গল্পে গল্পে ইলেকট্রনিক্স ফ্যামিলির পরিচিতি

ইলেকট্রনিক্স নিয়ে আমাদের ব্যাপক কৌতূহল। এনালগ এবং ডিজিটাল ইলেকট্রনিক্সের কোর্সও করেছি আমরা ভার্সিটি পড়ার সময়।

কত ডিভাইসের নাম শুনেছি এবং ল্যাবেও দেখেছি। গদবাধা বইয়ের ভাষায় ট্রানজিস্টর, ফেট, মসফেট, আইসি, অপ এম্প পড়তে গিয়ে হয়ত অনেকেরই ইলেকট্রনিক্সের আসল মজাটা পেয়ে উঠা হয়নি।

চলুন আজকে একটি মজার গল্পের মাধ্যমে পুরো ইলেকট্রনিক্স ফ্যামিলিকে একটি প্যাকেজে নিয়ে আসা যাক।

গল্পে গল্পে ইলেকট্রনিক্স ফ্যামিলির পরিচিতি

বিদ্যুৎ সংক্রান্ত ব্যাসিক বিষয়গুলো আলোচনার শুরুতেই পরিবাহী, অর্ধ-পরিবাহী, অন্তরক নিয়ে আলোচনা করা হয়। অর্ধ-পরিবাহী নিয়ে আরো বিস্তারিত আলোচনার যে মধুময় ক্ষেত্র তার নামই হল ইলেকট্রনিক্স।

সেমিকন্ডাক্টর ফ্যামিলি

এই অর্ধপরিবাহী সদস্যগুলো কে কে জেনে নেয়া যাক। সিলিকন, জার্মেনিয়াম, গ্যালিয়াম-আর্সেনাইড এই অর্ধপরিবাহী ফ্যামিলির সদস্য। ইলেকট্রনিক্স ওয়ার্ল্ডে সিলিকন নামক পদার্থটির খুব কদর।

এখন, পিউর সিলিকনকে বিজ্ঞানীরা শান্তিতে থাকতে দেয়নি। এর সাথে ঝামেলা বা ভেজাল যুক্ত করে দিল। যার নাম হল মিঃ ডোপেন্ট। এখন এই ডোপেন্ট মহাশয়ের আবার ধরন আছে।

যদি তিন হাতবিশিষ্ট (ত্রিযোজী) ডোপেন্ট হয় তাহলে সেই অর্ধ-পরিবাহীর নাম হবে পি-টাইপ সেমিকন্ডাক্টর। আর যদি পাঁচ হাতবিশিষ্ট (পঞ্চযোজী) ডোপেন্ট হয়, তাহলে তা হবে এন-টাইপ সেমিকন্ডাক্টর। পি টাইপ অর্ধ-পরিবাহীর ফুটো কপাল। তাই তার অধিকাংশ ক্যারিয়ার হল হোল। আর এন টাইপ মহাশয়ের কপাল ভাল তাই তার অধিকাংশ ক্যারিয়ার মুক্ত ইলেকট্রন।

পি টাইপ এবং এন টাইপ সেমিকন্ডাক্টরের মিলন

বিজ্ঞানী মহাশয়রা এই পি-টাইপ এন-টাইপ সেমিকন্ডাক্টর তৈরি করে ক্ষান্ত হননি। তারা এই দুইটাইপ সেমিকন্ডাক্টরের মিলনে নতুন প্রকরণ সৃষ্টি করতে চাইলেন।

এবার এন টাইপ এবং পি টাইপ সেমিকন্ডাক্টরের মধুর মিলনে তৈরি হল ডায়োড। ডায়োড মহাশয় এসি কারেন্টকে ডিসি করতে ব্যাপক সাহায্য করে। একে রেক্টিফায়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। তারপর বিজ্ঞানীদের মাথায় এল আরেক অভিনব চিন্তা।

ইলেকট্রনিক্স স্যান্ডউইচ

তারা সেমিকন্ডাক্টরের স্যান্ডউইচ তৈরি করতে চাইল। স্যান্ডউইচের নাম শুনে হয়ত খিদে পেয়ে গেছে অনেকের। স্যান্ডউইচে যেমন দুটো পাউরুটির টুকরোর মাঝখানে মাংসের কিমা দেয়া থাকে। তেমনি দুটো একই সেমিকন্ডাক্টর স্লাইসের মাঝখানে একটি অন্য টাইপ সেমিকন্ডাক্টর স্যান্ডউইচ করে তৈরি করা হল নতুন একটি ডিভাইস যার নাম ট্রানজিস্টর। একে এমপ্লিফায়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

স্যান্ডউইচ
স্যান্ডউইচ

ট্রানজিস্টর ফ্যামিলি

ট্রানজিস্টর আবার নিজের মত করে ফ্যামিলি তৈরি করল। যেখানে রইল ইউনিপোলার এবং বাইপোলার দুই ধরনের ট্রানজিস্টর। বাইপোলারে হোল, ইলেকট্রন এই দুই ধরনের ক্যারিয়ারের মাধ্যমে বিদ্যুৎ প্রবাহ ঘটে। তাই এর নামকরণ হয়েছে বাইপোলার।

আর ইউনিপোলারে একটি ক্যারিয়ার হয় হোল না হয় ইলেকট্রনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ প্রবাহ ঘটে। ইউনিপোলার ট্রানজিস্টরের মধ্যে আবার ফেট, মসফেট, ইউজেটি ইত্যাদি বিদ্যমান।

আইসি প্রযুক্তি

এই ডায়োড, ট্রানজিস্টর নিয়ে গঠিত সার্কিট মডিউলগুলো সুবিশাল আকৃতির। তাই ইলেকট্রনিক্স ডিভাইসগুলো ব্যবহার কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। তাই নেয়া হল এক অভিনব সিদ্ধান্ত। পুরো এনালগ সার্কিট মডিউলকে একটি ক্ষুদ্রাকারের চিপে রুপায়িত করা হবে। যেন ডিভাইসের আকৃতিগুলো আকারে ছোট হয় এবং পরিবহনে সহজসাধ্য হয়। আর এই প্রযুক্তিকে বলে ন্যানোইলেকট্রনিক্স টেকনোলজি।

ইলেকট্রনিক্স নিয়ে আরো কিছু আর্টিকেল

ডায়োডের প্রেম-কাহিনী | ডায়োড, হোল, ইলেকট্রন গল্পের ছলে আলোচনা

ডিজিটাল ইলেকট্রনিক্স জগতের দোভাষী মহাশয়। কে এই দোভাষী?

HDD এবং SSD এর মধ্যে পার্থক্য কি?