ম্যাগনেটিক কন্টাক্টর নাম কম-বেশি আমরা অনেকেই শুনেছি। আজ আমরা ম্যাগ্নেটিক কন্টাক্টর নিয়ে বিস্তারিত জানবো। ম্যাগ্নেটিক কন্টাক্টর অনেক মজার একটি বিষয়।
আমাদের অনেকের মাঝে এই বিষয়টি একটু জটিল। এই লেখাতে চেষ্টা করবো সহজ ভাষায় আলোচনা করতে। একজন ইলেকট্রিক্যাল বিভাগের ছাত্র হিসেবে ম্যাগনেটিক কন্টাক্টর নিয়ে সুস্পষ্ট ধারনা থাকা উচতি। তাহলে চলুন দেরি না করে দেখি ম্যাগ্নেটিক কন্টাক্টরের কি কি প্রশ্ন আলোচনা করা হবে।
- ম্যাগ্নেটিক কন্টাক্টর কি বা কাকে বলা হয়?
- ম্যাগ্নেটিক কন্টাক্টরের গঠন?
- নরমালি ক্লোজ ও নরমালি ওপেন কন্টাক্টর নিয়ে আলোচনা।
- ম্যাগ্নেটিক কন্টাক্টরের কার্যপ্রনালী।
- কেন ম্যাগ্নেটিক কন্টাক্টর ব্যবহার করা হয়ে থাকে?
ম্যাগ্নেটিক কন্টাক্টর কি বা কাকে বলা হয়?
ম্যাগ্নেটিক কন্টাক্টর হলো ইলেক্ট্রোম্যাগ্নেটিক চালিত সুইচ। এটি সচারচর অনেক বড় বড় অটোমেশন ইন্ডাস্ট্রিতে মোটর কন্ট্রোল করার জন্য ব্যবহার করা হয়। এটার ফাংশন আর রিলের ফাংশন অনেকটা একই রকমের। তাহলে প্রশ্ন হতে পারে বন্ধুদের, যে কোন একটা হলেই তো হয়তো।
কিন্তু না, রিলে সাধারণত লো পাওয়ার ভোল্টেজে ব্যবহিত হয় আর ম্যাগ্নেটিক কন্টাক্টর হাই পাওয়ারের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। আমরা ইলেকট্রনিক্সের ছোট ছোট প্রজেক্ট তৈরি করার সময় অনেকে ক্ষেত্রে দেখে থাকি যে, রিলে ব্যবহার করছি। অনেক বড় বড় ইন্ডাস্ট্রিতে মোটরের কন্ট্রোল অটোমেশনে এটি ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
তাহলে আমরা এভাবে বলতেই পারি যে, ম্যাগ্নেটিক কন্টাক্টর এক দরনের কন্টাক্টর যেটি পাওয়ার ইলেকট্রিক মোটরকে বা লোড কে চালু এবং বন্ধ করার জন্য ব্যবহার করা হয়।
ম্যাগ্নেটিক কন্টাক্টরের গঠন ?
এর গঠন প্রনালি অনেক সহজ। ম্যাগ্নেটিক কন্টাক্টর নিম্মলিখিত বিষয় নিয়ে গঠিত।
- মেইন কন্টাক্টঃ এটি মূলত পাওয়ার কে সুইচিং এর মাধ্যমে লোড অফ অন এর কাজ করে থাকে। এর ৩ টি ইনপুট এবং ৩ টি আউটপুট টার্মিনাল থাকে। ইনপুট টার্মিনাল গুলোকে L1, L2 এবং L3 ও আউটপুট টার্মিনাল গুলোকে T1, T2, এবং T3 দ্বারা প্রকাশ করা হয়ে থাকে।
- অক্সিলারি কন্টাক্টঃ এই কন্টাক্ট টি সাধারণত কন্ট্রোল সার্কিটের জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এটি লোড কে অটোমেশন মুড বা প্রটেকশন এর সার্কিট তৈরি করা হয়। এতে দুই ধরনের টার্মিনাল থাকে। ১) নরমালি ওপেন (NO) ২) নরমালি ক্লোজ (NC)
- পাওয়ার সাপ্লাই কয়েলঃ এই কয়েল ইলেক্ট্রোম্যাগ্নেটিক সৃষ্টি করে থাকে। এতে পাওয়ার সাপ্লাই দিলে এটি এনার্জাইজড হয়ে চুম্বকে পরিণত হয় ও মেইন কন্টাক্ট গুলোকে নরমালি ওপেন থেকে নরমালি ক্লোজ কন্ডিশনে আনে। কয়েলের টার্মিনাল দুটোকে A1 এবং A2 দ্বারা চিহ্নিত করা হয়ে থাকে। এটা সলেনয়েড কে এনার্জিড করে থাকে। এটি বিভিন্ন পাওয়ার সাপ্লাই রেঞ্জের হয়ে থাকে (২৪VDC, ২৪VAC, 110VAC, 240VAC, 415VAC)
- অক্সিলারি ব্লকঃ অক্সিলারি কে সংযুক্ত করতে অক্সিলারি ব্লোক থাকে। এই অক্সিলারি ব্যবহার করার মাধ্যমে অতিরিক্ত নরমালি ওপেন ও নরমালি ক্লোজ টার্মিনাল তৈরি করে নেওয়া যায়।
নরমালি ক্লোজ ও নরমালি ওপেন কন্টাক্টর নিয়ে আলোচনা
এই কন্টাক্টগুলো হলো অক্সিলারি কন্টাক্ট। নরমালি ক্লোজ ও নরমালি ওপেন কন্টাক্ট ব্যবহার করে লোডকে অটোমেশন মুডে বা প্রটেকশন সার্কিট তৈরি করা হয়।
নরমালি ক্লোজঃ নরমাল ক্লোজ অবস্থায় যখন এর কয়েল এনার্জাইজড থাকেনা, এটার অক্সিলারি কন্টাক্ট বন্ধ অবস্থায় থাকে।
নরমালি ওপেনঃ এটার অক্সিলারি কন্টাক্ট খোলা অবস্থায় থাকে।
ম্যাগ্নেটিক কন্টাক্টরের কার্যপ্রনালী
যখন কন্টাক্টরের মধ্য দিয়ে কারেন্ট অতিক্রম করে তখন ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক তৈরি হয় এবং ম্যাগনেটিক ফিল্ড উৎপন্ন করে থাকে। এই ম্যাগনেটিক ফিল্ড মুভিং কোর কে আকর্ষণ করে থাকে।
কন্টাক্টরের কোরটি ঘুরতে শুরু করে যা মুভিং কন্টাক্ট কে এনার্জিড করতে সহায়তা করে। মুভিং এবং ফিক্সড কন্টাক্ট শর্ট সার্কিট তৈরি করে থাকে। এর মাধ্যমে কারেন্ট পরবর্তি সার্কিটে অতিক্রম করে থাকে।
শুরুর দিকে আর্মেচার কয়েল অনেক বেশি কারেন্ট বহন করে থাকে। কয়েলের মধ্যে দিয়ে এই কারেন্ট অতিক্রম করার সময় খুব দ্রুত কমে যায়। যখন কারেন্ট থেমে যায়, কয়েল ডি-এনার্জাইজড হয় এবং কন্টাক্ট ওপেন হয়ে যায়।
কেন ম্যাগ্নেটিক কন্টাক্টর ব্যবহার করা হয়ে থাকে?
- ম্যাগনেটিক কন্টাক্টর দিয়ে ছোট পুশ সুইচের সাহায্যে অনেক বড় মোটর বা লোড কে নিয়ন্ত্রন করা যায় সহজে ও নিরাপদে।
- অক্সিলারি কন্টাক্ট (নরমালি ওপেন ও নরমালি ক্লোজড) মাধ্যমে বিভিন্ন সিগন্যাল বা স্ট্যাটাস জানা যায়।
- এটির সাথে ওভারলোড রিলে থাকে। কোন কারনে ওভার কারেন্ট হলে স্বয়ংক্রিয় ভাবে এটি লোড কারেন্ট সরবরাহে বাধা প্রদান করে থাকে।
- তিন ফেজ মোটরের জন্য তিন ফেজ সাপ্লাই দিতে হয়। ম্যাগনেটিক কন্টাক্টর ব্যবহার করে সহজে মোটরে তিন ফেজ সাপ্লাই দেওয়া যায়।
- স্টার-ডেল্টা এর ক্ষেত্রে তিনটি ম্যাগনেটিক কন্টাক্টর ব্যবহার করে সহজেই কন্ট্রোল করা যায়।
- চালু অবস্থায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেলে লোড কারেন্ট সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাবে। এ অবস্থায় কারেন্ট পুনরায় সরবরাহে আসলেও স্টার্ট বাটনে প্রেস না করলে লোডে কারেন্ট সরবরাহ হবে না। এতে করে সার্জ ভোল্টেজ থেকে ডিভাইস রক্ষা পায়।
ওয়ারিং ডায়াগ্রাম থ্রী ফেজ স্টার ডেল্টা স্টার্টার, স্টার্টার মোটর ওয়ারিং ডায়াগ্রামঃ
আমাদের লেখার ভুল-ত্রুটি বা জানারও ভুল থাকতে পারে। কোন কিছু ভুল হলে ক্ষমার দৃষ্টেতে দেখার অনুরোধ রইলো। আজ এই পর্যন্ত বন্ধুরা। অন্য বিষয় নিয়ে আমরা খুব শিগ্রয় আপনাদের সামনে হাজির হবো।
ম্যাগ্নেটিক কন্টাক্টর সম্বন্ধে আরো বিস্তারিত জানতে ইংরেজি লেখাটি পড়ুনঃ Magnetic Contactor function