একটি ডিভাইস অপারেশনের জন্য ভোল্টেজ মামা এবং কারেন্ট মামী এই যুগলের খুবই প্রয়োজন। আপনার ডিভাইসের সাথে সংযুক্ত পরিবাহী থেকে ইলেকট্রন বিচ্যুত করতে ভোল্টেজ মামার খুব দরকার। আর ইলেকট্রন প্রবাহই হল কারেন্ট। কারেন্ট-ভোল্টেজ যুগলের একে অপরের প্রতি বেশ ভালবাসা কাজ করে। একজন অন্যজনকে ছাড়া থাকতে পারেনা।
যদি আপনি খুব বেশি পরিমান কারেন্ট এবং শুন্য ভোল্টেজ দেন তাহলে কোন যন্ত্রই চলবেনা। আবার যদি খুব বেশি পরিমান ভোল্টেজ এবং শুন্য পরিমান কারেন্ট দেন তাহলেও কোন যন্ত্রই চলবেনা। কোন বৈদ্যুতিক যন্ত্র চালানোর জন্য আপনাকে অবশ্যই দুইটাই দিতে হবে।
আর এই যুগলের মিলনে জন্ম নেয় তাদের পুত্র পাওয়ার (ক্ষমতা)। আর এই পাওয়ার বা ক্ষমতা হল কারেন্ট আর ভোল্টেজের গুনফল।
বিদ্যুৎ বিল কিভাবে হিসাব করা হয়?
বিদ্যুৎ হিসাব করার সময় মূলত ভোল্টেজ কারেন্ট যুগলের পুত্র পাওয়ারকেই প্রাধান্য দেয়া হয়। তার মানে হল আমরা নির্দিষ্ট সময়ে কতটুকু পাওয়ার বা ক্ষমতা ব্যবহার করেছি তার উপর ভিত্তি করে। আপনারা খেয়াল করলে হয়তো দেখবেন মিটারের উপরে KWh বা কিলোওয়াট-ঘন্টা লেখা থাকে। আর এই কিলোওয়াট-ঘন্টা দিয়েই আমাদের সম্পূর্ণ বিদ্যুৎ বিল হিসাব করা হয়।
কিলোওয়াট-ঘন্টা
বিদুৎ ক্ষমতা পরিমাপের একটি সাধারন একক ওয়াট। বৈদ্যুতিক বাতিতে একক সময়ে কি পরিমাণ বিদ্যুৎ শক্তি অন্য শক্তিতে রুপান্তরিত হয় তা বোঝার জন্য ২৫, ৪০, ৬০, ১০০ প্রভৃতি ওয়াট লেখা থাকে।
আর এই ওয়াট হল, ভোল্টেজ আর কারেন্টের সন্তান মানে তাদের গুনফল। ওয়াট একটি ছোট একক, তাই বড় বড় যন্ত্রপাতি ইঞ্জিন ইত্যাদির ক্ষেত্রে কিলোওয়াট এককটি ব্যবহার করা হয়। এক কিলোওয়াট ক্ষমতার ডিভাইস এক ঘন্টা ধরে চললে যে পরিমান শক্তি খরচ হয়, তাকে এক কিলোওয়াট-ঘন্টা বলে। বিলিংয়ের হিসাবটাও হয় কিলোওয়াট-ঘন্টায়।
যদি ৮০ ওয়াটের বৈদ্যুতিক পাখা ১০ ঘন্টা চললে খরচ হবে ৮০ ওয়াট × ১০ ঘন্টা = ৮০০ ওয়াট-ঘন্টা বা ০.৮ কিলোওয়াট-ঘন্টা। আর ৬০ ওয়াট লেখা একটা লাইট ২৪ ঘন্টা জ্বললে খরচ হবে ৬০ ওয়াট × ২৪ ঘন্টা = ১৪৪০ ওয়াট-ঘন্টা বা ১.৪৪ কিলোওয়াট-ঘন্টা। তাহলে যদি প্রতি ইউনিটের দাম হয় ৫ টাকা তাহলে পাখাটি ১০ ঘন্টা চালাতে খরচ হবে ০.৮ × ৫ = ৪ টাকা। আর লাইট টি ২৪ ঘণ্টা চালাতে খরচ হবে ১.৪৪ × ৫ = ৭.২০ টাকা।
ভোল্টেজ কমলে বিদ্যুৎ বিল বেশি আসবে কি?
প্রত্যেক ডিভাইসের একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ ভোল্টেজ রেটিং থাকে। সাধারণত ঐ রেটিং করা ভোল্টেজ পেলেই ডিভাইসটি পরিপূর্ণ অপারেশনে সক্ষম হয়। তবে ভোল্টেজ কমে গেলে বিদ্যুৎ বিলের উপর কোন প্রভাব পড়বেনা। কারণ বিদ্যুৎ বিলের হিসেব ভোল্টের উপর হয়না, নির্দিষ্ট সময়ে ডিভাইস কি পরিমাণ ইলেকট্রিক্যাল এনার্জিকে অন্য এনার্জিতে রুপান্তর করেছে তার উপর।
বাস্তব উদাহরণের মাধ্যমে হিসেব
মনে করুন, কাল আপনার সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা। তাই ২৬ ওয়াট এবং ২২০ ভোল্ট রেটিং এর টেবিল ল্যাম্পের সামনে মাথা ঝুঁকে বেশ মনোযোগ সহকারে ৩ ঘন্টা পড়াশোনা করলেন। এখন এই তিন ঘন্টার বিদ্যুৎ বিল আমরা হিসেব করব। যেহেতু টেবিল ল্যাম্পটি ২ঁ৬ ওয়াটের এবং ভোল্টেজ রেটিং ২২০ ভোল্ট তাহলে, এটি কারেন্ট নিবে = ২৬/২২০ = ০.১২ এম্পিয়ার। তাহলে আউটপুট পাওয়ার = ০.১২ × ২২০ = ২৬ ওয়াট ই থাকছে। যেহেতু ল্যাম্পটি ৩ ঘণ্টা চলেছে এবং বিদ্যুতের দাম যদি প্রতি ইউনিট ৫ টাকা হয় তাহলে বিল আসবে ২৬ ওয়াট × ৩ ঘণ্টা= ৭৮ ওয়াট-ঘণ্টা /১০০০ = ০.০৭৮ কিলোওয়াট-ঘণ্টা × ৫ টাকা = ০.৪ টাকা।
ভাবুন আপনি পড়ার সময় হঠাৎ ঝড়ো বাতাস শুরু হল এবং আপনার লোকাল পোল থেকে আনা জাম্পার কানেকশন লুজ হয়ে ব্রাউনআউট সৃষ্টি হল তার মানে আপনার বাতিতে ভোল্টেজ সাপ্লাই কমে গেল এবং সেটি মৃদু আলো দিতে লাগল। আর আপনি ভূতুড়ে কারবার ভেবে হয়তো ভয় পেয়ে গেলেন। ধরলাম, আপনার টেবিল ল্যাম্পে ১৮০ ভোল্ট সাপ্লাই হল। ল্যাম্পটি যদি ২২০ ভোল্টেজের পরিবর্তে ১৮০ ভোল্টে পায় তখন এটি কারেন্ট নিবে = ২৬/১৮০ = ০.১৪ এম্পিয়ার। তাহলে আউটপুট পাওয়ার = ০.১৪ × ১৮০ = ২৫ ওয়াট। যেহেতু ল্যাম্পটি ৩ ঘণ্টা চলেছে এবং বিদ্যুতের দাম যদি প্রতি ইউনিট ৫ টাকা হয় তাহলে বিল আসবে ২৫ ওয়াট × ৩ ঘণ্টা= ৭৫ ওয়াট-ঘণ্টা /১০০০ = ০.০৭৫ কিলোওয়াট-ঘণ্টা × ৫ টাকা = ০.৪ টাকা।
সুতরাং বিদ্যুৎ বিল ভোল্টেজের উপর মোটেও নির্ভর করেনা, নির্ভর করে কিলোওয়াট ঘন্টার উপর।
বিদ্যুৎ বিল নিয়ে আরো কিছু পোস্ট
গল্পে গল্পে বৈদ্যুতিক পাখার গতি এবং বিদ্যুৎ বিলের সম্পর্ক নিরুপণ
বিদ্যুৎ বিল হিসাব : কি পরিমাণ ব্যবহার করছেন ও বিল দিচ্ছেন তার সহজ হিসাব