ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স কে ভালোবাসি বা পড়াশুনা করি কিন্তু Transistor কে চিনি না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন। ইলেকট্রনিক্স প্রযুক্তি দ্রুত বিকাশ উন্নয়নের পিছনে ট্রাঞ্জিস্টরের ভূমিকা অন্যতম। এটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির এক যুগান্তকারি আবিষ্কার।
ট্রাঞ্জিস্টর ব্যবহারের ফলে ইলেক্ট্রনিস ডিভাইস আকারে ছোট, কম পাওয়ার অপচয় ইত্যাদি ডিজাইন করা সম্ভব হয়েছে। এর উদাহরন হিসেবে আধুনিক স্মার্টফোন, টেলিভিশন ও ইত্যাদি ডিভাইসে। তাহলে আজ কি কি বিষয়ে আলোচনা হবে তা একনজরে দেখে নিন।
- ট্রাঞ্জিস্টর কাকে বলে ও এর প্রতীক?
- ট্রাঞ্জিস্টর কি দ্বারা নির্মিত?
- ট্রাঞ্জিস্টর প্রকারভেদ।
- ট্রাঞ্জিস্টর কিভাবে কাজ করে?
- ট্রাঞ্জিস্টর সার্কিটে কি কাজ করে থাকে?
- এন পি এন ও পি এন পি ট্রাঞ্জিস্টরের গঠন।
- ট্রাঞ্জিস্টরের টার্মিনাল সমূহের বর্ননা।
- এন পি এন ট্রাঞ্জিস্টরের অপারেশন।
- ট্রাঞ্জিস্টরের ব্যবহার কোথায় হয়ে থাকে?
- একনজরে পর্যালোচনা
Transistor কাকে বলে ও এর প্রতীক?
ট্রাঞ্জিস্টর বহুল ব্যবহিত একটি ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস। এটি তিন টার্মিনাল তিন লেয়ার এবং দুই জাংশন বিশিষ্ট সেমিকন্ডাক্টর ডিভাইস যা ইনপুট সিগনালের শক্তি বৃদ্ধি করি বিভিন্ন কাজ সমাধান করে থাকে। আবার সার্কিটে সুইচের ভূমিকা নিতে পারে।
প্রতীকঃ
ট্রাঞ্জিস্টর কি দ্বারা নির্মিত?
এটি এক্টিভ সেমিকন্ডাক্টর ডিভাইস যা সেমিকন্ডাক্টর দ্বারা নির্মিত। এর অভ্যন্তরে দুটি জাংশন দ্বারা গঠিত। এটি হতে পারে এন পি এন বা পি এন পি জাংশন। এর তিনটি টার্মিনাল আছে। এই বিষয়ে আমরা একটু পর বিস্তারিত জানবো।
Transistor প্রকারভেদ
ট্রাঞ্জিস্টরের সঠিকভাবে শ্রেনীবিভাগ করা বেশ কঠিন কারন আধুনিক গবেষণায় বর্তমানে নতুন নতুন শ্রেনীর ট্রাঞ্জিস্টর উদ্ভাবিত হচ্ছে। এখানে ট্রাঞ্জিস্টরের আপাত শ্রেনীবিভাগ Tree Diagram এ দেখানো হলো।
ট্রাঞ্জিস্টর কিভাবে কাজ করে?
আমরা ইতিমধ্যে জেনেছি যে ট্রাঞ্জিস্টর মূলত এমপ্লিফাই বা সুইচিং করে থাকে। ট্রাঞ্জিস্টরে ইনপুটে অল্প পরিমানে কারেন্ট প্রবাহিত করলে আউটপুটে তা এমপ্লিফাই করে ঠিক একই সাথে সুইচিং এর মত আচারণ ও করতে পারে।
Transistor ইনপুট বলতে কমন ট্রাঞ্জিস্টরের বেজ কে বোঝানো হয় এবং আউটপুট ধরা হয় কালেক্টর ও ইমিটার কে। কিন্তু মসফেটের ক্ষেত্রে ইনপুট হবে ড্রেন ও আউটপুট হবে সোর্স।
Transistor সার্কিটে কি কাজ করে থাকে?
উদাহরন হিসেবে রেডিও তে Transistor এমপ্লিফায় হিসেবে কাজ করে থাকে। বিদ্যুৎ চুম্বকীয় তরঙ্গ অত্যন্ত ক্ষীণ শক্তির যাকে উপযুক্ত সার্কিটের মাধ্যমে ট্রাঞ্জিস্টর এমপ্লিফায় করে ও স্পিকারের মাধ্যমে আমাদের কানে সে পৌঁছায়।
এন পি এন ও পি এন পি ট্রাঞ্জিস্টরের গঠন
এন পি এন ট্রাঞ্জিস্টর (npn)
দুটি n-টাইপ সেমিকন্ডাক্টরের মাঝে একটি p-টাইপ সেমিকন্ডাক্টরের স্থাপন করলে p-n জাংশনের সৃষ্টি হয় এবং এন পি এন (npn) Transistor গঠিত হয়।
চিত্রে দেখতে পাচ্ছি ট্রাঞ্জিস্টরের তিনটি প্রান্ত থাকে। একই জাতীয় অঞ্চলে(N) ইমিটার এবং কালেক্টর ও বিপরীত ধর্ম অঞ্চলে(P) বেস।
তাহলে আমরা বলতে পারি যে NPN ট্রাঞ্জিস্টরের ক্ষেত্রে বেস হলো পি টাইপ অঞ্চল আর ইমিটার ও কালেক্টর হলো এন টাইপ অঞ্চল। ট্রাঞ্জিস্টরের কালেক্টর ও বেসের মধ্যবর্তী জাংশনকে কালেক্টর-বেস জাংশন এবং ইমিটার ও বেসের মধ্যবর্তী জাংশনকে ইমিটার-বেস জাংশন বলে।
পি এন পি ট্রাঞ্জিস্টর (pnp)
এটি মূলত npn ট্রাঞ্জিস্টরের উল্টো। দুটি p-টাইপ সেমিকন্ডাক্টরের মাঝে একটি n-টাইপ সেমিকন্ডাক্টরের স্থাপন করলে p-n জাংশনের সৃষ্টি হয় এবং এন পি এন (pnp) ট্রাঞ্জিস্টর গঠিত হয়।
চিত্রে দেখতে পাচ্ছি ট্রাঞ্জিস্টরের তিনটি প্রান্ত থাকে। একই জাতীয় অঞ্চলে(P) কালেক্টর এবং ইমিটার ও বিপরীত ধর্ম অঞ্চলে(N) বেস। তাহলে আমরা বলতে পারি যে PNP ট্রাঞ্জিস্টরের ক্ষেত্রে বেস হলো এন(N) টাইপ অঞ্চল আর ইমিটার ও কালেক্টর হলো পি (P) টাইপ অঞ্চল।
ট্রাঞ্জিস্টরের টার্মিনাল সমূহের বর্ননা
আমরা ইতিমধ্যে জেনেছি ট্রাঞ্জিস্টরের তিনটি টার্মিনাল থাকে। ১)বেস ২)ইমিটার ৩)কালেক্টর
বেস
বেস স্তর ইমিটার ও কালেক্টরের সাথে দুটি পি এন জাংশন তৈরি করে থাকে যথা ১) বেস-ইমিটার ২)বেস কালেক্টর।
বেস-ইমিটার জাংশনে ফরোয়ার্ড বায়াস প্রদান করে যেটি ইমিটার সার্কিটে লো-রেজিস্ট্যান্স তৈরি করে থাকে। বেস-কালেক্টর জাংশন রিভার্স বায়াস প্রদান করে থাকে যা কালেক্টর সার্কিটে হাই রেজিস্ট্যান্স প্রদান করে থাকে।
ইমিটার
ইমিটারকে সবসময় বেসের তুলনায় ফরোয়ার্ড বায়াস দেওয়া হয়। পি এন পি ও এন পি এন ট্রাঞ্জিস্টরের ক্ষেত্রে বেস-ইমিটার সর্বদা ফরোয়ার্ড বায়াস দেওয়া হয়। ট্রাঞ্জিস্টরে ইমিটার লেয়ারে উচ্চ মানের ডোপিং করা হয়ে থাকে কারন ইমিটার অংশ সর্বাপেক্ষা অধিক কারেন্ট সরবরাহ করে থাকে।
কালেক্টর
কালেক্টর ইমিটারের বিপরীত দিকে অবস্থান করে থাকে। এতে সবসময় রিভার্স বায়াস প্রদান করা হয়। এটা বেস-কালেক্টর জাংশন হতে মেজরিটি চার্জ কেরিয়ার সংগ্রহ করে সার্কিটে কারেন্ট প্রবাহ ঘটায় যেকারনে এই স্তরকে কালেক্টর বলা হয়।
কালেক্টর অংশ বেস ও ইমিটারের অধিক প্রসস্ত করা হয় এবং ইমিটারের তুলনায় হালকা ডোপিং করা হয় কারন এই স্তরে অধিক পাওয়ার অপচয় হয়ে থাকে।
এন পি এন ট্রাঞ্জিস্টরের অপারেশন
চিত্রে দুটি ভোল্টেজ সোর্স দেখানো হয়েছে (VBE & VCB) যা Transistor বায়াস দেয়ার কাজে সংযুক্ত আছে। VBE হলো বেজ-ইমিটার ভোল্টেজ যা জাংশনের ফরওয়ার্ড বায়াস প্রদান করে এবং VCB কালেক্টর-বেজ জাংশনে রিভার্স বায়াস প্রদান করে থাকে।
বেস-ইমিটার জাংশনটি ফরোওয়ার্ড বায়াস হওয়ার কারনে n টাইপ হতে প্রচুর ইলেকট্রন বেস-ইমিটার জাংশন অতিক্রম করে ও p টাইপ বেস অঞ্চলে ডিফিউজড হয় ফলে ইমিটার কারেন্ট IE প্রবাহিত হয়।
বেস স্তরটি খুব পাতলা ডোপিং p টাইপ সেমিকন্ডাক্টর হবার কারনে এতে খুব সামান্য পরিমান মজরিটি ক্যারিয়ার হোল বিদ্যমান। এই অল্প হোল হতে কিছু হোল ইমিটার অঞ্চল থেকে বেস কারেন্ট iB1 প্রবাহিত হয়।
বেস স্তরের হোল কিছু হোল আগত প্রচুর সংখ্যক ইলেকট্রন হতে খুবই সামান্য কিছু ইলেকট্রনের সাথে মিলিত হয় ও ইলেকট্রন হল রি-কম্বিনেশন ঘটে। এইকারনে সামান্য পরিমান বেস কারেন্ট iB2 প্রবাহিত হয়। তাহলে বেস কারেন্ট IB এর দুটি উপাদান iB1 এবং iB2 ।
বেস স্তরে আগত প্রচুর ইলেকট্রন বেস স্তরের জন্য মাইনোরিটি কেরিয়ার হিসেবে বিবেচিত। আমরা এটা জানি যে রেভার্স বায়াসের জন্য মাইনোরিটি কেরিয়ারের জন্য পি এন জাংশনের মধ্য দিয়ে কারেন্ট প্রবাহিত হয়।
বেস-কালেক্টর জাংশন টি রিভার্স বায়াস হওয়ায় পি টাইপ বেস হতে প্রচুর ইলেকট্রন বেস কালেক্টর জাংশন অতিক্রম করে এন টাইপ কালেক্টর অঞ্চল থেকে গৃহীত হয় এবং VCB সোর্সের পজিটিভ টার্মিনাল দ্বারা আকৃষ্ট হয়ে সার্কিটে Ic কারেন্ট প্রবাহিত করে। এ
ভাবেই মূলত এন পি এন Transistor ইলেকট্রন প্রবাহ মাধ্যমে কারেন্ট প্রবাহিত হয়।
চিত্রে IE IB Ic এর কারেন্ট প্রবাহের দিক দেখানো হয়েছে যা ইলেকট্রন প্রবাহের বিপরীত দিকে। তাহলে ট্রাঞ্জিস্টরের বেস পয়েন্টে কে সি এল সূত্র প্রয়োগ করে পায়ঃ
IE = IB + Ic , ট্রাঞ্জিস্টর দিয়ে সকল কারেন্ট ইমিটার টার্মিনাল দিয়ে বের হয়।
এবার একটু সহজ ভাষায় আলোচনা করি সহজভাবে
- বেস এর মধ্যে দিয়ে পাঠানো কারেন্ট ইমিটার দিয়ে বের হবে।
- ট্রাঞ্জিস্টর তখন কালেক্টর থেকে ইমিটার দিকে কারেন্ট টানতে থাকে যা কালেক্টর থেকে ইমিটারে কারেন্ট প্রবাহ ঘটে।
- বেস ইমিটার IB কারেন্ট মূলত কালেক্টর ইমিটার Ic কারেন্টকে নিয়ন্ত্রন করে থাকে।
- এই কালেক্টর ইমিটার কারেন্ট, বেস ইমিটার কারেন্টের চাইতে অনেক বেশি।
- বেস ইমিটার সংযোগ মূলত ডায়োডের মত কাজ করে থাকে।
- বেস-ইমিটার ভোল্টেজ যখন ০.৭ ভোল্ট হয় তখনি ট্রাঞ্জিস্টর চালু হয়।
- এর ফলে বেস-ইমিটার ও কালেক্টর-ইমিটার বিদ্যুৎ প্রবাহ শুরু হয়।
- এটাকেই মূলত থ্রেশ হোল্ড ভোল্টেজ বলে বা টার্ন অন ভোল্টেজ বলে যে ভোল্টেজে চালু হয়।
পি এন পি অপারেশন এন পি এন এর উল্টো। আশা করছি এন পি এন বুঝতে পারলে পি এন পি অপারেশন আপনাদের বুঝতে সমস্যা হবে না।
ট্রাঞ্জিস্টরের ব্যবহার কোথায় হয়ে থাকে?
- সুইচিং হিসেবেঃ সলিড স্টেট রিলের ক্ষেত্রে আমরা দেখে থাকবো।
- এমপ্লিফায়ার হিসেবেঃ কারেন্ট বা ভোল্টেজ কে এমপ্লিফায়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
- রেগুলেটর হিসেবঃ কারেন্ট, ভোল্টেজ, পাওয়ার ইত্যাদি রেগুলেট হিসেবে ব্যবহার করতে হয়।
- বাফার হিসেবেঃ যেমনঃ ইম্পিড্যান্স ম্যাচিং করতে।
একনজরে পর্যালোচনা
- একটি Transistor বেস, ইমিটার এবং কালেক্টর থাকে।
- বেস স্তরটি অনেক পাতলা হয়ে থাকে, ইমিটার মাঝারি এবং কালেক্টর স্তরটি সবচেয়ে বেশি প্রসস্ত হয়ে থাকে।
- ইমিটারে সবচেয়ে বেশি ডোপিং করা হয় যেন সবচেয়ে বেশি মেজরিটি ক্যারিয়ার বেস স্তরে সরবরাহ করতে পারে।
- Transistor বেস-ইমিটার জাংশন সবসময় ফরওয়ার্ড বায়াস এবং বেস কালেক্টর জাংশন সর্বদা রিভার্স বায়াস প্রদান করে থাকে।
- বেস-ইমিটার জাংশনের রেজিস্ট্যান্স বেস কালেক্টর জাংশনের তুলনায় কম হয়ে থাকে তাই বেস-ইমিটারে জাংশনে খুব অল্প পরিমানে ফরোয়ার্ড বায়াস আর বেস-কালেক্টরে উচ্চ রিভার্স বায়াস প্রয়োগ করা হয়।
ট্রাঞ্জিস্টোর বিস্তারিত ইংরেজিতে পড়ুনঃ What is Transistor and how does it works?
সুত্রঃ
- Wikipedia Bangla
- Principle of Electronics-V.K Mehta
- Electronics4u website