সার্কিট টারমিনোলজি সমাধান করার জন্য মূলত দুটি পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়, একটি হচ্ছে নোডাল এনালাইসিস এবং অপরটি হচ্ছে মেশ এনালাইসিস। আজ আমরা নোডাল এনালাইসিস নিয়ে আলোচনা করব।
আজকের আলোচনায় যা যা থাকছেঃ
- প্রাথমিক জ্ঞান।
- নোডাল এনালাইসিস কি?
- নোডাল এনালাইসিসের ব্যবহার।
- নোডাল এনালাইসিস যে সব সার্কিটে প্রয়োগ করা যায়।
- সার্কিটে নোডাল এনালাইসিস প্রয়োগ করার ধাপ সমুহ।
- নোডাল এনালাইসিসের মাধ্যমে সার্কিট সমাধান।
প্রাথমিক জ্ঞানঃ
নোডাল এনালাইসিস সম্বন্ধে জানতে হলে আমাদেরকে প্রথমে নিচের বেসিক কিছু বিষয় সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে।
নোডঃ নোড হচ্ছে এমন একটি বিন্দু যেখানে সার্কিটের দুই বা ততোধিক উপাদান যুক্ত থাকে।
নোড দুই প্রকারঃ
- সিম্পল নোড।
- প্রিন্সিপল নোড।
প্রিন্সিপল নোডঃ যে নোডে তিন বা ততোধিক উপাদান যুক্ত থাকে তাকে প্রিন্সিপল নোড বলে। প্রিন্সিপল নোডকে জাংশনও বলা হয়। কোন কোন বইয়ে প্রিন্সিপল নোডকে এসেনশিয়াল নোড হিসেবেও উল্লেখ করা হয়।
নোডাল এনালাইসিসে নোডকে আরো ২ ভাগে ভাগ করা হয়েছেঃ
- রেফারেন্স নোড
- নন রেফারেন্স নোড
রেফারেন্স নোডঃ যে নোডের ভোল্টেজ শূন্য থাকে তাকে রেফারেন্স নোড বলা হয়। সাধারণত গ্রাউন্ডের সাথে যুক্ত নোডকে রেফারেন্স নোড হিসেবে ধরা হয়। রেফারেন্স নোডকে চিহ্ন দ্বারা চিহ্নিত করা হয়।
নন রেফারেন্স নোডঃ রেফারেন্স নোড ব্যতিত সার্কিটে অবস্থিত বাকী নোড সমূহকে নন রেফারেন্স নোড বলে।
ব্রাঞ্চঃ ব্রাঞ্চ হচ্ছে সার্কিটের এমন একটি পথ (Path) যেখান দিয়ে সবসময় একই পরিমাণ কারেন্ট প্রবাহিত হয়। দুটি জাংশের মধ্যে যতগুলো পথ পাওয়া যাবে ঠিক ততো সংখ্যক ব্রাঞ্চ হবে।
সার্কিট টারমিনোলজির মৌলিক বিষয় সমূহ বিস্তারিত পড়তে নিচের লিংকে ক্লিক করুন।
নোড, জাংশন, ব্রাঞ্চ, লুপ ও মেশ সম্বন্ধে বিস্তারিত আলোচনা
এবার আমরা আমাদের মূল আলোচনায় আসি-
নোডাল এনালাইসিস কি?
নোডাল এনালাইসিস হচ্ছে এমন একটি Method বা পদ্ধতি যা নোড ভোল্টেজকে সার্কিট ভেরিয়েবল হিসাবে ব্যবহার করে সার্কিট বিশ্লেষণ করা হয়। নোডাল এনালাইসিসকে নোড ভোল্টেজ ম্যাথডও বলা হয়।
নোডাল এনালাইসিসের ব্যবহারঃ
একটি সার্কিটের প্রতিটি নোডে কি পরিমাণ ভোল্টেজ আছে তা বের করার জন্য নোডাল এনালাইসিস ব্যবহার করা হয়। আবার ওহমের সূত্র ব্যবহার করে সার্কিটের ব্রাঞ্চ হতে কারেন্টের মান বের করা যায়। তবে এ ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে যে, কারেন্ট সবসময় উচ্চতর ভোল্টেজ হতে নিম্নতর ভোল্টেজের দিকে প্রবাহিত হয়।
নোডাল এনালাইসিস যে সব সার্কিটে প্রয়োগ করা যায়:
নোডাল এনালাইসিস শুধুমাত্র সেই সকল সার্কিটে এপ্লাই করা যায় যে সকল সার্কিটে প্রিন্সিপল নোড বা জাংশন রয়েছে।
সার্কিটে নোডাল এনালাইসিস প্রয়োগ করার ধাপ সমুহঃ
সার্কিটে নোডাল এনালাইসিস প্রয়োগ করার জন্য কয়েকটি steps বা ধাপ রয়েছে। যেমন-
ধাপ ১: সার্কিট হতে প্রিন্সিপল নোড বা জাংশন সংখ্যা বের করে চিহ্নিত করতে হবে।
ধাপ ২: সার্কিটের প্রিন্সিপল নোড গুলো হতে একটিকে রেফারেন্স নোড হিসেবে ধরতে হবে।
[আমরা ইচ্ছে করলে যেকোন একটি প্রিন্সিপল নোডকে রেফারেন্স নোড হিসেবে ধরতে পারি। তবে সাধারণত যে প্রিন্সিপল নোডে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক ব্রাঞ্চ যুক্ত থাকে সে প্রিন্সিপল নোডকে রেফারেন্স নোড হিসেবে ধরলে সমাধান করলে সুবিধা হয়। রেফারেন্স নোডকে চিহ্ন ধারা চিহ্নিত করা হয়।]
ধাপ ৩: প্রিন্সিপল নোড গুলোতে সুবিধাজনক ভোল্টেজ ধরে নিতে হবে। তবে ভোল্টেজের মান জানা থাকলে প্রয়োজন নেই।
ধাপ ৪: ব্রাঞ্চে কারেন্টের মান ধরে নিতে হবে। এক্ষেত্রেও যদি কোন কারেন্টের মান জানা থাকে তাহলে প্রয়োজন নেই।
ধাপ ৫: নন রেফারেন্স নোডগুলোতে KCL এপ্লাই করতে হবে এবং সমীকরণ গুলো পর্যায়ক্রমে সমাধান করতে হবে।
নোডাল এনালাইসিসের মাধ্যমে সার্কিট সমাধানঃ
এবার আমরা উপরের ধাপ গুলো অনুসরণ করে নিচের সার্কিট হতে ভোল্টেজ নির্ণয় করব।
আমরা প্রথমে এর প্রিন্সিপল নোড গুলো চিহ্নিত করব। আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, এই সার্কিটে মোট ৩ টি প্রিন্সিপল নোড রয়েছে। যা আমরা নিচের চিত্রে লাল বিন্দু দিয়ে চিহ্নিত করেছি-
এবার আমরা গ্রাউন্ডের সাথে যুক্ত নোডকে রেফারেন্স নোড হিসেবে ধরে দ্বারা চিহ্নিত করলাম
এবার প্রিন্সিপল নোড গুলোতে সুবিধাজনক ভোল্টেজ V1, V2 ধরে নিলাম।
যেহেতু কারেন্ট সোর্স সমুহের মান দেওয়া আছে সেহেতু এবার আমরা ডিরেকশন অনুযায়ী কারেন্টের মানকে i1, i2, i3, i4 এবং i5 দ্বারা চিহ্নিত করলাম।
এবার প্রথম (হলুদ) নোডে KCL এপ্লাই করলে পাই,
i1 – i2 – i3 = 0
i1 = i2 + i3 —————– (১)
এবার দ্বিতীয় (সবুজ) নোডে KCL এপ্লাই করলে পাই,
i2 + i4 – i3 – i5 = 0
i2 + i4 = i3 + i5 —————– (২)
এবার সমাধান করার পালা।
আমরা প্রথম ও দ্বিতীয় সমীকরণ দুটিকে যথাক্রমে সমীকরণ (১) ও সমীকরণ (২) হিসেবে চিহ্নিত করলাম।
সমীকরণ (১) এ ওহমের সূত্র প্রয়োগ করলে পাই,
i1 = i2 + i3
5 = (V1 – V2) / 4 + (V1 – 0)/2
Or, 5 = (3V1 – V2) / 4
Or, 3V1 – V2 = 20 —————– (৩)
এখন, দ্বিতীয় নোড এ ওহমের সূত্র প্রয়োগ করলে পাই,
i2 + i4 = i3 + i5
Or, (V1 – V2) / 4 + 10 = 5 + (V2 – 0) /6
Or, 2(30 + V2) = 3(V1 – V2 + 40)
Or, 60 + 2V2 = 3V1 – 3V2 + 120
Or, 2V2 – 3V1 + 3V2 = 120 – 60
Or, -3V1 + 5V2 = 60 —————– (৪)
সমীকরণ (৩) ও (৪) কে যোগ করলে পাই,
4V2 = 80
Or, V2 = 80/4
Or, V2 = 20 ভোল্ট।
এবার, V2 এর মান সমীকরণ (১) এ বসালে পাই,
3V1 – 20 = 20
Or, V1 = 20+20
Or, 3V1 = 40
Or, V1 = 40/3
Or, V1 = 13.33 ভোল্ট।
অতএব, সার্কিটের নোড ভোল্টেজ সমূহ হচ্ছেঃ
V1 = 13.33 ভোল্ট।
V2 = 20 ভোল্ট।
নোডাল এনালাইসিস আরো ভালোভাবে বুঝতে নিচের ভিডিওটি দেখুনঃ
References:
Objective of Electrical Technology By V.K Mehta