মানবদেহ বিদ্যুৎ সুপরিবাহী। বিদ্যুৎ ও মানবের সম্পর্ক রোমিও জুলিয়েটের চেয়েও কোন অংশে কম নয়। একটি প্রশ্ন অনেকের মনেই ঘুরপাক খায় যে পাওয়ার লাইন খালি হাতে স্পর্শ করলে শক করবে কি? এ ব্যাপারে বিভিন্ন জন বিভিন্ন ধরনের মতবাদ দিয়ে থাকেন।
কেউ কেউ বিষয়টিকে পাওয়ার লাইনে পাখি বসে থাকার পরেও বিদ্যুতায়িত না হবার ব্যাপাটির সাথে মিলিয়ে ব্যাখ্যা করে।
আসলে বাস্তবিকতা কি বলে? আজ এই বিষয়টি পরিষ্কার করার চেষ্টা করব। পাওয়ার লাইনে একজন মানুষের মোট চারটি অবস্থানের উপর ভিত্তি করে নিম্নে বিষয়টি ব্যাখা করা হলঃ
ব্যক্তিটির একটি হাত লাইভ লাইনে এবং লোকটির পা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ভূমিতে সংযুক্ত
এই অবস্থায় লোকটির দেহ অবশ্যই বিদ্যুতায়িত হবে। কারণ তার একটি হাত পরিবাহী অংশে এবং পা ভূমিতে (বাড়ির ছাদ) সংযুক্ত হয়ে একটি সম্পূর্ণ বর্তনী তৈরি করেছে। উল্লেখ্য যে, পাওয়ার লাইনটি যদি 132kV বা তার উপরে হয় তাহলে স্পর্শ ব্যতীত ৫-১০ ফুট দূরে অবস্থান করলেও বিদ্যুতায়িত হবার সম্ভবনা রয়েছে।
ভূমির সাথে সংযোগ ব্যতীত ব্যক্তিটির দুই হাত দুটি লাইভ লাইন স্পর্শ করলে
এই অবস্থানটি খুব ই বিপদজ্জনক। কারণ লাইভ লাইন এবং ভূমির মধ্যবর্তী ফেইজ ভোল্টেজ এর তুলনায় দুটো লাইনের মধ্যবর্তী লাইন ভোল্টেজ প্রায় দুইগুণ বেশি। যেহেতু আমরা জানি,
অনেকে মনে করেন দুইটি লাইনে সমান ভোল্টেজ বিদ্যমান। সেই হিসেবে ভোল্টেজ পার্থক্য তো শূণ্য হওয়ার কথা। এটি সম্পূর্ণ ভূল ধারণা। এটি হল এসি প্রবাহ। ডিসি প্রবাহের বেলায় এ কথাটি খাটলেও এসির বেলায় প্রযোজ্য নয়।
এসিতে দুটি লাইভ লাইনের ভোল্টেজ সমান হলেও ফেজ এংগেল ভিন্ন। কিন্তু ডিসি প্রবাহের বেলায় ফেইজ এংগেল এর হিসেব নেই।
ভূমির সাথে সংযোগ ব্যতীত একটি হাত একটি লাইভ লাইনে অপর হাত শূণ্যে
এই অবস্থানটি অনেকটা পাওয়ার লাইনে পাখি বসে থাকার অবস্থানের মত ই। কিন্তু পাখি আর মানবের বেলায় ব্যাপারটি ভিন্ন।
মানুষের তুলনায় পাখির দেহের আকার খুবই নগণ্য। তাই তার ক্যাপাসিট্যান্স কম। কিন্তু এক্ষেত্রে মানুষের ক্যাপাসিট্যান্স অনেক বেশি।
তাই এক্ষেত্রে মানব দেহটি শান্ট ক্যাপাসিটর এর ন্যায় কাজ করবে।
উল্লেখ্য যে, মানবদেহের ক্যাপাসিট্যান্স 3 pF। তাই এক্ষেত্রে মানুষটি শক খাবার সম্ভাবনা প্রকট।
ভূমির সংযোগ ব্যতীত ব্যক্তিটির দুটি হাত একটি লাইভ লাইন স্পর্শ করলে
এই অবস্থানটি পুরোপুরিভাবে পাখি দুই পা দিয়ে বসে থাকার সাথে মিলে যায়।
কিন্তু পাখি এক্ষেত্রে পার পেয়ে গেলেও ব্যাক্তিটি পাবে না। কারণ পাখির পা অস্থিময়।
তাই তার পায়ের রোধ পরিবাহীর তুলনায় অনেক বেশি। আর আমরা জানি বিদ্যুৎ সর্বদাই অল্প রোধ বিশিষ্ট পথ দিয়ে যেতে চায়।
সবাই তো চায় জ্যামবিহীন, মসৃণ পথ দিয়ে হেটে যেতে। তাই পাখির দেহকে উপেক্ষা করেই বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয়।
কিন্তু মানবদেহ মাংসল এবং জলপূর্ণ। তাই মানবদেহের রোধ পরিবাহীর তুলনায় কম।
তাই বিদ্যুৎ পরিবাহী থেকে কিছু বিদ্যুৎ মানবদেহেও প্রবাহিত হবে।
যদি লাইভ লাইনে ২০০ এম্পিয়ার বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয় তাহলে মানবদেহে ০.০১ এম্পিয়ার বিদ্যুৎ প্রবাহিত হবে। যেটি মানদেহের জন্য বিপদজ্জনক হতে পারে।
বাস্তব উদাহরণ
১৯৬৪ সালে কলোরাডো তে একটি ছেলে ট্রি হাউজ থেকে লাফ দিয়ে হাই পাওয়ার ট্রান্সমিশন লাইনে পড়ে যায়। তখন সে তার দুই হাত দিয়ে একটি লাইভ লাইন স্পর্শ করে। মৃত্যু না হলেও ছেলেটির দুই হাত পুড়ে যায় এবং পঙ্গু হয়ে যায়।
উপরের আলোচনা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, বিদ্যুৎ ও মানবদেহের সেতুবন্ধন আমে দুধে এক হবার মতোই।
তাই আমাদের এ ব্যাপারে খুব সতর্ক হওয়া জরুরি। তাছাড়া বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলো পোল বা টাওয়ার স্থাপনের সময় খুব সতর্ক থাকতে হবে।
বিশেষ করে আবাসিক এলাকার ভেতর পোল স্থাপনের সময় বিল্ডিং থেকে পোলের দূরত্ব নূন্যতম ৩০ ফুট হওয়া দরকার। অন্যথায় যেকোন সময় অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটতে পারে।
বিদ্যুৎ নিয়ে আরো কিছু মজাদার পোস্ট
ইলেকট্রিক শকের জন্য দায়ী কে? কারেন্ট নাকি ভোল্টেজ বিস্তারিত পড়ুন