হিসটেরেসিস লস – ট্রান্সফর্মারের কোর সাধারনত ফেরোচৌম্বক পদার্থ দ্বারা গঠিত। সকল ফেরোচৌম্বক পদার্থ অসংখ্য অণুচুম্বক দ্বারা গঠিত। যখন ট্রান্সফরমারের প্রাইমারিতে এসি কারেন্ট দিয়ে বারবার চুম্বকীকরন ও বিচুম্বকীকরন করা হয় তখন এর কোরের অভ্যন্তরে থাকা অণুচুম্বকগুলো (ডোমেইন) দিক পরিবর্তন করতে থাকে। অণুগুলোর এই দিক পরিবর্তনের সময় অণুগুলোর মাঝে ঘর্ষণের ফলে কিছু শক্তি তাপ হিসাবে নির্গত হয়। একেই হিসটেরেসিস লস বলে।
হিসটেরেসিস লসের কারনঃ
- চৌম্বক ফ্লাক্সের পরিবর্তন।
- ম্যাগনেটিক ডোমেইনের আকারের পরিবর্তন।
হিসটেরেসিস লস কোথায় ঘটেঃ
তড়িৎ-চৌম্বক আবেশ প্রক্রিয়ায় কাজ করে এমন সকল মেশিনে হিসটেরেসিস লস ঘটে। যেমনঃ
- ডিসি মোটর, ডিসি জেনারেটর।
- এসি মোটর, এসি জেনারেটর।
- ট্রান্সফর্মার প্রভৃতি।
ট্রান্সফর্মারে হিসটেরেসিস লস কিভাবে ঘটেঃ
ট্রান্সফর্মারের কোরে ব্যবহৃত ফেরোম্যাগনেটিক পদার্থ হিসটেরেসিস ধর্ম প্রদর্শন করে। ম্যাগনেটাইজিং বল H , ফ্লাক্স ঘনত্ব B এর মধ্যকার সম্পর্ক কে যে গ্রাফের মাধ্যমে দেখানো যায় তাকে হিসটেরেসিস গ্রাফ অথবা হিসটেরেসিস লুপ বলে। হিসটেরেসিস প্রক্রিয়া ব্যাখার জন্য নিচে একটি হিসটেরেসিস লুপের চিত্র দেয়া হলঃ
আমরা জানি ট্রান্সফর্মারের প্রাইমারিতে এসি সাপ্লাই দেয়া হলে অল্টারনেটিং ম্যাগনেটিক ফিল্ড উৎপন্ন হয়। ম্যাগনেটাইজিং বল বৃদ্ধির সাথে সাথে চৌম্বক ফ্লাক্সের মান বাড়ে কিন্তু বল কমার সাথে সাথে একই হারে কমে না। এভাবে যখন ম্যাগনেটাইজিং বলের মান কমতে কমতে যখন শূন্য হয় তখন চৌম্বক ফ্লাক্সের মান শূন্য হয় না বরং পজিটিভ একটা মান থাকে (চিত্রের b বিন্দু)।
চৌম্বক ফ্লাক্সের এই পজিটিভ মানকে রিমেনেন্ট বলে। বিভিন্ন ফেরোচৌম্বক পদার্থের জন্য এই মান বিভিন্ন হয়। চিত্র হতে দেখা যাচ্ছে যে, ফ্লাক্স ঘনত্ব কে শূন্য করতে হলে ম্যাগনেটাইজিং বল বিপরীত দিকে প্রয়োগ করতে হবে (চিত্রের C বিন্দু)। ম্যাগনেটাইজিং বলের এই মানকে কোহেসিভ ফোর্স বলে। আর বিপরীত দিকে প্রয়োগকৃত এই কোহেসিভ ফোর্স ই মূলত হিসটেরেসিস লস।
হিসটেরেসিস লুপের ক্ষেত্রফল চুম্বকীকরন এবং বিচুম্বকীকরন করতে প্রয়োজনীয় শক্তির মান নির্দেশ করে।
ট্রান্সফর্মারে হিসটেরেসিস লসের প্রভাবঃ
- কোরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে।
- কার্যদক্ষতা কমায়।
হিসটেরেসিস লসের মানঃ
কোরের একক আয়তনে হিসটেরেসিস লস কে নিন্মোক্তভাবে প্রকাশ করা যায়।
তাহলে সম্পূর্ন আয়তনে হিসটেরেসিস লস = হিসটেরেসিস লুপের ক্ষেত্রফল * কোরের আয়তন
স্টেইনমেটজের সূত্র অনুযায়ী হিসটেরেসিস এর জন্য নির্গত তাপশক্তিকে নিন্মোক্তভাবে প্রকাশ করা যায়।
Wh = ηBmaxn
এবং হিসটেরেসিস লস কে গাণিতিক ভাবে প্রকাশ করা যায়ঃ
Ph≈ Whf ≈ηfBmaxn
Ph = হিসটেরেসিস লস(W)
η = হিসটেরেসিস ধ্রুবক(J/m3)
n = স্টেইনমেটজ ধ্রুবক
Bmax = ফ্লাক্স ঘনত্ব (Wb/m2)
f = ম্যাগনেটিক ফিল্ডের দিক পরিবর্তনের ফ্রিকোয়েন্সি(কম্পাঙ্ক) (Hz)
V = চৌম্বক পদার্থের আয়তন (m3)
কোরে ব্যবহৃত চৌম্বক পদার্থের ভিত্তিতে স্টেইনমেটজ ধ্রুবকের মান ১.৪ হতে ১.৮ পর্যন্ত হতে পারে। তবে কোর লোহার তৈরি হলে স্টেইনমেটজ ধ্রুবকের মান ১.৬ ধরা হয়।
হিসটেরেসিস লস কিভাবে কমানো যায়ঃ
উপরের সূত্র থেকে দেখা যাচ্ছে নির্দিষ্ট ফ্রিকোয়েন্সিতে হিসটেরেসিস লসের মান হিসটেরেসিস ধ্রুবকের উপরে নির্ভর করে। হিসটেরেসিস ধ্রুবকের মান কম এমন নরম চৌম্বক পদার্থ দিয়ে কোর গঠন করে হিসটেরেসিস লস কমানো যায়। যেমনঃ সিলিকন স্টীল, স্টিল এলয়, ম্যাঙ্গানিজ-জিংক ফেরাইট প্রভৃতি। নরম চৌম্বক পদার্থ দিয়ে কোর গঠন করার নিন্মলিখিত সুবিধা আছেঃ
- রেজিস্টিভিটি বেশি।
- চৌম্বক প্রবেশ্যতা বেশি।