একটি বৈদ্যুতিক প্রকল্পের ইলেকট্রিক্যাল লে-আউট প্রস্তুতকরণ

প্রিয় পাঠকবৃন্দ, আজ আপনাদের সাথে খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি আর্টিকেল শেয়ার করতে এসেছি। আমাদের দেশে বিভিন্ন ধরনের বৈদ্যুতিক প্রকল্প বিভিন্ন দেশীয় এবং বিদেশি ঠিকাদারি কোম্পানিগুলোর আওতায় পরিচালিত হয়ে থাকে। যেমন বৈদ্যুতিক সাবস্টেশন নির্মাণ, বৈদ্যুতিক টাওয়ার, পোল স্থাপন, আন্ডারগ্রাউন্ড লাইন স্থাপন প্রভৃতি। এ সমস্ত প্রকল্পের সবচেয়ে বড় কাজ হল প্রকল্পের ইলেকট্রিক্যাল লে-আউট কিংবা নকশাচিত্র তৈরি করা। আজ আমরা জানব কিভাবে একটি বৈদ্যুতিক প্রকল্পের লে-আউট তৈরি করতে হয়।

একটি বৈদ্যুতিক প্রকল্পের লে-আউট প্রস্তুতকরণ

এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা যেসমস্ত বিষয়ে অবগত হবঃ

  1. নির্বাচিত ইলেকট্রিক্যাল প্রজেক্টের লে-আউটের পরিচিতি;
  2. ইলেকট্রিক্যাল প্রজেক্টের পূর্ণাঙ্গ ওয়্যারিং ডায়াগ্রাম অঙ্কন সম্পর্কে জ্ঞানার্জন;

কোন বৈদ্যুতিক প্রকল্পের লে-আউট ডায়াগ্রাম অঙ্কনের জন্য নিম্নলিখিত তথ্যগুলো সম্পর্কে অবগত হওয়া প্রয়োজনঃ

  • ট্রান্সমিশন এবং ডিস্ট্রিবিউশন ভোল্টেজ, ট্রান্সফরমার এবং সুইচগিয়ার রেটিং ইত্যাদি
  • ইন্সুলেটর
  • তারের সাইজ
  • সাপোর্ট, প্রাইমারি এবং সেকেন্ডারি ফিডার ইত্যাদি
  • প্রস্তাবিত প্রজেক্টের অবস্থান ও আয়তন ইত্যাদি

উল্লেখিত তথ্যাদি সম্পর্কে জ্ঞাত হবার পর কোন নির্দিষ্ট এলাকার ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেমের লে-আউট ডায়াগ্রাম সন্তোষজনকভাবে প্রস্তুত করার জন্য নিচের ফ্যাক্টরগুলো বিবেচনা করতে হবেঃ

  • মেইন ক্যাম্পাস
  • হোটেল/স্টাফ কোয়ার্টার্স সংখ্যা
  • বিদ্যুতায়নযুক্ত এলাকার অবস্থান এবং আয়তন ইত্যাদি
  • সাবস্টেশন
  • প্রাইমারি ইনকামিং ফিডার
  • সেকেন্ডারি ফিডার
  • ফিডার সংখ্যা
  • ফিডারসমূহের কারেন্ট রেটিং ইত্যাদি

কাজের পদ্ধতি

  • প্রথমেই LV সেকেন্ডারি ট্রান্সমিশন ফিডার অথবা HV প্রাইমারি ডিস্ট্রিবিউশন ফিডার শনাক্ত করতে হবে।
  • সাবস্টেশনের অবস্থান এবং সেখান থেকে মেইন ক্যাম্পাস, হোটেল, স্ট্রিট লাইন, স্টাফ কোয়াটার্স দূরত্ব ও লাইন রেকর্ড করতে হবে।
  • সমগ্র বিদ্যুতায়নযুক্ত এলাকার লোডকে ফিডারভিত্তিক পৃথক করার পর প্রত্যেক ফিডারের কারেন্ট রেটিং নিরুপণপূর্বক রেকর্ড করতে হবে।
  • একটি খসড়া প্ল্যান অংকন করে সেখানে সেক্টর ওয়াইজ এলাকা চিহ্নিত করতে হবে।
  • তদঅনুযায়ী প্রত্যেক এলাকায় এক ফেজ এবং তিন ফেজ লাইন দেখাতে হবে।

নিচে ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট সাবস্টেশন থেকে সরবরাহকৃত একটি এলাকার ইলেকট্রিক্যাল লে-আউট প্ল্যানের ডায়াগ্রাম দেয়া হলঃ

লে-আউট
লে-আউট

একটি সাবস্টেশনে ব্যবহৃত ইকুইপমেন্টের তালিকাঃ

  • পাওয়ার ট্রান্সফরমার
  • HT সুইচগিয়ার
  • LT সুইচগিয়ার
  • পি এফ আই ইউনিট
  • বাসবার
  • লাইটনিং এরেস্টার
  • আইসোলেটর
  • SF6/oil circuit breaker
  • CT & PT
  • মিটারিং (এমিটার, ভোল্টমিটার, ওয়াট্মিটার, এনার্জিমিটার, ডিমান্ড ফ্যাক্টর মিটার
  • ইন্সুলেটর
  • ডিসকানেক্টর
  • কন্ট্রোল প্যানেল বোর্ড
  • অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র
  • এগজস্ট ফ্যান
  • এলার্টিং এলার্ম

নিচে ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট সংলগ্ন দুটি এলাকার সিঙ্গেল লাইন ডায়াগ্রাম দেখানো হলঃ

সাবস্টেশন সিংগেল লাইন ডায়াগ্রাম
সাবস্টেশন সিংগেল লাইন ডায়াগ্রাম

যেসব সাবধানতা অবলম্বন করা জরুরিঃ

  • হোস্টেল এবং স্টাফ কোয়ার্টারের লোডের পরিমাণ বের করার জন্য সতর্কতা অবলম্বন করা আবশ্যক।
  • প্রতিটি ফিডারের কারেন্ট রেটিং নির্ণয় করার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে। অন্যথায় ত্রুটিপূর্ণ ফিডার সাইজ থেকে বৈদ্যুতিক দূর্ঘটনা হবার সম্ভবনা বেশি থাকে।
  • প্রাক্কালন এবং ব্যয়িত খরচের মূল্যায়ন
  • আপনার প্রকল্পের কাজ ভিত্তিক প্রাক্কালন ব্যয় এবং এতে বাস্তবিকভাবে ব্যয়িত খরচের একটি তালিকা তৈরি করতে হবে। যেমন সাবস্টেশন এলাকা চিহ্নিতকরণ, ফিডারভিত্তিক কারেন্ট রেটিং নির্ধারণ, ইলেকট্রিক্যাল লে-আউট ডিজাইন এসব কাজের ব্য়য়িত অর্থের তালিকা নির্মাণ করতে হবে।

এভাবে একটি প্রকল্পের লে-আউট খুব সহজেই প্রস্তুত করা সম্ভব।

আরো কিছু আর্টিকেল পড়ুন

কিভাবে একজন দক্ষ ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হওয়া যায়?

ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে মজার গল্প | এক গল্পেই পুরো সিলেবাস

ইলেকট্রিক্যাল পাওয়ার কি নেগেটিভ হতে পারে?