সুপারপজিশন থিওরেম | Superposition Theorem

সুপার পজিশন থিওরেম কমপ্লেক্স এনালাইসিসের একটি পদ্ধতি। এর মাধ্যমে বিভিন্ন লিনিয়ার সার্কিট সমাধান করা যায়। এছাড়া যেকোন সার্কিট Elements এর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত কারেন্ট বা তাদের মধ্য দিয়ে আড়াআড়ি ভাবে উৎপন্ন ভোল্টেজ নির্ণয় করতেও সুপার পজিশন থিওরেম ব্যবহার করা হয়। আজ আমরা এই সুপার পজিশন থিওরেম নিয়ে আলোচনা করব।

আমাদের আজকের আলোচনায় যা যা থাকছেঃ

  • সুপারপজিশন থিওরেম বিবৃতি।
  • সুপার পজিশন থিওরেমের সীমাবদ্ধতা
  • সুপার পজিশন থিওরেম প্রয়োগ করা করার ধাপসমূহ
  • সুপার পজিশন থিওরেমের সাহায্যে সার্কিট সমাধান
  • সুপার পজিশন থিওরেমের সাহায্যে গানিতিক সমস্যার সমাধান (ভিডিও)।

সুপার পজিশন থিওরেম বিবৃতিঃ

কোন লিনিয়ার বাইলেটারাল নেটওয়ার্কে একটি বিন্দুতে প্রবাহিত কারেন্ট বা দুইটি বিন্দুতে E.M.F এর একাধিক উৎসের কারণে ঐ বিন্দু বা বিন্দুগুলোতে প্রবাহিত আলাদা আলাদা কারেন্ট সমুহের বা E.M.F এর পার্থক্য সমুহের বীজগাণিতিক যোগফল সমান হবে যদি প্রতিটি উৎসকে আলাদা আলাদা ভাবে বিবেচনা করা হয় এবং অন্য উৎস গুলোর প্রতিটি সমমানের ইন্টারনাল রেজিস্ট্যান্সে রূপান্তর করা হয়।

কি বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে ! আসলে এখানে বলা হয়েছে,

“যখন কোন লিনিয়ার বাইলেটারাল নেটওয়ার্কে বা লিনিয়ার সিস্টেমে একাধিক ভিন্ন ধরণের ইনপুট সমুহের যোগফল ইনপুট হিসেবে দেয়া হয়, তখন আউটপুট হবে ঐ ভিন্ন ভিন্ন ইনপুটের কারণে তৈরি ভিন্ন ভিন্ন আউটপুটের যোগফলের সমান।”

সুপার পজিশন থিওরেমের সীমাবদ্ধতাঃ

যে সকল সার্কিটে একাধিক সোর্স রয়েছে শুধুমাত্র সে সকল সার্কিটেই সুপার পজিশন থিওরেম প্রয়োগ করা যায় । হোক সেটা ভোল্টেজ সোর্স অথবা কারেন্ট সোর্স।

মনে রাখতে হবে যে, ভোল্টেজ সোর্সে ইন্টারনাল রেজিস্ট্যান্স থাকে। যখন সার্কিটে কোন ভোল্টেজ সোর্স যুক্ত থাকেনা তখন সেখানে এই ইন্টারনাল রেজিস্ট্যান্স যুক্ত থাকে। নিচের চিত্রের সাহয্যে ইন্টারনাল রেজিস্ট্যান্স দেখানো হলো-

সুপার পজিশন থিওরেম
চিত্র ১ঃ প্রধান সার্কিট

এখানে, E2 এর ইন্টারনাল রেজিস্ট্যান্স r2 (চিত্র ১.১)



চিত্র ১.১: E2 এর ইন্টারনাল রেজিস্ট্যান্স r2

এবং E1 এর ইন্টারনাল রেজিস্ট্যান্স r1 (চিত্র ১.২)

চিত্র ১.২: E1 এর ইন্টারনাল রেজিস্ট্যান্স r1

এবং

সুপার পজিশন থিওরেম প্রয়োগ করার ধাপসমূহঃ

কোন সার্কিট বা লিনিয়ার সিস্টেমে সুপার পজিশন থিওরেম প্রয়োগ করতে হলে আমাদেরকে কিছু Steps বা ধাপ অনুসরণ করতে হয়। নিম্নে তা ব্যাখ্যাসহ দেওয়া হলোঃ

চিত্র ২
চিত্র ২

Step 1: উপরের চিত্র থেকে ধরলে, প্রথমে যে কোন একটি সোর্সকে শর্ট করতে হবে।

চিত্র ৩
চিত্র ৩

Step 2: এবার step 1 হতে প্রাপ্ত নতুন সার্কিটের টোটাল রেজিস্ট্যান্স R’T নির্ণয় করতে হবে।

Step 3: প্রতিটি ব্রাঞ্চের কারেন্টকে  I’1, I’2, I’3 ইত্যাদি দ্বারা চিহ্নিত করে কারেন্ট বের করতে হবে। (চিত্র ৩)

Step 4: একইভাবে দ্বিতীয় সোর্স হতে R”T এবং I”1, I”2, I”3 ইত্যাদি নির্ণয় করতে হবে। (চিত্র ৪)

চিত্র ৪
চিত্র

Step 5: এবার I’ ও I” এর আলোকে মূল কারেন্ট I1, I2, I3 ইত্যাদি নির্ণয় করবো।

Step 6: মূল কারেন্ট I1, I2, I3 ইত্যাদির মান নির্ণয় করার সময়  I’1, I’2, I’3 ইত্যাদি ও  I”1, I”2, I”3 ইত্যাদির ডিরেকশন যদি একই দিকে হয় তাহলে যোগ (+) হবে এবং ডিরেকশন যদি বিপরীত দিকে হয় তাহলে বিয়োগ (-) হবে।

অর্থাৎ, ডিরেকশন একই দিকে হলে I1 = I’1 + I”1, I2 = I’2 + I”2, I3 = I’3 + I”3 ইত্যাদি এবং ডিরেকশন বিপরীত দিকে হলে I1 = I’1 – I”1, I2 = I’2 – I”2, I3 = I’3 – I”3 ইত্যাদি।

সুপার পজিশন থিওরেমের সাহায্যে সার্কিট সমাধানঃ

নিচের চিত্রটি লক্ষ্য করি,

চিত্র ৫
চিত্র

আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, এই সার্কিটের মধ্য দিয়ে I1 পরিমাণ কারেন্ট প্রবাহিত হচ্ছে।

সুপার পজিশন থিওরেম অনুসারে, এই I1 পরিমাণ কারেন্টের মান হবে দুইটি কারেন্টের যোগফলের সমান। আমরা যদি দুইটি কারেন্ট I’1 ও I”1 ধরি তাহলে I1 = I’1 + I”2 হবে।

এক্ষেত্রে প্রথমে আমাদেরকে V1 ও V2 এই দুইটি ভোল্টেজ সোর্স হতে একটি ভোল্টেজ সোর্সকে শর্ট করে দিতে হবে। এখানে আমরা V2 ভোল্টেজ সোর্সকে শর্ট করে দেবার পর নিম্নরুপ একটি সার্কিট পাবো,

চিত্র ৬
চিত্র

এই সার্কিটে শুধুমাত্র V1 ভোল্টেজ সোর্স আছে। ধরে নিলাম এই সার্কিটের মধ্য দিয়ে I’1 পরিমাণ কারেন্ট প্রবাহিত হচ্ছে। তাহলে সার্কিটটি হবে,

চিত্র ৭
চিত্র

এবার আমরা যদি I’1 এর মান বের করতে চাই তাহলে এর সমীকরণটি হবে,

I’1 = টোটাল ভোল্টেজ সোর্স (V1) / টোটাল রেজিস্ট্যান্স (R’T)

এখানে, R’T = R1 + (R1 ।। R3) + R5 + R4

অতএব, I’1 = V1 / {R1 + (R1 ।। R3) + R5 + R4}

একইভাবে আমরা যদি V1 ভোল্টেজ সোর্সকে শর্ট করে দেই তাহলে নিম্নরূপ সার্কিট পাবো-

চিত্র ৮
চিত্র

ধরে নিলাম এই সার্কিটের মধ্য দিয়ে I”1 পরিমাণ কারেন্ট প্রবাহিত হচ্ছে।

চিত্র ৯
চিত্র

তাহলে প্রথম সমীকরণের ন্যায় I”1 এর সমীকরণ হবে,

I”1 = টোটাল ভোল্টেজ সোর্স (V1) / টোটাল রেজিস্ট্যান্স (R”T)

এখানে, R”T = R1 + (R2 ।। R3) + R5 + R4

অতএব, I”1 = V2 / {R1 + (R2 ।। R3) + R5 + R4}

সুপার পজিশন থিওরেমের সাহায্যে গানিতিক সমস্যার সমাধান (ভিডিও):

উপরের ধাপ গুলো অনুসরণ করে গাণিতিক সমস্যা সমাধানের নিয়ম জানতে নিচের ভিডিওটি দেখে দিনঃ

সুপার পজিশন থিওরেমের সাহায্যে গানিতিক সমস্যার সমাধান

সুপার পজিশন থিওরেম আরো সহজভাবে বুঝতে নিচের ভিডিওটি দেখুনঃ

সুপার পজিশন থিওরেম

ইলেকট্রিক্যালের প্রয়োজনীয় সূত্রাবলি যা আপনার জেনে রাখা উচিত।