মানবদেহ ও ইলেকট্রিক্যাল সার্কিট | বৈদ্যুতিক বর্তনী

0
692

সুপ্রিয় পাঠকবৃন্দ আশা করি ভাল আছেন। আপনাদের জন্য আবারো একটি মজাদার আর্টিকেল নিয়ে উপস্থিত হল ভোল্টেজ ল্যাব। আজ পর্যন্ত যতগুলো আর্টিকেল পড়েছেন তার মধ্যে অনেকটাই ব্যতিক্রম হল আজকের আর্টিকেলটি। মানবদেহ এক মহা আশ্চর্যকর সিস্টেম। এর প্রতিটি ফাংশন এতই সিস্টেমেটিক যে, একটু এদিক ওদিক হলেই আমরা অসুস্থ হয়ে পড়ি এবং দেখা যায় বিভিন্ন ধরনের রোগ। বিজ্ঞানীরা মানবদেহ নিয়ে অনেক রিসার্চ করে যাচ্ছেন। তবুও এই হিউম্যান বডি সিস্টেমের রহস্য এখনো অনেকটাই অধরা। চলুন আজকে আমরা মানবদেহের স্ট্রাকচারকে বৈদ্যুতিক বর্তনীর সাথে তুলনা করে দেখি।

মানবদেহকে ইলেকট্রিক্যাল সার্কিটরুপে কল্পনা করলে তার নকশাচিত্র কেমন হবে?

আপনি জেনে অবাক হবেন যে, আমাদের ফিজিওইলেকট্রিক স্ট্রাকচার কিন্তু বৈদ্যুতিক বর্তনীতে উপস্থিত বিভিন্ন উপাদানের সাথে মিলে যায়। কিভাবে সে আলোচনায় আসা যাক। আচ্ছা একটি বৈদ্যুতিক সার্কিটে কি কি থাকে? নিশ্চয়ই বলবেন, রোধ, ব্যাটারি, ইন্ডাক্টর, ক্যাপাসিটর ইত্যাদি। আশ্চর্যজনকভাবে এই প্রতিটি উপাদানের ক্যারেক্টার মানবদেহে বিদ্যমান। অর্থাৎ মানবদেহের রেজিস্টিভ, ক্যাপাসিটিভ, ইন্ডাক্টিভ সব ধরনের ক্যারেক্টার আছে।

এবার রইল বাকি সোর্স বা ব্যাটারির কথা। আমাদের দেহের অভ্যন্তরে যথেষ্ট পরিমাণে বায়োক্যামিকেল এনার্জি মজুদ থাকে যা অনেকগুলো ব্যাটারির সমবায়ের সমান। জেনে অবাক হবেন যে, এক দিনের জন্য কোনও মানুষকে পাওয়ার আপ করতে আপনার প্রায় 648 AA ব্যাটারি লাগবে (1 cal = 4.2 joule এর উপর ভিত্তি করে)। তাহলে বুঝতেই পারছেন আমাদের দেহে কি পরিমাণ এনার্জি মজুদ রয়েছে।

পুরো মানবদেহই কন্ডাক্টর বা পরিবাহী তারের ন্যায়। আমাদের পায়ের নিচে ভূমি গ্রাউন্ড হিসেবে কাজ করে। এবার বলতে পারেন যে, পরিবাহীর অভ্যন্তরে ইলেকট্রন বিদ্যমান। মানবদেহে কি ইলেকট্রন আছে? উত্তরে বলব মানবদেহও কিন্তু ইলেকট্রনের মহাসাগর। মানবদেহে 1028 সংখ্যক মুক্ত ইলেকট্রন রয়েছে। আমাদের দেহের বিভিন্ন ম্যাটালিক ইলেকট্রোলাইট থেকেই মূলত জারণ প্রক্রিয়ায় এসব ইলেকট্রন সরবরাহ হয়। কি মজার না ব্যাপারগুলো? কিন্তু এজন্য দরকার গভীর উপলব্ধি। এ বিষয়গুলোকে গভীরভাবে অনুধাবন করতে না পারলে তা উপভোগ করা সম্ভবপর হবেনা। আচ্ছা কথা না বাড়িয়ে মানবদেহকে বৈদ্যুতিক বর্তনী হিসাবে কল্পনা করে একটি নকশাচিত্র দাঁড় করানো যাক।

হিউম্যান বৈদ্যুতিক বর্তনী
হিউম্যান বৈদ্যুতিক বর্তনী

মানবদেহের রেজিস্টিভ বৈশিষ্ট্য

উপরের নকশায় দেখতেই পারছেন একটি হিউম্যান বডিকে ইলেকট্রিক্যাল সার্কিটরুপে উপস্থাপন করা হয়েছে। আমাদের দেহে বিদ্যুতের প্রভাব নির্ভর আমাদের দেহের রোধের উপর। আমাদের ঐচ্ছিক এবং অনৈচ্ছিক সব ধরনের পেশীতেই রোধ বিদ্যমান। আর এই রোধের মান ৫০ কিলোওহম। কিন্তু ভেজা বা আদ্রাবস্থায় এই রোধের মান ১০ কিলোওহম।

মানবদেহের ক্যাপাসিটিভ বৈশিষ্ট্য

মানবদেহ যেহেতু ফাঁপা, মাংসল এবং বায়ুপূর্ণ তাই আমাদের দেহে ক্যাপাসিটিভ বৈশিষ্ট্যও বিদ্যমান। এই ক্যাপাসিটিভ বৈশিষ্ট্যের কথা আমি নিউট্রাল স্পর্শ না করেও পাওয়ার লাইনে শক খাওয়ার কারণ কি? এই আর্টিকেলটিতেও আলোচনা করেছিলাম। এই ক্যাপাসিটিভ ক্যারেক্টারের কারণেই মূলত আমরা নিউট্রাল না স্পর্শ করেও শক খেতে পারি।

আমাদের দেহের ইন্ডাক্টিভ ক্যারেক্টার

আর আমাদের কোষের মাইটোকন্ড্রিয়া ইন্ডাক্টরের মত কাজ করে। ইন্ডাক্টর যেমন কারেন্টের হার পরিবর্তন করে তেমনি মাইটোকন্ড্রিয়াও আমাদের পাওয়ার মজুদ এবং পরিবর্তন করতে সক্ষম।

এই চমকপ্রদ এবং অভিনব আর্টিকেল কেমন লাগল তা আমাদের কমেন্ট বক্সে জানিয়ে দিন। এতে সামনে আরো মজার মজার আর্টিকেল লিখতে আমাদের অনুপ্রেরণা আসবে। ধন্যবাদ।

আরো কিছু মজার আর্টিকেল

হাজার ভোল্টের বিদ্যুৎ যাদের শক করতে পারেনা | বিদ্যুৎ মানব এবং বাস্তবতা

ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে মজার গল্প | এক গল্পেই পুরো সিলেবাস

গল্পে গল্পে ইন্ডাস্ট্রিয়াল বিভিন্ন টেকনিক্যাল টার্ম নিয়ে আলোচনা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here