ট্রান্সফরমার ইলেকট্রিক্যাল জগতে খুব সুপরিচিত একটি ডিভাইস। এই ফিল্ডের এমন কোন লোক খুঁজে পাওয়া রীতিমতো অসম্ভব যে ট্রান্সফরমার সম্পর্কে অবগত নয়। ট্রান্সফরমার নিয়ে যতই গবেষণা করেন না কেন সেটাই অল্প হবে। কারণ এই ডিভাইসটির আড়ালে লুকিয়ে আছে অনেক কারিগরি রহস্য। আজকে একটি মজাদার টপিক নিয়ে আলোচনা করব। ট্রান্সফরমারের ইন্সুলেশন টেস্ট করা হয় এটা আমরা অনেকেই শুনেছি। কিন্তু এই বাক্যে একটা আকাঙ্খা রয়েই যায় যে কার ট্রান্সফরমারের মধ্যে কোন ম্যাটেরিয়ালের ইন্সুলেশন টেস্ট করা হবে?
ইন্সুলেশন টেস্ট কি?
ট্রান্সফরমারে ব্যবহৃত বুশিং, তেল এগুলো এক ধরনের ইন্সুলেটর। আর আমরা জানি, সময়ের সাথে সাথে বৃষ্টি, কুয়াশা বিভিন্ন আর্দ্রতাজনিত কারণে কোন ইন্সুলেটর বডির ইন্সুলেশন ক্ষমতা নষ্ট হতে থাকে। তাই সাবস্টেশনে বাৎসরিক কমিশনিংকালে ট্রান্সফরমারের ওয়েল এবং বুশিং ম্যাটেরিয়াল, উইন্ডিং এর ইন্সুলেশন ক্যাপাসিটি পরীক্ষা করা হয়। আর এই পরীক্ষাটি ট্যান ডেল্টা টেস্ট নামেও পরিচিত।
শুধুমাত্র ট্রান্সফরমারের জন্যই কি ইন্সুলেশন টেস্ট প্রযোজ্য?
উল্লেখ্য যে, এই পরীক্ষাটি শুধুমাত্র ট্রান্সফরমারের ক্ষেত্রেই প্রয়োগ করা হয়না। বিভিন্ন ক্যাবল ইন্ডাস্ট্রিতে ক্যাবলের ইন্সুলেশন টেস্ট করার ক্ষেত্রেও এই এক্সপেরিমেন্ট করা হয়।
ইন্সুলেশন টেস্টে মূলত কিভাবে ইন্সুলেশন ক্ষমতা যাচাই করা হয়?
আমরা সকলেই জানি, কোন ইন্সুলেটর বডি যখন পরিবাহী লাইন এবং গ্রাউন্ডের মধ্যে অবস্থান করে তখন সেটি ক্যাপাসিটরের ন্যায় আচরণ করে। অর্থাৎ সেখানে ডাইলেকট্রিক ফিল্ড বিদ্যমান থাকবে। সেখানে রেজিস্টিভ ক্যারেক্টার নেই বললেই চলে। তবে বাতাসের ধূলোবালি, কুয়াশা, বৃষ্টি বিভিন্ন কারণে এর মধ্যে রেজিস্টিভ বৈশিষ্ট্য প্রকট হতেও পারে। তাই এই ইন্সুলেশন পরীক্ষায় মূলত ইন্সুলেটর বডির ক্যাপাসিটিভ এবং রেজিস্টিভ ক্যারেক্টারের রেশিও দেখা হয়। যদি ক্যাপাসিটিভ ক্যারেক্টার এর তুলনায় রেজিস্টিভ ক্যারেক্টার প্রকট হয় তাহলে বুঝতে হবে ইন্সুলেশন ক্ষমতা প্রায় অক্কা পেতে বসেছে।
সংক্ষেপে এই পরীক্ষার ধাপসমূহ
- শুরুতেই ট্রান্সফরমারের হাইভোল্টেজ এবং লো-ভোল্টেজ সাইডের পাওয়ার কানেকশন অফ করে নিতে হবে।
- বায়ুর আপেক্ষিক আর্দ্রতা এবং পরিবেশের তাপমাত্রা পরীক্ষা করে নেয়াটা আবশ্যক।
- প্রতিটি উইন্ডিং সংশ্লিষ্ট বুশিং টার্মিনালগুলো কপার জাম্পার ব্যবহার করে শর্ট করে নিতে হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে জাম্পারগুলোয় যেন স্যাগ বা ঝুলন না থাকে।
- অত:পর মেগারের সাহায্যে উইন্ডিং/বুশিং/তেলের ইন্সুলেটিং রেজিট্যান্স মেপে নিতে হবে। এইক্ষেত্রে ডিসি ভোল্টেজ এপ্লাই করা হয় যেটা মেগারের অভ্যন্তরীণ ডিসি জেনারেটর থেকেই সাপ্লাই করা হয়।
কেন ডিসি ব্যবহার করা হয়?
কারণ ডিসির উপর ক্যাপাসিটিভ রিয়েক্টেন্সের প্রতিক্রিয়া নেই। তাই পিউর রেজিস্টিভ ক্যারেক্টার যাচাই করা সম্ভবপর হয়।
অত:পর অল্প ফ্রিকুয়েন্সির এসি সিগন্যাল জেনারেট করে ইন্সুলেটিং মিডিয়ামের ক্যাপাসিটিভ রিয়েক্টেন্স মেপে নেয়া হয়। অত:পর ক্যাপাসিটিভ রিয়েক্টেন্স এবং ইন্সুলেটিং রেজিস্ট্যান্সের মধ্যে তুলনা করা হয়। যদি ক্যাপাসিটিভ ক্যারেক্টার প্রকট হয় তাহলে ইন্সুলেটরটি এখনো ভাল অবস্থায় আছে। অন্যথায় তা প্রায় অকেজো হবার পথে।
উল্লেখ্য যে, ক্যাপাসিটিভ রিয়েক্টেন্স পরিমাপের সময় অল্প ফ্রিকুয়েন্সির সিগন্যাল জেনারেট করা হয়।
অল্প ফ্রিকুয়েন্সির সিগন্যাল জেনারেশনের কারণ
আমরা জানি, ক্যাপাসিটিভ রিয়েক্টেস Xc = 1/2πfC অর্থাৎ ফ্রিকুয়েন্সি খুব বেশি হলে ক্যাপাসিটিভ রিয়েক্টেন্স শূন্যের কাছাকাছি চলে যাবে।
যার ফলে সঠিক ক্যাপাসিটিভ রিয়েক্টেন্সের মান পাওয়া সম্ভব হবেনা। বরং লিকেজ কারেন্ট বেড়ে গিয়ে শর্ট সার্কিট হবার সম্ভবনা থাকে।
যেসব সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে
- ট্যান ডেল্টা টেস্ট পরীক্ষাটি বর্ষাকাল বা শীতকালে না করাই উত্তম। কারণ এ সময় বায়ুর আপেক্ষিক আর্দ্রতা বেশি থাকে।
- আর আর্দ্রতাজনিত কারণে মূল রেজিস্ট্যান্স এবং ক্যাপাসিটিভ রিয়েক্টেন্স পাঠ পাওয়া দু:সাধ্য ব্যাপার। যদি শীতকালে কমিশনিং করা হয় তাহলে সেক্ষেত্রে ট্রান্সফরমার বুশিং, উইন্ডিংকে ভালভাবে মুছে নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করা যেতে পারে। তবে এক্ষেত্রের তেলের ইন্সুলেশন টেস্ট করা সম্ভব নাও হতে পারে।
- এই টেস্টের আগে ট্রান্সফরমারের হাই এবং লো ভোল্টেজ সাইডের পাওয়ার কানেকশন বন্ধ করা উচিত।
ট্রান্সফরমার নিয়ে আরো কিছু পোস্ট
আবাসিক এলাকায় ডিস্ট্রিবিউশন ট্রান্সফরমার ব্যবহার না করে অটো ট্রান্সফরমার ব্যবহার করলে কি হবে?
50 Hz এর ট্রান্সফরমার 60 Hz এ এবং 60 Hz এর ট্রান্সফরমার 50 Hz এ চালনা করলে কি হবে?