বৈদ্যুতিক মোটর ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারদের আলোচ্য একটি বিষয়। এই লেখাটির আলোচনার বিষয়বস্তু নিচে দেয়া হলোঃ
এসি মোটর বা ইন্ডাকশন মোটর প্রশ্ন উত্তর পর্ব-১( জবের লিখিত ও ভাইবা প্রস্তুতি) পড়ুন
এসি মোটর বা ইন্ডাকশন মোটর প্রশ্ন উত্তর পর্ব-২( জবের লিখিত ও ভাইবা প্রস্তুতি) পড়ুন
- মোটর কি?
- মোটরের প্রকারভেদ
- মোটরের গঠন
- মোটরের টর্ক
- মোটরের বিপরীত ভোল্টেজ বা Back EMF
- মোটরের ওয়াইন্ডিং
- শান্ট ওয়াইন্ডিং
- সিরিজ ওয়াইন্ডিং
- মোটরের আর পি এম
- মোটরের ইফিসিয়েন্সি এবং লস সমূহ
- মোটরের স্টার্টার
- পরিশেষে কিছু কথা
Motor কি বা কাকে বলেঃ
আমরা সাধারণত Motor বলতে অনেকে বুঝি যা দিয়ে বাসা বাড়িতে পানি তুলা হয় তাকেই আবার অনেক ক্ষেত্রে আমরা পাম্প বলে থাকি। আসলে মোটর হলো একটি কৌশল যার মাধ্যমে বৈদ্যুতিক শক্তিকে (Electrical Energy) কে যান্ত্রিক শক্তিতে (Mechanical Energy) তে রূপান্তরিত করে।
অর্থাৎ মোটরের সাহায্যে ইনপুট হিসেবে বৈদ্যুতিক শক্তি দিচ্ছি আর আউটপুট হিসেবে পাচ্ছি মেকানিক্যাল এনার্জি। Motor আর জেনারেটর গঠন প্রায় একই রকম কিন্তু কাজের দিক দিয়ে একটি আরেকটির বিপরীত।
মোটরের প্রকারভেদঃ
মোটরকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা হয়।
- এসি মোটর।
- ডিসি মোটর।
এসি মোটরঃ
এসি মোটর দ্বারা পানির পাম্প, পাখা, ইত্যাদি চলে। এসি মোটর এমন একটি ইলেক্ট্রিক মোটর যা অল্টারনেটিং কারেন্ট দ্বারা পরিচালিত হয়।
ডিসি Motor:
ডিসি মোটর অনেক ধরনের হয়ে থাকে। বাজারে অনেক প্রকার ডিসি মোটর পাওয়া যায়। এদের কারো মাঝে টর্ক অনেক কম বা বেশি পাওয়া যায় আবার কারো RPM অনেক বেশি বা কম হয়ে থাকে।
বাজারে যেসব ডিসি মোটর বেশি পাওয়া যায়ঃ
- গিয়ারলেস মোটর
- গিয়ারড মোটর
- স্টেপার মোটর
- সার্ভো মোটর
মোটরের গঠনঃ
ডিসি Motor এবং ডিসি জেনারেটরের গঠনগত দিক দিয়ে পার্থক্য নেই বললেই চলে। কিন্তু কাজের দিক দিয়ে তারা ভিন্ন।
ডিসি মোটরের প্রধান মূলত দুটি অংশ
- স্ট্যাটর
- রোটর
স্ট্যাটরঃ
এটি সাধারণত স্থির অবস্থায় থাকে মোটরে এবং বিদ্যুৎ সাপ্লাই গ্রহন করে থাকে।
রোটরঃ
এটি একটি ঘূর্ণন অংশ যা মেকানিক্যাল ঘূর্ণন তৈরি করে থাকে।
এছাড়া আরো অনেক পার্টসের সমন্বয়ে মোটর গঠিত
- ইয়ক বা ফ্রেম
- ডিসি মোটরের পোল
- ফিল্ড ওয়াইন্ডিং
- আর্মেচার ওয়াইন্ডিং
- কম্মুটেটর
- ব্রাশ
সবগুলো অংশবিশেষ এক্ত্র হয়ে ডিসি মোটর গঠিত হয়ে থাকে।
মোটরের টর্কঃ
মোটরের টর্কের কথা আমরা অনেকেই কম-বেশি জানি। বিপরীত দিক থেকে উৎপাদিত শক্তির পরিমান কে তাদের অভ্যন্তরীণ কোণ দিয়ে গুন করলে যে মান পাওয়া যাবে তাকে টর্ক বলে । অর্থাৎ শক্তি * কোনিক দূরত্ব
বইয়ের ভাষায়,
যখন পরিবাহীর ভিতর দিয়ে প্রবাহিত কারেন্ট ফোর্স উৎপন্ন করবে এবং পরিবাহী ক্লক উয়াইজ ঘুরতে চেষ্টা করবে তখন এই ঘর্ষণ প্রবণতাকে টর্ক বলে। টর্কের মান বল এবং ঘুর্ণনের কেন্দ্র হতে লম্ব দূরত্ব এর গুণফলের সমান।
T = F * r
T=Torque,
F = Force
r = ঘুর্ণন কেন্দ্র হতে লম্ব দূরত্ব।
টর্কের কারনে মূলত বিপরীত ভোল্টেজ সৃষ্টি হয়ে থাকে।
মোটরের বিপরীত ভোল্টেজ বা Back EMF
যে ভোল্টেজে উৎপাদিত কারেন্টের বিপরীত শক্তি প্রধান করে এবং শক্তির ক্ষয় করে তাকে বিপরীত ভোল্টেজ বলে।
মোটরের ব্যাক ই এম এফ একেবারে দূর করা সম্ভব নয় তবে যতটা সম্ভব কমিয়ে রাখার ব্যবস্থা আছে। ব্যাক ই এম এফ কমানোর জন্য নিচের সার্কিট ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
এখানে ইন্ডাক্টিভ লোড ব্যবহিত হয়েছে যার ফলে রিলের কয়েল থেকে সৃষ্ট ব্যাক ই এম এফ ট্রানজিস্টরে প্রবেশ করতে পারে না। ডায়োডটি সার্কিট কে রক্ষা করার জন্য ব্যবহিত হয়েছে।
ক্ষেত্র বিশেষ কারনে বিপরীত ভোল্টেজ অনেক বেশি হতে পারে যা ডায়োডটি রক্ষা করে। ডায়োডটি ইন্ডাক্টিভ লোডের সাথে রিভার্স বায়াসে আছে।
যে ভোল্টেজে উৎপাদিত কারেন্টের বিপরীত শক্তি প্রধান করে এবং শক্তির ক্ষয় করে তাকে বিপরীত ভোল্টেজ / Back emf বলে।
কোন জায়গায় Magnetic field produce হওয়া মানেই ব্যাক ই এম এফ তৈরি হওয়া। সেটা মোটর হতে হবে এমন কোন কথা নাই। একটা simple inductor এ এটা থাকে। মোটর এ mainly দুটো পার্ট থাকে Startor & rotor. এই stator & rotor এর magnetic interaction এ Back emf produce করে।
*এখন প্রশ্ন এটা কি উপকারী নাকি ক্ষতি করে????
এটা আসলে কাজেই লাগে। কি কাজে?
এটা মূলত মোটর এর surge / rush current minimise করে। কিভাবে?
এটাকে যদি খাটি বাংলা ভাষায় বলি তাহলে হবে ইনপুট এর বিপরীতমুখী ভোল্টেজ। তাই ইনপুট ভোল্টেজ এর বিপরীত অভিমুখিতা এর কারণে অতিরিক্ত প্রবাহ অবদমন করে।
যেমন, খুব স্পিডে চলা একটি গাড়ি তার সামনে কোন গাড়ি দেখলে ব্রেকারে চাপ দিয়ে স্পিড কমিয়ে ফেলে।
এখন প্রশ্ন তাহলে শুরুতে কারেন্ট বেশি নেয় কেন?
কারণ, শুরুতে winding / turns relax condition এ থাকে। তখন ব্যাক ই এম এফ 0 থাকে। তাই প্রচুর কারেন্ট টানে সে।
তাছাড়া কপার লস কমাতেও এই back emf কাজে লাগে।
মোটরের ওয়াইন্ডিংঃ
মোটরের ওয়াইন্ডিং বলতে তারের প্যাচ কে বুঝানো হয় বা কয়েল কে বুঝানো হয়। মোটরের ওয়াইন্ডিং প্রতিটি মোটর এবং জেনারেটরে থাকবেই।
মোটরের শান্ট এবং সিরিজ ওয়াইন্ডিংঃ
যে কয়েলের তারগুলো চিকন সেই ধরনের কয়েলগুলোকে শান্ট-ওয়াইন্ডিং বলে। এই ধরনের কয়েল অনেক প্যাঁচ বিশিষ্ট হয়ে থাকে এবং এর রেজিস্ট্যান্স অনেক বেশি থাকে।
সিরিজ ওয়াইন্ডিং পুরোপুরি এর বিপরীত। এখানে প্যাঁচ কম থাকে এবং কারেন্ট অনেক সহজে প্রবাহিত হতে পারে।
মোটরের আর পি এমঃ
আর পি এম হলো রিভোলশন পার মিনিট অর্থাৎ কোন মোটরে এক মিনিটে কত বার ঘূর্ণন সম্পন্ন করতে পারে তাকে আর পি এম বলে। মোটরের, গাড়ির স্পেসিফিকেশনে এগুলো উল্লেখ করা থাকে। সুতারাং যার আর পি এম যত বেশি তার ঘূর্ণন ক্ষমতা তত বেশি।
মোটরের ইফিসিয়েন্সি এবং লস সমূহঃ
মোটরের ইফিসিয়েন্সি বলতে এর কতটুকো কার্যক্ষমতা আছে। মোটরের আউটপুট পাওয়ার এবং ইনপুট পাওয়ারের অনুপাতকে মোটরের ইফিসিয়েন্সি বলে।
মোটরের ইফিসিয়েন্সি ১০০ ভাগ পাওয়া কখনো সম্ভব না। এর কারন হিসেবে কিছু লস হয়ে থাকে তা হলো মোটরের কপার লস, মোটরের লোহার ক্ষতি, মোটরের মেকানিক্যাল ক্ষতি, ঘর্ষণ এর শক্তি, ব্যাক ই এম এফ ইত্যাদি।
মোটরের স্টার্টারঃ
ডিসি মোটরের ভিতরে স্টার্টার নামের একটা অংশ আছে যার কাজ হলো একটি নির্দিষ্ট ভোল্টেজে নিয়ে মোটরকে চালু করে। এর মধ্যে এক ধরনের অটো ভেরিয়েবল রেজিস্ট্যান্স থাকে যার কাজ নির্দিষ্ট ভোল্টেজে না পৌছা পর্যন্ত স্টার্টারটি মোটরকে চালু হতে দিবে না।
এসি মোটর বা ইন্ডাকশন মোটর প্রশ্ন উত্তর পর্ব-১( জবের লিখিত ও ভাইবা প্রস্তুতি) পড়ুন
এসি মোটর বা ইন্ডাকশন মোটর প্রশ্ন উত্তর পর্ব-২( জবের লিখিত ও ভাইবা প্রস্তুতি) পড়ুন
পরিশেষে কিছু কথাঃ
আমরা জানি মোটর EEE Student দের জন্য অনেক গুরত্বপূর্ণ একটি টপিক। এর ব্যবহার আমাদের দৈনিন্দন জীবনে ব্যাপক। মোটর ও মেশিন নিয়ে ভাইবা এবং লিখিত পরীক্ষায় অনেক প্রশ্ন হয়ে থাকে ফলে এই টপিকগুলোর বেসিক ভাল রাখা উচিত।
এই লেখা বা টপিকের বিষয়ে আপনাদের কোন প্রশ্ন থাকলে অবশ্যই কমেন্ট করুন।
এই লেখাটি ডাউনলোড করুন এই লিঙ্কেঃ বৈদ্যুতিক মোটর কি এবং বিস্তারিত আলোচনা_Voltagelab.pdf