুত করতে পঞ্চযোজী মৌল দ্বারা ডোপিং করা হয়(ব্লগটি শেষ হলে ডোপিং সম্পর্কে পূর্ণ ধারনা পাওয়া যাবে)। যে সকল মৌলের শেষ কক্ষপথে পাঁচটি ইলেকট্রন থাকে তাদের পঞ্চযোজী মৌল বলা হয় যেমন Phosphorus (P), Arsenic (As), Antimony (Sb)

এখন এর গাঠনিক বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জানব।

বহুল ব্যবহৃত যে দুটো মৌলের সাহায্য নিয়ে অলোচনা করা হবে তাদের ইলেকট্রন বিন্যাস জানা খুব জরুরি।

  • Si = 2, 8, 4
  • Sb = 2, 8, 18, 5

পরমাণুর অষ্টক এর নিয়ম হয়ত অনেকেরই জানা তারপরও একটু সংক্ষিপ্ত করে বললে “প্রত্যেক পরমাণুর নিজস্ব প্রবণতা সুস্থিতি অর্জন অর্থাৎ নিষ্ক্রিয় গ্যাসের পারমাণবিক বিন্যাস অর্জনের প্রবণতা” সহজ করে বললে শেষ কক্ষপথে আটটি ইলেকট্রন দরকার। বিভিন্ন মৌল পরস্পরের সাথে বন্ধনে আবদ্ধ হয় অষ্টক পূরণ করে সুস্থিতি অর্জনের উদ্দেশ্য।

এন-টাইপ সেমিকন্ডাক্টর
Silicon Bhor atomic model

এন-টাইপ সেমিকন্ডাক্টর
Antimony Bhor atomic model

উপরের চিএে সিলিকনের অষ্টক পূরণের জন্য প্রয়োজন চারটি ইলেকট্রন অন্যদিকে অ্যান্টিমনির প্রয়োজন তিনটি। সমযোজী বন্ধনের নিয়ম অনুসারে প্রত্যক মৌল ইলেকট্রন শেয়ারের মাধ্যমে সুস্থিতি অর্জন করতে পারে। এক্ষেএে সিলিকনের চারটি ইলেকট্রন এর সাথে অ্যান্টিমনির চারটি ইলেকট্রন এর বন্ধন গঠিত হয় বাকি থাকে অ্যান্টিমনির একটি ইলেকট্রন। বন্ধন গঠন করতে ব্যর্থ ইলেকট্রনটি মুক্ত হয়ে যায় এবং পুরো ক্রিস্টালের সীমাবদ্ধ থাকে।

এন টাইপ সেমিকন্ডাক্টর কি তাহলে ঝনাত্মক পদার্থ ?

এন-টাইপ সেমিকন্ডাক্টর
n type semiconductor crystal lattice

মনের মধ্যে হয়ত ইতিমধ্যে প্রশ্ন চলে এসেছে, যেহেতু মুক্ত ইলেকট্রন বেড়ে যায় তাহলে কি এটি ঋণাত্মক পদার্থ? কিন্তু মজার ব্যাপার হলো এটি নিরপেক্ষ পরমাণু। অ্যান্টিমনি একটি ইলেকট্রন মুক্ত হয়ে গেলেও নিউক্লিয়াসে প্রোটন কিন্তু থেকে যায় এবং আমরা জানি পরমাণুতে সমপরিমাণ ইলেকট্রন ও প্রোটন বিদ্যমান। সমপরিমাণ ইলেকট্রন ও প্রোটন থাকার ফলে এন-টাইপ সেমিকন্ডাক্টরের মোট চার্জ শূন্য অর্থাৎ নিরপেক্ষ।

বিশুদ্ধ সিলিকনের ক্রিস্টালে এভাবে পঞ্চযোজী মৌল মিশ্রিত করার এই প্রক্রিয়া ডোপিং নামে পরিচিত। এভাবেই প্রস্তুত করা হয় এন টাইপ সেমিকন্ডাক্টর যার মেজরিটি ক্যারিয়ার ইলেকট্রন এবং মাইনরিটি ক্যারিয়ার হোল। 

হোল এর ধারণা

এন-টাইপ সেমিকন্ডাক্টর
electron versus hole flow

সেমিকন্ডাক্টরে চার্জ ক্যারিয়ার দুই প্রকার একটি হোল অন্যটি ইলেকট্রন। যেহেতু ইলেকট্রন সম্পর্কে আমরা জানি তাই হোল সম্পর্কে একটু জানা প্রয়োজন। ইলেকট্রন এর চার্জ যেমন নেগেটিভ তেমনি হোলের চার্জ তার বিপরীত অর্থাৎ পজিটিভ। এখানে কনফিউশন এর ব্যাপারটি হলো হোলের কিন্তু কোন বাস্তবিক রূপ নেই যেমনটি ইলেকট্রন এর রয়েছে৷ এক কথায় বলতে গেলে পরমাণুতে ইলেকট্রন এর রেখে যাওয়া ফাঁকা স্থান হল হোল। সেমিকন্ডাক্টর পদার্থে ইলেকট্রন এর মত হোল গুলোও এক পরমাণু হতে অন্য পরমাণুদের মধ্য স্থান বদল করতে পারে এবং চার্জ বহন করতে পারে।

একটি এন্যালজি দিয়ে বোঝানো হলে হয়ত বুঝতে সুবিধা হবে। ধরুন এক লাইনে অনেকগুলো মানুষ দাড়িয়ে আছে লাইনের একপ্রান্ত থেকে একজন চলে গেলে ওখানে একটি ফাঁকা স্থান তৈরি হবে। পাশের জন ওই জায়গায় সরে আসলে যে সরে এসেছে তার জায়গা ফাঁকা হয়ে যাবে। ভেবে দেখুন কিভাবে ফাকা জায়গা পুরো লাইনে চলছে। এই ফাঁকা জায়গাটি হলো হোল যা পজিটিভ চার্জ বহন করে। 

এন-টাইপ সেমিকন্ডাক্টরে চার্জ পরিবহনঃ

এন টাইপ সেমিকন্ডাক্টর
n-type semiconductor current flow

পঞ্চযোজী মৌল দ্বারা ডোপিং এর ফলে মুক্ত ইলেকট্রন তৈরি হয় তাই কন্ডাকশন ব্যান্ডে প্রচুর পরিমাণ মুক্ত ইলেকট্রন পাওয়া যায়। এই সেমিকন্ডাক্টর ক্রিস্টালের দুইপাশে একটি বিভব পার্থক্য সৃষ্টি করা হলে, মুক্ত ইলেকট্রন গুলো ধনাত্মক প্রান্তের দিকে এগিয়ে যাবে। ইলেকট্রন এর প্রবাহ যেহেতু তড়িৎ প্রবাহ তাই ক্রিস্টালটি তড়িৎ প্রবাহিত করবে।

সংক্ষিপ্ত আকারে একটি রিভিউ দিলে, এন টাইপ পদার্থে পঞ্চযোজী মৌল দ্বারা ডোপিং করা হয়। মুক্ত ইলেকট্রন বেড়ে যায় অর্থাৎ মেজরিটি ক্যারিয়ার ইলেকট্রন এবং পরমাণুতে থেকে যাওয়া কিছু হোল এর সংখ্যা নগণ্য অর্থাৎ মাইনরিটি ক্যারিয়ার হোল।