রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র – বাংলাদেশের বড় প্ল্যান্টগুলোর কথা ভাবতে গেলে প্রথমে যে প্ল্যান্ট গুলো চলে আসবেঃ রুপপুর নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট, পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র, মাতারবাড়ি তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র, রামপাল তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র ইত্যাদি।
রূপপুরের কথা সবার আগে বলার একটাই উদ্দেশ্য যে এটি দেশের সর্বপ্রথম নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট যার মাধ্যমেই পারমাণবিক ক্লাবের মত অভিজাত ক্লাবের ৩২ তম সদস্য হিসেবে নতুনরূপে অলংকৃত হবে।
পরমাণু ভাঙ্গনের ফলে উৎপন্ন শক্তি দিয়ে পানিকে বাষ্পে পরিণত করে সেই বাষ্প থেকে তাপ উৎপন্ন করে বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রক্রিয়াই পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মূল লক্ষ্য। অনেক জল্পনা কল্পনার পরে আমরা পেতে যাচ্ছি আমাদের নিজেদের পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র।
ভিডিওঃ
রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রবাংলাদেশের বড় প্ল্যান্টগুলোর কথা ভাবতে গেলে প্রথমে যে প্ল্যান্ট গুলো চলে আসবেঃ রুপপুর নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট, পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র, মাতারবাড়ি তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র, রামপাল তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র ইত্যাদি।রূপপুরের কথা সবার আগে বলার একটাই উদ্দেশ্য যে এটি দেশের সর্বপ্রথম নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট যার মাধ্যমেই পারমাণবিক ক্লাবের মত অভিজাত ক্লাবের ৩২ তম সদস্য হিসেবে নতুনরূপে অলংকৃত হবে।পরমাণু ভাঙ্গনের ফলে উৎপন্ন শক্তি দিয়ে পানিকে বাষ্পে পরিণত করে সেই বাষ্প থেকে তাপ উৎপন্ন করে বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রক্রিয়াই পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মূল লক্ষ্য। অনেক জল্পনা কল্পনার পরে আমরা পেতে যাচ্ছি আমাদের নিজেদের পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র।বিস্তারিত পড়ুনঃ https://blog.voltagelab.com/rooppur-nuclear-power-plant/Video Courtesy: Youtube Channel- Greenbee Communications
Posted by Voltage Lab on Saturday, January 18, 2020
কিভাবে ইউরেনিয়াম দিয়ে রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে দেখুন ভিডিওটিতে:
ইতিহাসঃ
ঘটনার উৎপত্তি ১৯৬১ সাল থেকে—
১৯৬১: পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের প্রথম উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়।
১৯৬২-১৯৬৮: পাবনা জেলার ঈশ্বরদী থানার পদ্মা নদী তীরবর্তী রূপপুর-কে দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের স্থান হিসেবে নির্বাচন করা হয়। একাধিক সমীক্ষার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের যথার্থতা যাচাই করা হয়। পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য ২৬০ একর এবং আবাসিক এলাকার জন্য ৩২ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়।
১৯৬৯-১৯৭০: ২০০ মেগা-ওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের এ প্রকল্প বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত তৎকালীন পাকিস্তান সরকার বাতিল করে দেয়।
১৯৭২-১৯৭৫: স্বাধীন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ২০০ মেগা-ওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেন।
২০০৮: আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করা হয়।
২০১১: ২ নভেম্বর, ২০১১ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ এবং রাশান ফেডারেশন সরকারের মধ্যে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন সংক্রান্ত রাষ্ট্রীয় সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
২০১৭: ৩০ নভেম্বর ২০১৭ রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ১ নং ইউনিটের প্রথম কংক্রিট ঢালাই মাননীয় প্রধান মন্ত্রী উদ্বোধন করেন।
রাজধানী ঢাকা থেকে প্রায় ২০০ কি.মি. উত্তর পশ্চিমে পাবনা জেলার ঈশ্বরদী উপজেলার পাকশী ইউনিয়নের রুপ্পুর গ্রামে এর অবস্থান, পাশে পদ্মা নদী এবং লালন শাহ সেতু।
আলোচ্য বিষয়সমূহঃ
- কিভাবে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়।
- বাকি ফুয়েল থেকে কিভাবে আলাদা এটি।
- রুপপুর নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট এর ক্ষমতা।
- রুপপুর নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট এর অর্থায়ন।
- ফুকুশিমা , চেরনোবিল এর মত বিপর্যয় এড়াতে গৃহীত পদক্ষেপ / সেফটি প্রসিডিউর।
- স্পেন্ট ফুয়েল এর বিষয়ে সিদ্ধান্ত।
- বাংলাদেশের অর্থনীতির উন্নতি কতটা হবে।
কিভাবে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়?
পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র একটি তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র যার তাপ উৎস একটি পারমাণবিক চুল্লী। অন্যসব প্রচলিত তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মত এর তাপ দিয়েও বাষ্প উৎপন্ন করা হয় এবং উৎপাদিত বাষ্প একটি বৈদ্যুতিক উৎপাদক বা জেনারেটরে সংযুক্ত স্টীম টারবাইন ঘুরিয়ে বিদ্যুৎ তৈরি করে।
পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ইউরেনিয়াম কিংবা প্লুটোনিয়াম মৌল ব্যবহার করা হয়। এ মৌলগুলোর আকার বড় হয়ে থাকে। বাইরে থেকে একটি নিউট্রন দিয়ে যদি এদের নিউক্লিয়াসে আঘাত করে তাহলে নিউক্লিয়াসটি দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যাবে। বিভক্ত হয়ে দুটি মৌল তৈরি করবে। মৌলের পাশাপাশি অতিরিক্ত কিছু নিউট্রন ও তৈরি করবে।
নতুন দুটি মৌল এবং নতুন তৈরি হওয়া নিউট্রনের ভর একত্রে যোগ করলে মূল ইউরেনিয়াম কিংবা প্লুটোনিয়ামের ভরের সমান হবার কথা। কিন্তু অবাক করা বিষয় হলো এখানে মূল ভর থেকে পরিবর্তিত ভর সামান্য কম থাকে। এই কম ভরটা হারিয়ে গেছে। হারিয়ে যাওয়া ভর আইনস্টাইনের সূত্রানুসারে শক্তিতে পরিণত হয়ে গেছে। এই শক্তিকে ব্যবহার করে টার্ইরবাইন ঘোরানো হয় এবং বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়।
একটি বড় মৌলকে ভেঙে দুটি ছোট মৌল তৈরি করার এই ঘটনাকে বলা হয় নিউক্লিয়ার ফিশন।
বাকি ফুয়েল থেকে কিভাবে আলাদা এটি?
কয়লা, তেল, গ্যাস প্রভৃতির মত জ্বালানির মত হিসাব করা হলেও এর সক্ষমতা বাকিদের চেয়ে ঢের বেশী, যেখানে ১ কেজি ইউরেনিয়াম থেকে যে পরিমাণ শক্তি পাওয়া যায় সেই পরিমাণ শক্তি পেতে হলে ১০০ টন উচ্চমানের কয়লা কিংবা ৬০ টন উচ্চমানের খনিজ তেল লাগবে।
এছাড়াও বলা যায়, সাড়ে চার গ্রামের একটি ইউরেনিয়ামের ট্যাবলেট সেই পরিমাণ এনার্জি দিতে পারে যেটা দিতে ৩৬০ কিউবিক মিটার গ্যাস অথবা ৪০০ কেজি কয়লা পোড়াতে হয়।
এই পরিসংখ্যান থেকেই বুঝা যাচ্ছে এর শক্তির মাত্রা সম্পর্কে, উপরন্ত কার্বন নির্গমনের মাত্রা ও বাকিদের থেকে অনেক কম।
বর্তমান বিশ্বে যে পরিমাণ বিদ্যুৎ পারমাণবিক কেন্দ্রে উৎপন্ন হয় তা কয়লা দিয়ে উৎপন্ন করলে প্রতি বছর বায়ুমন্ডলে 2.6 বিলিয়ন টন কার্বন-ডাই অক্সাইড যোগ হত। এক পাউন্ড ইউরোনিয়াম দিয়ে যে পরিমাণ বিদুৎ উৎপাদন করা সম্ভব তা কয়লা দিয়ে উৎপাদন করতে ৩ মিলিয়ন পাউন্ড কয়লার প্রয়োজন।
রুপ্পুর নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট এর ক্ষমতা?
২ টি ভিভিইআর ১২০০ মডেলের পারমাণবিক চুল্লি থেকে পাওয়া যাবে ২*১২০০= ২৪০০ মেগাওয়াট বা প্রায় ২.৪ গিগাওয়াট
- ইউনিট ১ চালু হবে ২০২৩ সালে।
- ইউনিট ২ চালু হবে ২০২৪ সালে।
- নেমপ্লেট ক্যাপাসিটিঃ ২১৬০ মেগাওয়াট।
এই কেন্দ্র থেকে আমরা বছরে ১৯.৩৪ বিলিয়ন কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারবো যা বছরে প্রায় ৬ কোটি মানুষকে বিদ্যুৎ সুবিধা প্রদান করবে।
কিছু তথ্যঃ
- নির্মাতাঃ রাশিয়ার রোসাটম।
- মালিকানাঃ বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন।
- রিয়াক্টর টাইপঃ প্রেসারাইজড ওয়াটার।
- রিয়াক্টর মডেলঃ VVER-1200 (সাম্প্রতিক মডেল)।
- শীতলীকরণ উৎসঃ পদ্মা নদী।
সোর্সঃ https://www.thedailystar.net/supplements/rooppur-nuclear-power-programme/all-you-need-know-about-rooppur-nuclear-power-programme
ইউনিটঃ ২
- প্রক্কলিত ব্যয়ঃ প্রায় ১২.৬৫ বিলিয়ন ডলার , বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ১,০৬২,৩৯৭,৬০০,০০০.০০ টাকা।
- ফুয়েল সাপ্লাইয়ারঃ রোসাট্ম এনার্জি
- উপাদানঃ ইউরেনিয়াম ২৩৫
- নিরাপত্তা স্তরঃ ৫ ধাপের
- আয়ুষ্কালঃ ৬০ বছর
- কন্ট্রাক্টরঃ JSC Atomstroyexport
- একবার ফুয়েল লোডেঃ ৪-৫ বছর সাপ্লাই দিবে
- এরিয়াঃ এক হাজার ৫০ একরের বেশি জায়গা ।
- Minimum utilization factor: 92%
সোর্সঃ https://www.nsenergybusiness.com/projects/rooppur-nuclear-power-project/
রুপ্পুর নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট এর অর্থায়ন?
১,১৩,০৯২.৯১ কোটি টাকা বা ১২.৬৫বিলিয়ন ডলার। ৯০ ভাগ অর্থ সহজ শর্তে ঋণ দিবে রাশিয়ার প্রতিষ্ঠান রোসাটম। বাকী ১০ ভাগ অর্থায়ন করবে বাংলাদেশ সরকার। এ কেন্দ্র হতে উৎপাদিত বিদ্যুতের দাম হবে তিন থেকে সাড়ে তিন টাকা পার ইউনিট এর মত।
সোর্সঃ https://mpemr.gov.bd/news/details/98
ফুকুশিমা , চেরনোবিল এর মত বিপর্যয় এড়াতে গৃহীত পদক্ষেপ / সেফটি প্রসিডিউর?
ছবিতে দেখানো হয়েছে রুপ্পুর এর কেন্দ্রটিতে ৫ ধাপের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে।
১. ফুয়েল পেলেট: নিউক্লিয়ার রিঅ্যাক্টরের পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রথমটি হচ্ছে ফুয়েল পেলেট যা অতি উচ্চ তাপমাত্রায় তার জ্বালানী বৈশিষ্ট্য বজায় রাখতে পারে। ফুয়েল পেলেট সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তৈরী করা হয়, ফলে তেজস্ক্রিয় ফিশন প্রোডাক্টসমূহ পেলেটের ভেতরে অবস্থান করে।
২. ফুয়েল ক্ল্যাডিং: ফুয়েল পেলেটগুলো জিরকোনিয়াম অ্যালয়ের তৈরী ফুয়েল ক্ল্যাডিং দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকে। বিশেষ কোন কারণে সামান্য পরিমাণ ফিশন প্রোডাক্ট ফুয়েল পেলেট থেকে বের হয়ে আসলেও তা এই ক্ল্যাডিং ভেদ করতে পারবে না।
৩. রিঅ্যাক্টর প্রেসার ভেসেল: নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্টের জন্য বিশেষ মান নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়ায় অত্যন্ত সতর্কতার সাথে পুরু ইস্পাতের প্রেশার ভেসেল তৈরী করা হয় যা উচ্চ তেজষ্ক্রিয় অবস্থাতেও দীর্ঘস্থায়ী হয়।
৪. প্রথম কন্টেইনমেন্ট বিল্ডিং: রিইনফোর্সড কনক্রিট দিয়ে ১.২ মিটার পুরুত্বের প্রথম কন্টেইনমেন্ট বিল্ডিং তৈরী করা হয় যা যেকোন পরিস্থিতিতে তেজস্ক্রিয়তা পরিবেশে ছড়িয়ে পড়া থেকে বিরত রাখে।
৫. দ্বিতীয় কন্টেইনমেন্ট বিল্ডিং: নিরাপত্তা ব্যবস্থা অধিকতর জোরদার করার জন্য আধুনিক নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্টগুলোতে প্রথম কন্টেইনমেন্ট বিল্ডিং-এর পর আরও ০.৫ মিটার পুরুত্বের আরও একটি কন্টেইনমেন্ট বিল্ডিং যুক্ত করা হয় যা বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বিমান দুর্ঘটনা ইত্যাদি থেকে প্লান্টকে সুরক্ষা করে।
এই পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্যের কারণে মনুষ্য সৃষ্ট ঘটনা / দূর্ঘটনা বা প্রাকৃতিক বিপর্যয় যেমন- শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়, ভুমিকম্প, বন্যা ইত্যাদিও প্রভাব মোকাবেলায় সক্ষম থাকবে এই পারমাণবিক চুল্লি।
এই পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য ছাড়াও এই প্লান্টের ডিজাইন এমনভাবে করা হয়েছে যাতে ৮ মাত্রার ভূমিকম্পেও প্লান্ট নিরাপদ থাকবে। এছাড়া ৫.৭ টন পর্যন্ত ওজনের বিমানের আঘাতেও এটি অক্ষত থাকবে।
সর্বশেষ প্রজন্মের অত্যাধুনিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্বলিত প্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে রিঅ্যাক্টর বিল্ডিং থেকে ৮০০ মিটারের (এক্সক্লুসিভ জোন) বাইরেই স্বাভাবিক জীবন যাপন করা যাবে।
জানা গেছে, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্প এলাকাটি বৃত্তাকারে ৫ কিলোমিটারের নিরাপত্তা বলয়ে নিয়ে আসা হবে।
ভূমিকম্পে যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেজন্য এমন জায়গা নির্বাচন করা হয়েছে যা বাংলাদেশের নিম্ন ভূমিকম্প প্রবণ অঞ্চলে অবস্থিত, এছাড়াও এটি প্রায় ৩০ কিলো প্যাসকেলের সম্মুখমুখী চাপ নিতে সক্ষম, ১২০ মি/সে বেগে আগত ঘূর্নিঝড়েও এর কিছু হবে না।
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হবে কি?
- না, বিগত ১০০ বছরে এ অঞ্চলের পানির উচ্চতা ১৪.৩২ মিটার এর বেশী হয়নি, তবুও নিরাপত্তার কথা ভেবে এই কেন্দ্রের উচ্চতা ১৯ মিটার করা হয়েছে।
- রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের ক্ষেত্রে পারমাণবিক নিরাপত্তার বিষয়ে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে, নির্বাচন করা হয়েছে বর্তমান প্রজন্মের সবচেয়ে নিরাপদ ও সর্বাধুনিক রিঅ্যাক্টর 9VVER-1200 (AES 2006)।
পাশেই তো পদ্মা নদী, তো কুলিং টাওয়ারের পানির চাহিদা মেটাতে গিয়ে পদ্মার কোন ক্ষতি হবে না তো?
- সে আশংকা অমূলক, কুলিং টাওয়ারের পানির চাহিদা ২.৬ কিউবিক মিটার / সেকেন্ড যা কিনা শুষ্ক মৌসুমে পদ্মার গড় পানি প্রবাহের (২৬৬ কিউবিক মিটার / সেকেন্ড) তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য বলা চলে। বলা যায় রুপ্পুর কে ঘিরে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি গুলোর সাহায্যই নেওয়া হচ্ছে।
মেল্ট ডাউন:
রিয়েক্টরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পারলে ফুয়েল রড তথা ইউরেনিয়াম রড গুলো গলে গিয়ে রিয়েক্টরের মেঝেতে তেজস্ক্রিয় জ্বালানী ছড়িয়ে পড়তে পারে। রিয়েক্টরের মেঝে ২১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রা পর্যন্ত সহ্য করতে পারে। কিন্তু অনিয়ন্ত্রিত পারমাণবিক বিক্রিয়ার (চেইন রিয়েকশন) ফলে তাপমাত্রা ৪০০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট ছাড়িয়ে যেতে পারে। ফলে রিয়েক্টরের মেঝে গলে গিয়ে তেজস্ক্রিয় পদার্থ মাটির নীচে চলে যাবে এবং ভূগর্ভস্থ পানির প্রবাহের সাথে মিশে যাবে।
যেহেতু দৈনন্দিন ব্যবহার্য পানি মাটির নীচ থেকেই সংগ্রহ করা হয়, সেক্ষেত্রে ভয়াবহ বিপর্যয় এড়ানো সম্ভব হবে না। এছাড়া রিয়েক্টরের তেজস্ক্রিয় বাষ্প বাতাসের অক্সিজেন ও হাইড্রোজেনের সংস্পর্শে এসে বিস্ফোরণ ঘটায়। কোর ক্যাচার নামে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সাহায্য নেওয়া হচ্ছে, যার ফলে কোন কারণে যদি রিয়াক্টর গলেও যায় তা এটি বাইরে আসতে পারবে না, সোজা নিচে গিয়ে জমা হয়ে সিলড হয়ে যাবে, ফলে সেখান থেকে তেজস্ক্রিয়তা ছড়ানোর কোন সুযোগ ই নেই।
স্পেন্ট ফুয়েল এর বিষয়ে সিদ্ধান্ত
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের স্পেন্ট ফুয়েল রাশিয়ায় ফিরিয়ে নিতে বাংলাদেশ ও রাশান ফেডারেশনের সাথে ২০১৭ সালের ৩০ আগস্ট এক সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
বাংলাদেশের সক্ষমতাঃ
পরিবেশ গত দিক দিয়ে সেটা এখনো অর্জন করেনি, এছাড়াও দক্ষ মানব সম্পদ তৈরিতে বাংলাদেশ এখনো অনেক পিছিয়ে, এটি চালাতে বিদেশিদের উপর পূর্নাঙ্গ ভাবে নির্ভরশীল।
নিউক্লিয়ার রেডিয়েশন মানব সভ্যতার জন্য হুমকিস্বরূপ, বিশেষকরে বাংলাদেশের মত স্বল্পোন্নত দেশের ক্ষেত্রে আরও বিপদজনক , এটি অনেকটা গরীবের হাতি পোষার সামিল।
প্রথম ৫-৬ বছর রাশিয়ান ইঞ্জিনিয়ার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে এটি, তারপর সম্পূর্ণ কার্যক্রম চালনার জন্যে বাংলাদেশের হাতে দায়িত্ব হস্তান্তর করা হবে।
অর্থনীতিতে ভূমিকাঃ
আশার কথা হল এই প্রকল্প সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হলে যেমনি সাশ্রীয় দামে বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে, ন্যাশনাল গ্রিড এর সক্ষমতা বাড়বে, তেমনি দেশব্যাপী লোডশেডিং হ্রাস পাবে, সর্বোপরি দেশের জিডিপির মান বাড়বে, আশেপাশের এলাকায় নতুন কর্মসংস্থান এর সৃষ্টি হবে, জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে, দেশে বিদেশী বিনিয়োগ আসবে প্রচুর পরিমাণে।
ফুকুশিমা ঘটার কারণঃ
কোন কারণে রিয়াক্টর বন্ধ করে দিলেও কয়েকদিন পর্যন্ত রিয়াক্টরের ভেতর উচ্চ তাপমাত্রা থাকে। কারণ পারমাণবিক বিক্রিয়া হঠাৎ করে সম্পূর্ণ থামিয়ে দেয়া যায় না। তাই রিয়েক্টর বন্ধ করে দিলেও ডিজেল জেনারেটর অথবা ব্যাক আপ জেনারেটর দিয়ে পাম্প চালিয়ে রিয়াক্টরে পানির প্রবাহ সচল রাখা হয়। ডিজেল জেনারেটর কাজ না করলে ব্যাটারি ব্যবহার করে পাম্প সচল রাখারও ব্যবস্থা আছে।
এই পানির প্রবাহ যদি কোন ভাবে বন্ধ হয়ে যায় তবে রিয়াক্টরের তাপমাত্রা কোনভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না, ফলে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটবে। উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক কালে (18 March, 2011) জাপানের ফুকুশিমা পারমাণবিক চুল্লি একই সাথে প্রচন্ড ভূমিকম্প ও সুনামির আঘাতে মারাত্নকভাবে ক্ষতিগ্রস্থের কারণে বিকল্প পাম্পগুলো নষ্ট হয়ে যাওয়ায় চুল্লিতে পানি সরবরাহ সচল রাখা সম্ভব হয়নি। যার ফলে অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে বিস্ফোরণ ঘটে।
সোর্সঃ https://www.cnet.com/news/inside-fukushima-daiichi-nuclear-power-station-nuclear-reactor-meltdown/
এছাড়াও কিছু প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে যা জনমনে বিভ্রান্তি এড়াতে সহায়তা করবে এর প্রকল্প সম্পর্কেঃ
নির্গত তেজস্ক্রিয়তার প্রভাবঃ
পরিবেশগত ভাবে নির্গত তেজস্ক্রিয়তার মানের তুলনায় অনেক কম পারমাণবিক চুল্লি থেকে নির্গত তেজস্ক্রিয়তা, শতকরা প্রায় ১ ভাগেরও কম।
একবার এক্সরে, সিটি স্ক্যান করালে যে পরিমাণ তেজস্ক্রিয়তার স্বীকার হতে হয়, সেটি অত্যন্ত ভয়ানক, তার তুলনায় সারাজীবন পারমাণবিক কেন্দ্রের পাশে বসবাস করা অনেক সেফ বলা চলে (মতামত শুধুমাত্র)
সর্বাক্ষনিক মনিটরিং এর মধ্যে রাখা হবে বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং এর আশেপাশের এলাকার তেজস্ক্রিয়তার মান, কোনরূপ প্রব্লেম দেখা দিলে খুব দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।
কিভাবে এই প্ল্যান্ট কাজ করবে?
আমরা জানি, ইউরেনিয়াম বিভাজনের ফলে প্রচুর তাপ উৎপন্ন হয়, এখানে তাপ বিকিরণকারী উপাদান হিসেবে ইউরেনিয়াম ডাই-অক্সাইড নামক ট্যাবলেট ব্যবহার করা হয়। তারপর চেইন রিয়াক্টর বিক্রিয়া চালু করা হয় রিয়াক্টর চালুকরণের মাধ্যমে (ইউরেনিয়াম-২৩৫)- ভাঙ্গার কাজ শুরু হয়, তারপর ভাঙ্গা ইউরেনিয়ামের থেকে বের হয়ে আসা ক্ষণস্থায়ী কিছু নিউট্রন আশেপাশের ইউরেনিয়াম-২৩৫ বিভাজন শুরু করে, এভাবে প্রতি ধাপে শক্তি পাওয়া যায়।
উল্লিখিত রিয়াক্টর এ হেভি প্রেশারাইজড অবস্থায় রাখা হয় ফলে ইউরেনিয়াম ভাঙার ফলে উৎপন্ন তাপে সেই পানি বাষ্পে পরিণত হয়, যা টার্বাইন ঘুরিয়ে জেনারেটর এর দ্বারা বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়।
কিভাবে এর চেইন বিক্রিয়া নিয়ন্ত্রন করা হবে?
বোরন এর তৈরি কন্ট্রোল রড ব্যবহার করা হয় যা বিক্রিয়ায় অতিরিক্ত নিউট্রন শোষণ করে নিয়ে সাম্যবস্থা বজায় রাখে। ক্যাডমিয়াম নামে একটি মৌল আছে। এরা নিউট্রন শোষণ করতে পারে। নিউক্লিয়ার রিঅ্যাকটরের মাঝে ক্যাডমিয়ামের রড রেখে দিলে তারা অতিরিক্ত নিউট্রনকে শোষে নিতে পারে।
কিভাবে প্ল্যাণ্ট শাটডাউন করা হবে?
কন্ট্রোল রড টি পুরোটাই রিয়াক্টর এ ঢুকিয়ে দিয়ে নিউট্রন এর গতি একদম মন্থর করে দিয়ে বিক্রিয়ার গতি শূন্য করে দিবে।
পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র কি পারমানবিক বোম এর মত, যা কিনা যেকোন সময় বিস্ফোরিত হবে?
সাধারণত পারমাণবিক বোমার বিষ্ফোরন হয় চেইন রিয়েকশন এর মাধ্যমে, আর এর জন্য প্রয়োজন হয় ইউরেনিয়াম-235 এর ক্রিটিকাল ভর যার কারনে পারমানবিক বোমায় ইউরেনিয়াম-235 এর পরিমান থাকে 95% এর মত. অন্যদিকে নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্টে U-235 এর পরিমান থাকে মাত্র 4-5% .তাই এটি বোমার মত বিস্ফারণ হওয়ার সম্ভাবনা নাই.
প্লান্ট চলাকালীন সময়ে রেডিও এক্টিভ ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট কিভাবে হবে?
সাধারনত ব্যবহার করা ফুয়েলকে বলা হয় স্পেন্ট ফুয়েল,এই স্পেন্ট ফুয়েল অতিমাত্রায় রেডিও এক্টিভ থাকে, এছাড়াও এর থেকে প্রতিনিয়ত decay heat বের হতে থাকে তাই ঐ সময় কোন প্রকার স্পেন্ট ফুয়েল ট্রান্সপোর্টেশন সম্ভব নয়. যার ফলে স্পেন্ট ফুয়েল কে দশ বছর স্পেন্ট ফুয়েল পুলে রাখা হবে এরপর 10 বছর পর যখন এর রেডিও এক্টিভিটির পরিমান হবে 10^7 Gbq, তখন একে বাংলাদশ থেকে প্রি-প্রসেস করে রাশিয়া ট্রান্সপোর্টেশন করা হবে, তারা এটিকে Verification করে সাইবেরিয়ার ভুমধ্যসাগরে পতিত করবে, প্লান্ট নির্মানের সাথে এটিও রাশিয়ার সাথে সম্পূর্ণ রুপে চুক্তিবদ্ধ।
চিন্তার বিষয়ঃ
নিউক্লিয়ার বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে উপজাত হিসেবে যে বর্জ্য তৈরী হয় সেগুলো তেজস্ক্রিয় এবং এর তেজস্ক্রিয়তা কমে সহনীয় পর্যায়ে আসতে কমপক্ষে ২৪,০০০ বছর লাগবে। তার মানে নিউক্লিয়ার বর্জ্যকে সরিয়ে আমাদের এমন কোথাও রাখতে হবে যা ঝুঁকিহীন থাকবে টানা চব্বিশ হাজার বছর।
প্রতিটি পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে গড়ে প্রতি বছরে ২০-৩০ টন উচ্চমাত্রার পারমানবিক বর্জ্য নির্গত হয়। এই পারমানবিক বর্জ্য পরিবেশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর এবং এর আয়ুস্কাল অত্যন্ত বেশি। পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে নির্গত অতি উচ্চমাত্রার তেজষ্ক্রিয় পদার্থের মধ্যে রয়েছে Technetium-99 (হাফ লাইফ ২২০০০০ বছর), iodine-129(হাফ লাইফ ১৫.৭ মিলিয়ন বছর), Neptunium-237(হাফ লাইফ ২ মিলিয়ন বছর), Plutonium-239(হাফ লাইফ২৪০০০ বছর)।
সবচেয়ে আশংকার কথা এটাই যে এই পারমানবিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সঠিক উপায় এখনও আবিষ্কার করা যায়নি। অতএব এই বিদ্যুৎ উৎপাদনে ঝুঁকিটা কেবল আমাদেরই থাকছে না, ঝুঁকি থেকে যাচ্ছে আমাদেও পরবর্তী প্রজন্মগুলোর জন্যও।
সাইক্লোন ও বন্যা দুটোই যথেষ্ঠ প্রস্তুতির সময় দিয়ে আসে, ভুমিকম্প আসে কোন নোটিস ছাড়া, সুনামী আসে কিছু মিনিট থেকে কয়েকঘন্টার নোটিসে। সাইক্লোনে মানুষ সরাবার জন্য সময় পাওয়া যায় প্রায় ২ দিন, দূরে কোথাও সরাতে হয়না, একই এলাকার আশ্রয় কেন্দ্রে তুলে দিতে পারলেই নিরাপদ। কিন্তু পারমাণবিক দুর্ঘটনা ঘটলে হয়তো সময় পাওয়া যাবে মাত্র কয়েকঘন্টা, লাখ লাখ লোক সরিয়ে নিতে হবে অনেক দূরের কোন এলাকায়, এবং দুর্ঘটনা ঘটে যাবার অন্তত ৫০ বছরের মধ্যে সেখানে তারা আর কোনদিন ফিরতে পারবে না।
৫০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা সকল প্রকার অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের জন্য ৫০/৬০ বছর পরিত্যাক্ত ফেলে রাখার মতো কি সামর্থ্য আমাদের রয়েছে? কয়েকঘন্টার মধ্যে ৩ লাখ লোক সরাবার মতো দক্ষতা কি গোটা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীরও আছে? বাংলাদেশে যদি এই রকম দূর্ঘটনা ঘটে কমপক্ষে ৩৫০ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হবে।
ফুকুসিমা দূর্ঘটনার পর জাপানে আজ প্রতি বাড়িতে রেডিয়েশন মাপার জন্য ডেকো মিটার রাখা হয়। তবুও আমরা আশায় বুক বেধে রাখবো যাতে কোন সমস্যা ছাড়াই আমরা সফল ভাবে রূপপুর এর প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করতে পারি।