আমরা ছোটবেলা থেকেই একটা কথা শুনে আসছি যে, ভেজা অবস্থায় মানবদেহের রোধ কমে যায়। তাই ভেজা অবস্থায় বৈদ্যুতিক শক খাওয়ার প্রবণতা অনেক বেশি। উল্লেখ্য যে, শুষ্ক অবস্থায় মানবদেহের রোধ হল ৫০ কিলোওহম আর ভেজা অবস্থায় তা দাঁড়ায় ১০ কিলোওহম৷ কিন্তু কেন? এর নেপথ্যে লুকায়িত কারণ কি? এই তথ্য আমরা শুধু মুখস্ত করেই শেষ। কিন্তু তার প্রকৃত কারণ আজ আমরা জানব। চলুন শুরু করা যাক।
ভেজা অবস্থায় মানবদেহের রোধ কমে যায় কেন?
ধরুন, আপনি নিরিবিলি কোথাও বেড়াতে গেলেন। সেখানে গিয়ে দেখলেন চারপাশে পাহাড় এবং গাছগাছালিতে ঘেরা। আর তাদের মাঝে বয়ে গেছে সুগভীর লেক। লেকের পরিষ্কার পানি দেখে আপনি নিজেকে আর সামলে রাখতে পারলেন না। সেখানে কিছুক্ষণ সাঁতার কেটে নিলেন। সাতার কেটে উপরে উঠে আসার পর লক্ষ করলেন, একটি পাওয়ার লাইন মাটিতে ছেড়া অবস্থায় পড়ে আছে। এবং আপনি যথেষ্ট দূরে থাকা স্বত্বেও শিরশির অনুভব করছেন। অথচ কিছুক্ষণ আগেও আপনি একই দূরত্বে ছিলেন। কিন্তু এরকম অনুভূতি হয়নি। কারণ হল ঐ সময় আপনার দেহ শুষ্ক ছিল। কিন্তু লেকের পানিতে গোসল করার পর আর্দ্রতা পেয়ে আপনার দেহের বৈদ্যুতিক পরিবাহিতা বৃদ্ধি পেয়েছে। পানির সাথে যুক্ত হবার পর এমন কি ঘটল যে, আপনার দেহের রোধ কমে গিয়ে পরিবাহিতা বৃদ্ধি পেল?
পানির সংস্পর্শে আসার পর কি ঘটল?
পানি এবং মানবদেহের প্যারালাল সংযোগ
সাধারণত ভেজা অবস্থায় পানির কণা আমাদের দেহের লোমকূপের সাথে প্যারালালে যুক্ত থাকে। তাই পানি এবং আমাদের দেহের রোধের তুল্য রোধ অনেক কমে যায়। অনেকটা দুটো রোধকে প্যারালাল সার্কিটে যুক্ত করলে তুল্য রোধ যেমন কম হয় এখানে ব্যাপারটিও সেইরকম। আর রোধ কম মানেই বৈদ্যুতিক পরিবাহিতা অনেক বেশি।
পানির পোলারায়ন ক্ষমতা
দ্বিতীয়ত পানি একটি পোলার যৌগ। এখন অনেকেই বলতে পারেন যে, পোলার যৌগটা আবার কি? যে সমস্ত যৌগ পজিটিভ এবং নেগেটিভ চার্জ বিশিষ্ট অর্থাৎ দুটো বিপরীতধর্মী আয়ন তৈরি করতে পারে তাদের পোলার যৌগ বলে। পানিও প্রোটন (H+) এবং হাইড্রক্সিল (-OH) আয়ন তৈরি করতে পারে। তাই পানির এই পোলার ধর্ম মানবদেহে বিদ্যুৎ পরিবহনের পথকে অনেক সুগম করে তোলে। অনেকটা কাঁটাযুক্ত পথে কাঁটা সরিয়ে দেবার মত। সেজন্য সবমিলিয়ে মানবদেহ হয়ে উঠে অতি উত্তম পরিবাহী। এজন্যই বলা হয় ভেজা অবস্থায় মানবদেহের রোধ কমে যায়। শুধুমাত্র মানবদেহই নয়। পানির সংস্পর্শে যেকোন প্রাণীদেহ এমনকি অনেকক্ষেত্রে ইন্সুলেটরও পরিবাহীর ন্যায় আচরণ শুরু করে। যেমনঃ ভেজা কাঠ, রাবার ইত্যাদি।
ভোল্টেজ ল্যাব মানেই নতুন চমক। আর প্রতিদিন সেই চমক পেতে আমাদের সাথে থাকুন। আমাদের পথ চলায় আপনাদের উৎসাহ একান্ত কাম্য।
আরো কিছু মজার আর্টিকেল
গল্পে গল্পে রোধ ও তাপমাত্রার সম্পর্ক নিরুপণ