ট্রান্সফরমারের কার্যপ্রণালী জানার আগে ফ্যারাডের তড়িৎ চৌম্বকীয় আবেশ বিষয়ক সূত্র সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক।
১৮৩১ সালে বিখ্যাত ইংরেজ বিজ্ঞানী মাইকেল ফ্যারাডে তড়িৎ চুম্বকীয় আবেশ নিয়ে মৌলিক সূত্র প্রদান করেন। এই সূত্রকে ফ্যারাডের আবেশ সূত্র অথবা ফ্যারাডের তড়িৎ চুম্বকীয় আবেশের সূত্র বলা হয়। ফ্যারাডের সূত্র দুটি নিন্মরুপ:
প্রথম সূত্র – যখনই কোন তারের কুণ্ডলীতে আবদ্ধ চৌম্বক বলরেখার সংখ্যা বা চৌম্বক ফ্লাক্সের পরিবর্তন ঘটে তখনই উক্ত কুণ্ডলীতে একটি তড়িচ্চালক শক্তি আবিষ্ট হয়। একে আবিষ্ট তড়িচ্চালক শক্তি (ইনডিউসড ইএমএফ) বলে। পরিবাহী কোন বদ্ধ বর্তনীতে সংযুক্ত থাকলে এর মধ্য দিয়ে তড়িৎ প্রবাহিত হবে। একে আবিষ্ট তড়িৎ প্রবাহ (ইনডিউসড কারেন্ট) বলে।
দ্বিতীয় সূত্র – তারের কুণ্ডলীতে আবিষ্ট এই তড়িচ্চালক বলের মান কুণ্ডলীর মধ্য দিয়ে অতিক্রান্ত চৌম্বক বলরেখার সংখ্যা বা চৌম্বক ফ্লাক্সের পরিবর্তনের হারের সমানুপাতিক।
সুতরাং, কোন তারের কুন্ডলীতে ফ্লাক্স পরিবর্তনের হার dφ/dt এবং আবিষ্ট তড়িচ্চালক বলের মান E হলে ফ্যারাডের সূত্র অনুযায়ী লেখা যায়ঃ
E ∝ dφ/dt
ট্রান্সফরমারের কার্যপ্রণালী
ট্রান্সফরমার দুইটি ম্যাগনেটিক্যালি যুক্ত সার্কিটের মাঝে মিউচুয়াল ইনডাকশন অথবা ফ্যারাডের তড়িৎ চুম্বকীয় আবেশ প্রক্রিয়ায় কাজ করে।
ট্রান্সফরমার মূলত দুইটি ইনডাকটিভ কয়েলের সমন্বয়ে গঠিত যেগুলো ইলেকট্রিক্যালি কানেক্টেড না থাকলেও একটি লো রিলাকটেন্স পাথের মাধ্যমে ম্যাগনেটিক্যালি কানেক্টেড। ট্রান্সফরমারের কোর এই লো রিলাকটেন্স পাথ হিসেবে কাজ করে।
যদি প্রাইমারি কয়েলে এসি সাপ্লাই ভোল্টেজের সাথে যুক্ত করা হয় তবে ল্যামিনেটেড কোরে তড়িৎ প্রবাহ শুরু হয়। এই তড়িৎ প্রবাহের প্রভাবে কোরে অল্টারনেটিং ফ্লাক্স উৎপন্ন হয়। আমরা জানি কোরের বিপরীত বাহুতে সেকেন্ডারি ওয়াইন্ডিং পেচানো থাকে। সুতরাং এই অল্টারনেটিং ফ্লাক্স কোরে প্রবাহিত হওয়ার সময়ে সেকেন্ডারি কয়েলের মধ্য দিয়েও প্রবাহিত হয় এবং ফ্যারাডের সূত্র অনুযায়ী সেকেন্ডারি ওয়াইন্ডিং এ তড়িচ্চালক বল আবিষ্ট হয়।
এই তড়িচ্চালক বলকে E দ্বারা প্রকাশ করা হয়। তবে এক্ষেত্রে আবিষ্ট ভোল্টেজের ফ্রিকোয়েন্সি প্রাইমারি ওয়াইন্ডিং এর ভোল্টেজের ফ্রিকোয়েন্সির সমান থাকে। সেকেন্ডারি কয়েল ক্লোজ সার্কিটে সংযুক্ত থাকায় এর মধ্য দিয়ে কারেন্ট প্রবাহিত হয়। এভাবেই তড়িৎ শক্তি প্রাইমারি কয়েল থেকে সেকেন্ডারি কয়েলে ম্যাগনেটিক্যালি ট্রান্সফার হয়ে থাকে।
তড়িচ্চালক বলের দিকঃ
তড়িচ্চালক বল একটি ভেক্টর রাশি যার দিক বিজ্ঞানী হেনরিক লেনজের প্রদত্ত সূত্র অনুযায়ী পাওয়া যায়। লেনজের সূত্রটি হলোঃ
“তড়িৎ চুম্বকীয় আবেশের সময় আবিষ্ট তড়িৎ প্রবাহের জন্য সৃষ্ট চৌম্বক ক্ষেত্রের দিক এমন হয়, যে চৌম্বক ফ্লাক্সের পরিবর্তনের আবিষ্ট তড়িৎ প্রবাহ উৎপন্ন হয় সেই চৌম্বক ফ্লাক্সের পরিবর্তনকেই বাধা প্রদান করে।“
অথবা অন্যভাবে বললে, “আবিষ্ট তড়িচ্চালক শক্তি বা তড়িৎ প্রবাহের দিক এমন হয় যেন এটি উৎপন্ন হওয়ার মূল কারণের বিরুদ্ধে ক্রিয়া করে।“
সুতরাং সেকেন্ডারি ওয়াইন্ডিং এ উৎপন্ন তড়িচ্চালক বলের দিক হবে সাপ্লাই ভোল্টেজের বিপরীত দিকে। ফ্যারাডের সূত্রানূযায়ী এই তড়িচ্চালক বল ফ্লাক্স পরিবর্তনের হারের উপর নির্ভর করে। সুতরাং প্রাইমারি ওয়াইন্ডিং এর তড়িচ্চালক বল প্রাইমারি ওয়াইন্ডিং এর তড়িচ্চালক বলের সমানুপাতিক (E1 ∞ N1) এবং সেকেন্ডারি ওয়াইন্ডিং এর তড়িচ্চালক বলের সমানুপাতিক (E2 ∞ N2)।
সুতরাং ট্রান্সফরমারে আবিষ্ট তড়িচ্চালক বলকে গাণিতিক ভাবে নিন্মরুপে প্রকাশ করা যায়ঃ
E= -N (dφ / dt )